
বাড়িতে আমি, মা, মেজো বোন আর ছোটো বোন থাকি। আমার বয়স তখন ৯, মেজো বোনের ১১; আর ছোটো বোনের ৭। বাবা দেশের বাইরে থাকেন।
একদিন ৩০-৩৫ বছর বয়সি এক লোক এলেন আমাদের বাড়ি। জানালেন, বাবা কিছু জিনিসপত্র পাঠিয়েছেন ওনার ভাইয়ের কাছে। সাগরদীঘি গিয়ে আমরা যেন নিয়ে আসি।
উল্লেখ্য, বাবা এর আগেও বিভিন্ন জনের কাছে জিনিসপত্র পাঠিয়েছেন। সুতরাং, বিষয়টা আমাদের কাছে নতুন না। খটকা একটু লাগল অবশ্য। প্রতিবার লোকেরা বাড়ি এসে জিনিসপত্র দিয়ে যায়। এবারই প্রথম গিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে।
জিনিস পাঠালে আগে থেকে জানান। এবার কেন জানালেন না; সেটাও বোধগম্য হলো না। অবশ্য এখনকার মতো সহজ যোগাযোগ তখন ছিল না। মোবাইল সহজপ্রাপ্য ছিল না। দূরের বাজারে গিয়ে ফোন করতে হতো।
বাবা লেখাপড়া জানতেন না। চিঠি লিখলে কাউকে দিয়ে লেখাতে হতো। আমরা ধরে নিলাম হয়তো সময় পাননি।
যাহোক, লোকটাকে বেশ সমাদর করলাম আমরা। খেয়ে-দেয়ে ঘুম দিলেন। ঠিকানা দিয়ে বিকেলের দিকে বের হয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় ৪০০ টাকা চাইলেন। বাসা থেকে বেরোবার সময় টাকা আনতে মনে ছিল না। মনে নাই থাকতে পারে। আমরা তাকে টাকাটা দিলাম।
মায়ের সাথে ওই লোকের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাজার থেকে মিষ্টিও নিনে নিলাম।
সাগরদীঘি নেমে ওই লোকটার খোঁজ করতে লাগলাম। সবাইকে তার ব্যাপারে জিগ্যেস করলাম। কিন্তু খোঁজ দিতে পারল না কেউ। সম্প্রতি কে বিদেশ থেকে এসেছেন এখানে, তার হদিস করলাম। দেখা হলো একজনের সাথে। ওনি জানালেন আমার বাবাকে চেনেন না।
২
অল্প বয়স থেকেই ছড়া লিখি, কবিতা লেখার চেষ্টা করি। প্রথম ছড়াটা ১০ বছর বয়সে লেখা। টুকটাক বইপত্রও পড়ি।
কলেজে উঠার পর হঠাৎ মাথায় ভূত চাপল বই বের করব। একটা বই থেকে একটা প্রকাশনীর ঠিকানা নিলাম। চলে এলাম বাংলাবাজার। খুঁজে বের করলাম প্রকাশনীটা। পান্ডুলিপিটা দিলাম। কথাবার্তাও বললাম।
যুবক বয়সি লোকটা। হাজার পাঁচেক টাকা অগ্রিম চাইলেন। সেটা দিলাম। এরপর প্রচ্ছদ করতে একটা দোকানে পাঠালেন।
দুই দিন পর ফোন দিলাম। জানতে চাইলাম কাজ কতদূর। “এগোচ্ছে।” ওনি বললেন।
এদিকে লোকজনকে বলে বেড়াচ্ছি আমার বই বেরোচ্ছে। খুশির অন্ত নেই। কয়েকদিন পর আবার ফোন দিলাম। নাম্বার বন্ধ।
আবার এলাম প্রকাশনীতে। যার সাথে চুক্তিনামা সই করেছি, তাকে দেখছি না। উপস্থিত একজনকে জিগ্যেস করলাম। ওনি বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন। বললেন, “আপনি আবার পান্ডুলিপিটা দেন। আর দুই হাজার টাকা দেন। মান-সম্মানের প্রশ্ন। নিজের ক্ষতি হলেও বই করে দেব।”
একদিন, দু’দিন করতে করতে ওনিও ঘোরাচ্ছেন। এলাকায়ও মুখ দেখাতে পারছি না। সবাই বইয়ের কথা জিগ্যেস করে। যাহোক, একসময় বই হাতে পেলাম। তবে কাগজের মান খারাপ। প্রচুর বানান ভুল।
৩
চাকরির খুঁজে এসেছি গাজীপুর। ব্যবস্থা হচ্ছে না। হঠাৎ একদিন একটা লিফলেট পেলাম দেয়ালে। একটা বিমা কোম্পানিতে লোক নেওয়া হচ্ছে। যোগাযোগ করলাম। দুই দিনে অনেককিছু বোঝাল। এন্ট্রি ফি নিল ১৫০০। টাকা নেই। ধার করলাম। কয়েকদিন যাওয়ার পর বলল, “বিমা করতে হবে।” বিমা যে করব, টাকা তো নেই।”
আরেকটা বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ল। ভালো মনে হলো। ইউনিট ম্যানেজার পদে নিয়োগ। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদে সেলারি বেশি। ভাবলাম এখানেই আবেদন করি। কিন্তু সমস্যা একটাই। এখানেও বিমা করতে হবে।
খুব আশা নিয়ে গাজীপুর এসেছি। পেছনে ফেরার পথ নেই। ধার-দেনা করে বিমা করলাম। মাস শেষে বেতন পেয়ে শোধ করে দেব।
দিন যায় কিন্তু কাজ যেমন বলা হয়েছিল তেমন দেখি না। নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই। লিফলেট টানিয়ে লোকজনকে বিভ্রান্ত করে বিমা করানোই কাজ। এ ধরনের প্রতারণা করা তো আমার পক্ষে সম্ভব না।
৪
কাজটা ক্যাবল টিভির। ওয়াইফাই, ডিশেরও ব্যবসা আছে। আমাকে নেওয়া হলো মূলত ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য। সফটওয়্যার বেজড। টেকনিক্যাল কাজ তেমন পারি না। বলা হলো, ট্রেনিং করিয়ে নেবে। একদিন করলামও।
ডেকোরেশন সম্পন্ন হতে সময় লাগবে। অনেক টাকা পয়সারও ব্যাপার।
প্রতিদিন অফিসে যাই। টুকটাক কাজও করি। এখানে সেখানে পাঠানো হয়। যাই। মাস শেষ হয়। বেতন চাই। আজকে কালকে করতে করতে পেছায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অফিসে বসিয়ে রাখে। অথচ এর মধ্যে কোচিং, টিউশনি বাদ দিয়েছি। ভাবছিলাম চাকরিটাই ভালোভাবে করব। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





