somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স_লামিসা
লেখা লেখির ধরা বাধা কোন নিয়ম আমার জানা নেই, সঠিক ব্যাকরণ প্রয়োগ করা ও আমার জানা নেই, তবে নিজের মতামত আর চিন্তা প্রকাশ করতে যতটূকু সম্ভব লেখার মাধ্যমে তা বের করে আনতে পছন্দ করি।আমি স্বল্প ভাষী একজন মানুশ :)

বসন্ত বৃষ্টি

০৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করে, ঝুম বৃষ্টি ।
রুদ্র কেবলই ঘুম ভেঙ্গে হলের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিল, কি সুন্দর বৃষ্টি । বসন্ত-বৃষ্টি । সৃষ্টিকর্তা কি যত্নে এই অপরূপ সৃষ্টি করেছেন, তা ভাবতেই, রুদ্র’র ম্ন আনন্দে আরও ঝল মল করে ঊঠলো ।
নিচে, গেট এর ওদিকটায় তাকাতেই, রুদ্র খেয়াল করল , জামাল চাচা, তার রিক্সা টা কে একপাশে রেখে, নিজে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাউনি তে দাঁড়ালেন ।

সাথে সাথে রুদ্র’র মাথায় অসাধারণ এক ইচ্ছা জেগে ঊঠলো । এক দৌড়ে নিচে চলে এলো, আর জামাল চাচা কে অনেক কিছু বুঝিয়ে তার রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো । এমন ঝুম বৃষ্টি তে হলের সামনের রাস্তায় রিক্সা চালাতে ভারী আনন্দ হবে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। রুদ্র মহা আনন্দে রিক্সা নিয়ে চক্কর কাটছে আর বৃষ্টি তে ভিজে ভিজে সে আনন্দের যথার্থতা যাচাই এ ব্যাস্ত রয়েছে, আশে পাশে কেউ নেই, অনেক দূরে দূরে গাছের নিচে অথবা কোন ছাউনির নিচে দেখা যাচ্ছে অল্প সংখ্যক মানুষ।
হঠাৎ নজরুল হলের সামনে আসতেই,
একই সাথে কোমল এবং অত্যাধিক গম্ভীর একটি নারী কন্ঠ রুদ্র’র দিকে মনে হল যে, ধেয়ে আসলো ।

- “এই রিক্সা, এই!!!”

রুদ্র অবাক হয়ে দেখলো একটি ২২/২৩ বছর মোটামুটি রকম এর সুন্দর মেয়ে তাকে ডাকছে। রুদ্র উত্তর দিলো,
- আমাকে বলছেন ?
- আশ্চর্য !! এখানে রিক্সা নিয়ে আপনি ছাড়া আর কেউ আছে ?
- না, তা নেই। কিন্তু ...

মেয়েটি শুনতে পেলো না... বৃষ্টি যেন বেড়েই চলেছে ... । আগেরবার এর থেকে, এবার আরো জোড়ে চিৎকার করে বলল ,
- আমাকে আজিমপুর নামিয়ে দিয়ে আসবেন ? আমার খুব জরুরি কাজ আছে, এখন না গেলেই নয়। আপনাকে আমি ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া দিয়ে দেবো প্রয়োজনে ...
মেয়েটি আরও কি বলতে যাবে , রুদ্র তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
- আমি আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসতে পারবো না , আর তাছাড়া আমি রিক্সাচা ...

এবার মেয়েটী রুদ্রকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে, এবং অবাক করে দিয়ে বলে বসলো ,
- যাবে না মানে ?? চেনেন নাই তো আমাকে, আপনি যাবেন, আপনার ঘাড় যাবে, এই আমি আপনার রিক্সাতে চড়ে বসলাম । চলুন বলছি !!!

মেয়েটি অর্ধেক ভেজা আগেই ছিল, এবার রিক্সা তে উঠতে গিয়ে আরো ভিজে গেল। রুদ্র শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটি আবার বলে উঠলো ,
- কি হল !! আপনাকে না বললাম আমাকে নামিয়ে দিয়ে আসতে ? চলুন বলছি।
রুদ্র নিজেকে অসহায় বোধ করলো । কোন কথা বলাই বৃথা এই মেয়ের সাথে, এই ভেবে, এক তরুণ অপরিচিত মেয়ে এবং রিক্সা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । কিছু দূর যেতেই, বুয়েটের গেট এর এ পারে, এক হাতে ছাতা আর আরেক হাতে একটি লাঠিতে ভর দিয়ে হেটে যাওয়া এক ভদ্রলোক চলেছেন , রুদ্র আবিষ্কার করলেন, উনি তার শিক্ষক ড.মনসুর আলী । শিক্ষক হিসেবে তিনি অসাধারণ, তবে ছেলে বুড়ো সবাই তার ভয়ে একদম থম থম অবস্থায় থাকে সবসময় ।

রুদ্র ভাবলো , কোন রকমে তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারলেই হল , কিন্তু ... তিনি ঠিক রুদ্র কে চিনে ফেললেন এই ঝুম বৃষ্টি তেও ... লাঠি দিয়ে ইশারা করে তিনি রুদ্র কে কিছু একটা বলছেন ... রুদ্র ভয় পেয়ে, রিক্সা হঠাৎ ব্রেক করে, এক লাফে নেমে গিয়ে স্যার এর সামনে দাঁড়ালো । স্যার কে সালাম দিয়ে, মাথা নিচু করে, আর দুই হাত পেছনে নিয়ে দাড়াল ।

রুদ্র’র অবাক করা কান্ড দেখে, রিক্সায় থাকা মেয়েটি বিচলিত হল। রুদ্রকে কিছু একটা বলতে যাবে, ওমনি রুদ্র’র সামনে থাকা ভদ্রলোক কে বলতে শুনলো ...

- কি ব্যাপার রুদ্র ! আপনি এই প্রবল ঝড় এ রিক্সা চড়িয়ে বেড়াচ্ছেন ? আপনি কি আপনার আগামী কাল এর পরীক্ষার কথা ভুলে গেছেন ? আমি কিন্তু পরীক্ষার ব্যাপারে কোন ধরনের গাফিলতি কে প্রশ্রয় দেবো না ।

- না , মানে, ইয়ে স্যার ...
- রিক্সা চালাচ্ছেন কি শখ এর বশে? সেকি ভেতরে প্যাসেঞ্জারও আছে নাকি ... বুয়েট বুঝি আপনাকে এর থেকে সহজ কোন কাজ খোঁজার পথ দেখাচ্ছে না ?

বলা মাত্র, মনসুর সাহেব গলা এগিয়ে রিক্সা’র ভেতর উঁকি দিলেন ... আর ...
- বাবা ! তুমি এই বৃষ্টি তে রাস্তায় কি করছো ?
- মামনি , আমি ভাবলাম জলদি গিয়ে তোমার মা কে একটু খিচুড়ি করতে বলি । তুমি কোথায় যাচ্ছ মা?
- বাবা, তুমি ভুলে গেলে তো, আমার ইন্টারভিউ ...
- ও হ্যাঁ, হ্যাঁ ...
- বাবা, তুমি আমার রিক্সা থামালে কেন, আমাকে এখন যেতে যাও ।

মনসুর সাহেব, হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন । এবং রুদ্রা কে ইশারা করে বললেন , রিক্সা নিয়ে সামনে এগোতে । মেইয়েটির কথা শুনে মনে হল, সে রুদ্র আর তার বাবার কোন কথাই শুনতে পায় নি, অথচ শুনতে পাওয়া উচিত ছিল ।

রুদ্র, হতভম্ব হয়ে গোবেচারার মত রিক্সা চেপে সামনে এগুতে লাগলো । বৃষ্টিও কমে যাচ্ছে, রোদের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। দারুন এক আলোর সৃষ্টি হচ্ছে চারপাশে, রুদ্র ভাবলো, থাক, যা হবার দেখা যাবে, এখন যে মুহূর্তে আছি, সেটা তে একটু বাঁচার চেষ্টা করলে মন্দ কি। ভাবতে ভাবতে। রুদ্র কি কারণে, পেছনে মেয়েটীর দিকে একটু তাকালো ।
আশ্চর্য, মেয়েটি হাসছে ! রুদ্র বুঝতে পারলো, তার মানে মেয়েটি সব বুঝতে পেরেই হাসছে।
রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,
- আপনি হাসছেন যে ?
- আপনার কি ? আপনি রিক্সাচালক এর ভুমিকায় আছেন , আপনাকে সব কথা বলতে আমি বাধ্য না।
মেয়েটি আবার হাসলো । রুদ্র’র কেন যেন এই হাসি বেশ পছন্দ হল । এবার একটু সাহস নিয়ে, রুদ্র জিজ্ঞেস করলো ,
- আপনার নাম জানতে পারি ?
- না, কখনই না। আপনি কি দয়া করে সামনে তাকিয়ে রিক্সা চালাবেন ?
রুদ্র এবার দ্রুত গতিতে ছুটে চলল রিক্সা নিয়ে, ভেতর থেকে এক অজানা আনন্দের উত্তেজনা অনুভব করলো। পৃথিবী এত সুন্দর কেন ?
যথা সময়ে , মেয়েটি গন্তব্যে পৌঁছালো । রিক্সা থেকে নেমেই, ২০ টাকার নোট রুদ্র কে ধরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। ততক্ষণে আকাশ ঝক ঝকা , চারপাশে এক সুখময় পরিবেশ , শুকনো মাটি অনেক দিন পর বৃষ্টির পানির স্পর্শ পেলে যেমন সুঘ্রাণ ছড়ায়, তা অনুভব করলো রুদ্র... মন ভরে কিছু বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে নিলো নিজের ভেতর ...
হঠাৎ ,
মেয়েটি ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে বলল,
- রুদ্র ! শুনুন।
রুদ্র অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এত সুন্দর করে আর এত মায়া নিয়ে এর আগে কি কেউ কখনো তাকে ডেকেছিল , মনে করতে পারলো না রুদ্র।
মেয়েটি আবার বলল,
আমার নাম তন্দ্রা । আশা করছি খুব শীঘ্রই আপনার সাথে আবার দেখা হবে। আজ আসি, কেমন ?

রুদ্র তাকিয়ে রইলো, এক দৃষ্টিতে যতক্ষণ মেয়েটি হেটে চলেছে, তার গন্তব্যে । তন্দ্রা যখন তার দৃষ্টি থেকে মিলিয়ে গেল, রুদ্র একবার চোখ বন্ধ করলো। আরেকবার খুব জোড়ে বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিলো ...

সত্যি , পৃথিবী এত সুন্দর কেন ?

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:১০
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×