যতদূর মনে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে শিখেছিলাম, কাণ্ড গাছের শাখা-প্রশাখা, ফুল ও ফল ধারণ করে। বড় হয়ে চ্যানেল২৪ এর নিউজে দেখছি স্টেম সেল মানে হচ্ছে গাছের কাণ্ড। আর সেই গাছের কাণ্ড দিয়ে মানুষের কিডনি কোষ বানাইতেছে অস্ট্রেলিয়ার গবেষক! আসলে বাংলা ডিকশোনারিতে দেখলে স্টেম সেল মানে গাছের কাণ্ডই দেখা যায়।
কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্টেম সেল বলে ভিন্ন কথা। স্টেম সেলের এই ইংরেজিটা অনুবাদ করে দেখুন। An undifferentiated cell of a multi-cellular organism which is capable of giving rise to indefinitely more cells of the same type, and from which certain other kinds of cell arise by differentiation. সহজ বাংলায় বলি, যে স্টেম সেল দিয়ে কিডনি কোষ তৈরি করা হয়েছে সে স্টেম সেল গাছের কাণ্ড নয়। আবার বাংলা ডিকশোনারিতে যা বলছে তা-ও ভুল নয়। তবে বুঝতে সমস্যা করলে হাস্যকরই শোনাবে।
ভিডিওটি প্লে না হলে লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন: গাছের কাণ্ড থেকে কিডনি কোষ তৈরি
ক্যান্সার কোনো রোগ নয়, ডাক্তারের টাকা উপার্জনের ধান্ধা! ভিটামিন বি১৭ এর অভাব ইত্যাদি ইত্যাদি…. এসব তথ্য দেদারসে পাবলিক শেয়ার করে বেড়াচ্ছে।
সংবাদে লেখে ও পড়ে, মুরগির পোল্ট্রি খামার! তাকে জিজ্ঞেস করলেই বুঝবেন সে পোল্ট্রি, ব্রয়লার, লেয়ার সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাও রাখে না। আসলে মুরগি হচ্ছে পোল্ট্রির আওতাভূক্ত পাখি। আবার অনেক স্বনামধণ্য মিডিয়া ঠিকই লিখে বেড়াচ্ছে ব্রয়লারে এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেয়! কবে কোথায় কাকে দিতে দেখছে বলতে পারবে না। কারণ ব্রয়লারে এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন আকারে দেওয়া হয় না। পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।
বাজারে যে ডিম বিক্রি হচ্ছে তা কিন্তু ব্রয়লার মুরগির ডিম নয়। কিন্তু পত্রিকায় বলতেছে ব্রয়লার মুরগির ডিম! আসলে ব্রয়লার নয় লেয়ার মুরগি ডিম পাড়ে।
সর্বত্র প্লাস্টিকের ডিম খুঁজে পায় কিন্তু পঁচা ডিমও বোধহয় চেনে না। কারণ তারা যা বলে সেগুলো হচ্ছে পঁচা ডিমের বৈশিষ্ট্য। আবার ভেজাল দুধ মানে দুধে ডিটারজেন্ট মেশালে তা ল্যাক্টোমিটার দিয়ে ধরা পড়বে কিনা তা বারবার প্রশ্ন করে নিজের অজ্ঞতার প্রমাণ দিচ্ছে তালাস টিমের অনুসন্ধানকারী। কারণ সাধারণ মানুষ না জানুক, আমরাতো জানি ল্যাক্টোমিটার দিয়ে আসলে কি কি ধরা যায় আর ডিটারজেন্ট ধরার উপায় ল্যাক্টোমিটার নয়। আসলে যারা সাংবাদিকতা করছেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখছেন তাদের আরও বেশি পড়াশোনার প্রয়োজন আছে। আছে বিশেজ্ঞদের সাথে কথা বলারও। জানি না কতজন রিপোর্টার এই কাজটি করেন।
ডাক্তারের ভুলে রোগী মারা গেল কিংবা অমুক জায়গায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী গ্রেফতার এসব রিপোর্ট অহরহ দেখা যায়। অথচ ডাক্তারের ভুল হয়েছে কিনা তা বলার আগে ডাক্তারদের বোর্ড বসবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে যে চিকিৎসা ভুল ছিল কিনা। কিন্তু তার আগেই ভুল চিকিৎসা বলা শেষ! অপরদিকে যাকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী বানানো হল সে ব্যক্তি কোর্ট থেকে নিরাপরাধও প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু ততদিনে তার বউ বাচ্চাও মানুষের কাছে ভর্ৎসনা শুনতে শুনতে পালিয়ে বেড়ায়।
অবশ্য অনেকদিন আগে পড়েছিলাম, কোর্ট থেকে প্রমাণিত না হওয়ার পূর্বে কারো নামের আগে কুখ্যাত, অখ্যাত, সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত ইত্যাদি টাইটেল দেয়া যাবে না। তবে আইনটা পাশ হইছে কিনা জানি না। অনেক সময়েই দেখি, সকালবেলা যাকে বানানো হয় নারী পাচারকারী চক্রের হোতা বিকেলবেলায় তাকে বানানো হয় জনদরদী ও মানবসেবক।
যা-ই হোক, সবকিছুর পরে একটা কথা বলি। আপনি যদি না লেখেন লিখবে অন্য কেউ। সে জানুক আর না জানুক। সুতরাং আপনার সত্য তথ্য ছড়াতে না পারলে মিথ্যা তথ্যই ছড়াবে। কিন্তু যারা ১২ টাকায় এক শলাকা খাইতে খাইতে সংবাদ পড়ে, দেখে, লিখে আর বলে ডিমের দাম এত বাড়ল! অথচ ডিমের উৎপাদন খরচ সম্পর্কে জানার চেষ্টাও করে না তাদের জ্ঞানের অভাব থাকবেই। এই অভাব কখনও পূরণ হবে না, হবে না, হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮