somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাইন-ইলেভেন: পরিবর্তন এনেছে কি সাংবাদিকতায়?

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সংবাদ টিভিতে দেখে হতবাক হয়ে যায় বিশ্ববাসী। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশে এমন একটা ঘটনা ঘটবে, তা সাধারণ নাগরিকদের ভাবনাতেও ছিল না। আক্রান্ত হয়েছে আমেরিকা, এই খবরটিই প্রথমে দেয় গণমাধ্যম।

হামলার ঘটনার পর সংবাদে প্রাধান্য পেয়েছে সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী, ওসামা বিন লাদেন ও তার আল-কায়েদা, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র, ইসলামি মৌলবাদ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের স্থাপত্য কাঠামো, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, গোয়েন্দা সংস্থার অবস্থা, প্রেসিডেন্ট বুশের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ, জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার, শোক প্রকাশ ইত্যাদি। এর বাইরে কেমন ছিল সে সময়কার সাংবাদিকতা, তা নিয়েও গবেষণা হয়েছে বিস্তর। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা মনে করেন, সংবাদ, তথ্য ও আইডিয়ার প্রবাহ গণতন্ত্রের বিস্তার করে, যার মাধ্যমে নাগরিকেরা জানাতে পারেন, বিষয়টি কী। জাতীয় মানসিকতা তৈরি করতে সংবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এ কথাও তারা মনে করেন।

সেই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমেরিকার সাংবাদিকদের অসুবিধাগুলো ছোট করে দেখার কিছু নেই। কারণ ঘটনাটি তাদের জন্য ছিল একই সঙ্গে অপ্রত্যাশিত ও বেদনার। তার পরও ঘটনার অব্যবহিত পরে আতঙ্ক তৈরি করেনি যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম। প্রচার করেনি গুজব। যদিও প্রথমেই তাদের জানাতে হয়েছে পৃথিবী নিরাপদ আছে কি না, সে তথ্য।
তবে সংবাদ প্রচারে আসে বেশ পরিবর্তন। বেশ কিছু গবেষণার তথ্য থেকে দেখা যায়, বৈদেশিক নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রচারের সময় বেড়ে যায় অনেক। বাড়ে যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদের সংবাদ প্রচারের সময়সীমা। একই সময়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সংবাদ প্রচার কমে যায়। অপরাধ ও আইন প্রয়োগ বিষয়ে প্রতিবেদন কমে। লক্ষণীয়ভাবে কমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে প্রতিবেদন।
সোভিয়েতের পতনের পর এক মেরু বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই যখন নিজস্ব বৈদেশিক নীতি নিয়ে প্রতিবেদন বেড়ে যায়, তখন তা নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মানুষের আগ্রহ বাড়ে। আর সে আগ্রহের প্রতি সম্মান জানাতে হলে গণমাধ্যমের প্রতিদিনের প্রচারিত সংবাদে পরিবর্তন আনতেই হয়।
বিদেশি সংবাদ প্রচারের সময়সীমাও খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়ে যায়। তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ দেশটির সেনারা আফগানিস্তান ও ইরাকের রণাঙ্গনে ব্যস্ত তখন।

আর যুদ্ধক্ষেত্রের সংবাদে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষেরও আগ্রহ কম ছিল না। সে ক্ষেত্রে রণাঙ্গনের সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনে সাংবাদিকদের যেমনি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তেমনি তাদের জাতীয় স্বার্থও মাথায় রাখতে হয়েছে।
নাইন-ইলেভেনের পরবর্তী এমবেডেড জার্নালিজম, নানা কারণেই গণমাধ্যম সাংবাদিকদের কাছে বেশ আলোচিত বিষয়। তবে আবু গারিব কারাগারের তথ্য দর্শকদের জানানোর কাজটিও সাংবাদিকেরাই করেছেন।

যা হোক, ভয়াবহ সেই সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষাপটে এক নতুন বিশ্বের শুরু হয়েছে বলা যায়। সেখানে সংবাদে আলাদাভাবে গুরুত্ব পেতে থাকে সন্ত্রাসবাদের তথ্য। কোথাও সন্ত্রাসবাদ, আতঙ্কবাদ হিসেবে, কোথাও জঙ্গিবাদ নামে অভিহিত করা হলেও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ও প্রতিরোধে আঞ্চলিক পর্যায়ে সহযোগিতার বন্ধনে জড়াতে অনেক দেশই চুক্তি করে।
সাউথ এশিয়া ফ্রি মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন বা সাফমা ২০০৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে একটি সম্মেলন করে এ বিষয়ে। ওয়ান-ইলেভেনের পরবর্তী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল সে সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশনের আলোচ্য বিষয়। সেখানে আইএফজের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার ওয়ারেন বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর গণমাধ্যমে বেশ লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে।
তার মতে, বিশ্ব সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক। জনগণকে প্রকৃত চিত্রটি দিতে গিয়ে সাংবাদিক যেমনি সরকারের চাপে পড়েছে, তেমনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানও সেলফ সেন্সরশিপে নিজেদের বেঁধে ফেলেছে। সেটি হতে পারে ভয়ে কিংবা দেশপ্রেম থেকে। ইরাকে ৬০ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, আঘাত এসেছে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিও।
ক্রিস্টোফার ওয়ারেন জানাচ্ছেন, সেই সব আঘাত শুধু যে সন্ত্রাসীরা একাই করেছে তা নয়, জেনেভা কনভেনশন উপেক্ষা করে গণতান্ত্রিক সরকারও তা করেছে।

যা হোক, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রতিবেদন করতে হলে সাংবাদিকদের নিজস্ব তদন্তের পাশাপাশি অনেকের কাছেই তথ্য-সহায়তা নিতে হয়। বিশেষ করে এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী বা গোয়েন্দারা তথ্যের অন্যতম উৎস। শুধু বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল বা পাকিস্তান নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকেরাও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে প্রতিবেদন করতে গোয়েন্দা রিপোর্টের সহায়তা নিয়েছেন। বিশেষ কোনো ঘটনায় গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য কতটুকু কাজে লাগানো যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক করা হলেও গোয়েন্দাদের কাছে তথ্যের জন্য যোগাযোগ অবশ্য কোনো দেশেই কমাননি সাংবাদিকেরা।

@আনোয়ার সাদী
প্রথম প্রকাশ: মিডিয়া ওয়াচ...
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×