somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদে পদে প্রতারণা

২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাড়িতে আমি, মা, মেজোবোন আর ছোটোবোন থাকি। আমার বয়স তখন ৯, মেজোবোনের ১১; আর ছোটোর ৭।
বাবা দেশের বাইরে।

একদিন ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক লোক এলেন আমাদের বাড়ি। জানালেন, বাবা কিছু জিনিস পাঠিয়েছেন ওনার
ভাইয়ের কাছে। সাগরদীঘি গিয়ে আমরা যেন নিয়ে আসি।

উল্লেখ্য, বাবা এর আগেও বিভিন্ন জনের কাছে জিনিসপত্র পাঠিয়েছেন। সুতরাং বিষয়টা আমাদের কাছে নতুন না।
খটকা একটু লাগল অবশ্য। প্রতিবার লোকেরা বাড়ি এসে জিনিস দিয়ে যায়। এবারই প্রথম গিয়ে নিয়ে
আসতে হচ্ছে।

জিনিস পাঠালে আগে থেকে জানান। এবার কেন জানালেন না; সেটা বোধগম্য হলো না। অবশ্য এখনকার মতো
সহজ যোগাযোগ তখন ছিল না। মোবাইল সহজপ্রাপ্য ছিল না। দূরের বাজারে গিয়ে ফোন করতে হতো।

বাবা লেখাপড়া জানতেন না। চিঠি লিখলে কাউকে দিয়ে লেখাতে হতো।
আমরা ধরে নিলাম হয়ত সময় পান নি।

যাহোক, লোকটাকে বেশ সমাদর করলাম আমরা। খেয়ে-দেয়ে ঘুম দিলেন। ঠিকানা দিয়ে বিকেলের দিকে বের হয়ে গেলেন।
যাওয়ার সময় ৪০০ টাকা চাইলেন। বাসা থেকে বেরোবার সময় টাকা আনতে মনে ছিল না।

মনে নাই থাকতে পারে। আমরা তাকে টাকা টা দিলাম।

মায়ের সাথে ওই লোকের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাজার থেকে মিষ্টিও নিলাম।

সাগরদীঘি নেমে ওই লোকটার খুঁজ করতে লাগলাম। সবাইকে তার ব্যাপারে জিগ্যেস করলাম। কিন্তু খোঁজ দিতে পারল না কেউ।

সম্প্রতি কে বিদেশ থেকে এসেছে এখানে, তার হদিস করলাম। দেখা হলো একজনের সাথে। ওনি আমার বাবাকে
চেনেন না।



অল্প বয়স থেকেই ছড়া লিখি, কবিতা লেখার চেষ্টা করি। প্রথম ছড়া টা ১০ বছর বয়সে লেখা। টুকটাক বইপত্রও পড়ি।

কলেজে উঠার পর হঠাৎ মাথায় ভূত চাপল বই করব। একটা বই থেকে একটা প্রকাশনীর ঠিকানা নিলাম। চলে এলাম বাংলাবাজার। খুঁজে বের করলাম প্রকাশনী টা। পান্ডুলিপি টা দিলাম। কথাবার্তা বললাম।

যুবক বয়সী লোক টা। হাজার পাঁচেক টাকা অগ্রিম চাইলেন। দিলাম। এরপর প্রচ্ছদ করতে একটা দোকানে পাঠালেন।

দুইদিন পর ফোন দিলাম। জানতে চাইলাম কাজ কতদূর। “এগোচ্ছে।” ওনি বললেন।
এদিকে লোকজনকে বলে বেড়াচ্ছি আমার বই বেরোচ্ছে। খুশির অন্ত নেই।

কয়েকদিন পর আবার ফোন দিলাম। নাম্বার বন্ধ।

আবার এলাম প্রকাশনীতে। যার সাথে চুক্তিনামা সই করেছি, তাকে দেখছি না। উপস্থিত একজনকে জিগ্যেস করলাম।
ওনি বিষয় টা এড়িয়ে গেলেন। বললেন, ”আপনি আবার পান্ডুলিপি টা দেন। আর ২ হাজার টাকা দেন। মান-সম্মানের
প্রশ্ন। নিজের ক্ষতি হলেও বই করে দেব।”

একদিন, দুদিন করতে করতে ওনিও ঘোরাচ্ছেন। এলাকায়ও মুখ দেখাতে পারছি না। সবাই বইয়ের কথা জিগ্যেস করে।

যাহোক, একসময় বই হাতে পেলাম। তবে কাগজের মান খারাপ। বানানেও প্রচুর ভুল।



চাকরির খুঁজে এসেছি গাজীপুর। ব্যবস্থা হচ্ছে না। হঠাৎ একদিন এক টা লিফলেট পেলাম দেয়ালে। একটা বীমা কোম্পানিতে
লোক নেওয়া হচ্ছে। যোগাযোগ করলাম। ২ দিনে অনেককিছু বোঝাল। এন্ট্রি ফি নিল ১৫০০। টাকা নেই। ধার করলাম।
কয়েকদিন যাওয়ার পর বলল, বীমা করতে হবে।

বীমা যে করব, টাকা তো নেই।

আরেক টা বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ল। ভালো মনে হলো। ইউনিট ম্যানেজার পদে নিয়োগ। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদে সেলারি বেশি।
ভাবলাম এখানেই আবেদন করি। কিন্তু সমস্যা একটাই। এখানেও বীমা করতে হবে।

খুব আশা নিয়ে গাজীপুর এসেছি। পেছনে ফেরার পথ নেই। ধার-দেনা করে বীমা করলাম। মাস শেষে বেতন পেয়ে
শোধ করে দেব।

দিন যায় কিন্তু কাজ যেমন বলা হয়েছিল তেমন দেখি না। নির্দিষ্ট বেতন নেই। লিফলেট টানিয়ে লোকজনকে বিভ্রান্ত
করে বীমা করানোই কাজ। এ ধরণের প্রতারণা করা তো আমার পক্ষে সম্ভব না।



কাজটা ক্যাবল টিভির। ওয়াইফাই, ডিশেরও ব্যবসা আছে। আমাকে নেওয়া হলো মূলত ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য।
সফটওয়্যার বেজড। টেকনিক্যাল কাজ তেমন পারি না। বলা হলো, ট্রেনিং করিয়ে নেবে। একদিন করলামও।

ডেকোরেশন সম্পন্ন হতে সময় লাগবে। অনেক টাকা পয়সারও ব্যাপার।

প্রতিদিন অফিসে যাই। টুকটাক কাজও করি। এখানে সেখানে পাঠানো হয়। যাই।

মাস শেষ হয়। বেতন চাই। আজকে কালকে করতে করতে পেছায়। ঘন্টার পর ঘন্টা অফিসে বসিয়ে রাখে।

অথচ এর মধ্যে কোচিং, টিউশনি বাদ দিয়েছি। ভাবছিলাম চাকরিটাই ভালোভাবে করব। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:১৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×