দেখেন, গোপালগন্জের পুলিশের কাছে খোদ BAL-এর এমপি কেমন নাজেহাল হইলো।এই যদি হয় সরকারী দলের এমপির অবস্থা, তাহলে আমরা ম্যাংগো পাবলিক পুলিশের কাছে কেমন অসহায় বুঝুন।আজকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের রিপোর্ট দেখেন:
মির্জা মেহেদী তমাল
গোপালগঞ্জের অধিবাসী ঢাকার ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিচার, অন্যথায় পদত্যাগ করবেন ক্ষমতাসীন দলের নোয়াখালী সদরের প্রভাবশালী এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার মধ্যরাত ও শেষ শনিবার ভোরে ধানমন্ডি থানায়। বিয়ের আনন্দ উৎসবের আতশবাজি পোড়ানোর তুচ্ছ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ওসি মনিরুজ্জামানের কাছে চরমভাবে নাজেহাল হন এমপি একরাম। পুলিশের ওই কর্মকর্তা এমপিকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বলেন, তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। এমন এমপি এ জীবনে বহু দেখেছেন। ক্ষমতা থাকলে তার বিরুদ্ধে যেন কিছু করেন। এ সময় ঊধর্্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদেরও ফোন ধরতে চাননি ওসি। পরে ধরলেও কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেননি বলে অভিযোগে প্রকাশ। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এ এমপিকে পুলিশ রাতভর থানায় বসিয়েই শুধু ক্ষমতা দেখাননি, এমপি এবং তার লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। পুলিশের এমন ব্যবহারে হতাশ, ক্ষুব্ধ এমপি বলেছেন, এর একটা বিহিত না করলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। অন্যদিকে পুলিশের ওই কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এমপির কোনো অভিযোগ ঠিক নয়।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়ার সঙ্গে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর কন্যার বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল। এমপি হোস্টেলের ওই জমকালো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সরকার ও বিরোধী দলের এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠান শেষে বর ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া কনেকে নিয়ে ধানমন্ডির বাসভবনে যান। রাত দেড়টার দিকে নববধূকে বরণ করার সময় বাসার সামনে বেশ কয়েকটি আতশবাজি পোড়ানো হয়। আতশবাজি পোড়ানোর খবর পেয়ে ধানমন্ডি থানা পুলিশ হাজির হয় বিয়েবাড়িতে। তারা বিয়েবাড়ির আনন্দ উৎসব থেকে ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়ার তিন আত্দীয় ও বাড়ির দুই দারোয়ানকে ধরে নিয়ে যায়। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, এমন খবর পেয়ে এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ধানমন্ডি থানায় ছুটে যান। তিনি থানায় গিয়ে বিষয়টি জানতে চান কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের কাছে। পুলিশ তাকে জানান, বিনা অনুমতিতে আতশবাজি পোড়ানোর দায়ে তাদের ধরে আনা হয়েছে। কিছু সময় পর একরাম চৌধুরী ওসি মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেন। এমপি একরাম বিষয়টির জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কম বয়সী বাচ্চারা অনুমতি না নিয়ে, না বুঝে কাজটি করেছে। তিনি যাদের ধরে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এমপির অনুরোধ শুনেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ওসি মনিরুজ্জামান। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হয়। ওসি নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে তার বাড়ি গোপালগঞ্জে বলেও জানান দেন। ওসি এ সময় এমপিকে থানা থেকে দ্রুত চলে যেতে বলেন। একপর্যায়ে রাতেই এমপি একরাম তার পরিচিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্পৃক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ফনীভূষণ মজুমদার ও চট্টগ্রামের ডিআইজিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি তাদের জানান। ফনীভূষণ মজুমদারের সঙ্গেও ঠিকভাবে কথা বলেননি ওসি। রাতে এমপি একরাম থানা থেকে বের হয়ে তার নতুন বেয়াই মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার ভূঁইয়ার বাড়িতে যান। বিয়েবাড়িতে উৎসব আনন্দের পরিবর্তে তখন শোকের পরিবেশ। হতাশ এমপি একরাম এরপর মানিক মিয়া এভিনিউর ন্যাম ফ্ল্যাটে যান। পরিবারের সদস্যদের অশ্রু দেখে ভোর ৫টায় তিনি ফের থানায় যান। তিনি আবারও অনুরোধ করেন আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এতে পুলিশ কর্ণপাত না করায় তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। থানাতে বসেই স্পিকার বরাবর পদত্যাগপত্র তৈরি করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফোনে কথা বলেন এমপি একরামের সঙ্গে। এরপর যোগাযোগমন্ত্রী নিজেই কথা বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানকসহ সরকারের আরও কয়েকজন প্রভাবশালীর সঙ্গে। তারাও ফোনে কথা বলেন এমপি একরামের সঙ্গে। ওসি অবশ্য এ সময় থানায় ছিলেন না। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সরকারের বিভিন্ন অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদের তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে পাঠান জাতীয় সংসদের হুইপ মীর্জা আজমের বাসায়। এর আগে মীর্জা আজমকে তিনি ফোনে পাচ্ছিলেন না। মন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে সংসদের হুইপ মীর্জা আজম থানায় ছুটে যান। তিনি আবেগে আপ্লুত এমপি একরামকে বুঝিয়ে থানা থেকে নিয়ে আসেন। এ সময় সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে আগের রাতে আতশবাজি পোড়ানোর অভিযোগে আটক ৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, সার্বিক ঘটনায় এখনো হতবিহ্বল মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার ভূঁইয়ার পরিবারও। আওয়ামী লীগের সভামঞ্চে নেত্রীর সামনে ইন্তেকাল করেছিলেন সাত্তার ভঁূইয়া। তার পরিবারে বিয়ের উৎসবে পুলিশের এমন আচরণ আশা করেননি তারা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় এমন প্রত্যাশা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেননি সাত্তার ভূঁইয়ার পরিবার। ঘটনার আকস্মিকতায় এমপি একরাম এখনো বিস্মিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এমপি হয়েছি জনগণের সেবা করতে। সম্মানের সঙ্গে তা করতে চাই। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বাচ্চারা ভুল করে আতশবাজি পোড়াতেই পারে। আমি নিজে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তারপরও পুলিশ যে ব্যবহার করেছে তা কাম্য নয়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই ওসির ক্ষমতার উৎস কী, তা জানি না। তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় এই সংসদে আমার থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, আর সাত্তার ভূঁইয়ার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা নাজেহাল হবে? এটা কাম্য নয়।
ওসি মনিরুজ্জামান অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি গতকাল জানান, এমপি সাহেবের সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি। বরং এমপি সাহেব এবং তার সঙ্গে আসা লোকজন থানায় হট্টগোল করেছেন। কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার থেকে শুরু করে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের গালাগাল করেছেন। বিনা অনুমতিতে আতশবাজি পোড়ানোর দায়ে যে পাঁচজনকে ধরে আনা হয়েছিল, তাদের সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানায়, থানায় হট্টগোল, পুলিশ কর্মকর্তাদের গালাগাল করার ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।