ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন টাকা ছাড়া স্বাস্থ্যসনদে সই করেন না। প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরি পাওয়া এক সনদপ্রত্যাশীকে নিজেই এই তথ্য দিয়ে ৪০০ টাকা দাবি করেছেন সিভিল সার্জন আতিয়ার রহমান। পরে অবশ্য তিনি এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে খবরটি না করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন।
সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য সিভিল সার্জনের কাছ থেকে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রত্যয়নপত্র (স্বাস্থ্যসনদ) নিতে হয়। সরকারিভাবে এর জন্য টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে চাকরি পেয়েছেন শরীফুল ইসলাম। স্বাস্থ্যসনদ নিতে আজ ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে যান। নির্ধারিত ফরম পূরণের পর ওই কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মো. আবদুল বাছেদ বলেন, ‘টাকা দেন।’ কিসের টাকা? ‘সনদ নিতে হলে ৪০০ টাকা দিতে হবে।’ রসিদ দেবেন? ‘না।’ সরকারি ফি কত বলেন, রসিদ দেন, টাকা দেব। রসিদ না দিলে কোনো টাকা দেওয়া তো সম্ভব না। আবদুল বাছেদ বলেন, ‘টাকা ছাড়া আমার স্যার সনদে সই করেন না। টাকা দিতে না চাইলে স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন।’
ইতিমধ্যে একজন সহকারী গিয়ে শরীফুল ইসলামের পূরণ করা ফরমটি সিভিল সার্জন আতিয়ার রহমানকে দিয়ে আসেন। পাঁচ মিনিট পর শরীফুল ইসলাম তাঁর কক্ষে গিয়ে বিষয়টি জানান। সিভিল সার্জন তাঁর চোখ পরীক্ষা করবেন বলে জানান। পরীক্ষা শেষে তিনি বলেন, ‘কই, টাকা কই? আমি তো ৪০০ টাকার নিচে সই করি না।’
শরীফুল বলেন, ‘রসিদ দিলে আমি টাকা দেব। রসিদ ছাড়া টাকা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।’
—তাহলে আপনি সনদ পাবেন না।
—আপনি তো ডিসির (জেলা প্রশাসক) সমমানের পদে আসীন। আপনি কেন এভাবে টাকা নিচ্ছেন?
—নিচ্ছি তো কী হয়েছে? সব সিভিল সার্জনই নেয়, আমিও নিচ্ছি।
—এটা সদম্ভে বলার কী আছে!
—এটা আবার গোপন রাখার কী আছে? এটা ওপেন-সিক্রেট। আমি যে টাকা নেই, এটা সবাই জানে। আপনাকেও ৪০০ টাকা দিতে হবে। আমি ৪০০ টাকার নিচে সই করি না।
এই পর্যায়ে শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দুঃখিত, আপনাকে বলতে হচ্ছে; আমি একজন সাংবাদিক, প্রথম আলোতে কাজ করি। আপনি আমার সঙ্গে এটা করবেন না।’
—সাংবাদিক হয়েছেন তো কী হয়েছে? টাকা না দিলে আপনারটা সাইন হবে না। আর আপনার যদি একান্ত আর্থিক অসংগতি থাকে, তাহলে আপনি ২০০ টাকা দিতে পারেন। মনে রাখবেন, আমি কিন্তু ৪০০ টাকার নিচে সই করি না।
—স্যার, আপনি এভাবে বলবেন না। আপনি যদি রসিদ দেন তাহলে আমি ৪০০ টাকার বেশি হলেও দিতে পারব।
এই কথোপকথনের শুরু থেকে দৈনিক সমকাল-এর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহীন আলম ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। পরে অফিস সহকারী আবদুল বাসেতসহ আরও কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন।
শরীফুল ইসলাম জানান, এ পর্যায়ে তিনি সিভিল সার্জনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে একজন অফিস সহকারী এসে তাঁকে বলেন, ‘আপনার নিয়োগপত্রের ফটোকপি দেন, সনদ নিয়ে যান।’ সনদ ফটোকপি করে নিয়ে এলে অন্য কর্মকর্তারা জানান, সিভিল সার্জন শরীফকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন। শরীফ তাঁর কক্ষে গেলে তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি তাঁর কক্ষে থাকা সাবেক সিভিল সার্জনদের তালিকা দেখিয়ে বলেন, ‘এই ১৭ জন সবাই এই কাজ (টাকা নেওয়া) করে গেছেন। এটা হয়ে আসছে। এখন তুমি নিউজ করলে আমারটা শুধু লোকজন জানবে। আমার মানসম্মানের ক্ষতি হবে।’
বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকিরকে জানানো হলে তিনি বলেন, অভিযোগটি সম্পর্কে তিনি খোঁজ নেবেন। প্রয়োজনে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ১৫-২০ জন স্বাস্থ্যসনদ নিতে আসেন। বড় ধরনের নিয়োগ, যেমন—প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, খাদ্য অধিদপ্তরসহ অন্যান্য নিয়োগ হলে অনেক লোক একসঙ্গে সনদ নিতে আসেন। সবাইকে টাকা দিয়ে সনদ নিতে হয়।
আতিয়ার রহমান এর আগে ভোলার সিভিল সার্জন ছিলেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ময়মনসিংহে যোগ দেন ।
প্রথম আলো হতে নেয়া
সাংবাদিককে ধন্যবাদ জানাই যে, একটারে ধরছে । মামু এখন কি আর টাকা নিবা ?