বাবা কে নিয়ে আসলাম হাসপাতালে। বাবা খুবই অসুস্থ। লাখ খানেক টাকা না হলে বাবার চিকিৎসা হবে না। আর চিকিৎসা না হলে বাবা বাঁচতে পারবেন না। সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি হলেন বাবা। সামনে বোনের বিয়ে। অনেক কষ্টে এক পাত্র পেলাম। তাও যৌতুকের বিনিময়ে। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো কোন ব্যবস্থা নিশ্চয় করতেন। প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ি। আমার পিছনেও খরচ অনেক। টিউশনির টাকায় সংসার চলবেই না। এমন কোন যোগ্যতা এখনো হয়নি যে, বিরাট অঙ্কের টাকা আয় করব। বাবাকে খুব ভালোবাসি। যে করেই হোক বাবাকে বাঁচাতেই হবে। এমন কেউই নেই যে এ মুহূর্তে সাহায্য করবে। না কিছু একটা করতেই হবে...
যাক অবশেষে টাকার ব্যবস্থা হল। মনে এখন শান্তি। যদিও পেটের পিছনের অংশে খুব ব্যথা। ও কিছু না। মানুষতো একটি কিডনি দিয়েই ভালোই বাঁচতে পারে। কিন্তু বাবাতো বেঁচে যাবেন। বোনের বিয়েটাও হবে। খুব ঘুম পাচ্ছে। অনেক ঘুম...
এ কি! টাকা কই! এখানেই তো ছিল! চুরি হয়ে গেল টাকাটা...
চোর বেটার শাস্তি হল কয়েক বছরের জেল। সব টাকা উড়িয়ে দিয়েছে। অল্প কিছু টাকা উদ্ধার করা হল বেটা থেকে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেল। কি হবে এসব টাকা এখন পেয়ে! ফিরে কি পাব বাবা কে! ফিরে কি পাব আমার বোনকে, যে বিয়ে না হওয়াতে সমাজের অবজ্ঞায় আত্মহত্যা করেছে! ফিরে কি পাব তাদের!
ধরুন আপনি হলেন রাজা। আপনি যা বলেন তাই আইন। আপনার সাথে যদি এমন ঘটে এবং চোরকে যদি আপনি পান তবে কি শাস্তি দিবেন?
আমরা যে চুরির ঘটনা সাধারণ মনে করি, অনেক সময় তা কারো মৃত্যুর কারণও হতে পারে। হতে পারে মানবতার চরম হুমকি। যেমন- ইউরেনিয়াম চুরি।
আচ্ছা কেউ যদি আপনার মা অথবা বোনকে ধর্ষণ করে এবং বোন যদি এই কারণে আত্মহত্যাও করে আপনি তাকে কি শাস্তি দিবেন?
এসবের কোন এক ঘটনা আপনার সাথে যদি হয়, নিশ্চয় আপনি চাইবেন না তা অন্য কারোর সাথে হোক বা আপনার অপর বোনের সাথে হোক। তাই আপনি নিশ্চয় চাইবেন এমন দৃষ্টান্তপূর্ণ শাস্তি দিতে যাতে সে এবং অন্য কেউ আপনার অপর বোনের সাথে এমন করার সাহস না পায়।
আমরা স্কুলে সেই শিক্ষকের পাঠ শিখে যেতাম যিনি সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দিতেন। আইন যত কঠোর হবে এর অপরাধও হ্রাস পাবে তেমন। যে শাস্তি অন্য কারোর জন্য দেয়া হলে বলা হয় কঠোর কিন্তু নিজের সাথে একই অপরাধ হলে সবাই শাস্তি ঠিকই কঠোর চাই। মানুষ বড়ই স্বার্থপর। চিন্তা করতে পছন্দ করে কম।
আমরা যদি সেইসব দেশের দিকে তাকায় যেখানে আইনের শাস্তি কঠোর তাহলে দেখা যায় যে সেই সব দেশে অপরাধের মাত্রা অনেক কম। যেমন যেসব দেশে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড সেইসব দেশে ধর্ষণের হার কম। কিন্তু আমেরিকা এত উন্নত দেশ তারপরও সেখানে ধর্ষণের হার অনেক বেশি। কারণ সেখানে ধর্ষণের শাস্তি কঠোর না। ভারতের নারীরা কিন্তু এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে আবেদন করেছিল। এমন অনেক আন্দোলন এখনো করে যাচ্ছে।
উপসংহার রেখে দিলাম চিন্তাশীলের জন্য।
#সাদ
২৭-এপ্রিল-১৫
#Saad
ফেসবুক