somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিচার- শিশুদের জন্য আনন্দময় ও সুষ্ঠ শিক্ষা ব্যবস্থা

১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা যারা এখনকার দিনে শিশুদেরকে পড়াই এবং এই আমরাই যেমনটা পড়েছি আমাদের শিশুবেলায় সে সব নিয়ে ভাবলে বিশাল বৈসাদৃশ্য চোখে ভেসে উঠবে। শুধু তাই নয় শিশুকালে এই পড়ালেখা নিয়ে আমরা অনেকেই প্রায়ই যে ভীতি বা মনোকষ্টের শিকার হয়েছিলাম তা মনে করলে আজও আমরা কেউ কেউ নিশ্চয়ই শিউরে উঠি। কিন্তু এমনটা হবার কথা ছিলো না, শিশুরা শিখবে আনন্দ নিয়ে, এটাই হওয়া উচিৎ। তবে এ কথাটাও মাথায় রাখতে হবে যে যুগের সাথে সব কিছুই বদলায় ও মানুষ দিনে দিনে নিজেকে ও পরিবেশকে পরিবর্তন করে। শিশুশিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষনার পর আজ মানুষ যতটুকু ভাবতে পারছে বা শিশুদের জন্য করতে পারছে তা এত সহজে এই পর্যায়ে আসেনি। তারপরও থাকে অনেক কথা।

যাইহোক প্রত্যেকটা মানুষই সতন্ত্র ও ভিন্ন। শিশুরা প্রত্যেকেই এক একজন ভিন্ন ও নিজস্ব বৈশিষ্ঠে বিদ্যমান। প্রতিটা মানুষই শিশুকাল থেকেই ভিন্ন অবয়ব, ভিন্ন চিন্তা চেতনা, ভিন্ন দক্ষতা, মানসিকতা ও মননে বেড়ে ওঠে। কাজেই শিক্ষাও হওয়া উচিৎ প্রত্যেকটা সতন্ত্র মানুষের মেধা মনন দক্ষতা ও আগ্রহের কথা মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের দেশের শিশুশিক্ষায় এর কোনো প্রতিফলন নেই। সকলকেই ঢালাওভাবে একই ছাঁচে ফেলে গড়ে তোলার চেষ্টাকেই আমাদের শিশুশিক্ষা ব্যবস্থা বলে। কে কোন ক্ষেত্রে বেশি দক্ষ, কে কোন কাজে কতটা উপযোগী তা নিয়ে না ভেবে ঢালাওভাবে সকল শিশুকে একই ছাঁচে ঢেলে শেখানোর প্রতিযোগীতা চলতে থাকে। কাজেই ফলাফল হয় কখনও নেতিবাচক, কখনও কুলিয়ে উঠতে না পেরে হিমশিম খাওয়া কিংবা শূন্য আর কিছু কিছু হয় কার্য্যকরী। সবচেয়ে যে বড় ক্ষতিটা হয় যখন শিশু কোনো শিক্ষাগ্রহনে হিমশিম খায়, ব্যর্থ হয় তা শিশুমনের উপর চাপ ফেলে। এই ব্যবস্থা শিশুকে হীনমন্যতার মাঝে ফেলে দেয়। তাই শিক্ষাব্যবস্থায় আমার মতে সবার আগে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো-

১। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য স্বতন্ত্র পরিকল্পনা ও পদ্ধতি
একটি ক্লাসে কখনই সকল শিক্ষার্থীকে আমরা সমান বয়সী, সমান শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার অধিকারী পাবো না। ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার শিক্ষার্থীরা একই ক্লাসে পড়ালেখা করে। সবার জন্য সকল অংক বা সাহিত্য বা যে কোনো বিষয় একই রকম সহজ বা কঠিন নয়। কোন শিক্ষার্থী যদি সকলের জন্য দেয় একটি নির্দিষ্ট কাজ করতে না পারে তবে শিক্ষক তার জন্য স্বতন্ত্র পরিকল্পনা করে থাকবেন এবং তার জন্য শিক্ষার্থীর ক্ষমতার ভিত্তিতে আলাদা টাস্ক ডিজাইন করবেন। এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা উন্নত দেশগুলির কিছু কিছু শিক্ষা ব্যবস্থায় দেখতে পারি যেমন ফিনল্যান্ড, জাপান বা পৃথিবীর আরও আরও দেশে। তবে এই ব্যপারে সঠিক পরিকল্পনা ও যথার্থ কর্মশালা বা প্রশিক্ষন প্রয়োজন। যথার্থ প্রশিক্ষন না পেলে কিংবা কিভাবে এই ধরনের লেসন প্ল্যান বানানো হবে, কি করে শিক্ষক সেটা একই সময় বা ভিন্ন সময়, একই ক্লাসরুম না ভিন্ন ক্লাসরুম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদেরকে শেখাবেন তা অবশ্যই শিক্ষককে জানতে হবে। তাই প্রাইমারী, প্রি প্রাইমারী সকল সেকশনেই যথার্থ শিক্ষক প্রশিক্ষন প্রয়োজন।

২। প্রচলিত নম্বর সিস্টেম পরিবর্তন বা বর্জন
আমরা ছোট থেকে শুনি আমাকে ১০০ পেতে হবে। আমাকে প্রথম হতে হবে। কোমলমতী শিশুর মস্তিস্কে এই ধরনের কমান্ড কি রকম চাপের সৃষ্টি করে তা মনে হয় কাউকেই বলে বুঝাতে হবে না কারণ আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি এই অভিজ্ঞতার ভেতরে দিয়ে এইখানে আজ এসেছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সিস্টেমটির পরিবর্তন বা বর্জন প্রয়োজন। কারণ এই চাপের পরিবর্তে আমরা যদি শিশুদেরকে মুক্ত ও আনন্দময় মনে তাদের শিক্ষা গ্রহন করাতে পারি তো সেইটিই বেশি কার্য্যকরী হবে। এই কারণে শিশুস্কুলে কোনো মার্কস সিস্টেম কাম্য নয়। অনেক ভালো স্কুলগুলোতে শিশুদের জন্য কোনো পরীক্ষা বা মার্কিং করা হয় না। শুধুমাত্র মৌখিক ফিডব্যাক ও প্রশংসাবাক্যই তাদেরকে কোনো লেসন বা টাস্ক সুষ্ঠভাবে শিখতে সাহায্য করে।


৩। শিশুদের জন্য কোন নির্দিষ্ট স্কুল ইউনিফর্ম আসলে দরকার নেই
আমাদের দেশের অনেক স্কুলেই আমরা দেখি ছোট ছোট বাচ্চারা আটোসাটো ইউনিফর্ম, বো টাই, নেকটাই পরে এই গরমেও হাসফাক লাগিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু ছোট বয়সে বাচ্চাদের এমন ইউনিফর্মের আসলে প্রয়োজনই নেই। অসস্তিকর আটোসাটো পোশাকে ধরে বেঁধে স্কুলে না পাঠিয়ে বরং আরামদায়ক ও সস্তিকর পোশাকে স্কুলে পাঠালেই মনে হয় সস্তিদায়ক অবস্থাটা শিশুর শিক্ষা গ্রহনের জন্য বেশি উপযোগী হবে। কাজেই বাচ্চাদেরকে নির্দিষ্ট ইউনিফর্মের মাঝে না বেঁধে আরামদায়ক পোষাকে স্কুলে আসতে দেওয়া উচিৎ।

৪। ক্লাসরুম এবং ক্লাসের আসবাবপত্র
আমাদের স্কুলগুলোতে চেয়ার বা বেঞ্চে বসতে হয়। তাই শিশুদের উপযোগী নিরাপদ ও তাদের উপযোগী উচ্চতার ছোট ছোট চেয়ার টেবিল কার্পেট সোফা ও জিরিয়ে নেবার স্থানও থাকা উচিৎ। আমাদের দেশের সাধারণ বেঞ্চ টেবিল চেয়ার শিশুদের জন্য আসলে তেমন উপযোগী নয়। তাই একটি শিশুর সুবিধার কথা মাথায় রেখেই স্কুলের আসবাবপত্র ডিজাইন করতে হবে। শিশু যেন হাতের নাগালে তার ব্যাগ রাখার তাকটি পায়। খেলনার বাক্সটি হাতের কাছে পায় সেসব ভাবতে হবে। চেয়ারও বেঞ্চের পাশাপাশি তারা যেন হাতের কাছে গল্পের বই,ছবির বই এসবও পায় সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। রিডিং কর্ণার, পেইন্টিং কর্ণার, টয় কর্ণার এসবের ব্যবস্থাও ক্লাসরুমে থাকা জরুরী। তবে এই সাথে আরও প্রয়োজন শিশুদের এই সকল জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক নির্দেশনা।

৫। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটা ক্লাসের ফাকে বিরতী
প্রতিটা ক্লাসের ফাঁকে যদি কিছুটা বিরতি থাকে তবে শিক্ষার্থীরা পানি পান, টয়লেট করা বা কিছু খেয়ে নেবার সময় পায়। এটা যেমনই রিফ্রেসমেন্টের কাজ করে তেমনই উদ্যম বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ফাস্ট লার্নার বা দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলা শিক্ষার্থীরা তাদের কাজ শেষে সহপাঠিদের কাজ শেষ হবার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরাই স্টোরী বুক, বা পিকচার বুক দেখতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। পেইন্টিং বা ড্রইং কর্নারে কিছু আঁকতে পারে। এতে তাদের সময়টাও যেমন কাজে লাগাতে পারে তেমনই সৃজনশীল প্রতিভারও বিকাশ ঘটে। সুষ্ঠ বিদ্যালয়গুলিতে শিশুদের এই ধরণের কাজগুলির পাশাপাশি কনস্ট্রাকটিভ কিছু শিক্ষাব্যবস্থারও আয়োজন থাকে।


৬।ডিটেইল এবং সেল্ফ কনফিডেন্স বাড়িয়ে তোলা
একটি টপিক নিয়ে শিক্ষার্থীরা নানা ভাবে শিখবে। প্রশ্নত্তর পর্ব, পেয়ার লার্নিং, গ্রুপ লার্নিং এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই তাদের জন্য প্রশ্ন তৈরি করবে এবং সেই প্রশ্নের উত্তর ও নিজেরাই খুঁজে বের করবে। অনেক কিছুই শিশুরা অনেক সময় একা শিখতে পারে না। কিন্তু সহপাঠিদেরকে দেখে বা শুনে বা তাদের সহায়তায় ঠিক ঠিক শিখে ফেলে। তাই মাঝে মাঝে পেয়ার লার্নিং বা পার্শ্ববর্তী সহপাঠির সাথে আলোচনা বা গল্পের মাধ্যমে শেখার জন্য কিছু টপিক তুলে দিতে হবে। অনেক শিশু একা না শিখলেও গ্রুপ ওয়ার্কে শিখে ফেলে। গ্রুপ ওয়ার্ক এমন এক পদ্ধতি যেখানে সবচাইতে কনফিডেন্সলেস শিশুটিও নিজেকে একা মনে করে না। সে ভাবে তার সাপোর্ট আছে। সে না পারলেও তার বন্ধুরা সবাই মিলে একটা কিছু পারবেই। এই ধরনের কাজ শুধু বড় শিক্ষার্থীদের দ্বারাই সম্ভব তা কিন্তু নয়, শিশু শ্রেনী বা প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী থেকেও তাদের লেভেলে উপযুক্ত প্রশিক্ষন ও শিক্ষকের সৃজনশীলতা দিয়ে করানো সম্ভব।

৭।পুঁথিগত বিদ্যার চাইতে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বিশেষ জরুরী
শিশুদেরকে সাঁতার, এক্সারসাইজ এসব প্রয়োজনীয় কাজের পাশাপাশি গার্ডেনিং,পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা ও যত্ন, মানবিকতার শিক্ষা দিতে হবে। আজকাল অনেক স্কুলেই এসব শিক্ষাব্যবস্থা থাকে।নৈতিকতা, সমাজের নিয়ম কানুন ও নিজেকে রক্ষার কৌশল এসব শিক্ষার জন্য নানা রকম ম্যুভি ডকুমেন্টারীর ব্যবস্থা থাকতে হবে। শিক্ষা সফরের বাবস্থা করতে হবে এবং ফিডব্যাক নিতে হবে। বাচ্চার পোর্টফলিও রাখাও বিশেষ প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা জাপানের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে খেয়াল করলেই কিছু হদিস পেতে পারি-


জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা:
জাপানের অপরাধ শতকরায় শূন্য। জাপানিদের এমন সুন্দর সমাজব্যবস্থার ভিত্তি আসলে কি? বা আপনি যদি অন্যভাবে প্রশ্ন করেন তাদের এমন চরিত্র গঠনের ভিত্তি কোথায়? তাহলে একবাক্যে বলতে হয় সেটা শেখানো হয় তাদের স্কুলগুলোতে। তাদের স্কুলে অনেক কিছু শেখানো হয়। যার মধ্যে গণিত, ভাষা, নৈতিকতা ইত্যাদি। জাপানের স্কুলগুলোতে জীবনমুখী শিক্ষা দেয়া হয়। শেখানো হয় সামাজিকতা, ন্যায়-অন্যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। ......
দিনের শুরুতে প্রধান শিক্ষক সবার আগে স্কুলে আসেন। তিনি স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে সব ছাত্র-ছাত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। শিক্ষার্থীরা স্কুলে ঢুকে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। ক্লাস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ খেলাধুলা, কেউ বিভিন্ন প্রোগ্রামিং কার্যক্রম, কেউ হ্যান্ড ক্রাফটে কাজ করে। ক্লাস শুরু হওয়ার ইঙ্গিতস্বরূপ এক ধরনের বিশেষ মিউজিক বেজে উঠে। তখন সব ছাত্র-ছাত্রী দলবেঁধে ওয়াশরুমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে শ্রেণিকক্ষে ফেরে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানারকমের সাবজেক্ট পড়ানো হয়। যেমন জাপানি ভাষা, গণিত, ইতিহাস, শরীরচর্চা, সংগীত ও শিল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান, অংকন বিদ্যা, নৈতিক শিক্ষা ইত্যাদি। এ সব ক্লাসের সঙ্গে সঙ্গে আরও বিশেষ কিছু ক্লাস এবং সমন্বিত পাঠ্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হয় নিয়মিত। প্রতিটি ক্লাসে ৩০-৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকে। প্রতিটি ক্লাসে একজন শিক্ষক থাকেন। সংগীত আর শিল্পকলা এবং শারীরিক শিক্ষার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক থাকেন।জাপানের স্কুলগুলোতে শিশুদের কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কাজ করতে হয়। যেমন সকালের সমাবেশের সময় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করা, শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা ক্ষেত্রে শিক্ষককে সহযোগিতা করা, বাগানের পরিচর্যা করা, খাবার পরিবেশন করা এবং খাবারের পর পরিষ্কার করা ইত্যাদি।
জাপানের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে দুপুরের খাবার বিদ্যালয় থেকে পরিবেশন করা হয়। খাদ্য তালিকা এবং খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য একজন ডায়েটেশিয়ান থাকেন। ডায়েটেশিয়ান বাচ্চাদের কোন্ খাদ্যের কতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন তা হিসাব করে ব্যালান্সড ডায়েট তৈরি করেন যা দেখে দক্ষ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাবুর্চিরা খাবার রান্না করেন। প্রত্যেকটি স্কুলে নিজস্ব রান্নাঘর রয়েছে।


দুপুরের খাবারের সময় ছাত্র-ছাত্রীরা সংগীতের তালে তালে খুব আনন্দের সঙ্গে বিশেষ ধরনের পোশাক পরে সারিবদ্ধভাবে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রেণিভিত্তিকভাবে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয়। তখন রান্নাঘরের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিগণ খাবার বুঝিয়ে দেন। খাবার নিয়ে ক্লাসে ফিরে ছাত্র-ছাত্রী নিজেরাই খাবার পরিবেশন করে।
খাবার গ্রহণের সময় শিশুদের জানানো হয়, তারা কি খাচ্ছে এবং কেন খাচ্ছে ইত্যাদি। শেখানো হয় যিনি খাদ্য রান্না করেছেন তার প্রশংসা কিভাবে করতে হয়। খাবার গ্রহণের সময়টাতে শিশুরা প্রার্থনা শুরু করে এবং খাবার শেষেও। খাবার গ্রহণ শেষ হলে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করে আবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। স্কুলে খাদ্যগ্রহণ করার জন্য রয়েছে সুন্দর ব্যবস্থাপনা। খাবার গ্রহণের আগে এবং পরে যাতে শিশুরা হাত ধুতে পারে তার জন্য প্রতিটি ক্লাসরুমে এবং ফ্লোরে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বেসিন এবং পানির ট্যাপগুলো শিশুদের বয়স বিবেচনার উপর ভিত্তি করে বসানো হয়।
জাপানে প্রায়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। তা ক্লাসগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে দুর্যোগকালীন কি করণীয় এবং কি বর্জনীয় তা শেখানো হয়। ভূমিকম্প শব্দ উচ্চারণ করামাত্র দেখলাম ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসের টেবিলের নিচে আশ্রয় নিল। সেখানে ছাত্রদের একটি ছক দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি দুর্যোগকালীন উক্ত তালিকার কি কি সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটবে?প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করানো হয়। সেখানে তারা ফুটবল, দৌড়সহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে। বিশেষ ধরনের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা ক্লাসরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়ায় ভালো না করলে তাকে সেই বিশেষ রুমে নিয়ে আলাদাভাবে যত্ন নিয়ে পড়ানো হয়।প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স থাকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো দেখেন।প্রতিদিন ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের ক্লাব এক্টিভিটিস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। সেখানে তারা বিভিন্ন অংকন, বিভিন্ন কোম্পানির লোগো সংগ্রহ করা, জন্মদিন পালন ইত্যাদি কাজ করে। সর্বোচ্চ সংখ্যক লোগো সংগ্রহকারীকে পুরস্কৃত করা হয়।
ডা. নাজমুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, অ আ ক খ স্কুল, ৮ই জানুয়ারী ২০২০ যুগান্তর


৮। হোমওয়ার্কের চাপ কমাতে হবে
শিশুদের বাসায় বিশ্রাম নেওয়া ও পরিবারের সাথে বেশি সময় কাটানো উচিত তাই তাদের হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ খুব একটা দেওয়া উচিৎ না। দিলেও তা যেন সহজ ও মজার হয়। অনেক সময় আমাদের দেশে হোমওয়ার্কের চাপের পাশাপাশি হোমওয়ার্ক দেবার ক্ষেত্রেও কিছু ভুল থেকে যায়। স্কুলে যা শেখানো হয়নি তা দিয়ে শিক্ষার্থীর নিজের মেধাশক্তির উপর নির্ভর করে হোমওয়ার্কের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। এমন শিক্ষা ব্যবস্থা কখনও কাম্য নয়। হোমওয়ার্ক হতে হবে আনন্দময় তা হতে পারে নিজের ভাবনা চিন্তায় কোনো গল্প লেখা বা ছবি আঁকা বা নিজের মত করে কিছু বানিয়ে আনা বা বাড়ির লোকজনের সাক্ষাৎকার বা ফ্যামিলী ট্রি জানা ইত্যাদি ইত্যাদি।

৯। শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে নিরখরচায় হওয়া উচিৎ
অনেক উন্নত দেশে শিক্ষাব্যবস্থার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। মধ্যাহ্নভোজ, টিফিন, বই-খাতা-স্টেশনারি, শিক্ষা সফর এমনকি স্কুলে যাতায়াত সব বিনামূল্যে শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকেন কিন্তু আমাদের দেশে প্রাইমারী লেভেলে সরকারীভাবে শিক্ষাব্যবস্থার কিছু খরচ বিনামূল্যে হলেও তা অপ্রতুল বলেই আমার মনে হয়। শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোটাই সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। গ্রামে গঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুর জন্য সঠিক শিক্ষা পৌছে দিতে হবে। সকল শিশু যেন আনন্দ ও সুব্যবস্থার মাঝে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেই দিকে নজর দিতে হবে।


১০। দক্ষ ও নিবেদিত শিক্ষক
এসব কিছুর উপরে যেটা প্রয়োজন সেটা একজন দক্ষ শিক্ষক। শুধু সিস্টেম বই খাতার উন্নয়নে কোনো কিছুই সফল হবে না যদি এক একজন দক্ষ শিক্ষক তৈরী না হয়। এই দক্ষ শিক্ষক তৈরীতে প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষন এবং হাতে কলমে শিক্ষা। আমার মতে শুধু ট্রেইনিংই যথেষ্ঠ নয় একজন শিক্ষক অন্তত ৬ মাস একজন সিনিয়র বা অভিজ্ঞ এবং অবশ্য দক্ষ শিক্ষকের সাথে হাতে কলমে শিশুদের সাথে কাজ করার পরই তার শিক্ষকতার পদটি নিশ্চিৎ করা উচিৎ।


ফিনল্যান্ড সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা অনেকটাই অন্যরকম। যাকে অনেকে ন্যানি স্টেট বলে থাকে। এই ন্যানি স্টেট হলো, এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা যেখানে জন্মের আগে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্রই তাদের নাগরিকদের দেখভাল করতে থাকে।সন্তান জন্মের আগেই ফিনিশ সরকার সমস্ত হবু মা বাবাদের এই ধরনের একটা বেবি বক্স পাঠিয়ে দেয়।


এতে একবছর পর্যন্ত বাচ্চার যা যা দরকার তার প্রায় সব কিছুই থাকে।


স্কুল শুরু করার আগেই ফিনিশ বাচ্চারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে একদম তরতাজা অবস্থায় থাকে। এরপর শুরু হয় আনন্দ পাঠ।
স্কুল চলাকালীন বাচ্চারা যাতে আনন্দের সাথে পড়াশোনা করতে পারে, সেই দিকেও কড়া নজর রাখা হয়। একদিকে যেমন প্রাথমিক শ্রেণী থেকেই উঁচু বেতনে খুব ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, অন্যদিকে পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলোর জন্যেও প্রচুর সময় দেওয়া হয়। তাছাড়া হোমওয়ার্ক তো দেওয়াই হয় না, আর খুব দরকার না থাকলে বেশির ভাগ ক্লাসে পরীক্ষাও নেওয়া হয় না।
কোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো? কেন ভালো?

আমার মতে আনন্দময় এবং নৈতিক ও সুস্ঠভাবে জ্ঞানার্জনের জন্য পৃথিবীর সবচাই্তে উপোযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যাবস্থাকে মনে হয়েছে। ফিনল্যান্ডের পড়ালেখা সম্পর্কে অনেক পড়েছি। টিচার্স ট্রেইনিং এ ডকুমেন্টারী দেখেছি। যদিও আমার লেখাটি শিশু শিক্ষা নিয়ে তারপরেও আমি আমার পড়া ফিনল্যান্ডের শিশুশিক্ষা থেকে উচ্চতর শিক্ষার প্রায় সম্পূর্ণ আইডিয়া পাওয়া যায় এমন একটি লেখা এখানে শেয়ার করছি। কিছু অংশ ছাড়া প্রায় পুরো লেখাটাই এখানে তুলে দিচ্ছি।
ফিনল্যান্ডের পড়াশোনা
ফিনল্যান্ডের অধিবাসীদের ফিনিশ বলা হয়ে থাকে। ফিনিশদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই ফ্রি, মানে কোনো টাকা পয়সা দিতে হয় না। বলা চলে এদিক থেকে ফিনিশরা খুবই ভাগ্যবান। আর এদের শিক্ষার হার শত ভাগ। ফিনল্যান্ড পড়াশোনার মানের ব্যাপারে আপসহীন। ছোটকালে এদের পড়াশোনা শুরু হয় আমাদের দেশের বাল্যশিক্ষার মতো করে। যেটাকে এখানে বলা হয়ে থাকে ‘পাইভাকোতি’। যার বাংলা হচ্ছে ‘দিবা যত্নকেন্দ্র’। ৩ বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের পাইভাকোতিতে দিতে হয়। পাইভাকোতিতে খেলাধুলা, খাওয়া দাওয়া, ঘুমানো আর আধো আধো ভাষা শিক্ষা শুরু হয়।
নিয়মিত বাচ্চাদের বাবা-মায়ের অনুমতিক্রমে ঘুরতে নেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। এদের এক ধরনের বিশেষ গাউন পরানো হয় কোথাও নিয়ে যাওয়ার সময়। গাউন দেখেই সবাই বুঝতে পারে এরা কে। এদের ট্রাফিক সিগন্যাল কী সেটা শেখানো হয় ব্যবহারিকভাবেই এবং এভাবেই এরা সিগন্যাল মানতে শেখে। এদের জন্য বাস, ট্রাম ও মেট্রো এসব যানবাহন ফ্রি। আর দলবাঁধা অবস্থায় ওই বিশেষ গাউন থাকলে বাস, ট্রাম ও মেট্রোর চালকেরা বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন। যাতে করে বাচ্চাদের অসুবিধা না হয়। কারণ বাচ্চাদের অসুবিধা হলে চালকেরা আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন। বাচ্চারা যখন বাবা-মায়ের সঙ্গে ট্রেনে চলাফেরা করে তখন কন্ডাক্টরেরা বাচ্চাদের বিশেষ টিকিট দেয়, যেটা ফ্রি। এর অর্থ হলো বড় হয়ে বাচ্চারা যেন টিকিট কিনতে অভ্যস্থ হয়।
এই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি। বাচ্চারা হেসেখেলে পড়াশোনা করে এখানে। নাই কোনো হোমওয়ার্ক আর নাই কোনো ভারী ব্যাগ বহন করার ঝামেলা। ন্যায়, নীতি, সততা, মানবিকতা সবকিছুই এদের শেখানো হয় ব্যবহারিকভাবে।
পাইভাকোতি শেষ করে ছয় বছর বয়স থেকে প্রাইমারি স্কুল শুরু করে। এখানে প্রাইমারি স্কুলকে বলা হয় ‘পেরুছ কৌলু’। কৌলু শব্দের অর্থ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর হাইস্কুলকে বলা হয় ‘লুকিও’। এখানকার হাইস্কুল হচ্ছে বাংলাদেশের এইচএসসি সমমানের। প্রতি বছর এপ্রিলের ৩০ তারিখ ও পয়লা মেতে এরা লুকিও গ্র্যাজুয়েশন উদ্‌যাপন করে সাদা ক্যাপ পরে। বয়স্ক মানুষজনও তাদের ক্যাপ নিয়ে নতুনদের সঙ্গে শামিল হয়। ৩০ এপ্রিল বিকেলবেলা থেকে বড় আকারে সারা ফিনল্যান্ডে এই অনুষ্ঠান হয়।
লুকিও শেষ করে ব্যাচেলর ডিগ্রি শুরুর পালা। ব্যাচেলর ডিগ্রিকে এখানে বলা হয় ‘কান্ডি তুতকিমুস’। দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে তারা। ইউনিভার্সিটি অথবা অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে। ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা থিওরি আর অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যাবহারিক বেশি। সাড়ে তিন থেকে চার বছরের কোর্স। ডিসেম্বর আর জুলাই ছাড়া প্রতি মাসেই গ্র্যাজুয়েশন হয় একটি করে। চার বছরের কোর্স কেউ তিন বছরে করে। আবার কেউ করে আরও বেশি সময় নিয়ে। এটা স্টুডেন্টদের ওপর নির্ভর করে। যারা বেশি সময় নিয়ে করে তারা মূলত পার্ট টাইম জব করে। এখানে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য কোনো গাউন নাই। সার্টিফিকেটের পাশাপাশি সবাইকে একটিকরে গোলাপ ফুল ধরিয়ে দেওয়া হয়। গ্র্যাজুয়েশনে কেউ উপস্থিত না থাকতে পারলে তার বাসায় সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানে পাস করতে হলে শতকরা ৫০ ভাগ মার্ক পেতে হবে।
অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকের নিয়োগ দেওয়া হয় মূলত অল্প সময়ের জন্য। এদের চাকরি নির্ভর করে স্টুডেন্টদের মতামতের ওপর। প্রতিটি কোর্স শেষে স্টুডেন্টদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়। খারাপ মতামত পেলে ওই শিক্ষকের চাকরি থাকে না আর। মানে হচ্ছে এরা যদি ভালো না পড়ায় তাহলে তার চাকরি আর থাকবে না বা মেয়াদ আর নবায়ন করা হবে না। তাই সব সময় শিক্ষকেরা ভালো পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করেন। আর এখানে ভালো শিক্ষক হতে হলে ভালো স্টুডেন্ট হতে হবে। সবাই চাইলেই শিক্ষক হতে পারেন না। যারা শিক্ষক হতে চান তাদের প্রতি ১০ জনে একজন শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পান। আর ইউনিভার্সিটিতে শুধুমাত্র পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দেওয়া হয় শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে। শিক্ষকতার চেয়ে গবেষণার দিকে এদের মনোযোগ বেশি থাকে। যার রিসার্চ পেপার যত ভালো জার্নালে প্রকাশিত হবে তার তত দাম বেশি। আর এর মানে হচ্ছে ওই শিক্ষকের পরবর্তীতে বড় আকারের ফান্ড। দুঃখ জনক হলেও সত্য আমাদের বাংলাদেশে এর কোনোটাই নাই।
ব্যাচেলর ডিগ্রির পরে মাস্টার্স ডিগ্রিকে ফিনিশ ভাষায় বলা হয় ‘মাইসতেরি’। মাস্টার্স ডিগ্রি সাধারণত ২ বছরের হয়। ফিনল্যান্ডে বাংলাদেশের মতো এমএ বা এমকম নাই। সব মাস্টার্সই এমএসসি। এর কারণ হচ্ছে সবার জন্য উচ্চমানের গবেষণাপত্র বা থিসিস বাধ্যতামূলক। এখানে ব্যাচেলরেও থিসিস করতে হয়। বলাবাহুল্য ফিনল্যান্ডে এমবিএ করতে হলে প্রচুর টাকার দরকার। আর এর জন্য কমপক্ষে তিন বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা দরকার। কারণ এটা প্রফেশনাল ডিগ্রি। আর আমাদের দেশে যে এমবিএ করা হয় সেটা মূলত একাডেমিক ডিগ্রি। খুব কম ক্ষেত্রেই প্রফেশনাল ডিগ্রি অফার করা হয় বাংলাদেশে।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এখানে যে শিক্ষক পড়ান তিনি নিজেই প্রশ্ন করেন, আবার নিজেই খাতা দেখেন। একটিই প্রশ্ন সেট। আমাদের দেশের মতো বিভিন্ন প্রশ্ন সেট নাই। আর আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা নাই বা বললাম। ফিনল্যান্ডে একজন শিক্ষকের সঙ্গে একজন ছাত্রের যতই ভালো সম্পর্ক হোক না কেন, ওই শিক্ষক কখনোই প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা দেন না। আর কাউকে কখনো কম বা বেশি নম্বর দেওয়া হয় না। একবার আমি এক বিষয়ে পেয়েছিলাম ৭৯। আর ১ নম্বর হলে আমার গ্রেড বাড়ত। শিক্ষককে রিভিউ করতে বললাম আমার উত্তরপত্র। এক দিন পরে আমাকে মেইল দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি আমার উত্তরপত্র রিভিউ করেছে এবং আমি যেটা পাওয়ার যোগ্য সেটাই পেয়েছি। নীতির প্রশ্নে এখানকার শিক্ষকেরা আপসহীন। যার ফলে বলা চলে সবাই নীতিবান।
ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা করার জন্য শুধুমাত্র খাতা ও কলম ছাড়া আর কিছুই কিনতে হয় না। বই, ইন্টারনেট, কম্পিউটার সব ফ্রি ব্যবহার করা যায়। এখানকার বিদ্যালয়গুলোতে ১০০ এমবিপিএস ইন্টারনেট স্পিড। সবাই ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গিয়ে ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট বা গ্রুপ ওয়ার্ক শেষ করে। কম্পিউটার ও বইয়ের জন্য রয়েছে প্রতিটি স্কুল-ইউনিভার্সিটিতে লাইব্রেরি। বই, জার্নাল বা কোনো রিসার্চ পেপার ১৪ দিনের জন্য ধার নেওয়া যায়। কেউ ১৪ দিনের বেশি বই রাখলে জরিমানা গুনতে হয়। লাইব্রেরিতে কোনো বই না পাওয়া গেলে লাইব্রেরিয়ানকে বললে কিছুদিনের মধ্যে বই হাজির। হয়তো অন্য কোনো লাইব্রেরি থেকে ধার করে আনা হয় অথবা নতুন কেনা হয়।
আমি একবার আমার ওয়ালেট হারিয়েছিলাম ইউনিভার্সিটিতে। ওয়ালেটে ছিল ক্যাশ ৭০ ইউরো, আইডি কার্ড, এটিএম কার্ড, বাস কার্ড, লাইব্রেরি কার্ড, ওয়ার্ক আইডি। ক্লাস শেষে বাস ধরতে স্টপেজে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম আমার ওয়ালেট নাই। আবার ইউনিভার্সিটিতে ফিরলাম। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করলাম। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ইউনিভার্সিটির ইনফোতে গেলাম লস্ট রিপোর্ট করতে। আমি ইনফোতে আসার আগেই কেউ একজন আমার ওই ওয়ালেট পেয়ে ফেরত দেন ইনফোতে। তারা আমার আইডি চেক করার জন্য আমার ওয়ালেট খুলে আমার আইডি দেখেন। নাম দিয়ে ইউনিভার্সিটির ডেটাবেইসে আমার দেশ খুঁজে বের করেন। গুগলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফিনল্যান্ড খুঁজে বের করেন।
এখানকার ছাত্র সংগঠনগুলোতে নেই কোনো মারামারি, খুনখারাবি বা টেন্ডারবাজি। প্রতিটি ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট কাউন্সিলরেরা পরবর্তী নীতিনির্ধারণ করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে নিয়মিত মিটিং করে, আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী নীতিনির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এরপরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সামারি পাঠানো হয়।
ফিনল্যান্ডের স্টুডেন্টরা অনেক ছুটি পেয়ে থাকে। গ্রীষ্মে তিন মাস জুন, জুলাই আর আগস্ট। আর ক্রিসমাসে প্রায় মাসখানিক। সব মিলিয়ে চার মাসের মতো ছুটি থাকে। গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রায় সবাই ফুল টাইম কাজ করে। কেউ কেউ ভ্রমণে বের হয়। গ্রীষ্মে এখনকার আবহাওয়া থাকে চমৎকার। সব সময় থাকে সূর্যের আলো। গ্রীষ্মে সূর্য উদয় হয় রাত আড়াইটার পর আর অস্ত যায় রাত সাড়ে এগারোটার পর। ২৩ জুন সবচেয়ে বড় দিন। এই দিনে উত্তর ফিনল্যান্ডে (রোভানিয়েমি) সূর্য অস্ত যায় না। গ্রীষ্মে রমজান পালন করা বেশি কষ্টকর এখানে। অন্যদিকে, শীতকালে থাকে প্রচণ্ড ঠান্ডা। নভেম্বর ও ডিসেম্বর থাকে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন। দিনের আলো থাকে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মতো। এই সময় সূর্যের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। জানুয়ারি থেকে আস্তে আস্তে দিনের আলোর পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারি থাকে সবচেয়ে ঠান্ডা। সব লেকের পানি বরফে পরিণত হয় এই সময়ে। এপ্রিলের শেষ দিক থেকে বরফ গলতে থাকে। মে মাসে স্প্রিং। জুন থেকে ছুটি শুরু।
আমি ফিনল্যান্ডে ব্যাচেলর (বিবিএ) ও মাস্টার্স (এমএসসি) ডিগ্রি করেছি। ব্যাচেলর ডিগ্রি হেসেখেলে করা গেলেও মাস্টার্সে প্রচুর সময় দিতে হয়। থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি। এসেছিলাম পড়াশোনা করতে। টাকা পয়সা দেইনি বরং পেয়েছি। ফিনল্যান্ডকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। আর একটা বিষয় হলো, সবার প্রতি সমান শ্রদ্ধা থেকে বলছি, অনেকেই বিদেশের মাটিতে পড়াশোনা করতে এসে পড়াশোনা না করে অড জব করেন। এটা শুধু ফিনল্যান্ডে না আরও অনেক দেশেই আছে এই প্রবণতা। আর এটাই আমাদের বাংলাদেশিদের এবং বাংলাদেশের জন্য ইমেজ সংকট বিদেশের মাটিতে।
লেখক- কফিল উদ্দিন আহমদ: রিসার্চ এনালিষ্ট, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, থমসন রয়টার্স ১৪ই মার্চ ২০১৭, প্রথম আলো, নাগরিক সংবাদের পাতা থেকে।
নর্থ লাইট স্কুল


সেরাদের দেশ সিঙ্গাপুর, কিন্তু তা হলে হেরো'রা যায় কোথায়? তাদের জন্যে আছে আশ্চর্য এক ইসকুল, যেখানে লুকোনো ক্যামেরায় ধরা হয় শুধুই ভালোর ছবি। শাস্তি নেই, আছে শুধু সম্মান আর আদর।
ক্লাসের সব ডেস্কের থেকে দূরে, আলাদা করে রাখা একটা ডেস্ক। এমন জায়গায়, যেখানে বসলে ক্লাসের অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে চোখাচোখি হওয়ারই সুযোগ নেই, কথা বলার সুযোগ দূরস্থান। স্কুলের প্রিন্সিপাল ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন সেই ক্লাসঘর। জানতে চাইলাম, নিশ্চয়ই খুব দুষ্টু ছেলেদের জন্য এই ব্যবস্থা? মধ্য চল্লিশের ভদ্রমহিলা হাসলেন। বললেন, এই স্কুলের সবাই তো দুষ্টু ছেলে। এই চেয়ারটা তাদের জন্য, যাদের বাড়িতে আজ কোনও একটা অশান্তি হয়েছে। সেই অশান্তির জন্য তার মন খারাপ। স্কুলে এসে এই চেয়ারে বসে পড়লেই অন্যরা বুঝতে পারে, তার আজ মন খারাপ। টিচাররাও বুঝতে পারেন। যে এই চেয়ারে এসে বসে, তাকে সবাই সেদিনের জন্য ছেড়ে দেয়। তার সঙ্গে কেউ ঝগড়া করে না, পড়া ধরে না।
মন খারাপের চেয়ার। সিঙ্গাপুরের নর্থ লাইট স্কুলে প্রথম পরিচয় হল এই চেয়ারটার সঙ্গেই।
এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমরা ১৪ জন সাংবাদিক সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম, সেখানকার এক সরকারি সংস্থার দেওয়া এশিয়া জার্নালিজম ফেলোশিপে। আয়োজকরা গোটা দেশ ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন আমাদের। দেশ মানে শুধু শহরটাই। ওইটুকুই দেশ। বছর ষাটেক আগেও শান্ত, অলস একটা মফস্সল ছিল সিঙ্গাপুর, জেলেদের বসতি। স্বাধীনতার পর হঠাৎই ঘুম ভেঙে উঠল যেন, চড়চড় করে উন্নতি, ভোল বদলে শহরটা হয়ে উঠল দুনিয়ার আধুনিকতম শহরগুলোর একটা। এখন গোটা দুনিয়ার ব্যাঙ্কের সদর দফতর এই শহরে, এখানকার চাঙ্গি এয়ারপোর্ট বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরের তালিকায় পড়ে। আর, এই মহাকাশযানের গতিতে উন্নতি করতে গেলে একটা শর্ত অপরিহার্য, এই শহরে শুধু সফলদেরই দাম। সে দাম অনেক, কিন্তু শুধু তাদের জন্য, যারা বাকিদের হারিয়ে দৌড়ে এক নম্বর হতে পারে। যারা সে দৌড়ে হেরে যায়, তারা হেরেই যায়। সেই হেরোদের কী হল, তা নিয়ে ভাবার সময় এই শহরের নেই। মনও কি আছে?
সেই দেশের একটা স্কুলে মন খারাপের চেয়ার? প্রথমে অবাক লাগে। তার পর এই স্কুলের গল্প শুনি। এই স্কুলটা হেরোদেরই স্কুল। এই নর্থ লাইট স্কুলে ভর্তি হওয়ার একটাই শর্ত অন্য কোনও স্কুলে দু’বার ফেল করতেই হবে! আর, সেই স্কুলের প্রিন্সিপালের থেকে লিখিয়ে আনতে হবে, এই ছেলেটার, বা মেয়েটার কিছু হওয়ার কোনও আশা নেই। ব্যস, এই অবস্থায় পৌঁছতে পারলেই হল নর্থ লাইট স্কুলের দরজা খোলা।
সেই খোলা দরজা দিয়ে কারা ঢুকে পড়ে এই স্কুলের মধ্যে? তারাই, যাদের প্রায়ই মন খারাপ করে স্কুলে আসতে হয়। মন খারাপের কারণ অনেক। হয়তো বাবা নেশার তাড়নায় স্কুলের মাইনে খরচ করে ফেলেছে, অথবা মা আর বাবার মধ্যে তুমুল মারপিট হয়েছে কাল রাতে, অথবা দাদাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে ড্রাগ অ্যাবিউজের অভিযোগে। এই ছেলেমেয়েগুলো সিঙ্গাপুরের হেরে যাওয়া দুনিয়ার সন্তান। এদের মা-বাবা কেউ কোনও দৌড়ে জিততে পারেনি। তাই তারা এক কামরার ফ্ল্যাটে পাঁচ জন গাদাগাদি করে থাকে। সেই ঘরেই মারপিট দেখে, ঝগড়া দেখে, হয়তো কখনও কখনও ঘুমের ভান করে চোখের কোণ দিয়ে আদরও দেখে। যে দিন রাতের খাবার কেনার পয়সা থাকে না, সে দিন শুধু জল খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। তাই সকালে উঠে এদের মন খারাপ হয়। স্বাভাবিক। যে দিন সেই মন খারাপের খুব বাড়াবাড়ি হয়, সে দিন ক্লাসঘরে আলাদা করে রাখা চেয়ারে এসে বসে পড়ে তারা। সে দিন তার সঙ্গে কেউ ঝগড়া করে না, কেউ পড়া ধরে না।
সিঙ্গাপুর দেশটা আশ্চর্য। সেখানে প্রতি রাস্তায়, প্রতি মোড়ে, প্রত্যেক অফিসে-স্কুলে-মেট্রো স্টেশনে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো। সারাক্ষণ প্রশাসনের চোখ নজর রাখে সবার ওপর। সামান্যতম বেচালও ধরা পড়তে বাধ্য। আর তার শাস্তিও মারাত্মক। আমরা তখনও সিঙ্গাপুরেই এক দিন কাগজে পড়লাম, সরকারি সম্পত্তির ওপর রং লেপে দেওয়ার শাস্তি হয়েছে এক জনের। পনেরো ঘা চাবুক! আঁতকে উঠবেন না। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো কয়েকটি দেশে চাবুক বা বেত্রাঘাত বেশ প্রচলিত শাস্তি। আর এই শাস্তির আদেশ দেয় আদালতই।
নর্থ লাইট স্কুলেও ক্যামেরা বসানো আছে। প্রত্যেক ক্লাসঘরে, প্রতিটি সিঁড়িতে। সেই ক্যামেরা রেকর্ড করে চলেছে ছাত্রদের সব চালচলন। কিন্তু, এই স্কুলের নিয়ম আলাদা। এখানে ছাত্রদের খারাপ আচরণগুলোকে পাত্তা দেওয়া হয় না। বেছে নেওয়া হয় শুধু ভাল আচরণগুলো। আর তার জন্য পুরস্কারেরও ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ক্যামেরার তলায় টাঙানো বোর্ডে লেখা আছে, ‘এই ক্যামেরায় তোমাদের সব ভাল জিনিস রেকর্ড হয়ে থাকছে’। যে ছেলেমেয়েগুলো বাড়িতে শুধু অভাব দেখে, হিংস্রতা দেখে, ঝগড়া দেখে তারা এই ক্যামেরার সামনে এসে কেমন করে যেন বদলে যেতে থাকে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরেই যে ছেলেটা রেগে গিয়ে কাচের জানালা ভেঙে দিয়েছিল, সেই ছেলেটাই নিজের রুমাল বার করে মুছে দেয় দেওয়ালে লেগে থাকা দাগ। খারাপ আচরণের জন্য শাস্তি হয় না, অথচ ভাল আচরণের জন্য সবার সামনে প্রশংসা পাওয়া যায় এই বোধটা যখন মনে বসে যায়, তখনই ভিতর থেকে বদলে যেতে থাকে তারা। এক জন নয়, সবাই। সব্বাই। তার পর ক্যামেরা থাক আর না-ই থাক, সেই ভাল আচরণগুলো সঙ্গে থেকে যায়। হয়তো আজীবন থাকবেও।
স্কুলের প্রিন্সিপাল একটা গল্প বলছিলেন। তাঁর ছেলের গল্প। তখন ছেলের বয়েস তেরো। সে পড়াশোনায় ভাল, শহরের নামী স্কুলে পড়ে। সচ্ছল পরিবারের এই বয়সের ছেলেরা যেমন হয়, সে-ও একেবারেই সে রকম। মায়ের স্কুলের কোনও একটা বিশেষ দিনে মায়ের সঙ্গে এসেছিল সে, দেখবে বলে। স্কুলের অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্থানীয় এক বেকারি কিছু উপহার পাঠিয়েছিল। সামান্য উপহার কাপ কেক। ছাত্রছাত্রীদের জন্য। একটা টেবিলের ওপর কয়েকটা রেকাবিতে রাখা ছিল সেই কেকগুলো। ছেলেমেয়েরা লাইন করে এসে সেই রেকাবি থেকে কেক তুলে নিচ্ছিল, প্রত্যেকে একটা করে। প্রিন্সিপালের ছেলে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই, কিন্তু সে মোটেই ভালবাসে না ওই সাধারণ কেক। ফলে, সে নেয়নি। সে দাঁড়িয়ে দেখছিল। এমন সময় তারই বয়সী একটা ছেলে এগিয়ে গেল প্রিন্সিপালের দিকে। জিজ্ঞেস করল, সে কি একটার বদলে দুটো কেক নিতে পারে? প্রিন্সিপাল জিজ্ঞেস করলেন, কেন? ছেলেটি বলল, তার দাদা এই কেক খেতে খুব ভালবাসে। সে দাদার জন্য একটা কেক নিয়ে যেতে চায়। প্রিন্সিপাল বললেন, সবার নেওয়া হয়ে গেলে যদি অবশিষ্ট থাকে, তবে সে অবশ্যই নিতে পারে। ছেলেটি শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকল। সবার নেওয়া হয়ে গেলে সে আর একটা কেক তুলে যত্ন করে ব্যাগে ভরে রাখল। একটাই। অনেকগুলো পড়ে ছিল যদিও।
প্রিন্সিপালের ছেলে বাড়ি যাওয়ার পথে পুরো রাস্তা কেঁদেছিল। তার পর সে আর কোনও দিন কোনও খাবার খেতে আপত্তি করেনি।
আমরা স্কুল দেখতে থাকি। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে যাই একটা ঘরে খেলার ঘর। সেখানে মস্ত বিলিয়ার্ড বোর্ড, টেবিল টেনিস বোর্ড।
দারুণ। আমাদের পোড়া কলকাতায় তো প্রশ্নই নেই, সিঙ্গাপুরেও খুব বেশি স্কুলে অমন বোর্ড আছে বলে মনে হল না। সবই ছাত্রছাত্রীদের খেলার জন্য। তবে সব ছাত্রছাত্রীর জন্য নয়। যাদের কাছে পয়েন্ট আছে, শুধু তারাই খেলতে পারে। সেই পয়েন্ট পাওয়া যায় ভাল হয়ে থাকলে। ভাল আচরণ ক্যামেরায় রেকর্ড হলেও পয়েন্ট, টিচাররা প্রশংসা করলেও পয়েন্ট। সেই পয়েন্টের টোকেন পাওয়া যায়। পয়েন্ট জমিয়ে জমিয়ে একটা বোর্ড খেলার মতো অবস্থায় এলেই খেলতে চলে আসে ছেলেমেয়েরা। আসল গল্প অবশ্য সেটা নয়। এই ঘরে কোনও নজরদার নেই, কোনও ক্যামেরাও নেই। যথেষ্ট পয়েন্ট না থাকলেও খেলতেই পারে কেউ, যদি তার ইচ্ছে করে। কিন্তু, কেউ খেলে না। সবাই পয়েন্ট জমা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। অবাক হলাম। তার পর মনে হল, বিশ্বাসের এই এক গুণ। যদি কাউকে সত্যিই বিশ্বাস করা হয়, সে প্রাণপণ চেষ্টা করে সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে। আর, এই ছেলেমেয়েগুলো যে পরিবেশ থেকে আসে, যে পরিবার থেকে আসে, সেখানে বিশ্বাসের কোনও গল্প নেই। সেখানে একে অপরকে অবিশ্বাস করাই দস্তুর। সেখান থেকে এসে হয়তো প্রথমে এই বিশ্বাসের আলোহাওয়া অলীক লাগে, তার পর তারা নিজেরাই বুঝতে পারে, না চাইতেই কী দুর্মূল্য সম্পদ তাদের কাছে এসেছে। তাকে প্রাণপণ রক্ষা করার কথা তখন তাদের বলে দিতে হয় না।
আমরা স্কুলের বাগান দেখতে যাই। এই বাগানেরও একটা গল্প আছে। স্কুলের পিছনে খানিকটা জমি পড়ে ছিল। এমনিই। এক দিন ছাত্রছাত্রীরা এসে প্রিন্সিপালকে বলে, তারা সেই জমিতে গাছ লাগাতে চায়। প্রিন্সিপাল এক কথায় নাকচ করে দেন এই আবদার। পাগল নাকি! স্কুলের পিছনে শেষে আগাছার জঙ্গল হবে! ছেলেমেয়েরা হাল ছাড়ে না। তারা ঘুরেফিরে একই দাবি জানাতে থাকে। তারা যেখানে থাকে, সেখানে এক ফোঁটাও জমি নেই। একচিলতে বারান্দাতেও সংসারের জিনিস ঠাসা। তারা গাছ লাগাবে কোথায়? শেষ পর্যন্ত প্রিন্সিপাল রাজি হন। একটাই শর্ত, মাঝপথে বাগানের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে চলবে না। ছেলেমেয়েরা প্রবল উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই জমিতে একটা একটা চারা ক্রমে বড় হয়ে উঠতে থাকে। কুমড়ো, পেঁপে, শসা থেকে ফুলকপি সবই ফলে সেই বাগানে। সেই ফসল বিক্রি হয়, সেই টাকা স্কুলের তহবিলেই দিয়ে দেয় ছেলেমেয়েরা। স্কুল শেষ হওয়ার পরেও তারা বাড়ি যেতে চায় না। বাগানে নিজেদের গাছের কাছে যায়। তার কতটা বাগানের টানে, আর কতটা বাড়ি ফেরার সময়টাকে যত দূর সম্ভব পিছিয়ে দেওয়ার জন্য, কে জানে!
তারা তো দুই পৃথিবীর বাসিন্দা। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলেই আবার সেই ঝগড়াঝাটি, অশান্তির দুনিয়া ছোটরাও তো পালানোর পথ খোঁজে।
ছেলেমেয়েদের গল্প বলেন প্রিন্সিপাল, আর আমরা দেখতে পাই, তাঁর চোখে ক্রমশ জমে উঠছে মায়া। এই ছেলেমেয়েগুলোর জন্য মায়া, যারা নিজেদের বাড়ির, পরিবারের না-পাওয়াগুলোকে খানিকক্ষণের জন্য সরিয়ে রাখতে স্কুলে আসে প্রতি দিন। শরীর খারাপ নিয়েও আসে। তারা স্কুল কামাই করতে চায় না পারতপক্ষে। কী পায় তারা এই স্কুলে? শুধু একটা খেলার ঘর, একটা বাগান? পড়াশোনায় ভুলের জন্য তেমন কঠিন শাস্তি না পাওয়ার আশ্বাস? নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু? একটা মমতার আস্তরণ, তাদের না-পাওয়া, তাদের সংকটগুলোকে বুঝতে পারার মতো কয়েক জন শিক্ষক? তাদের হেরো বলে দেগে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি? হেরে যাওয়া লড়াই জিততে সব রকমের সাহায্যের বাড়িয়ে দেওয়া হাত? জিজ্ঞেস করে ফেলি। প্রিন্সিপাল বলেন, এই ছেলেমেয়েগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি কী জানেন? তাঁদের এই বিশ্বাসটুকু দেওয়া যে তারা অন্য কারও চেয়ে একটুও কম যায় না। তারা কোনও লড়াই এখনও হেরে যায়নি। সবাই তো লেখাপড়ায় ভাল হয় না। আর, এই স্কুলে আসার জন্য পর পর দু’বার ফেল করতেই হয়! কাজেই, এখানে যারা আসে, তারা কেউই পড়াশোনায় ভাল না। আমরা তাই পড়াশোনাতেই সব জোর দিই না। এখানে হাতের কাজ শেখাই। কেউ ইলেকট্রিশিয়ান হওয়ার কোর্সে ভর্তি হয়, কেউ হোটেল ম্যানেজমেন্ট শেখে, কেউ বিউটিশিয়ান কোর্স করে। তারা শিখেও ফেলে চটপট। নিজেরাও অবাক হয়। আর, সবচেয়ে বেশি যেটা হয়, ওদের মধ্যে নিজের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকে যে দুনিয়াটা ওদের ঘাড়ে চেপে বসেছে, তার থেকে যে বেরিয়ে আসা সম্ভব ওরা বুঝতে পারে। আমাদের কাজ, এই বিশ্বাসটুকু তৈরি করে দেওয়া।
কথা বলতে বলতেই চোখে পড়ে, স্কুলের দেওয়াল জুড়ে মস্ত এক পোস্টার অন্ধকার আকাশ, আর তাতে ঝলমল করছে কয়েকটা তারা। নীচে লেখা, অন্ধকার যত গাঢ় হবে, তুমিও ততই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। সত্যিই তো, নর্থ লাইট মানে ধ্রুবতারা। অন্ধকার আকাশে যে আলো নাবিকদের কখনও পথ হারাতে দেয়নি। এই ছেলেমেয়েগুলোও নিজেদের পথ খুঁজে নেয়। বিশ্বাসের পথ। স্কুলের নিয়ম, কোনও ছাত্র সিগারেট খেতে পারবে না। স্কুলের ভিতরে তো নয়ই, বাইরেও নয়।
এক দিন স্কুলের কয়েকটি ছাত্র, স্কুল থেকে অনেক দূরে একটা পার্কে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল। স্কুলের এক শিক্ষিকার এক আত্মীয়ের চোখে পড়ে তারা। তিনি স্কুলের ইউনিফর্ম চিনতেন। তিনি সেই ছেলেগুলিকে কিছু বলেননি, কিন্তু তাঁর পরিচিত সেই শিক্ষিকাকে কথাটি জানান। পরের দিন স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে সেই শিক্ষিকা শুধু বলেন, তোমাদের মধ্যে কয়েক জন কাল লুকিয়ে সিগারেট খাচ্ছিলে। কারা, আমি জানি না। জানতেও চাই না। কিন্তু, তারা স্কুলের বিশ্বাস নষ্ট করেছ। তাঁর কথা শেষ হওয়ার পর মিনিট খানেকের স্তব্ধতা। তার পর এগিয়ে এল ছেলেগুলি। স্বীকার করে নিল নিজেদের দোষ। সবার সামনে। এই ছেলেগুলোকে আমি চিনি না, কিন্তু নিশ্চিত জানি, এরা কোনও দিন বিশ্বাসের পথ থেকে সরে আসবে না।
আমাদের স্কুলের অডিটোরিয়ামে নিয়ে যান প্রিন্সিপাল। সেখানে একটা ফিল্ম দেখানো হবে। স্কুলের অ্যানুয়াল ডে-র ছবি। অ্যানুয়াল ডে-তে এখানে অনেক তাঁবু খাটানো হয়। প্রত্যেক ছাত্রের জন্য একটা করে তাঁবু। তাদের বাবা-মা এসে থাকেন তাদের সঙ্গে। টানা দু’দিন। ছেলেমেয়েদের বন্ধুদের দেখেন, তাদের স্কুলের জীবন দেখেন। ফিল্ম চলে, আমরা দেখতে থাকি। একটা বছর বারোর মেয়ে স্টেজে উঠে গান গায়। তার বাবা-মা অবাক হয়ে দেখেন। তার পর স্কুলের এক শিক্ষিকা সেই মেয়েটির সব ভাল দিকগুলোর কথা বলেন, তার সমস্ত সাফল্যের কথা বলেন। সেই মেয়েটি নেমে যায়। তারই বয়সী একটি ছেলে স্টেজে ওঠে। সে-ও তার মা-বাবাকে অবাক করে দারুণ সিন্থেসাইজার বাজায়। তার পর তার সম্বন্ধেও বলতে থাকেন এক শিক্ষিকা।
এ ভাবেই চলতে থাকে। তার পর হঠাৎ অন্য দিকে ঘুরে যায় ক্যামেরা। প্রথম যে মেয়েটা স্টেজে উঠেছিল, তাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদছেন তার বাবা-মা। মেয়ে বাবার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কান্না থামলে বাবা বললেন, আমার মেয়ে যে এত ভাল, এত কিছু পারে, আমি জানতামই না। ওকে তো সময় দিইনি কখনও। শুধু কষ্টই দিয়েছি। আজ থেকে আর না। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে খুব ভাল ভাবে বাঁচব। ফিল্ম শেষ হয়। আমরাও ফিরে আসি। স্কুলের গেট পেরোতে পেরোতে মনে হয়, অনেকগুলো মানুষের জীবন পাল্টে দেওয়ার একটা চেষ্টা কি আমরাও করতে পারি না? কখনও?কোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো? কেন ভালো?

পড়তে পড়তে চোখ ভিজে আসে আমার। আহা আমাদের দেশের বাচ্চারা কেনো এমন সুযোগ পেলো না! ধন্যবাদ জানাই লেখক- সুশোভন চ্যাটার্জীকে

আমি নিজে যে স্কুলটিতে কাজ করি সেখানে শিশুরা অনেকটাই সুষ্ঠ ও সঠিক শিক্ষাব্যবস্থার মাঝে শিক্ষাগ্রহন করছে কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে কোমলমতী শিশুরা এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আজও বঞ্চিত। তবে আশার আলো থেকে যায়। আশা নিয়েই বাঁচি আমরা
এবং যুগে যুগে পূর্বের উপর নির্ভর করে নতুনভাবে উজ্জীবিত ও উন্নত হই। আমার চাওয়া বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সকল শিশু হাসিমুখে আনন্দ নিয়ে সৃজনশীলতার মাঝে বড় হোক, শিক্ষা গ্রহন করুক। তবে আশার আলো দেখা যায়।

২০২৩ সাল থেকে শিশুশিক্ষায় আসবে আমূল পরিবর্তন
আগামীতে প্রাক-প্রাথমিকের দুই শিফটের ক্লাস হবে এক শিফটে। বাড়বে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা। নতুন কারিকুলামে থাকবে শিল্পকলা, সংগীত, শারীরিক শিক্ষাসহ মানসিক বিকাশের বহুমূখী আয়োজন। বইয়ের বোঝা দূর করে ২০২৩ সালে আনন্দময় হবে শিশুশিক্ষা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষে দেখা যায় খেলার ছলে পড়ালেখায় মশগুল শিক্ষার্থীরা। নেই পরীক্ষার ঝক্কি, ঝামেলা নেই বইয়ের বোঝা টানার। এর উল্টো চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশে। ওজনের চেয়ে পিঠে বইয়ের ভারি বোঝা। মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা কোমলমতিদের । হন্তদন্ত হয়ে ক্লান্ত শিশুদের গোমরা মুখে শুরু হয় পড়ালেখা। আনন্দের লেশ মাত্র নেই শ্রেণিকক্ষে। নেই মজার উপকরণ। যে কারণে শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকেরাও থাকেন গম্ভীর, নিরুৎসব। উভয়ের কাছে পড়ালেখার ব্যাপারটি হয়ে ওঠে বিষন্ন কিংবা দায়সারা। পড়ালেখায় নিরানন্দের এই ধারা চলমান অনেকদিন। ২০২৩ সাল থেকে তাই আমূল পরিবর্তন আসবে শিশুশিক্ষায়। ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত থাকছে না পরীক্ষার উত্তাপ। আনন্দদায়ক অনেক উপকরণও পাবে শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের সদস্য অধ্যাপক ড. একে এম রিয়াজুল হাসান বলছেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ৬৫ স্কুলের ৪শ শিক্ষককে দেয়া হবে শিশুবান্ধব প্রশিক্ষণ।’নতুন শিখন পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে শিশুরাই মতামত জানাবে ক্লাসে। জানাবে তার ভালো লাগা, মন্দ লাগা। ৪ মাস পর হবে মেধার ধারাবাহিক মুল্যায়ন। অতঃপর শিশুদের দক্ষতা জানানো হবে অভিভাবককে। সরকারের এমন উদ্যোগের সমলোচনাও করেছেন কেউ কেউ। জানিয়েছেন ভিন্নমত। দ্রুত শিশু বান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হলে আগামী দিনে জাতি গঠনে মারাত্বক প্রভাব ফেলবে শিক্ষার বর্তমান পদ্ধতি।

২০২৩ সাল থেকে শিশুশিক্ষায় আসবে আমূল পরিবর্তন

বাংলাদেশ ও পৃথিবীর সকল শিশুরা সুষ্ঠ ও সঠিক আনন্দময় শিক্ষাব্যবস্থার মাঝে বড় হয়ে উঠুক এবং দেশ ও দশের সেবায় নিয়োজিত হোক এই হোক আমাদের সকলের চাওয়া। ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাষিত হয়ে উঠুক। সমগ্র পৃথিবীকে করে তুলুক আলোকিত সুন্দর!

ছবিঃ নিজের এ্যলবাম ও ফিনল্যান্ড এবং জাপান, সিঙ্গাপোরের ছবি তিনটি উইকিপিডিয়া থেকে।

ফিচার- বিষয় - শিক্ষা
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১৬
৪১টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×