somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোজা, রেডিও, ঘন্টা ও হারানো স্মৃতি!

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথাগুলো আমার ছোটবেলার। সে সময় আমাদের ইউনিয়নটা অনেক বড় ছিল। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনের ফলে ইউনিয়নটা অনেক ছোট হয়ে গেছে। সে সময় মানুষের মাঝে অনেক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ছিল। এখন হয়তো আর আগের মতো নেই। অনেকটা শহুরে ছোঁয়া লেগেছে।


আমাদের বাড়িটা রাস্তার সাথেই। তাই সে পথ দিয়ে প্রচুর মানুষ চলাচল করত। তখন অনেক হাঁটুরের সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ইফতারের সময় হয়ে যেত। তাই আমরা নিয়মিত ইফতারের জন্য আমাদের বাহির বাড়িতে ইফাতারি সাজিয়ে রাখতাম। অনেকেই ওখানে হালকা ইফতার সেড়ে নিতেন। অনেকে আবার নিজেদের কাছে থাকা ইফতারির উপকরণ আমাদের ইফতারির বাটিতে দিতেন। এখন ইউনিয়ন ছোট হওয়ায় এই প্রয়োজনটা হয়তো আর নেই। তাই আজকাল আর রাখা হয় না।

সে সময় আমাদের গ্রামে কোনো মসজিদ ছিল না। তাছাড়া গ্রামের মসজিদগুলোতে মাইক ছিল না। থাকলেও সেগুলোর ব্যাটারিতে চার্জ থাকত না। রোজার শুরুতে যেসব মসজিদের ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে আনতো, দেখা যেত ১০-১২ দিনের মধ্যেই সেসব ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যেত। এরপর হয়তো ব্যাটারি চার্জে দিয়ে ঈদের ২-৩দিন আগে নিয়ে আসত। কারণ এই মাইকটাই আবার ঈদগাহ ময়দানে টাঙ্গানো হতো। তখন জেনারেটরে ব্যাটারি চার্জ দিতে কমপক্ষে ৭ দিন সময় নিত। মূলত জেনারেটরগুলো বাজারের প্রয়োজনে সন্ধ্যা থেকে রাত ৯-১০ টা পর্যন্ত চলত।

ইফতারির সময় বোঝার জন্য তখন আমরা ঘড়ির ওপর নির্ভর করতে পারতাম না। কারণ সবার ঘড়িতেই ১-২ মিনিট পার্থক্য থাকত। অর্থাৎ পাশাপাশি দুইটা ঘড়িতে দুই রকম সময় সেট করা থাকত। সে সময় রেডিওই ছিল আমাদের ইফতারের সময় বোঝার একমাত্র উপায়।

বিকেল হতে না হতেই রেডিও নিয়ে বসে পড়তাম। প্রথমে ঢাকা ক থেকে প্রচারিত হেফজুল কোরআন অনুষ্ঠান চলত। হেফজুল কোরআন শেষ হলে বাংলাদেশ বেতার রংপুর টিউন করতাম। সে সময় রংপুর বেতারের সিগনাল আবার বর্তমান সময়ের মতো শক্তিশালী ছিল না। রংপুর বেতারের ফ্রিকুয়েন্সির কাছেই আবার থাকত রাজশাহী বেতারের ফ্রিকুয়েন্সি। যেটার সাউন্ড খুব কম হতো। অবশ্য রাজশাহীর আরেকটা ফ্রিকুয়েন্সি থাকত। যেটায় জোড়ালো শব্দ হয়। তাই যাতে ভুল না হয় তাই আমার বাবা আমাদের বুঝিয়ে দিতেন ঠিক কোন বরাবর রেডিওর কাঁটাটা নিতে হবে। তাছাড়াও আমরা খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। কারণ আজানের আগেও বেতারের নাম বলত। সেই সাথে কোন অঞ্চলের ইফতারের সময় তা জানিয়ে আজান দিত। মূলত দুর্বল সিগনাল থাকার কারণে অনেকের রেডিও থাকলেও ভুল টিউনের ভয়ে থাকত।

আজান শোনার সাথে সাথেই আমাদের কাজ ছিল ঘন্টা বাজানো। এই ঘন্টাটায় আবার খুব জোড়ালো শব্দ হতো। কত গ্রামের কতশত মানুষ এই ঘন্টা শোনার জন্য কান পেতে থাকত তার হয়তো কোনো হিসেব মেলানো যাবে না। এই ঘন্টা দিয়ে আমরা সেহরীতে সবাইকে তুলে দিতাম। ঈদের চাঁদ উঠলে জানিয়ে দিতাম। আজ হয়তো এই ঘন্টার প্রয়োজন নেই। হয়তো অনেকেই এটাকে মাশআলা দিয়ে বিদআত কিংবা হারাম বলবেন। কিন্তু সে সময় এরচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর আমাদের কাছে ছিল না।

এখন গ্রামে একটু পরপর মসজিদ হয়েছে। গ্রামে সৌরবিদ্যুত হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি বসেছে। মসজিদ থেকেই পুরো ইউনিয়ন কাঁপিয়ে আজান হয়। এই আজানে ইফতার হয়, মাইকে সেহরিতে ডাকা হয়। কিন্তু ছোটবেলার মতো রেডিও শুনে আর ঘন্টা বাজানো হয় না। যে ঘন্টাধ্বনি শোনার জন্য দূর-দূরান্তের রোজাদার ব্যক্তিরা কান পেতে থাকতেন। এখন হাতে হাতে অ্যালার্ম সিস্টেম হয়েছে। সবাই সঠিক সময় জানতে পারছে। যার যার মতো সময় দেখে ইফতার করছে, সাহরীতে উঠছে। আর আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়েছে। এই আত্মকেন্দ্রিকতায় যে সুখ নেই তা হয়তো আমরা বুঝতেছি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনেই সব পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। তবে ভালোবাসাটাও পরিবর্তিত হয়ে গেল কেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:২৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×