somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসলে মিডিয়ার কাজটা কি ??????

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়াতে আমরা যে সংবাদ পাই তা হয় নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তথ্যমূলক বা নির্দিস্ট দৃষ্টিভংগিতে উপস্থাপন করা কোন সংবাদ। এক্ষেত্রে, সংবাদ অবশ্যই জনমতের, যুক্তির ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে উপস্থাপন করা উচিৎ। কিন্তু শিক্ষার উপর আরোপিত ভ্যাট নিয়ে যে ছাত্রআন্দোলন হলো, তাতে কিছু মিডিয়ার, সাংবাদিকের নেগেটিভ জার্নালিজম দেখে সত্যিই মর্মাহত হতে হয়। এই ছাত্র আন্দোলন নিয়ে অনেক কিছু ছিলো মিডিয়াতে প্রকাশ করার। সেগুলো বাদ দিয়ে কিনা ‘সেলফি উৎসব’ এবং অন্যান্য নিম্নরুচির খবর মিডিয়াতে প্রকাশ করা হলো যা স্রেফ এসব খবর তৈরি করা মিডিয়া পক্ষগুলোর মেধার অভাব, সংকীর্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক দৈন্যতার পরিচয় দেয়। বেশিরভাগ মিডিয়াই এই গনজাগরনের পক্ষে সঠিক সংবাদ প্রকাশে বড় নিস্প্রাণ ছিলো। স্বত্বঃস্ফুর্ততার অভাব চোখে লেগেছে। যেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের গুরুত্বপুর্ন নাগরিক নয়, তাদের কর্মকাণ্ড পজিটিভ ভাবে হাইলাইট হবার যোগ্য নয়।কিন্তু যারা তা হাইলাইটস্‌ করছে তাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হয় কতজন আমাদের এইটা কাভার করতে আসছে আর কতজন আমাদের এইটা পঁচাতে আসছে ।

কিন্তু লাভ হয়নি। সত্য কতভাবেই আর ঘুরিয়ে দেখা যায়! এই যেমন কিছু মিডিয়ার চেষ্টা ছিলো যাতায়াতে জনদূর্ভোগ দেখিয়ে জনস্বার্থ আর গনআন্দোলনকে উল্টো দুই মেরুতে দেখানোর। কিন্তু পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরা সবাই তাদের ক্যামেরার সামনে ঘাম মুছে হাসিমুখেই দেশের সন্তানদের আন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছেন। শত ভোগান্তির বিনিময়ে হলেও আন্দোলন সফল হবার আশা প্রকাশ করেছেন। মিডিয়াতে কেউ কেউ আবার এটাকে ‘অরাজকতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। নিজ দেশের জনগণের যৌক্তিক দাবি আদায় করতে স্বতঃস্ফুর্ত ও শান্তিপূর্ন আন্দোলনকে যদি অরাজকতা বলা হয় তাহলে একে বিরক্তিকর নেগেটিভ জার্নালিজম ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না।তারা জনগণকে হলুদ সাংবাদিকতার পাশে না পেয়ে নিজেরাই মাঠে নেমে পড়ে এমন অবস্থা ।

যাই হোক, এই নিস্প্রাণতার ফলও মিডিয়াগুলো পেয়েছে। সোশ্যাল সাইটে তাদের সংবাদ নিয়ে হাসাহাসি হয়েছে। ট্রল হয়েছে। মিডিয়ার উপর ভরসা ম্লান হয়েছে মানুষের। একসময় মিডিয়া বাদ দিয়ে সোশ্যাল সাইটে নিজেদেরই আপলোড করা ছবি আর সংবাদ দিয়ে মিডিয়ার দায়িত্ব সাধারন মানুষ নিজের কাধেই তুলে নিয়েছে। তাই যে মিডিয়াগুলো এই আন্দোলনে কোন ভালো দিকই খুঁজে পায়নি, তাদের জন্য এই আন্দোলনের কিছু সফল দিকের তালিকা উল্লেখ করা হলো। আশা করি এই আন্দোলন সংক্রান্ত সংবাদ উপস্থাপনে এরপর আর তাদের পজিটিভ থিমের অভাব হবে না।

১) বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ন আন্দোলন।
২) রক্ত ঝরেছে শুধু আন্দোলনকারিদের। অন্য কারো নয়। ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে সবার মন জয় করে তরুণ-যুবাদের এই সফল আন্দোলন।
৩) গণতান্ত্রিক ভাবে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর সম অংশগ্রহনে এই আন্দোলন।
৪) কোন ব্যাবস্থাপক, ব্যানার, কমিটি বা কমান্ড ছাড়াই অদ্ভুতভাবে শুধু এক মানসিকতায় এক বিশ্বাসে বিলীন হয়ে এই আন্দোলন।
৫) কোন প্রকার শেল্টার, প্রভাবশালীর প্রভাব, শক্তিশালীর শক্তি, অর্থশালীর অর্থ ছাড়াই সাধারন মানুষের সাধারন নৈতিকতা বোধ থেকে এই আন্দোলন।
৬) কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর নিজস্ব লাভ বা ক্ষতির বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে শুধু একটি মাত্র যৌক্তিক দাবি ও সে দাবি আদায়ের আন্দোলন।
৭) মধ্যবিত্তের অধিকার ও শিক্ষার মর্যাদাবোধ রক্ষার আন্দোলন।
৮) বুলেটের বদলে ফুল দেবার আন্দোলন।
৯) যানবাহন ভাঙচুর ও বোমাবাজিবিহীন আন্দোলন।
১০) কোন নতুন নেতা বা স্টার তৈরি না করে সব ঘরের সব সন্তান এক কাতারে একসাথে সমগুরুত্ব ও সমঅবদানের ভিত্তিতে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করে এই আন্দোলন।
১১) পাবলিক, প্রাইভেট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাজন ভেঙ্গে দেশের ভবিষ্যত কাণ্ডারি সকল তরুনদের মাঝে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহামূল্যবান ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য এনে দেয়ার পটভূমি করে দিয়েছে এই আন্দোলন।
১২) যুব সমাজের একটি বিশাল অংশকে ‘ফার্মের মুরগী’ ট্যাগ থেকে অকুতভয় ও সাহসি ব্যাক্তিত্বের কাতারে আসার এই আন্দোলন।
১৩) ইভ টিজিং / যৌন নির্যাতনের উদ্বেগজনক পরিসংখ্যানের বর্তমান এই সময়ে তরুণ-তরুণীদের পারস্পারিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ সহযোগে কোন প্রকার কলুষতা বিহীন চমৎকার সহাবস্থানে করা এই আন্দোলন।
১৪) শুধুই জনগনের, জনগনের জন্য ও জনগনের দ্বারা এই আন্দোলন। গণতান্ত্রিক দেশে গনতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ের অসাধারন উদাহরণ এই আন্দোলন।
১৫) বৃদ্ধ, শিশু, রোগীদের অসুবিধার প্রতি নজর রেখে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খাবারের প্রতি খেয়াল রেখে, পুলিশ ভাইদের সাথে সেলফি তুলে, সাংবাদিকদের সহযোগিতা করে অত্যন্ত মানবিক পথে করা এই আন্দোলন।
১৬) রাবার বুলেটের আঘাতে ক্রোধান্বিত হয়ে সীমা লংঘন না করে, নেগেটিভ মিডিয়ার রিপোর্ট ও অনলাইনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে, খবর বিনিময়ে কোন সংবাদ মাধ্যমের উপর ভরসা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের খবরের মাধ্যম হয়ে প্রতি ক্ষেত্রে উত্তেজনা নয় প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে অত্যন্ত বিচক্ষন এই আন্দোলন।
১৭) এদেশের আন্দোলনে ব্যাবহৃত ডিকশনারিতে নতুন নতুন ও অভিনব স্লোগানের যোগান দেয়া এই আন্দোলন।

যে মিডিয়া ও মিডিয়া সম্পৃক্ত ব্যক্তিত্বরা শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সময় চোখ বুঁজে উল্টোরথে ছিলেন, আজকে ব্যার্থতা তাদেরই হয়েছে। আজ হয়তো তারাও তৃপ্ত হতে পারতেন, আনন্দে সামিল হতে পারতেন। কিন্তু যতবার এই ইতিহাস নিয়ে কথা উঠবে, অযৌক্তিক নেগেটিভ জার্নালিজম করায় তাদের তখন চুপ করে থাকতে হবে, কারন এই ইতিহাসে গর্ব করার মতো কিছুই তারা করেনি, বরং আস্থা ও পাত্তা হারিয়েছেন জনসাধারনের।
সবশেষে বলব ,ভাল কিছু করেন যা মৃত্যুর পরেও আপনাকে স্বরণীয় করে রাখবে ।হয়ত আপনিও হতে পারেন রুমি,জুয়েল,আজাদ,বদি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×