১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার শিকার বাঙালিদের লাশ দেখেছি রাস্তায় রাস্তায়। পাকিস্তানে ফিরে এই গণহত্যার বর্ণনা দেই। বর্ণনা শুনে উর্দু কবি আহমেদ সেলিম লিখেন, ‘বাঙালি নারীর খোঁপায় আগুন লেগেছে।’ আমি চেয়েছিলাম সত্য আর মানবতার জয়। তাই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের মাটিতেই চিৎকার করে বলেছি, ‘জয় বাংলা’।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিলিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় পাকিস্তানি মানবাধিকার নেত্রী নাসিম আখতার এ কথা বলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নাসিম আখতার বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় যোগ দিতে আমি ঢাকায় আসি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করায় সেদিনের বৈঠক স্থগিত করা হয়। রাত ১১টা অথবা ১২টার দিকে ট্রাকে করে আমাদের এয়ারপোর্টে ফিরে যেতে হয়। পথে আমি অনেক বাঙালির লাশ দেখেছি। এত আত্মত্যাগ কোনো জাতি আর করতে পারবে না।’
নাসিম আখতার আরও বলেন, ‘লাহোরে ফিরে এ গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। কেউ আমাদের সমর্থন করেনি। গণস্বাক্ষর অভিযানে মাত্র ৪৩ জনের স্বাক্ষর পাই আমরা। এ জন্য আমাদের তখন বলা হতো বিশ্বাসঘাতক, গোয়েন্দা ও শত্রু। কিন্তু আমি জানতাম, এ লড়াই মানবতা ও সত্যের লড়াই। এতে আমরা জিতবই।’ তিনি আরও বলেন, ‘তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটক বাঙালি নেতা-কর্মীদের নিয়মিত দেখতে যেতাম আমি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে তাঁদের সঙ্গে কারাগারে দেখা করে তাঁদের সুরে সুর মিলিয়ে আমি চিৎকার করে বলেছি, ‘জয় বাংলা।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু দুর্বৃত্ত ধরা পড়েছে। বহু জায়গায় আনন্দ মিছিল হয়েছে, যা আমাদের উৎসাহিত করেছে।’ তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালেই হতে হবে, সাধারণ আদালতে নয়। নয়তো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এ সময় বিচারিককার্যে পাকিস্তানের সহায়তা পাওয়া আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই আমরা ট্রাইব্যুনাল-সহায়ক মঞ্চ গঠন করেছি। মঞ্চে বিভিন্ন দেশের আইনজীবীরা আছেন।’
-প্রথম আলো