অনেক্ষণ ধরে মাথার পাঁকা চুলে কলপ দিয়ে রেখেছি।প্রাইভেট পড়াচ্ছি ক্লাস টেনের ছাত্রীদের ব্যাছের।ছাত্রীরা আজ পড়ার চেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে দেখছে আমাকে।এতদিন ধরে আমার মাথার কিছু পাকা চুল আর হালকা পাকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দেখে ওরা অভস্ত ছিল।কেউ আমার এই রহস্য বুঝছে না।আজ আমার প্রিয় ছাত্রী সাবিকা প্রাইভেটে আসেনি।সবাইকে জিগাসা করলাম, কেউ কোন যথাযথ উত্তর দিতে পারেনি।হঠাৎ আবিষ্কার করলাম নিশি ওর ফোন বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে চালাচ্ছে,দেড়ি না করে বেত দিয়ে পিঠে কয়েকটি বসিয়ে দিলাম,নিশি কাঁদছে।কিন্তু আজ আর সান্তনা দিব না।কেন না পায়েলদের ব্যাছের মেয়েরা নিশির এ্যান্টি,ওরা ওর নামে আগবাড়িয়ে আমার কাছে বদনাম করে।ওদের মুখেই শুনেছি মেয়েটি নাকি স্কুলের বেদ্দপ রোহিতের সাথে প্রেম করে।তাই তো বলি দিন দিন ওর রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে কেন।ছাত্র-ছাত্রী পড়াতে গেলে একটা বিনোদন হলো,একটা ছাত্র আর ছাত্রীর ব্যাকগ্রাউন্ড আর কর্মকান্ড জানতে চাইলে তার এ্যান্টি পার্টিদের কাছে একটু টু মারলেই সব বের করে দেয়,একদম দলিল প্রমানাদী সহ।
.
আজ ওদের আধ ঘন্টা আগে ছুটি দিয়ে দিলাম,কেন না জীবনের ৪০ বছর বয়সে সিদ্ধ্যান্ত নিয়েছি বিয়ে করার।ভার্সিটিতে পড়ার সময় অহনার বিয়ে হওয়ার পর, কসম কেটেছিলাম যে বিয়ে করবো না।কিন্তু স্কুলের ছাত্ররা আড়ালে যে আমার নাম দিয়েছে হিজরা মান্নান আর টয়লেটেও বেদপরা বড় বড় করে এই লেখাটা লিখে রাখার পর সিদ্ধ্যান্ত নিয়েছি বিয়ে করবো।এর অবশ্য আরেকটা দিক আছে কিছু কিছু ছাত্রীর মায়েরা তাদের মেয়েকে আমার কাছে পড়াতে দিতে চায় না, একটা কারণে যে আমি অবিবাহিত!আমাদের স্কুলে মেয়েদের সংখ্যা বেশি,এই বিয়েটা বলতে গেলে বিজনেস পলিসিও...
.
ঘটক প্রাণ মিয়ার মতে আজ যে পাত্রী দেখতে যাবো,গরীব ঘরের মেয়ে,কিন্তু রুপবান।মেয়ে নাকি পড়াশোনা করে না।চিন্তা করলাম এই বয়সে বিয়ে করবো,ওত বাছ বিচার করা যাবে না।কেন না কন্যা পক্ষরা আমার বাছ বিচার করলে আমিই তো রিজেক্ট!
.
মেয়ের বাড়িতে বসে আসি আমি আর ঘটক প্রাণ মিয়া।মেয়ের মা-বাবা খুব আন্তরিক।হ্যা খারাপ না।এইতো তারা মেয়েকে এনেছে।ঘোমটা দেওয়া,ভার্সিটির অহনার সাথে প্রেমের পর বহুদিন পর আবার মনের মধ্যে ডুগডুগি বাজছে।ঘোমটা খোলার জন্য বাসর ঘরে স্বামী যেমন খুব পাগলপ্রায় থাকে আমার ক্ষেত্রে একি অবস্থা।ঘোমটা খোলার সাথে সাথে মনে হলো যেন এ্যাটোম বোমার বিস্ফোরণ হলো!মেয়ে চিল্লিয়ে বলে"মান্নান স্যার আপনি!" আমার মুখে ছিল"সাবিকা তুই!"
কি খারাপ অবস্থা,এতো আমার মেয়ে সমতুল্য প্রিয় ছাত্রী!!!!! অবশ্য ও আমার স্কুলে পড়ে না,কিন্তু আমার স্কুলের মেয়েদের সাথে ব্যাছে পড়ে!!দৌড় দিতে চেয়েও সেদিন পারিনি ঘটক প্রাণ মিয়ার সম্মান রক্ষাতে!! অবশ্য ওর মা-বাবাকে বোঝালাম সেদিন ও খবু্ ভাল ছাত্রী,আর্থিক অবস্থা খারাপ তাই কি,একটু ধৈর্য্য ধরে পড়িয়ে দেখুন!
.
সেদিন বের হয়ে ঘটক প্রাণ মিয়াকে যে দৌড়ানি দিয়েছিলাম,ওর দোষ ছিল মেয়ের বাবা-মার কথায় বয়স আমাকে ১৮ বলেছে আর বলেছে লেখা পড়া করে না!সেদিন ওকে ধরতে পারলে রক্ষা ছিল না!! নাহ!! এর পরের বার সমবয়সী পাত্রী খুঁজবো!
আমার কলেজের এক বড় ভাইয়ের ডায়রি থেকে কপি করলাম, উনি এখনো বিয়ে করেননি, বুজতে পারছি না কাহিনিটা কি !
তাকে কি জিঙ্গাসা করব ?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮