somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা - রাখাইন বিনিময় করা হোক । একটি চিরস্থায়ী সমাধান প্রচেষ্টা

১৫ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার রুমমেট হঠাৎ করেই বলে উঠল বাংলাদেশে যেসব রাখাইন আছে তারাও বাংলাদেশের নাগরিক নয় । তার যুক্তি বার্মিজদের মত; দীর্ঘদিন একটা দেশে থাকলেই সে জাতি বা ব্যক্তি সেই দেশের নাগরিক হয়ে যায় না । বার্মিজদের মতে, রোহিঙ্গাদের পূর্বপুরুষরা বর্তমান বাংলাদেশে বাস করত, পরে নানা প্রয়োজনে, বিভিন্ন সময়ে তারা আরাকান রাজ্যে বা বর্তমানে মিয়ান্মারের ‘রাখাইন স্টেটে’ গিয়ে বসবাস শুরু করে, বংশানুক্রমে নিজেদের জন্মভুমি হিসাবে মনে করতে শুরু করে । যদি এরকমই হয়ে থাকে তাহলে, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রাখাইনরাও শুরু হতে এদেশে বসবাস করত না । তারাও একইভাবে বাংলাদেশকে মাতৃভুমি ভাবে । বাংলাদেশের জনগণ রাখাইনদের কোনদিন পর ভাবতে পারেনি বরং আমাদের সরকার রাখাইনদের উপজাতি কোঠায় নানা সুবিধা দিয়ে থাকে । অধিকন্তু, সাধারণ জনগনের মনে কখনোই এ কথা আসেনি যে রাখাইনরা আমাদের কেউ নয় ?


কিন্তু দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারের জনগণ অধিকার দেয়া তো দূরে থাক, রোহিঙ্গারা যে তাদেরই পরিবারের একজন, এ কথা কখনোই কল্পনা করতে পারেনি । তারা বা তাদের সরকার তিনটি নাগরিকশ্রেণী গড়ে তুলেছে, যার মধ্যে রোহিঙ্গা নামক বাঙ্গালিদের সেখানে স্থান হয় নি । এককথায় রাস্তার নেড়ি কুত্তার মত ভাবে তারা এই বাঙ্গালিদের । তাদের ধারণা, পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলা ভাষাভাষী , চেহারাও ওদের মত কালো, জাতে (?) [সারাসেন, যবন, স্লেচ্ছ শুনেছি বৌদ্ধরা কি বলে জানি না । ] তাই তারা মিয়ানমারের নাগরিক হতে পারে না । এরা বাংলাদেশের নাগরিক, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী । ওদের ঘাড় ধরে বের করে দাও । এভাবেই বিগত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছে, রোহিঙ্গারাও প্রাণভয়ে তাদের আদিদেশে ফিরে আসে ।


যেহেতু রোহিঙ্গা আসা শেষ হবে না ততদিন, যতদিন না মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসাবে গ্রহণ করে বা যতদিন মিয়ানমারে একজন রোহিঙ্গাও থাকে । সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যায় বার্মিজ জনগণ রোহিঙ্গাদের নিজেদের লোক ভাবতে পারে না তাদের সংকীর্ণ চিত্তের জন্য । তাই তাদের সরকার , হোক সেটা সামরিক বা গণতান্ত্রিক, অন্তত এই ইস্যুতে জণগনের জনমতের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিবে না অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিবে না । এর অর্থ রোহিঙ্গাদের মাঝে মাঝেই হয়রানি করবে, তাদের বের করে দিবে, সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য । বাংলাদেশ এর বিরোধিতা করবে, নানা সমস্যার কথা সামনে আনবে । কিন্তু পরিস্থিতি যদি অনেক বেশি ঘোলাটে হয় তবে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ বিদেশে কর্মসংস্থান বা ঋণ না দেওয়ার হুমকি বা শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়ে জাতিসংঘ কোন কথা বললেই ওয়ান-ইলেভেনের মত বিপদে পরবে এবং বাংলাদেশে রোহিঙাদের ঢুকতে দিতে বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হয়ে পরবে । তারমানে বর্তমান যে পরিস্থিতি এটি আজীবন চলতে থাকবে ।


মানবতা আর পররাস্ট্র নীতি একই সাথে চলে না , দেশের স্বার্থে এটি অবশ্যই আলাদা । পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আছে, সেগুলোর মধ্যে গেলাম না । কিন্তু সমস্যার তো স্থায়ী একটা সমাধান হওয়া উচিত । হয়তো মিয়ানমার , বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা একদেশ হলে এ অঞ্চলের অনেক জাতিগত সমস্যার সমাধান হত । আমি মনে প্রাণে তা চাইলেও তা সম্ভব নয় । রাজনৈতিক নেতারা তা মানবে না । তাই বার্মিজদের মত করে ভাবতে ইচ্ছা করছে । তার আগে বলি, বিবেকবান মানুষ কিছুক্ষণের জন্য বিবেকের সুইচ অফ করে দিন । রোহিঙ্গারা বার্মিজ কেন নয়, স্বীকৃতি কেন পায়নি এটা নিশ্চয়ই মনে আছে । তেমনিভাবে রাখাইনরা এদেশের না । তারা মিয়ান্মারের ‘রাখাইন স্টেট’ হতে এসেছে । চেহারাও তাদের মত । জাতেও তাই । তাহলে তারা কিভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হয় ?


তাই বাংলাদেশে রাখাইনসহ মিয়ান্মারের বংশোদ্ভুত যত উপজাতি আছে তাদের সাথে রোহিঙ্গা বিনিময় করলে কারো নাগরিকত্ব নিয়ে প্রব্লেম হবে না । রাখাইনরা আদিদেশ মিয়ান্মারের ‘রাখাইন স্টেটে’ গেলে বার্মিজরা নিশ্চয়ই তাদের বাঙালি বলে তাড়িয়ে দিতে পারবে না । সেই সাথে আমাদেরও আগত রোহিঙ্গাদের জমি দিতে সমস্যা হবে না । অর্থাৎ মিয়ান্মার যদি রোহিঙ্গাদের পাঠায় আমরা কেন রাখাইন আমাদের দেশে রাখব ? যখনই একদল রোহিঙ্গা পাঠাবে, আমরা একদল রাখাইন পাঠাব । বার্মিজরা তাদের আপনভাই রাখাইনদের পাবে, তখন রোহিঙ্গাদেরও না হয় আমরা কাছে টেনে নিলাম । সেই সাথে রাখাইন স্টেটে দাংগা দূর হবে । একইভাবে রোহিঙ্গারাও মৃত্যুকুপ হতে রক্ষা পাবে ।


সাময়িক সমস্যা হলেও দীর্ঘমেয়াদীভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপর হতে একটা ধকল দূর হবে চিরদিনের জন্য । প্রস্তাবটা করলাম কারণ আমাদের কাছে মানবিকতা কোন ফ্যাক্ট না । স্বার্থ ফ্যাক্ট । এখানে আমাদের স্বার্থ ব্যহত হবে না কারন মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা , আমাদের মোট উপজাতির চেয়ে কম হবে । তাতে কক্সবাজার, বরগুনা, পটুয়াখালি, ভোলা বা পার্বত্য চট্টগ্রামে জনঘনত্বও কমবে । আমরা তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হতে পারব । সমস্যা সমাধানের এই উপায় বাস্তবায়িত হবে না জানি কিন্তু এটাই হওয়া উচিত ।
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×