somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূরের আকাশে চিরঞ্জীব সঞ্জীব

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূরের আকাশে চিরঞ্জীব সঞ্জীব

সবার অন্তরের চিরঞ্জীব সঞ্জীব
``ঐ কান্না ভেজা আকাশ আমার ভাল লাগে না
থমকে থাকা বাতাস আমার ভাল লাগে না
সঞ্জীবকে নিয়ে আমার কিছু স্মৃতি আছে । আমি তখন আমার কর্মজীবনে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে প্রোজেক্ট ভিজিটে যেতাম । সঞ্জীব সম্ভবত তখন বিলুপ্ত "আজকের কাগজে" কাজ করতো । কুমিল্লা, চট্টগ্রাম কক্সবাজার প্রোজেক্ট ভিজিটে দীর্ঘ সময়ে যতটুকু দেখেছি চমৎকার প্রানবন্ত মেধাবী সৃজনশীল মনে হয়েছে ।" দলছুট" তখন হামাগুড়ি থেকে ছুটে চলা শুরু করে দিয়েছে । ওঁর হঠাৎ চলে যাওয়াটা আমার কাছে সুরের আকাশে অসময়ে দলছুট খসে পড়া তারকা মনে হয়েছে ! আজ সঞ্জীব চৌধুরীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ঘিরে থাকুক এই দলছুট তারকাকে !

তিনি ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে আকস্মিক অসুস্থতার পর ১৯ নভেম্বর ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বিভাগে মারা যান। তিনি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একজন কর্মী ছিলেন। ১৯৭৮ সালের মাধ্যমিক এবং ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতে তিনি গণিত বিভাগে ভর্তি হন কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা শেষ না করে পাস কোর্সে স্নাতক পাস করেন। তারপর সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী করেন।বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিনএ কাজ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এবং চার বছরের কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।

বাপ্পা মজুমদার ও সঞ্জীব চৌধুরী ১৯৯৩ প্রথম একটি সুপার মার্কেট এ বসে কিছু কাজ করেন । বাপ্পার অনুরোধে তার একক অ্যালবাম (solo album) এর জন্য কয়েকটি গান লিখে দেয় সঞ্জীব । গানগুলোর মধ্যে ‘রাণী ঘুমায়’, চক্ষু খুলে দেখ’ , হাট্টিমাটিমটিম অন্যতম । তাঁরা একসাথে অশোক কর্মকারের ফটো এক্সিবিশন ‘কাল রাত্রিতে’ কাজ করেন । যা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে এবং একটি ব্যান্ড গঠনে দুজনকে উৎসাহিত করে । সঞ্জীব বাপ্পাকে একটি বাদ্যযন্ত্র গ্রুপ গঠন করতে প্রস্তাব দিলে দুজনে একমত হয়ে কাজ শুরু করেন । ফলস্বরূপ ‘দলছুট’ নামে নভেম্বর ১৯৯৬ যাত্রা শুরু হয় অসম্ভব জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের । এই নামটি সঞ্জিবের দেয়া । প্রাথমিক আপ লাইনে শুধুমাত্র বাপ্পা এবং সঞ্জীব অন্তর্ভুক্ত ছিল । বিখ্যাত গিটার বাদক এবং “অর্থহীন” ব্যান্ডের গায়ক সুমন প্রারম্ভিক পর্যায়ে তাদের সাহায্য করে ।

জয়ের শুরুঃ
১৯৯৭ সালে, দলছুট তাদের প্রথম অ্যালবাম 'আহ্'. যা শ্রোতাদের নজর কাড়তে সফল হইনি । কিন্তু যখন ব্যান্ডের একটি গান 'রঙ্গিলা' মিউজিক ভিডিও টেলিভিশনে দেখানো হয় তখন জনপ্রিয়তার অভিযাত্রা শুরু । খ্যাতি লাভের এই শুরু আর কখনও থেমে থাকেনি সঞ্জীব বলেন, "অদ্ভুত জিনিস আমাদের প্রথম অ্যালবাম আট মাস পরে হয়ে ওঠে একটি হিট "। হৃদয়পুর’ দলছুট এর এর দ্বিতীয় অ্যালবাম, ২০০০ সালে মুক্তি পায়, যা খুব দ্রুত জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায় দলছুটকে । এই অ্যালবাম রিলিজের সাথে, দলছুট তাদের জনপ্রিয়তার স্হায়ী আসন পেয়ে যায় । ২০০২ তৃতীয় অ্যালবাম 'আকাশ চুরি ', যা আস্বাদিত জনপ্রিয়তা রেটিং এ শীর্ষ স্থান নিয়ে নেয় । প্রথম সংস্করণে ১১ টি গান ছিল । ২০০৩ এ এটি আবার সেই বিখ্যাত গান বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়ে না সহ অবমুক্ত হয় । এরপর তাঁদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হইনি । অসম্ভব ব্যস্ততা আর জনপ্রিয়তার ভিড়ে আচ্ছন্ন থেকেছেন । সঞ্জিব তার সাংবাদিকতা গানের রেকর্ডিং নিয়ে তুমুল ব্যস্ত হয়ে পড়েন ।
দলছুট এর চতুর্থ অ্যালবাম ‘জোছনাবিহার’ ২০০৭ সালে রিলিজ এবং একটি তাত্ক্ষণিক ছিল হিট।

সঞ্জীব চৌধুরীর অসময়ে ২০০৭ নভেম্বর এ মৃত্যুর পর, একটি একক অ্যালবাম ট্র্যাকড "টুকরো কথা". গান সাথে তাঁর একটি সর্বশেষ প্রকাশিত কবিতা । সঞ্জীবের ৪৭তম জন্মদিনে ডিসেম্বর ২০১০ সঞ্জীব উৎসবে প্রকাশিত হয় সর্বশেষ অ্যালবাম । এখানে ১১ টি গানের মধ্যে সঞ্জীবের লেখা ‘নতজানু’ অন্যতম । বিখ্যাত সুরকার গায়ক গীতিকার আপেল মাহমুদের তীর হারা এই ঢেউ এর সাগর ‘ অন্তর্ভুক্ত ছিল ।

হোটেল নিরবে (সঞ্জীবের ভাষায় সরব , কারন আমি নিজেও কখনও নিরব দেখিনি) রাত বিরতে আড্ডা দেয়া সঞ্জিবকে আবিষ্কার করা যায় অবলীলায় । ওখানকার বাঙালি খানা ভর্তার ভাজির রকমারি, নানান পাখির মাংস বুয়েট, মেডিকেল বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে সবাইকে টানত, সঞ্জীবকেও টেনেছে নেশার মত । সঞ্জিবের মত আড্ডাবাজ প্রতিভা, ২০ বছর পরে গিয়েও ওয়েটার মুরাদকে আবিষ্কারের ভালবাসা, এটা তাঁকে দিয়েই সম্ভব । গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বাউন্ডুলে ছাত্র, তাঁর ছন্ন ছাড়া আড্ডাবাজ জীবনের খণ্ড খণ্ড চিত্র ছেড়া ছেড়া পেঁজা তুলার মত মেঘ মিলিয়ে দারুন এক অবয়ব সঞ্জীবের । সঞ্জিবের ভাষায় নিশাচর দিনচর তুমুল আড্ডাবাজ এই গায়কের চারুকলার ভেতরের প্রিয় আড্ডা স্থান পানি ছাড়া এক পুকুর যেখানে আমিও কখনও বিস্ময়কর ভাবে পানি দেখিনি । আড্ডা হত দিনে রাতে ঝোপ জঙ্গলের বসতি পানিহীন এই পুকুরে , সাথে গান তার প্রান ।

নিশাচর এই পথিক রাতের আঁধারে দিন মজুরের সাথে মিশে যাওয়া, তাঁদের কলহ তার নিজের টাকায় মিটিয়ে দেয়া, মধ্যরাতের আঁধারে শাহবাগ মোড়ে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে নিরাপদে পেরনো ব্যাঙ দেখে আনন্দ পাওয়া সঞ্জীবকে আমরা নুতন করে দেখি । তার বলা সত্যি গল্পে এক করুন রসাত্মক ছবি দেখি তার পাগল হয়ে যাওয়া বন্ধুর ; যাকে সে আবিষ্কার করে এই টি এস সি মোড়ে জনতা ব্যাংক এর সামনে গভীর রাতে টাকা খোঁজা অবস্থায় । বন্ধুর অকাট্য যুক্তিতে বিমুগ্ধ সঞ্জীব , এত টাকা তোলা হয় সারাদিনে দু একটি টাকাও কি ভুল করে হারাবে না, পড়বে না এই রাজপথে । এরকম দৃশ্যকে চিত্রায়িত করতে পারে একমাত্র সঞ্জীবের মমতাময় মর্মভেদী দু চোখ !

নীল ক্ষেতের তেহারি আর পুরনো বইয়ের দোকানে ওপার বাংলার বিখ্যাত কবির স্বরচিত এপার বাংলার বিখ্যাত কবিকে উৎসর্গ করা বই আবিষ্কার এবং ঐ বই কবিকে ফিরিয়ে দেবার মত সুরসিক এই সঞ্জীব । নীল ক্ষেতের বই নীল ক্ষেতে বেচে দেবার রসঘন বর্ণনায় কিংবা কবি তার কবিতা আবৃত্তি করেন কি রাগ রাগিণী দিয়ে তা অনুকরণের নিখুঁততায় সঞ্জীবকে অনবদ্য লাগে । অথবা আমাদের কক্সবাজার ভ্রমনে পথ আটকে দাঁড়ানো মেছ বাঘের চামড়া বিক্রয়কারিকে পুলিশ পরিচয়ে ভড়কে দিয়ে দারুন আনন্দ দেয়া সঞ্জীবকে ভুলা যায় কি সহজে ।

বকশীবাজারের নবকুমার ইন্সটিটিউটের ছাত্র আর সবার মত স্বর্ণযুগ কাটিয়েছেন এই স্কুলে । সঞ্জীবের ভাষায় তার আজকের জীবনের ভিত্তিভূমি এই স্কুল । মধ্যরাতে বন্ধুর বাড়িতে হানা দেয়া নিয়ম না মানা নিয়মের জনক সঞ্জীবকে যত দেখি ততই মুগ্ধতা বাড়ে । সুরকার, গায়ক, গীতিকার, কবি, অভিনেতা কি নেই তার গলায়, গানে, সুরের মূর্ছনায়, অভিনয়ে আবৃত্তিতে । “ আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া সন্ধানও করিয়া স্বপ্নের ঐ পাখি ধরতে চাই ।। আমি স্বপ্নেরও কথা বলতে চাই ।। আমার অন্তরের কথা বলতে চাই'... তাঁর অন্তরের কথা বলা শেষ না করেই আমাদের বিদায় সেলাম জানালেন সবার অন্তরে চিরঞ্জীব সঞ্জীব ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×