আমার রুমমেট হঠাৎ করেই বলে উঠল বাংলাদেশে যেসব রাখাইন আছে তারাও বাংলাদেশের নাগরিক নয় । তার যুক্তি বার্মিজদের মত; দীর্ঘদিন একটা দেশে থাকলেই সে জাতি বা ব্যক্তি সেই দেশের নাগরিক হয়ে যায় না । বার্মিজদের মতে, রোহিঙ্গাদের পূর্বপুরুষরা বর্তমান বাংলাদেশে বাস করত, পরে নানা প্রয়োজনে, বিভিন্ন সময়ে তারা আরাকান রাজ্যে বা বর্তমানে মিয়ান্মারের ‘রাখাইন স্টেটে’ গিয়ে বসবাস শুরু করে, বংশানুক্রমে নিজেদের জন্মভুমি হিসাবে মনে করতে শুরু করে । যদি এরকমই হয়ে থাকে তাহলে, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রাখাইনরাও শুরু হতে এদেশে বসবাস করত না । তারাও একইভাবে বাংলাদেশকে মাতৃভুমি ভাবে । বাংলাদেশের জনগণ রাখাইনদের কোনদিন পর ভাবতে পারেনি বরং আমাদের সরকার রাখাইনদের উপজাতি কোঠায় নানা সুবিধা দিয়ে থাকে । অধিকন্তু, সাধারণ জনগনের মনে কখনোই এ কথা আসেনি যে রাখাইনরা আমাদের কেউ নয় ?
কিন্তু দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারের জনগণ অধিকার দেয়া তো দূরে থাক, রোহিঙ্গারা যে তাদেরই পরিবারের একজন, এ কথা কখনোই কল্পনা করতে পারেনি । তারা বা তাদের সরকার তিনটি নাগরিকশ্রেণী গড়ে তুলেছে, যার মধ্যে রোহিঙ্গা নামক বাঙ্গালিদের সেখানে স্থান হয় নি । এককথায় রাস্তার নেড়ি কুত্তার মত ভাবে তারা এই বাঙ্গালিদের । তাদের ধারণা, পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলা ভাষাভাষী , চেহারাও ওদের মত কালো, জাতে (?) [সারাসেন, যবন, স্লেচ্ছ শুনেছি বৌদ্ধরা কি বলে জানি না । ] তাই তারা মিয়ানমারের নাগরিক হতে পারে না । এরা বাংলাদেশের নাগরিক, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী । ওদের ঘাড় ধরে বের করে দাও । এভাবেই বিগত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছে, রোহিঙ্গারাও প্রাণভয়ে তাদের আদিদেশে ফিরে আসে ।
যেহেতু রোহিঙ্গা আসা শেষ হবে না ততদিন, যতদিন না মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসাবে গ্রহণ করে বা যতদিন মিয়ানমারে একজন রোহিঙ্গাও থাকে । সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যায় বার্মিজ জনগণ রোহিঙ্গাদের নিজেদের লোক ভাবতে পারে না তাদের সংকীর্ণ চিত্তের জন্য । তাই তাদের সরকার , হোক সেটা সামরিক বা গণতান্ত্রিক, অন্তত এই ইস্যুতে জণগনের জনমতের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিবে না অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিবে না । এর অর্থ রোহিঙ্গাদের মাঝে মাঝেই হয়রানি করবে, তাদের বের করে দিবে, সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য । বাংলাদেশ এর বিরোধিতা করবে, নানা সমস্যার কথা সামনে আনবে । কিন্তু পরিস্থিতি যদি অনেক বেশি ঘোলাটে হয় তবে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ বিদেশে কর্মসংস্থান বা ঋণ না দেওয়ার হুমকি বা শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়ে জাতিসংঘ কোন কথা বললেই ওয়ান-ইলেভেনের মত বিপদে পরবে এবং বাংলাদেশে রোহিঙাদের ঢুকতে দিতে বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হয়ে পরবে । তারমানে বর্তমান যে পরিস্থিতি এটি আজীবন চলতে থাকবে ।
মানবতা আর পররাস্ট্র নীতি একই সাথে চলে না , দেশের স্বার্থে এটি অবশ্যই আলাদা । পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আছে, সেগুলোর মধ্যে গেলাম না । কিন্তু সমস্যার তো স্থায়ী একটা সমাধান হওয়া উচিত । হয়তো মিয়ানমার , বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা একদেশ হলে এ অঞ্চলের অনেক জাতিগত সমস্যার সমাধান হত । আমি মনে প্রাণে তা চাইলেও তা সম্ভব নয় । রাজনৈতিক নেতারা তা মানবে না । তাই বার্মিজদের মত করে ভাবতে ইচ্ছা করছে । তার আগে বলি, বিবেকবান মানুষ কিছুক্ষণের জন্য বিবেকের সুইচ অফ করে দিন । রোহিঙ্গারা বার্মিজ কেন নয়, স্বীকৃতি কেন পায়নি এটা নিশ্চয়ই মনে আছে । তেমনিভাবে রাখাইনরা এদেশের না । তারা মিয়ান্মারের ‘রাখাইন স্টেট’ হতে এসেছে । চেহারাও তাদের মত । জাতেও তাই । তাহলে তারা কিভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হয় ?
তাই বাংলাদেশে রাখাইনসহ মিয়ান্মারের বংশোদ্ভুত যত উপজাতি আছে তাদের সাথে রোহিঙ্গা বিনিময় করলে কারো নাগরিকত্ব নিয়ে প্রব্লেম হবে না । রাখাইনরা আদিদেশ মিয়ান্মারের ‘রাখাইন স্টেটে’ গেলে বার্মিজরা নিশ্চয়ই তাদের বাঙালি বলে তাড়িয়ে দিতে পারবে না । সেই সাথে আমাদেরও আগত রোহিঙ্গাদের জমি দিতে সমস্যা হবে না । অর্থাৎ মিয়ান্মার যদি রোহিঙ্গাদের পাঠায় আমরা কেন রাখাইন আমাদের দেশে রাখব ? যখনই একদল রোহিঙ্গা পাঠাবে, আমরা একদল রাখাইন পাঠাব । বার্মিজরা তাদের আপনভাই রাখাইনদের পাবে, তখন রোহিঙ্গাদেরও না হয় আমরা কাছে টেনে নিলাম । সেই সাথে রাখাইন স্টেটে দাংগা দূর হবে । একইভাবে রোহিঙ্গারাও মৃত্যুকুপ হতে রক্ষা পাবে ।
সাময়িক সমস্যা হলেও দীর্ঘমেয়াদীভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপর হতে একটা ধকল দূর হবে চিরদিনের জন্য । প্রস্তাবটা করলাম কারণ আমাদের কাছে মানবিকতা কোন ফ্যাক্ট না । স্বার্থ ফ্যাক্ট । এখানে আমাদের স্বার্থ ব্যহত হবে না কারন মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা , আমাদের মোট উপজাতির চেয়ে কম হবে । তাতে কক্সবাজার, বরগুনা, পটুয়াখালি, ভোলা বা পার্বত্য চট্টগ্রামে জনঘনত্বও কমবে । আমরা তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হতে পারব । সমস্যা সমাধানের এই উপায় বাস্তবায়িত হবে না জানি কিন্তু এটাই হওয়া উচিত ।