বহু বছর আগে দৈনিক সংবাদ-এ আহমেদ খালেদ ‘পিতা তাঁকে ক্ষমা করেননি’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলেন। সেই লেখার একটি অংশ এখানে তুলে ধরছি—‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত ঘাতক কর্নেল আবদুর রশিদকে তাঁর জন্মদাতা করিম খন্দকার বঙ্গবন্ধুর হত্যার দায়ে ক্ষমা করে যাননি। এই চরম সত্য কথাটি দেশবাসীর জেনে রাখা দরকার। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম হত্যাকারী রশিদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার উত্তর বাড়েরা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামে। অবসরপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার করিম খন্দকার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লোক ছিলেন। ১৯৯৪ সালের শেষদিকে তিনি মারা যান... বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমৃত্যু করিম খন্দকার ছেলে রশিদের সঙ্গে কথা বলেননি, তাঁর কোনো টাকা-পয়সা গ্রহণ করেননি। জাতির পিতাকে হত্যার পর করিম খন্দকার আত্মীয়স্বজনের কাছে অছিয়ত করে গেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর যেন রশিদ তাঁর শেষকৃত্যে না থাকে, মৃতদেহ যেন স্পর্শ না করে। তিনি আরও বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতাকে যে হত্যা করেছে, সে আমার পুত্র নয়, আমি তাকে ক্ষমা করব না। আল্লাহ তাকে শাস্তি দিক।’
করিম খন্দকারের জীবনের শেষ দিকে রশিদ লিবিয়া থেকে ছুটে এসেছিল ছয়ঘরিয়ায় বাবার কাছে। করিম খন্দকার তখন হাঁটাচলা করতে পারেন। বাবার বিছানার ডান পাশে দাঁড়িয়ে আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে সে বলল, ‘বাবা, আমি রেন্টু (রশিদের ডাক নাম) এসেছি আপনার কাছে মাফ চাইতে।’ বাবা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।
শেষ দিন পর্যন্ত করিম খন্দকার ছেলেকে ক্ষমা করতে পারেননি, তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি, জানাজায় শরিক হতে নিষেধ করেছেন। আত্মীয়স্বজন বাবার অন্তিম ইচ্ছে পূরণের জন্যই হয়তো রশিদকে জানাজায় অংশ নিতে দেননি। পিতৃস্নেহকে অনায়াসে জয় করেছে করিম খন্দকারের ন্যায় ও মানবধর্ম। আমাদের অনেকের ভীরুতা, কাপুরুষতা, গ্লানি ও লজ্জা ঢেকে দিয়েছেন কুলাঙ্গার ছেলের এক মহান বাবা।
সুত্র: Click This Link