somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুনশ্চ বসন্তদিন .......আর এক ফাল্গুনী বিকেল......

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফাগুন যেন কেমন
উথাল পাথাল ব্যাকুল বাতাস
আকুল করে এ মন ......

বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে.... বা কোন পুরাতন প্রাণের টানে....
এখন বসন্ত আর বসন্তের এই আকুল বাতাস আমাকে নিয়ে যায় বারবার কোন অজানা ভালোলাগায়। মনে পড়ে সে কোনো জনমে বিষাদ, বেদনা, বিরহ, আনন্দ, ভালোবাসা বা ভালোলাগার স্মৃতিগুলি। স্মৃতিকাতর হই আমি।

সে যে ছুঁয়ে গেলো নুয়ে গেলো রে, ফুল ফুটিয়ে গেলো শত শত!!!
সোনাঝরা পড়ন্ত বিকেলে জানালায় দাঁড়াতেই হুহু করে বয়ে যায় বসন্তের এক ঝলক মাতাল হাওয়া।আমাকে ছুঁয়ে!! সে যে ছুঁয়ে গেলো নুয়ে গেলো রে, ফুল ফুটিয়ে গেলো শত শত!!!

ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান, আমার আপন হারা প্রাণ, আমার বাঁধন ছেড়া প্রাণ
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় কবে কোথায় আমার আপন হারা, বাঁধন ছেড়া প্রাণ কাকে করেছিলাম দান, সে আজ আর আমার মনে নেই। ভুলেছি অনেক কিছুই তার, কিছুটা ইচ্ছেই কিছুটা অনিচ্ছেতেই। তবু ফাগুন বার বার ফিরেছে আমার দ্বারে, তার সবটুকু ভালোলাগা নিয়ে।

এতদিন যে বসে ছিলেন পথ চেয়ে আর কাল গুণে, দেখা পেলেম ফাল্গুনে
এতদিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুণে দেখা পেলেম ফাল্গুনে...
বালক বীরের বেশে তুমি করলে বিশ্বজয়, এ কি গো বিস্ময়!!!
বালক বীরের বেশে তুমি সেদিন বিশ্বজয় করোনি। জয় করেছিলে আমার হৃদয়। হে বালকবীর বলা হয়নি তোমাকে সেদিন। জানানো হয়নি কোনো মুগ্ধতা!

অলি বার বার ফিরে যায়... অলি বার বার ফিরে আসে...তবে তো ফুল বিকাশে
অথচ সে অলি বার বার ফিরে গেছে। পারেনি ফুটাতে ফুল এ হৃদয় মন্দিরে। কাঁটার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে তার পাখা। আজ ফাগুনদিনে অকারণ ভালোলাগার সাথে সাথে স্পর্শে তাহার ব্যাথা। ফাগুনের বাতাসে ভেসে আসে তার তপ্ত দীর্ঘশ্বাস। মন কাঁদে আজ। কিসের তরে কে বা জানে?

ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে ব হে কিবা মৃদয় বায়....কি জানি কাহারো লাগি প্রাণ করে হায় হায়
জানিনা কিসের লাগি আজ প্রানে বাজে এ হাহাকার। চুপি চুপি পুরোনো ডেস্ক খুলে বের করি একটি জীর্ণ পুরোনো চিঠি...

এ চিঠির প্রতিটি অক্ষর, শব্দ, বাক্য মুখস্থ আমার। আমি জানি এ চিঠির প্রতিটি ফোটায় ফোটায়, প্রতিটি চরণে মিশে আছে এক হেরে যাওয়া তরুনের গভীর হাহাকার। চিঠিটা হাতে নিয়ে বসি ফাগুনের পত্রপল্লবিত কাননের এক কোনে। ছুঁয়ে যাও তুমি আমাকে বসন্তের বাতাস হয়ে । তোমার চিঠির জীর্ণপাতা তিরতির কাঁপে সে বাতাসে। আমার হাতে তোমার চিঠি। আজ আমার হৃদয় তোমার আপন হাতে দোলে ........

হৃদি,

তুমি আমাকে কখনও ভালোবাসোনি। কখনও আমার কোনো অনুরোধ রাখোনি। আমাকে কখনও অপমান করোনি। আমার কোনো আশাকে পূর্ণও করোনি।
আমি এসবে এখন অভ্যস্থ হয়ে গেছি। এই উত্তাপহীনতা,এই কষ্ট পাওয়া, ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে চুরমার হওয়া, নিজেকে ছোট করে ফেলা এই সবকিছুতেই আমি অভ্যস্থ হয়ে গেছি। আমি একটুও ভালো নেই।

মেলবোর্ন থেকে রোজ রাতে আমি একটি করে চিঠি লিখেছি তোমাকে। সকাল থেকে রাত, কি করলাম, কোথায় গেলাম, কি খেলাম সেসব প্রতিটি খুঁটিনাটি লিখেছি। রোজ রাতে ঘুমুতে যাবার আগে মানিব্যাগ থেকে তোমার ছোট্ট ছবিটা বের করে শুয়ে শুয়ে দেখেছি। তোমার ছবির দিকে তাকালে মনেই হয়না তুমি এমন নিষ্ঠুর হতে পারো, হতে পারো এমন বিবেকহীন!
রোজ সকালে উঠে তোমার জন্য শুভকামনা দিয়ে শুরু করেছি আমার দিন। কাজের অবসরে, রোদ ঝকঝকে রাস্তায়,পাখি ডাকা দুপুরে, পড়ন্ত বিকেলে, গাছের ছায়ারা যখন দীঘল হয় তোমার কথাই শুধু ভেবেছি আমি।

আমার সজ্ঞানে, তুমি যা কিছু অপছন্দ করো সব, সবকিছু আমি টেনে হেঁচড়ে তুলে ফেলেছি আমার জীবন থেকে একটা একটা করে। প্রতিটাদিন আমি খোঁজ নিয়েছি দারোয়ানের কাছে, মেইল বক্স চেক করেছি দিনে কয়েক হাজার বার। তোমার চিঠি বা মেইল কোনোটাই আসেনি।

হয়তো তুমি কিছুই লিখতে না। শুধুই হয়তো লিখতে তুমি ভালো আছো। নয়তো জানতে চাওয়া , কেমন আছি আমি। আমি জানি নিজের বিপদ ডেকে আনার মত কোনো বোকামী কথাবার্তাই তুমি লিখবে না কখনও আমাকে। তবুও হৃদি একটা কথা জেনে রাখো। তোমাকে ব্লাকমেইল করবো তোমার লেখা চিঠি দিয়ে এ আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা।

বরং তুমি যদি চাও খুব সহজেই তা করতে পারবে তুমি আমাকে । আমার লেখা চিঠি দিয়েই। কারণ কোনো কিছু বাকী রেখেই আমি তোমাকে চিঠি লিখিনি। একটা ভদ্রঘরের ছেলে এক ভদ্রঘরের মেয়েকে কিছুই বাকী না রেখে ভালোবাসলে যেভাবে চিঠি লিখতে পারে। ঠিক তেমনি করেই লিখেছি আমি। এ চিঠিগুলির জন্য হয়তো ভবিষ্যতে আমাকে অপমানিত হতে হবে। হয়তো তুমিই আমাকে একদিন করবে চরম অপমান।

কি হবে আর না হবে আমার, এ নিয়ে ভাবিনা আমি। কারণ আমার ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিলোনা , ছিলোনা মেকি কিছু। আজও নেই। যদি আমার ভালোবাসার অপরাধে আরও কিছু শাস্তি দিতে চাও। দিতে পারো। পুরষ্কারের ভাগ্য আমার নেই। সে বেশ জেনে গেছি আমি। আমিও যে একটা মানুষ। রক্তমাংস, শরীর হৃদয়ের মানুষ। কখনও হয়তো ভেবেই দেখোনি তুমি তা।

আচ্ছা আমি কি ব্যার্থ্ প্রেমিক? হয়তো আমি ব্যার্থ কিন্তু আমার ভালোবাসা ব্যার্থ নয়। প্রেম কখনও ব্যার্থ হয়না। কারও প্রেমই কোনোদিন ব্যার্থ হয়নি।
আমি ভাবি আমার কি আছে? না চেহারা না গুণ, কিছুই নেই আমার। আসলে তোমাকে ভালোবাসবার আগ পর্যন্ত কোনো পরিচয়ই ছিলোনা আমার।

আসলে তুমি আমাকে কিছুই দাওনি কথাটা বললে ভুল হবে। তুমি আমাকে যা কিছু দিয়েছো তা শোধ করতেই এ পৃথিবীতে আবার আমাকে আসতে হবে। অথবা গত জনমেও হয়তো ঋণ ছিলো কিছু বাকী। সে বোঝাটাই হয়তো হালকা করছি।

তবে এও সত্যি নিজের কিছুই না হারিয়ে যেটুকুও তুমি আমাকে দিতে পারতে তার কিছুই দাওনি তুমি আমাকে। তুমি সে কথা আমার চাইতেও ভালো করে জানো হৃদি। যদি তোমার মন বলে কিছু থাকে, থাকে বুদ্ধি বলে কিছু তো একদিন রাজপ্রাসাদে বসে থেকেও তুমি বুঝবে এ পৃথিবীতে কেউ কোনোদিন আমার মত তোমাকে ভালো বাসতে পারবেনা, পারেনিও। একদিন না একদিন এ সত্য আবিষ্কৃত হবেই তোমার কাছে।

তোমাকে ভুলে থাকতে চাই। সত্যিই ভুলে যেতে চেষ্টা করি। কিন্তু ভারী দেখতে ইচ্ছে করে তোমাকে। বড় কথা বলতে ইচ্ছে হয়। পাগল পাগল লাগে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করি। হৃদি পেত্নী ছাড়া কি এই শহরে কোনো মেয়ে নেই?কোনো মেয়েই কি পছন্দ করেনা আমাকে? সাথে সাথেই মনকে ধমকে উঠি। বলি , হৃদি হৃদিই। তার অভাব কাউকে দিয়েই পূরণ হয়না।

তোমার কোনো ক্ষমা হয়না হৃদি। যে দুঃখ দিলে আমায় তার ক্ষমা নেই আসলেই। ক্ষমা নেই তোমার হৃদি.........

হৃদি এটাই তোমাকে লেখা আমার শেষ চিঠি । রোজ রোজ আর চিঠি লিখে বিরক্ত করবোনা তোমাকে। এ চিঠি কোনো সাধারণ চিঠি নয় । এ আমার জবানবন্দী। তোমাকে কতখানি ভালোবাসি তার জবানবন্দী হৃদি। কখনও যদি কোনো মেঘলা দুপুরে বা কোনো উদাস বাসন্তী রাতে ভুল করে মনে পড়ে একটা পাগলকে। তখন এ চিঠিটা নেড়ে চেড়ে দেখো না হয়। আমার মৃত্যুর পরে হলেও যেখানেই থাকিনা কেনো ঠিক সে মুহুর্তে একটি সুন্দর কাঁচপোকা হয়ে জানলা দিয়ে উড়ে এসে বসবো তোমার চুলে। কানের কাছে উড়ে উড়ে গান গাইবো। হৃদি যদি কোনোদিন আমাকে একটুও ভালোবেসে থাকো সে মুহুর্তে ঠিক চিনতে পারবে কাঁচপোকার সে করুণ কান্নার সূর। হয়তো সে মুহুর্তে একফোটা জল গড়িয়ে পড়বে তোমার চোখ বেয়ে এ চিঠির উপরেই।

তোমাকে আমি কাঙালের মত চেয়ে নিজেকে নিঃশেষ করেছি মাত্র। তুমি আমাকে কিচ্ছু দাওনি। ভালোবাসোনি, অন্যায় করোনি, তোমাকে ভুল বুঝার কিছু নেই আমার। তুমি শীতল, নিষ্ঠুর এবং একই সাথে মহৎ তোমাকে এভাবেই জেনে যাবো যতদিন বাঁচি।
..........

তবুতো ফাল্গুন রাতে এ গানের বেদনাতে
আঁখি তব ছলো ছলো এই বহু মানি।
দিয়ে গেনু বসন্তের এই গানখানি
চোখ থেকে জল গড়ায় আমার বুঝি... চোখের কোনে হাত দিয়ে দেখি শুস্ক আঁখি পল্লব!


কখন যেন আমি কাঁদতেই ভুলে গেছি............
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:২৩
১৫৪টি মন্তব্য ১৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×