[আমার জীবনের ঘটে যাওয়া একটা ব্যাখ্যাতীত ঘটনা। ঘটনাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। এক ছোট ভাই ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে জানতে চাইল কারো কোন ব্যাখ্যাতীত ঘটনার ফার্ষ্টহ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স আসে কিনা। তখনি ঘটনাটা আবার মনে পড়ল। ফেসবুকে এক্সপেরিয়েন্সটা শেয়ার করেছিলাম, ব্লগেও শেয়ার করলাম। ]
ছবি সূত্র: ইন্টারনেট
ঘটনা সম্ভবতঃ ২০০৬ বা ২০০৭ এর কোন এক ঈদের পরদিন। আমি ঈদ করতে ঢাকা থেকে আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাই। আমার আম্মা আব্বাও যশোর থেকে গ্রামের বাড়িতে যায়। আমার গ্রামের বাড়ি মাগুরা ফরিদপুরের মাঝে কামারখালি গড়াই সেতুর পাশেই। আমি সাধারনতঃ আমার টয়োটা স্টারলেট একা একাই ড্রাইভ করি। অফিসের ছুটি না থাকায় আমাকে ঈদের পরের দিনই ফিরতে হবে ঢাকায়। গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দিলে ৪ ঘন্টায় ঢাকায় চলে আসা যায়। আর ঈদের পরে রাস্তা ফাঁকা থাকে বলে আরো তাড়াতাড়ি ফেরা যায় ঢাকায়। আমি রাতে ড্রাইভ করতে পছন্দ করি না কারন ছোট স্টারলেটে সব গাড়ির হেডলাইটের আলো চোখে পড়ে, বেশিক্ষন ড্রাইভ করা যায় না। তাই আমার টার্গেট ছিল যেন দুপুরে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে সন্ধার আগেই ঢাকা পৌছে যাই। তবে ঐদিন রওনা দিতে দিতে দুপুর দুটো আড়াইটে বেজে গেল।
আমি যখন পাটুরিয়া ফেরী ঘাট পার হলাম তখন সন্ধ্যা কেবল হয়েছে। পাটুরিয়া পার হয়ে আরো প্রায় মিনিট দশেক বা বিশেক মনে হয় ড্রাইভ করেছি। তখন পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। পাটুরিয়ার পরে রাস্তা এমনিতেই খুব নির্জন ও অন্ধকার। গাড়ির হেডলাইট ছাড়া আর আশে পাশে কোন আলো প্রায় নেই। তার উপর ঈদের কারনে রাস্তায় গাড়িও অনেক কম। প্রায় নেই বললেই চলে। আমি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি বেশ দ্রুত। হঠাত মনে হলো আমার পাশের সিটে কেউ বসে আছে। তার নিঃশ্বাসের শব্দ, নড়াচড়ার শব্দ আমি পাচ্ছি। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এল। শরীরে একফোটা কোন শক্তি নেই। আমি যেন নিজের ভেতরের বুঝতে পেরেছি আমার এখন কিচ্ছু করার নেই। এমকি কে যেন আমাকে আমার মনের ভিতরেই বলে দিল যেন আমি পাশে না তাকাই। এমনকি আমি এও বুঝতে পারলাম একবার পাশের সিটে বা রিয়ার ভিউ মিররে তাকালে যে দৃশ্য দেখতে হবে তা সহ্য করার মতো শক্তি আমার নেই। এমন কতক্ষন ছিল আমি কোন স্মৃতি আমার নেই। হঠাত মনের ভেতরেই মনে হল কে যেন জানিয়ে দিল এখন আর কোন ভয় নেই। আমি সন্বিত ফিরে পেলাম। রাস্তা ও ড্রাইভিং এ মন দিলাম। মিনিট খানেক পরেই রাস্তার পাশে ছোট একটা বাজারে চায়ের দোকানের পাশে দাড়ালাম। আমি গাড়ি থেকে নেমে দোকানে বসতেই আমি চাওয়ার আগেই চা এগিয়ে দিল। আমি ধীরে ধীরে ধাতস্থ হলাম। মন থেকে ভয় ঝেড়ে ফেললাম। ধরে নিলাম একটা সাময়িক মনভীতি। চায়ের দোকান থেকে একটু পানি নিয়ে মুখে পানি দিলাম। চায়ের দাম মেটালাম। খেয়াল করলাম চা দোকানদারের পাশে বসে আছে ছোট্ট রোগা পাতলা একটা ছেলে। বয়স বছর দশেক হয়ত হবে। এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি স্টার্ট দিলাম । বাবা ছেলে গাড়ির দিকে এগিয়ে এল, গাড়ি হালকা এগিয়ে যখন বাবা-ছেলের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে তখনো ছেলেটা একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা তখন মৃদু কিন্তু দৃঢ় স্বরে আমাকে বলল “আর কোন ভয় নেই”। সেই কথাটুকু আমাকে যেন নতুন করে সাহস দিল। আমি গাড়ি চালিয়ে চল এলাম। তখন দোকানীর কথাটুকু খুব স্বভাবিক শোনালেও আমি কিছু দূর গাড়ি চালিয়ে আসার পর বুঝলাম আমি যে ভয় পেয়েছি তা দোকানী কিভাব বুঝলো?
আমি তাকে আমার ভয়ের ব্যাপারে কিছুই বলিনি। আরো অনেক পরে আমি সময় ও দূরত্ব হিসাব করে বুঝেছিলাম জায়গাটা হয়ত তারেক মাসুদ ২০১১ সালে যেখানে এক্সিডেন্ট করে মারা যান সেখানে বা আশেপাশেই হবে।
এ ঘটনার ব্যাখ্যা আমি আজও পাইনি। কারো কাছে কোন ব্যাখ্যা থাকলে আমাকে জানাবেন।