বখাটে সূর্য সুন্দরী পৃ্থিবীকে দিয়েছিলো বিয়ের প্রস্তাব।পৃ্থিবী হয়তো করেছে তা প্রত্যাখান।তাই প্রতিশোধের জন্য সূর্য রোদ নামক এসিড ছুড়ে মারছে পৃ্থিবীর শরীর বরাবর।মৌচাক মোড়ের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আমার অন্তত সেটাই মনে হচ্ছে।গাড়িগুলো এখানে ভীড় করছে মোউচাকে জড় হওয়া মোউমাছির মতো।আর আমি নিঃসঙ্গ মৌয়াল হয়ে অপেক্ষায় আছি এক বন্ধুর সাক্ষাতের জন্য।দুজনের দেখা করার কথা মোউচাক মার্কেটের সামনে।আমি সবে মাত্র রিকশা থেকে নেমেছি।নিজ অবস্থান পাকাপোক্ত করে তাকালাম মোড়ের সিগনালটির দিকে।বন্ধুর আসার কথা সেদিক থেকেই, তখনই চোখে পড়লো দুই রাস্তার মাঝের আইলে বসে আছে বিবস্ত্র এক নারী।জট পাকানো চুল আর ধূলো রঙের সাথে ম্যাচ করা নগ্নতার বেশভূষা এবং মুখে অর্ন্তবাসের মতো সেটে থাকা অপ্রকৃতিস্থ হাসি জানান দিচ্ছে ওটা একটা পাগলী।
নটরডেম কলেজের বাংলার শিক্ষক মুখতার স্যার-এর ক্লাস লেকচারের কিছু অংশ মনে পড়লো।স্যার গমগম কন্ঠে বলছিলেন, আমরা কান এটে শুনছিলাম।এটাকে বলা হয় গম আটা কম্বিনেশন।স্যার বলছেন “একটি শব্দ আছে, শব্দটি হলো দিগম্বর”।স্যার এতটাই গুরত্ব সহকারে বললেন যেন বাংলা ভাষায় অস্তিত্বমান একমাত্র শব্দই হলো দিগম্বর,এই শব্দটি ছাড়া বাংলা ভাষা সম্পুর্ণ দিগম্বর।স্যার বলে চলেন “দিগম্বর শব্দটার অর্থ হলো উলঙ্গ।কিন্তু পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় তোমরা লিখে ফেলাও দিকম্বর।আরে বাবা, উলঙ্গ করতে হলে তো তোমাকে পোশাক খুলতে হবে, দিগম্বরের জায়গায় দিকম্বর লিখলে পোশাক তো খোলা যাবে না”।
আমার সামনেই এখন একজন দিগম্বরী।বিবেক বলে উঠলো ছিঃ ছিঃ।এই ছিঃ ছিঃ কি আমাকে নাকি পাগলীকে সেটা পাগলা বিবেকই জানে।নাড়া দেয়া বিবেককে সাড়া দিতে এবং দিকম্বরী (মুখতার স্যারের সংশোধিত দিগম্বরী)-কে এড়াতে স্বেচ্ছায় দিকভ্রান্ত হলাম মানে দৃষ্টি আরেকদিকে ঘুরিয়ে নিলাম।চোখে পড়লো লাক্স সাবানের এক বিলবোর্ড যেখানে সেটে আছে লাস্যময়ী ঐশ্বরিয়া।আমার বিবেক সেদিকে তাকাতে কোন বাধা দিলো না, তাই আমি বিবেক ওবারয়ের চোখে ঐশ্বরিয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম ।এই ভদ্রমহিলা সম্প্রতি মা হয়েছেন।কিছুদিন পরেই তার কন্যাসন্তান তাকে ‘মা’ ‘মা’ বলে ডাকবে, ক্ষনস্থায়ী বিবেক ওবেরয় হয়ে ছাগলের মতো ‘ম্যা’ ‘ম্যা’ করে লাভ নেই।এই ভেবে তাকিয়ে থাকার আর আগ্রহ পেলাম না। An idea of Avishekh has changed my thought.
আমার পাশ ঘেষেই দাঁড়িয়ে আছে একদল চ্যাংড়া পোলাপাইন।কথাবার্তা শুনে বোঝা গেলো এইচ এস সি দিয়ে মৌচাকে এসেছে কোচিং করতে।তাদের আলোচনার পরিবহন এইচ এস সি স্টপেজ থেকে যাত্রা শুরু করে কোচিং সেন্টার স্টেশন হয়ে এখন আশেপাশের নারী প্রসংগ দিয়ে পথ চলছে।এক তরুনী আচমকা বাতাসে নিজের উড়ন্ত ওড়না সামলাতে ব্যাস্ত।সেদিকে তাকিয়ে চ্যাংড়া দলের এক সদস্য চাপাস্বরে বললো, “মামা,প্যারাসুট, প্যারাসুট”।এই কথায় দলের বাকী সদস্যদের কৌতুকভরা দৃষ্টি ক্র্যাশল্যান্ডিং করলো তরুনীর উপর।তরুনী তার প্যারাসুট নিয়ে ভীড়ে মিশে গেলো।দলের একজন বললো “আমগো মতন পাইলডগো দেইখাই কি এয়ার হুস্টেস প্যারাসুট নিয়া পালাইলো?” আরেকজন টি শার্ট আর জিন্স পড়া আগমনী এক রমনীর দিকে ইশারা করে জানালো “মামা, নতুন এয়ারহুস্টেস ভাড়া হইবে নাকি?তার বন্ধু ভালো করে দেখে প্রতুত্ত্যর দিলো “এয়ারহোস্টেস এত ফিটফাট টাইটফিট হইলে তোর মতো যারা টুটাফাটা পিলেনের পাইলট, তাগো কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিবো”। এই কথা শুনে চাপা হাসি হাসলো সবগুলো,আমিও মনে মনে হাসতে বাধ্য হলাম। Eve teasing is the Adam entertainment.পাগলীটার জন্য আফসোস হচ্ছে, ওটার সাথে ইভ টিজিং করার মতো কেউ নাই।চোখের সামনে নগ্ন যুবতী ফেলে চ্যাংড়াগুলো পড়েছে ওলটপালট ওড়না আর জিন্স-টিশার্ট নিয়ে।ইভ টিজিং তাহলে যতটা পোশাক কেন্দ্রিক তার চেয়েও বেশী সামাজিক শ্রেনীকেন্দ্রিক। রাস্তায় ফেলে দেয়া মাছি পড়া খাদ্যউচ্ছিষ্টের সাথে বিন্দুমাত্র পার্থক্য না থাকা এক বিবস্ত্র পাগলীর দিকে তাকানোর চেয়ে সমাজ স্বীকৃত কোন তরুনীর দিকে গোপন ইভটিজিং-এর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারা অনেকটাই তথাকথিত পুরুষালী।কোন পুরুষের ঠেকা পড়েছে যে ঐ পাগলীর খোলা শরীরের বসা মাছিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করবে!!!
অবশ্য ইভ টিজিং-এর ক্লাস ডাইমেনশন চিহ্নিত করেই বা কী লাভ?প্রকৃতি নিজেও যে class biased. চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি যে কামুকী রোদ চুমু খেয়ে ঝিলিকের সৃষ্টি করছে যৌনাবেদনময়ী দামী প্রাইভেট গাড়ির বডিতে সেই একই রোদ পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে ঘামে ঘামার্ক্ত করছে রিকশা চালক,পাবলিক বাসে ঠেলাঠেলিরত যাত্রী আর আ্মার মতো ফটপাথে থাকা পথচারীদের।অবশ্য রোদেলা ধারালো ফলা সেই পাগলীটাকে আঘাত সামান্যই হানছে বৈকি!সূর্যের পাশবিকতা এড়িয়ে নিজের পশ্চাদ্দেশ মাটিতে ঠেকিয়ে সে যেন পাশ্চাত্যের কোন ন্যুড বিচে বসে রৌদ্রস্নান করছে।বিবেক আবার হাসের মতো প্যাক প্যাক করায় চোখ ঘুরিয়ে নিলাম।এমনভাবে যদি বলা যেত বিবেকের নাম মহাশয়, যা দেখানো হয় তাই সয়।সেটা বলার উপায় নেই,বিবেক ব্যাটা নিজেও যে শ্রেণী বাতুলতায় ভুগছে।আমার নিরুপায় চোখ খুজে নিলো আরেকটি বিল বোর্ডকে।আমাদের দেশিয় এক মডেল একটা মশারীকে শাড়ির মতো (অথবা মশারীর মতো দেখতে শাড়ীকে) নিজ দেহে পেচিয়ে শাড়ীর বিজ্ঞাপন দিচ্ছে নাকি মশারীর বিজ্ঞাপন দিচ্ছে,তা বোঝা দায়।এরোসলের উত্থানের কারনে দেশের মশারী শিল্প এমনিতেই ধব্বংষের মুখে।এহেন পরিস্থিতে মশারী বা শাড়ী উদ্যক্তাদের এহেন উদ্যগ প্রশংসার দাবি রাখে।আইডিয়াও অভিনব, পোশাকটাও পরিধান করা হলো আবার শরীরটাকে একটু দেখানোও হলো।এইসব চিন্তা যখন মাথায় আসছে তখন বিবেক কেন সাইলেন্ট মুডে থাকলো তা চিন্তার বিষয়।আমার লাপাত্তা বন্ধুটির আসার পথের দিকে তাকাতে গিয়ে আবার পাগলীটাকে পাত্তা দিতে হলো।সে বসে আছে উবু হয়ে দুপায়ের হাটু ভাজ করে,ফলে শরীরের নিম্নাগ আর উর্ধাঙ্গের অধিকাংশই আড়াল হয়েছে।ঐ শাড়ীর মডেল সব পড়েও কিছু দেখিয়েছে আর এই পাগলী কিছু না পড়েও সব ঢেকে ফেলেছে। এদিকে বৃষ্টিও পড়িতেছে।Bristy is wearing. আকাশ কবে মেঘের পোশাক পড়ে ফেললো টেরও পেলাম না!!
পড়ুয়া বৃষ্টি থেকে বাচতে এক সিডির দোকানের নীচে আশ্রয় নিলাম।আমাকে কিছু খুজতে হলো না,দোকানের সামনের তাকে রাখা এক সিডির কভার আমাকে খুজে নিলো।ওতা যেন এক জানালা, সেখানে দাঁড়িয়ে দেহবাদী নায়িকা ইঙ্গিতে বলছে “জানাল্য তো আমাকে দেখলি, এবার ঘরের ভেতরে ঢোক’!ঐ দেহবাদীর দিকে আর কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেই বর্বাদ হয়ে যাবো,তাকে বাদ দিয়ে আবার তাকালাম বন্ধু আসার বৃষ্টিভেজা পথের দিকে।চোখে পড়লো বৃষ্টিস্নাত পাগলী।এই দিগম্বরী যদি এখন একটা নীল শাড়ি পড়ে নীলাম্বরী হয়ে সামাজিক শ্রেনীস্বীকৃত কোন রমণীর মতো ভিজতো তাহলে আমার মাথায় হয়তো ভাজতো কবিতা।সেরকম কিছু না হওয়াতে আমারও আর কবি হওয়া হলো না।কবিতা গুলিয়ে লুলীয় দৃষ্টি লেলিয়ে নজর নিলাম পার্শ্ববর্তী দেয়ালে সাটা মেয়েদের স্কীন ক্রিম Veet-এর পোস্টারের দিকে।সেখানে ক্যাটরিনা কাইফ তার অর্ধনগ্ন পাযুগলের স্কীন প্রদর্শন করে গ্যারান্টি দিচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশকে veet এন্টার্কটিকার মতো সফেদ বানিয়ে ছাড়বে। ওরকম ধবধবে সাদা পা দুটোর ইমেজ ভেসে উঠতেই চোখে অন্ধকার দেখলাম।দেবী ক্যাটরিনার পা হতে বিচ্ছুরিত আশীর্বাদ গ্রহন করতে যাচ্ছি এমন সময় আমার কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে আকাশদেব বিকট শব্দে ঠাডা নিক্ষেপ করলো।ঠাডাটা ঐ পাগলীর উপর পড়লে ভালো হতো।রবীন্দ্রনাথের কাদম্বরীর মতো এই দিগম্বরীও মরে গিয়ে বাচতো।ধ্যাত্তেরিক্কা, আমি বা আবার তাকে নিয়ে ভাবা শুরু করেছি কেন?মহাপুরুষ হতে পারি নাই,তাই কাপুরুষ সাজার লক্ষন।ওদিকে কালপুরুষের মতো জ্বলে উঠলো মৌচাক মোড়ের সিগন্যাল। জ্যামে জমা যানবাহনের পোশাকে আড়াল হলো ঐ বৃষ্টিভেজা পাগলী,আমিও আমার মনোযোগের ব্যাক গিয়ারে নজর ফেরালাম ক্যাটরিনার দিকে।
বিলাই-এর মতো চোখ করে বিলাইরিনার (ক্যাটরিনার) দিকে তাকানোয় হঠাত বাধা আসলো। মেঘ যেমন সূর্য ঢেকে দিয়েছে, সিগনালে জমাট যানবাহন যেমন পাগলীকে আড়াল করেছে তেমনি গোটা ক্যাটরিনার পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে অদৃশ্য করে দিয়েছে বিশালাকার এক মহিলা।অনুমানে বলা যায়,পাজামাবদ্ধ ঐ মহিলার হাটুর সাইজ ক্যাটরিনার মাথার থেকেও বড়।হতাশ হবার প্রস্তুতি নিছি এমন সময়েই পেছন থেকে হাজির হলো আমার বন্ধু।বৃষ্টি ভেজা মস্তক রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে সে বলে “অনেকদিন পর দেখা।চল, কোন খাবারের দোকানে গয়া বসি”।তার সাথে যেতে যেতে সে তার বামদিকের দোকানে মার্কেটিংরত এক সুন্দরীর দিকে ইঙ্গিত করে আমকে বলে “মালডা দারুন না”?আবর্জনা সমতুল্য পাগলীটাকে অনেক চেষ্টার পরে মাত্রই স্মৃতির আস্তাকুড়ে নিক্ষেপের আনন্দ থেকেই আমি বলে উঠি ‘হুম”।
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।