somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয়ন্তী

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




রাহাত আনামের একমাত্র মেয়ে প্রিয়ন্তী । সে তার বাবার বুকের উপর উঠে বসে আছে । দিনের এই সময়টাতে তিনি প্রায়ই প্রিয়ন্তী কে নিয়ে খেলা করে । প্রিয়ন্তীর বয়স ১০ মাস । ভাঙ্গা ভাঙ্গা বুলিতে বা বা বলে । মেয়ের মুখের এই ভাঙ্গা ভাঙ্গা ডাক যে কতটা আকুতির, কতটা হৃদয় ছোঁয়ানো সেটা শুধু মাত্র একজন পিতাই বুঝে । প্রিয়ন্তীর উপরের মাড়ির দুটো দাত উঠছে । সে প্রায়ই বাবার নাকে কামড় দেবার চেষ্টা করে । বাবার বুকে উঠে এদিক ওদিক দুলে । বাবার গোঁফ ধরে টান দেয় । তার উঠতি দাঁতগুলো বের করে আপন মনেই হাসে । খেলা করতে করতে এক সময় বাবার বুকেই ঘুমিয়ে যায় । রাহাত প্রিয়ন্তীর ঘুমন্ত মুখের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে । তার কাছে মনে হয় প্রিয়ন্তীর ঘুমন্ত মুখের এই অবয়ব গল্প উপন্যাসের যে কোন পরীকে হার মানাবে । রাহাত প্রায় প্রতিদিনই মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । প্রিয়ন্তীর মুখের এই অবয়ব রাহাতের জন্মলগ্ন থেকে চেনা । প্রিয়ন্তীর মুখের পুরো অবয়বটাই তার মায়ের । রাহাত তার মাকে হারিয়েছেন বছর দশেক আগে । প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকালেই রাহাত চোখের জল কে সংবরণ করতে পারে না । রাফিয়া সচরাচর রাহাতের চোখ থেকে পানি ঝরতে দেখে না , কিন্তু মাঝ রাতে বাবা মেয়ের এই নিশ্চুপ কথোপকথন দেখে , সেও নিশ্চুপ থাকে ।
রাহাত রাফিয়া দম্পতির প্রথম সন্তানের জন্মের ঠিক বার বছর পর প্রিয়ন্তীর জন্ম । মাঝে একটা মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ায় তারা প্রিয়ন্তীকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল । হাটি হাটি পা পা করে রাফিয়ার সময়গুলো পার হয়েছে । রাহাত প্রায়ই রাফিয়ার পেটে কান পেতে অনাগত প্রিয়ন্তীর নড়াচড়ার শব্দ শোনে । রাফিয়া রাফাতের কাজ দেখে বলে তুমি কি পাগল হয়েছো নাকি । তার উচ্ছাস এমন যেন, সে প্রথম বারের মত বাবা হচ্ছে । ওভারে শেষ বলে যখন ২ বলে ১ রান দরকার , তখন উইকেটের যবনিকা পতনে বলার যে রকম উচ্ছ্বাসিত হয়ে উৎযাপন করে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুমে ডাঃ যখন বলেছিলেন, আপনি কন্যা সন্তানের পিতা হচ্ছেন, তখন সেই রকম একটা আবহ তৈরি করেছিলেন রাফাত আদনান । সতেরো বছরের এই সংসার জীবনে রাফিয়ার মনে হয় , প্রিয়ন্তীর আগমন উপলক্ষে রাহাতের পাগলামি একটু বেশিই বেড়েছে । এ নিয়ে রাহাতের সাথে রাফিয়ার প্রায়ই খুনসুটি হয় । রাহাত যখন অফিস থেকে ফেরেন , তার এক কলিগ প্রায়ই স্কুল থেকে তার মেয়েকে নিয়ে ফেরেন । বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এক সাথে যাওয়া হয় প্রায়ই । ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া মেয়ে তার বাবা কে বকা দেয়, তোমাকে না কত্তবার বলেছি সিগারেট খাবে না , তুমি আজ আবারো সিগারেট খেয়েছো । বাসায় চল তোমার আজ বিচার আছে । রাহাত মনে মনে হাসে । তার এই কলিগ সিগারেটের ধারে কাছেও যায় না । কিন্তু মেয়েকে নিতে আসার সময় , সিগারেট ধরিয়ে দুই এক টান দিয়ে ফেলে দেয় । ধোঁয়া মুখ থেকে কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌছায় না । মেয়ের কাছে বকা না খেলে নাকি তার ভাল লাগে না । রাহাত মনে মনে ভাবে , তার মেয়েও বড় হচ্ছে ।

আজ প্রিয়ন্তীর মুখে ভাত ছিল । কাছের আত্মীয় স্বজন কেউয় বাদ যায় নি । বাসায় চাঁদের হাট বসেছে । প্রিয়ন্তীর বড় খালা আসতে দেরি হওয়াই , রাহাত নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছেন । ২০ জন ফকির খাওয়াবেন বলে নিয়াত করেছেন । আজকাল আর সচরাচর ফকিরদের দেখা মেলে না । গত এক মাসে যারাই বাসায় ভিক্ষা নিতে এসছেন , তাদের সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে , যেন ১৮ তারিখে অবশ্যই আসে । আগত সব আত্মীয় স্বজনই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত । রাহাতের তেমন কোন কাজ নেই । প্রিয়ন্তীকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে । জুম্মার নামাজের মুসুল্লিদের দাওয়াত করা হয়েছে । খাওয়া শেষ হবার আগে রাহাত প্রতি টেবিলে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে , আর কিছু লাগবে কি না । খাবার বিতরণ কারী সবাইকে রাহাত বার বার বলে দিচ্ছে , কেউ যেন অসন্তুষ্ট হয়ে না যায় । মাগরিবের নামাযের পর রাহাত প্রাণ খুলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে , তার রহমতে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হয়েছে । নামাজ শেষ করে উঠতে দিয়ে রাহাত মাথা ঘুরে পড়ে যায় । হসপিটালে নেবার আগেই রাহাতের দেহ নিথর হয়ে যায় ।
পূর্ণিমার রাত । পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় চারদিক প্লাবিত । শেষ বারের মত রাহাতে নিথরদেহ তাঁর নিজের বিছানায় শোয়ানো হয়েছে । পশ্চিমে ঢোলে পড়া চাঁদের আলো জানালা দিয়ে এসে রাহাতে মুখে পড়ে । আজকাল প্রায়ই প্রিয়ন্তী মাঝ রাতে জেগে উঠে বাবার বুকের উপর উঠে খেলা করে । আজ অবশ্য বাড়ির লোকসরাগম আর কোলাহলে তার ঘুম ভেঙ্গেছ। প্রিয়ন্তী এদিক ওদিক গড়াগড়ি দিয়ে আবার বাবার বুকে এসে বসছে । বাবার চোখের পাতা ধরে এক জায়গায় করার চেষ্টা করছে । বাবার গোঁফ ধরে টান দিয়ে একা একাই হাসছে । কিছুক্ষন পর আবার সে বাবার বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়ে । পূর্ণিমার রাতে হঠাৎ করে মেঘের আনাগোনা সচারচার দেখা যায় না । আষাঢ় শ্রাবণ ছাড়া খুব কম পূর্ণিমার রাতেই এমনটা হয় । তবে গল্প উপন্যাসে প্রায়ই দেখা যায়। বৈশাখের এই পূর্নিমার রাতে আজ আবার হুট করেই মেঘ এসে চাঁদটাকে ঘিরে ধরে । তবে এই অসময়ের মেঘ খুব বেশি ক্ষন থাকে না । কিছুক্ষণ ঝুম বৃষ্টির পরে আবার ফিরে যায়। আজকের পূর্ণিমা গল্প উপন্যাসের কাহিনীকে ছাড়িয়ে যায় । বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে সাথে নেমে আসে ঝুম বৃষ্টি । বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় রাফিয়ার চোখে পানি স্পষ্ট বোঝা যায় । এক সময় বৃষ্টি ছেড়ে আবার চারিদিকে চাঁদের আলো ছড়িয়ে যায় । বাড়ির সব আত্মীয়রাই নির্ঘুম নির্বাক চেয়ে থাকে । মাঝে মাঝে চাপা কান্নার শব্দ ভেসে আসে । দূরে শেষ রাতের পাখিরা ডেকে যায় ...


নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম
২৩ শে অগ্রহায়ণ , ১৪২৪ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×