রবীন্দ্রনাথ কালারব্লাইন্ড ছিলেন। চোখে ঠিকমতো সবুজ রং দেখতে পারতেন না। সবুজ-শ্যামল দেশটি শারিরীক অবস্থানের কারণে তারপরও তার কবিতায় ছিল সবুজের সমারোহ। মরুময় লিবিয়ায়ও আমি অনেক সবুজ দেখেছি। গাদ্দাফি রবীন্দ্রনাথকে চেনেন কিনা, জানি না-- তবে দেশটাকে সবুজে ভরে দেয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো কেমন হবে তা লিখেছিলেন দ্য গ্রিন বুকে। আরবিতে কিতাবুল আখদার। সেটাই লিবিয়ার বাইবেল।
বাবা-মার কাছে শুনেছি সবুজ বিপ্লবের মধ্যদিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন গাদ্দাফি। গাদ্দাফির সবুজপ্রীতি ছিল অসাধারণ। সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশকে ভালো করেই চিনতেন তিনি। টেলিভিশনে সেনা কর্মকর্তাদের জন্য একটা সাপ্তাহিক ক্লাস নিতেন গাদ্দাফি। একবার এই ক্লাসে তিনি বললেন, বাংলাদেশের আয়তন ৫৫ হাজার বর্গমাইল। লোকসংখ্যা ১০/১২ কোটি। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক খবরটি হচ্ছে-- এবার বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অর্ধ শতাধিক প্রার্থী অংশ নিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে হাসির রোল। এ সবই অনএয়ার হলো টেলিভিশনে।
সপ্তাহখানেক পর সপরিবারে দেশে বেড়াতে আসার জন্য ছুটি চাইলেন আমার বাবা। চিফ ইঞ্জিনিয়ার তাকে প্রশ্ন করলেন-- কেন ছুটি চান, দেশে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ইলেকশন করবেন?
মুসরাতায় (বিবিসি যে শহরটার নাম মিসরাতা লেখছে) আমরা যে বাড়িতে থাকতাম, তার পাশেই একটা পার্ক ছিল। সবুজে ভরা পার্ক। সুন্দর টাইলসে বাধানো রাস্তা। সি-স, ল্যাডার আরো কতো শিশুতোষ খেলনার সরঞ্জাম! বাড়িতে থাকলেও মন পড়ে থাকতো ওই সবুজ পার্কেই।
স্কুলে ঢোকার মুখেই গাদ্দাফি আর তার ভাবগুরু জামাল আবদেল নাসেরের বড় দুটি ছবি। টেলিভিশনের বদৌলতে গাদ্দাফিকে প্রথম দেখায় চিনলেও, জামাল নাসেরকে চিনতে আমার বেশ কিছুদিন লেগেছিল। পাগড়ি পড়া এক ইন্ডিয়ান শিখ ইংলিশ টিচার আমাকে শিখিয়েছিলেন, এটা জামাল আবদেল নাসের। আধুনিক মিশরের নেতা। তার ইয়ং অফিসার্স রেভ্যুলেশনে অনুপ্রাণিত হয়েই অকর্মন্য উপনিবেশের তাবেদার রাজা ইদ্রিসকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন গাদ্দাফি।