somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের গণহত্যা: আসল নায়ক কে? (৭)

০৫ ই জুলাই, ২০০৭ ভোর ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাকিস্থান প্রশ্নে শেখ মুজিব

অসংগতি, স্ববিরোধীতা, কথা ও কাজে গরমিল শেখ মুজিবের সমগ্র রাজনৈতিক জীবনেরই একটি বৈশিষ্ট। তবে, আপাতত: একাত্তর থেকেই শুরু করা যাক:

এক)
১৯৭০-এর নির্বাচনের পরে আওয়ামীলীগের পক্ষে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী বড় সমাবেশ প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭১-এর ৩ জানুয়ারী রমনা রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে। এদিন আওয়ামীলীগের টিকেটে নির্বাচিত জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান শেখ মুজিব। এই শপথের শেষ বাক্যটি ছিল: জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান
(সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান, ৪ জানুয়ারী, ১৯৭১)

দুই)
এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে দৈনিক পাকিস্তানের ভাষ্য:
"দেশের সর্বত্র শান্তি-শৃংঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করিয়া মেখ মুজিব গণতান্ত্রিক বিজয়কে সুসংহত করার স্বার্থে সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের দালালদের বাড়াবাড়ি দমনের জন্য দেশবাসীকে সদাপ্রস্তুত থাকার আহবান জানান। তিনি বলেন, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, মহল্লায় মহল্লাহ আওয়ামীলীগ গঠন করুন এবং রাতের অন্ধকারে যাহারা ছোরা মারে তাহাদের খতম করার জন্য প্রস্তুত হোন। রাতের অন্ধকারে যাহারা মানুষ হত্যা করে, সেইসব বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চোরের মত রাতের অন্ধকারে মানুষ হত্যা করিয়া বিপ্লব হয় না। বিপ্লব চোরের কাজ নয়। সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদের দালালদের খতম করার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের বাঁশের এবং সুন্দরী কাঠের লাঠি বানাইবার পরামর্শ দিয়া শেখ সাহেব বলেন, প্রত্যেকের হাতে আমি হয় বাঁশের নয় সুন্দরী কাঠের লাঠি দেখতে চাই।"

উপরোক্ত দুটো ঘটনার প্রথমটিতে অর্থ্যাৎ শপথে 'জয় পাকিস্তান' শ্লোগান দিয়ে স্টষ্টত তিনি পাকিস্তানের প্রতি তার আনুগত্য অক্ষুন্ন রেখেছেন। দ্বিতীয় ঘটনাটিও এই আনুগত্যেরই বর্ধিতাংশ। কেননা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তথা 'স্বাধীনতা পূর্ব বাংলা' কায়েমের প্রস্তাব তুলে সশস্ত্র যুদ্ধের কর্মসূচী দিয়েছিল যে বিপ্লবীরা, শেখ মুজিবের কাছে তারা হয়েছেন 'সন্ত্রাসবাদী' ও 'সান্ত্রাসবাদের দালাল' এবং স্বাধীনতাকামী এই সন্ত্রাসবাদীদের 'খতম' করার জন্য বাঁশ ও সুন্দরী কাঠের ব্যাপক আয়োজন করেছেন তিনি।


তিন)
একই ভাষণে শেখ মুজিব প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য "ধন্যবাদ" জানান। এ সম্পর্কে ঐদিনের পাকিস্তান অবজারভারের প্রতিবেদন:
Sheikh Muzib thanked President Yahiya for fulfilling his (Yahiya's) commitment in holding the elections. However, he said that there was a section among his (Yahiya's) subordinates who are still conspiring to undo the election results.
বক্তব্যটা পরিষ্কার। নির্বাচনি ফলাফল বাস্তবায়নে অর্থাৎ শেখ মুজিব তথা আওয়ামীলীগের কাছে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ইয়াহিয়া খান প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন। তার কিছু অধ:স্তন এটা বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে মাত্র। শেখ মুজিবের এ অভিনন্দন যে যথার্থই অভিনন্দন ছিল তার প্রমাণ জেনারেল ইয়াহিয়াও রেখেছেন- ৩ মার্চ ঢাকার জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহবানের নির্দেশ দিয়ে (১৩ ফেব্রুয়ারি) এবং মন্ত্রী পরিষদ বাতিল করে (২২ ফেব্রুয়ারী)।


---

সচলায়তনের মূল ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০০৭ ভোর ৪:২৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×