somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

 রবি ঠাকুরের মজার ঘটনা

০৯ ই মে, ২০১১ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১/ শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্রদের অন্যতম ছিলেন কথাশিল্পী প্রমথনাথ বিশী। তো, একবার প্রমথনাথ বিশী কবিগুরুর সঙ্গে শান্তিনিকেতনের আশ্রমের একটি ইঁদারার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওখানে একটি গাবগাছ লাগানো ছিল। কবিগুরু হঠাৎ প্রমথনাথকে উদ্দেশ করে বলে উঠলেন, ‘জানিস, একসময়ে এই গাছের চারাটিকে আমি খুব যত্নসহকারে লাগিয়েছিলাম? আমার ধারণা ছিল, এটা অশোকগাছ; কিন্তু যখন গাছটি বড় হলো দেখি, ওটা অশোক নয়, গাবগাছ।’
অতঃপর কবিগুরু প্রমথনাথের দিকে সরাসরি তাকিয়ে স্মিতহাস্যে যোগ করলেন, ‘তোকেও অশোকগাছ বলে লাগিয়েছি, বোধকরি তুইও গাবগাছ হবি।’

২/ একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। তো গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ (Porridge of Oats) খেতে দেওয়া হয়েছিল; আর রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি।
গান্ধীজি তাই না দেখে বলে উঠলেন, ‘গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।’ উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।’

৩/ রবীন্দ্রনাথের একটা অভ্যাস ছিল, যখনই তিনি কোনো নাটক বা উপন্যাস লিখতেন, সেটা প্রথম দফা শান্তিনিকেতনে গুণীজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রায়ই এরূপ পাঠের আসরে যোগদান করতেন। তা, একবার আসরে যোগদানকালে বাইরে জুতা রেখে আসায় সেটা চুরি গেলে অতঃপর তিনি জুতা জোড়া কাগজে মুড়ে বগলদাবা করে আসরে আসতে শুরু করে দিলেন।
রবীন্দ্রনাথ এটা টের পেয়ে গেলেন। তাই একদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে এভাবে আসরে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বলে উঠলেন, ‘শরৎ, তোমার বগলে ওটা কী পাদুকা-পুরাণ?’ এ নিয়ে সেদিন প্রচণ্ড হাসাহাসি হয়েছিল।

৪/ একবার এক দোলপূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে। তো, পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথকে বেশ রঞ্জিত করে দিলেন।
আবির দ্বারা রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ রাগ না করে বরং সহাস্যে বলে উঠলেন, ‘এত দিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও তিনি একজন ওস্তাদ।’

৫/ মরিস সাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। একা থাকলে তিনি প্রায়ই গুনগুন করে গান গাইতেন। তো, একদিন তিনি তৎকালীন ছাত্র প্রমথনাথ বিশীকে বললেন, ‘গুরুদেব চিনির ওপর একটি গান লিখেছেন, গানটি বড়ই মিষ্টি।’ অতঃপর তিনি গানটি গাইতে লাগলেন, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে...।’
‘তা চিনির গান তো মিষ্টি হবেই। কিন্তু এই ব্যাখ্যা আপনি কোথায় পেলেন?’ প্রমথনাথ বিস্মিত হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলেন।
উত্তরে মরিস সাহেব জানালেন, ‘কেন, স্বয়ং গুরুদেবই আমাকে বলে দিয়েছেন।’

৬/ কবিগুরুর ৫০ বছর বয়সে পদার্পণ উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের একটি কক্ষে সভা বসেছিল, যেখানে তিনি স্বকণ্ঠে গান করছিলেন। তো, তিনি গাইলেন, ‘এখনো তারে চোখে দেখিনি, শুধু কাশি শুনেছি।’ কবিগুরু এটা গেয়েছিলেন আচার্য যতীন্দ্রমোহন বাগচি উক্ত কক্ষে প্রবেশের পূর্বক্ষণে, তাই বাগচি মহাশয় কক্ষে প্রবেশ করে বিস্ময়-বস্ফািরিত নয়নে সকলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
‘সিঁড়িতে তোমার কাশির শব্দ শুনেই গুরুদেব তোমাকে চিনেছেন’, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তখন বাগচি মহাশয়কে বুঝিয়ে দিলেন, ‘তাই তো তাঁর গানের কলিতে বাঁশির স্থলে কাশি বসিয়ে তাঁর গানটি গেয়েছেন।’

৭/ সাহিত্যিক ‘বনফুল’ তথা শ্রীবলাইচাঁদ ব্যানার্জির এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। অতএব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে রবীন্দ্রনাথ যখন বললেন, ‘কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি’, তখন বলাইবাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, ‘আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।’
রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, ‘না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে শানাই।’

৮/ একবার কালিদাস নাগ ও তাঁর স্ত্রী জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ মৃদুহাস্যে নাগ-দম্পতিকে প্রশ্ন করলেন, ‘শিশু নাগদের (সাপের বাচ্চাদের) কোথায় রেখে এলে?’ আরেকবার রবীন্দ্রনাথ তাঁর চাকর বনমালীকে তাড়াতাড়ি চা করে আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে কপট বিরক্তির ভাব দেখিয়ে বললেন, ‘চা-কর বটে, কিন্তু সু-কর নয়।’
আরও একবার কবিগুরুর দুই নাতনি এসেছেন শান্তিনিকেতনে, কলকাতা থেকে। একদিন সেই নাতনি দুজন কবিগুরুর পা টিপছিলেন; অমনি তিনি বলে উঠলেন, ‘পাণিপীড়ন, না পা-নিপীড়ন?’ প্রথমটায় তারা কিছুই বুঝতে না পারলেও পরে কথাটার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পেরে খুবই মজা পেয়েছি -(কপি-পেস্ট)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১১ বিকাল ৫:২০
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×