`হ্যালো। টিভি দেখতাছো মামা? ১৯ নম্বর চ্যানেলে যাও। দেখো! আমি হাত নাড়াইতেছি।' কানে ফোন নিয়ে অন্য হাতে রিমোট ঘুরাতেই.... সেকি! সত্যিই টিভি পর্দায় বন্ধুর মুখ। একুশে বই মেলার লাইভ চলছে। ফেব্রুয়ারিজুড়ে প্রতিদিনের দৃশ্য।
যে কোনো আন্তর্জাতিক বই মেলার চেয়ে বেশি মিডিয়া কাভারেজ পায় একুশে গ্রন্থমেলা। এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভাষা আন্দোলনের সেন্টিমেন্ট, শহীদ মিনার। আর মেলার স্থানিক গুরুত্ব্ও অপরিসীম। বাংলা একাডেমী যতোই এ মেলার মালিকানা দাবি করুক, কাগজে-কলমে। সিটি করপোরেশন কোনো জায়গা বরাদ্দ দিয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মেলা জমায়নি, হয়তো তাই মেলাটা উৎসবময়। স্বতঃফুর্ত।
আর মিডিয়ারই বা কি দোষ। শহরে ১০ জন লোক জড়ো হল্ইে অনুষ্ঠান লাইভ হয়ে যায় চ্যানেলে। ইভেন্টতো দরকার। বইমেলার নিউজের আগে ভাষা আন্দোলনের সুরে গাঁথা কম্পিউটার গ্রাফিক্স্ও জুড়ে দিয়েছে দেশী চ্যানেলগুলো। ব্যবসা সফল চ্যানেলগুলোয় সেই গ্রাফিক্সেই চেপে বসেছে লক্ষ্মী, মোটা দাগের বিজ্ঞাপন। পত্রিকার ব্যাক পেইজে মাল্টিকালার বক্স নিউজ। সব মিলিয়ে মিডিয়াকাতর বইমেলা।
প্রশ্ন অন্যখানে। মিডিয়া কতখানি দ্রবীভ’ত করতে পারে লেখককে। অথবা বই হাতে ৩০ সেকেন্ডের জন্য যারা ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন, তারাই কি দেশের সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করে? প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। শুনেছি, সরাসরি সম্প্রচার কেন্দ্রের আশেপাশে নতুন বই নিয়ে ঘুরঘুর করলেই টিভি পর্দায় চেহারা দেখানো যায়। তবে এই স্বজনপ্রীতির দেশে আমার তা বিশ্বাস হয় না। কার্যত করপোরেট কর্তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে বইমেলার ক্যামেরাও। বইয়ের কপি হাতে একখান পোঁজ।
‘ক্যামেরা সরাও, প্রচারের বাহুল্য আমি নেবো না।’ প্রকৃত কবিরা ক্যামেরা থেকে দূরেই থাকেন। তাই স্ক্রিনজুড়ে মিডিওকারদের জয়জয়কার। সবই মায়া! অথবা আশ্চর্য এক স্ট্যান্ডবাজি।
বইয়ের প্রোপাগান্ডায় ইন্টারনেট এখন বেশ মাধ্যম। ফেইসবুকে মেলায় আসা কমপক্ষে ১৫টি বইয়ের প্রচ্ছদ আমার বন্ধুতালিকার প্রোফাইল পিকচার। বাংলা ব্লগগুলোতেও বইয়ের আলোচনা-পরিচিতি-বিজ্ঞাপন।
বইমেলা ২০১০। এবার দশক ফুরানোর বছর। শূন্য দশক; ট্রেনের শেষ বগিতে উঠতে তাই কমপক্ষে গোটা বিশেক বই আসছে মেলায়।