
ঘন কুয়াশা ঢাকা শীতের ভোর বেলা, কুয়াশার চাদরে সূর্য মুখ লুকিয়ে রেখেছে। এত সকালে বিছানার লেপের নীচ থেকে আমাকে বের করা যেখানে অসম্ভব একটা ব্যাপার সেই আমি কিনা এই কন কনে ঠান্ডার মাঝেই গুটিশুটি হয়ে বসে আছি রান্নাঘরে। দাদি মাটির চুলায় কাঠ দিয়ে আগুন তৈরী করেছে। সবাই চুলার উপর হাত দিয়ে বসে আছি। একটু তাপ নিচ্ছি শীত থেকে বাচার জন্য। একটু পর মিঠাই গরম করে চারপাশে মিষ্টি মিঠাইয়ের গন্ধ ছড়িয়ে পরেছে।
দাদি ভাপা পিঠা বানিয়ে রাখছে পাতিলে। গরম ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠা। আমরা পিচ্চিরা আর পাতিল ভরতে দিচ্ছি না। পিঠে হবার সাথে সাথেই কে কার আগে নিতে পারে তার প্রতিযোগিতা হয়ে যাচ্ছে

কি যে মজা! গরম গরম পিঠে খেতে খেতে শীতের কষ্ট আর মনেই থাকে না।
[কেউ ভাববেন না এটা এখন হচ্ছে.....

বছরে দুই তিন বার গ্রামে যাওয়া হবেই। কিন্তু শীতে অবশ্যই যাওয়া হয়। কোন বছরের শীতে গ্রামে যাওয়া হবে না এটা হতোই না। আমি পাগল ছিলাম শীতে গ্রামে যাওয়া নিয়ে শুধুই এই পিঠের লোভে

আর কত রকমের পিঠা যে খেতাম! চিতই পিঠা, দুধ চিতই, পুলি পিঠা, সেমাই পিঠা, পাটি সাপটা, ইয়াম্মি

গ্রামের একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে ভোর পাঁচটা ছয়টার পর আর কিছুতেই ঘুমানো যায় না। ঘুম কিভাবে জানি ভেঙ্গে যায়। দাদীর উঠান ঝাড়ু দেবার শব্দ। মুরগি খাবার কাছে আর কক কক কক করে যাচ্ছে। মোরগ ডাকছে। রুমের সাথে লাগানো গাছে কত রকম পাখি বসে কিচির মিচির গান গেয়ে যাচ্ছে! দাদি বলে যায় পিঠা খাবি না? এর পরে কি আর ঘুমিয়ে থাকা যায়?

আমি আর ভাই বোনরা এই শীতের মাঝেও চুলার পারে আগুন পোহাতে বসে যেতাম, আর দাদীর পিঠা বানানো দেখতাম। প্রথম পিঠা টা কখনই ঝাঁকায় পরত না। ভাগ করে সবাইকে দিয়ে দিতেন দাদি। গরম গরম আর মিষ্টি মিঠাইয়ের গন্ধ আর তার সাথে পিঠা খাওয়া! এত ভালো লাগত!

আমি খেয়াল করেছি পিঠা এই ভোরে চুলার পাশ থেকে খেতেই সব থেকে মজা লাগে। এখনও দাদি পিঠা বানিয়ে পাঠিয়ে দেয়। সেই পিঠা ধরেও দেখি না। ভালোই লাগে না। ঠান্ডা জমে যাওয়া পিঠে দেখলেই খাবার ইচ্ছে চলে যায়।

আসলে কদিন ধরে খুবই পিঠা খেতে ইচ্ছে করছে।


ছবিঃ মনির-উজ-জামান, অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া অনুমতি দেয়ার জন্য

Click This Link
[অনুমতি পেয়েছি

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:২৫