ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু অঞ্চল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। বড় ভূমিকম্প থেকে রক্ষার জন্য তাই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এ লেখায় থাকছে তেমন কয়েকটি জরুরি করণীয়।
ভূমিকম্পের আগে করণীয়:
১. বাড়ির ভেতরে এবং বাইরে নিরাপদ স্থানগুলো চিহ্নিত করা জরুরী। যাতে ভূমিকম্পের সময় ভাবতে না হয় কোথায় আশ্রয় নেবেন। বাসায় যারা ছোট তাদেরকে ভাল করে বুঝিয়ে দিন ।
২. ভঙ্গুর জিনিস সবসময় বন্ধ শেলফে রাখা উচিত।
৩. ভারি মালপত্র উপরে রাখবেন না, শেলফের নিচের দিকে রাখুন। ঝাকুনিতে যেন এগুলো গায়ের ওপর না পড়ে।
৪. লিক হওয়া গ্যাস লাইন, বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করে নিন এবং নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
৫. মাঝে মাঝে ভূমিকম্প ও জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার মহড়া দিন যাতে সবাই আয়ত্ত করতে পারে।
৬. নিজের কর্মক্ষেত্রে, বাসায় ও প্রতিবেশীদের এ বিষয়ে সচেতন করুন, সাথে আপনার কমিউনিটিকেও।
৭. শুকনো খাবার ও জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু সরঞ্জাম হাতের কাছে রেডি রাখুন সব সময়।
৮. অন্ধকারে দেখার জন্য টর্চ রাখুন বাড়ির প্রতিটি কক্ষে ও হাতের কাছে।
৯. স্কুলে স্কুলে ভূমিকম্প সম্পর্কে বাচ্চাদের শেখান। বাসাতেও আপনার সন্তানকে শিক্ষা দিন।
ভূমিকম্পের সময় ঘরের ভেতরে থাকলে করণীয়:
১. ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে বসে পড়ুন, শক্ত-মজবুত কোনো আসবাবের নিচে ঢুকে যেতে পারেন এবং সেটিকে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরুন যাতে সরে না যায়। মনে রাখবেন, আমাদের দেহের মধ্যে মাথা হল সবচেয়ে নমনীয় অঙ্গ, আসবাবের আশ্রয় না পেলে হাত দিয়ে মাথা রক্ষা করুন।
২. আসবাবপত্র না পেলে ঘরের ভেতরের দিকের দেয়ালের নিচে বসে আশ্রয় নিতে পারেন। বাইরের দিকের দেয়াল বিপজ্জনক।
৩. জানালার কাঁচ, আয়না,আলমারি, দেয়ালে ঝুলানো বস্তু থেকে দূরে থাকুন। এগুলো ভেঙে মাথায় পড়তে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
৪. বহুতল ভবনের ওপরের দিকে অবস্থান করলে ঘরের ভেতরে থাকাই ভাল। কারণ, নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর পূর্বেই ভূমিকম্পের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া নামতে নামতেও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
৫. ভূকম্পন থেমে গেলে বের হয়ে আসুন।
৬. নিচে নামতে চাইলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নামুন। নামার সময় মোবাইল ফোন আর ঘরের চাবিটা সম্ভব হলে হাতে নিয়ে নেবেন।
৭. বিছানায় শোওয়া অবস্থায় থাকলে বেশি দূরে না গিয়ে মজবুত বিছানা হলে তার নিচেই আশ্রয় নিন।
বাড়ির বাইরে থাকলে করণীয়:
১. খোলা জায়গা খুঁজে আশ্রয় নিন। বহুতল ভবনের প্রান্তভাগের নিচে কোনোভাবেই দাঁড়াবেন না। উপর থেকে খণ্ড পড়ে আহত হতে পারেন।
২. লাইট পোস্ট, বিল্ডিং, ভারি গাছ অথবা বৈদ্যুতিক তার ও পোলের নিচে দাঁড়াবেন না।
৩. রাস্তায় ছোটাছুটি করবেন না। মাথার উপর কাঁচের টুকরা, ল্যাম্পপোস্ট অথবা বৈদ্যুতিক তাঁর ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
চলমান গাড়িতে থাকলে করণীয়
১. তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে খোলা জায়গায় পার্ক করে গাড়ির ভেতরেই আশ্রয় নিন।
২. কখনই ব্রিজ, ফ্লাইওভারে থামবেন না।
৩. বহুতল ভবন কিংবা বিপজ্জনক স্থাপনা থেকে দূরে গাড়ি থামান।
৩. ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই অপেক্ষা করুন।
ভূমিকম্পের পরে করণীয়:
১. ভূমিকম্প শেষ হলেও আরও কম্পনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। প্রায়ই পরপর কয়েকবার কম্পন হয়। এই আফটার শকের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। এবারের আফটার শক এক ঘণ্টার মধ্যেই দু’বার হয়ে যায়। কখনও এক মাসের মধ্যেও হতে পারে।
২. যথাসম্ভব শান্ত থাকুন। কম্পন থেমে গেলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, তারপর বের হন। ওপর থেকে ঝুলন্ত জিনিসপত্র কিছুক্ষণ পরেও পড়তে পারে।
৩. নিজে আহত কিনা পরীক্ষা করুন, অপরকে সাহায্য করুন। বাড়িঘরের ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করুন। নিরাপদ না হলে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যান।
৪. গ্যাসের সামান্যতম গন্ধ পেলে জানালা খুলে বের হয়ে যান এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুন।
৫. কোথাও বৈদ্যুতিক স্পার্ক চোখে পড়লে মেইন সুইচ বা ফিউজ বন্ধ করে দিন। ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং থেকে সাবধান থাকুন। অগ্নিকাণ্ড হতে পারে।
ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়লে করণীয়:
১. আগুন জ্বালাবেন না। বাড়িটিতে গ্যাসের লাইন লিক থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
২. ধুলোবালির মধ্যে পড়লে হাত অথবা রুমাল দিয়ে নাক মুখ ঢেকে নিন।
৩. ধীরে নড়াচড়া করুন এবং উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকুন।
৪. উদ্ধার কাজের সময় নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে পাইপ অথবা দেয়ালে আস্তে আস্তে টোকা দিয়ে শব্দ করুন। চিৎকার না করাটাই শ্রেয়, এতে প্রচুর পরিমাণে ধূলা নিঃশ্বাসের সাথে ঢুকে যেতে পারে।
ভূমিকম্প থেকে জীবন বাঁচাতে জরুরি কয়েকটি কাজ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়
আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভুল শুধু ভুল নয়
এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!
আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)
বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন
বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link
সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:
১)... ...বাকিটুকু পড়ুন