অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পর এমনই ব্যস্ততায় ডুব দিতে হলো যে কারো সাথেই আর অস্ট্রেলিয়ার গল্প করা হলো না। সবাই জিগাসা করে কি করলে, কি দেখলে কি খেলে তুমি অস্ট্রেলিয়ায়? আর শপিং পাগলা এই আমি কতই না শপিং মপিং করলাম সেই চিন্তায় আশেপাশের অনেকেই অস্থির হয়ে পড়লো। বলবো বলবো করেও বলা হলো না কারণ আমি ব্যাস্ত! ব্যাস্ত মানে মহা ব্যাস্ত! একের পর এক কাজ, স্কুলের কার্নিভাল, পাপেট শো, বাচ্চাদেরকে নিয়ে এনুয়াল শো, একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠান, আর্ট কম্পিটিশন, রেসিটেশন কম্পিটিশন সব জেঁকে বসলো ঘাড়ে। এসব করে করেই আমার দফারফা। যাইহোক একটু ব্যস্ততা কমতেই ভাবলাম এইবার লিখি। ওমা সাথে সাথেই ঘাড়ে চেপে বসলো ভয়ংকর ভূত নিমুনিয়া। সোজা হসপিটাল আর তারপর একটু থিতু হতেই দেখি হাঁটলেই মাথা ঘোরে, পা নড়বড় করে। হাই এন্টিবায়োটিক কখনও আমি সহ্য করতে পারি না। যাই হোক তবে এতে আবার শাপে বর হলো। বিছানায় বন্দী তাই বসে বসে ল্যাপটপ বেড টেবিলে লেখালিখিরও সুযোগ! সেই সুযোগেই ভাবলাম লিখে ফেলি এইবার আমার অস্ট্রেলিয়ার গল্প।
এবারের সফর ছিলো একেবারেই সফরসঙ্গীবিহীন একা একা। একা একা ঘুরে বেড়ানো অবশ্য আমার জন্য নতুন কিছু নহে। আমি যখন শপিং এ যাই একা একা ঘুরতেই ভালোবাসি। যা ইচ্ছে তাই কেনা যায়। বাঁধা দেবার কেউ নেই। কিন্তু এত বড় একটা জার্নীতে একা একা যাওয়া আবার একটু ভয়ের ব্যপার। স্পেশালী যখন ট্রানজিট থাকে অনলি ওয়ান আওয়ার। আর সেটা ছিলো সুবিশাল সিঙ্গাপোর এয়ারপোর্টে। সে যাই হোক বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে ঢুকেই কিছু হজ্ব বা ওমরাহ যাত্রী উনারা পা মেলে জিনিসপাতি ছড়িয়ে বসে ছিলো মেঝের উপর তাদের পায়ে বেঁধে হুড়মুড় পড়তে পড়তে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। হা হা সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই আবার চোখ মটকে একটু বকাও দিলাম এইভাবে পা ছড়িয়ে বসার জন্য। তারপর ছুটলাম চেক ইন ইমিগ্রেশন। ইমিগ্রেশনের হাসিখুশি লোকটার কি যেন নাম বলেছিলো, সে বললো আপনি টিচার আর তাই কোনো চেকিংই দরকার নাই। আমি তো উৎফুল্লিত এবং চরম আনন্দিত! সে যাই হোক তারপর ওয়েটিং ফর ফ্লাইট। এমন সময় পরিচয় হলো সিঙ্গাপোর স্কুলের এক টিচারের সাথে। তার নাম দোলা এবং যার হাসব্যন্ড মেরিনার এবং তিনি তিন কন্যার মা। ১৫ বছর যাবৎ সিঙ্গাপোরে আছেন। যাইহোক তার সাথে গল্পে গল্পে কেটে গেলো সময়।
প্লেনে উঠেই আমি হাও মাও খাও মানুষের গন্ধ পাও লাগিয়ে দিলাম এয়ার হোস্টেজদের সাথে। ভাষ্য ছিলো বেহেনা, সোনার কইন্যা আমার ট্রানজিট ১ ঘন্টা আমাকে আগে আগে যেতে দিও। পৌছে দিও ! কেমনে যাবো? কোন টার্মিনালে নামবে? কোন গেইট! ম্যাডাম বললেন, ম্যাডাম ডোন্ট ওয়ারী তোমাকে ছেড়ে কোনোভাবেই আমাদের কানেক্টিং ফ্লাইট যাবেই না। রিলাক্স করো। ভয় পেওনা। বোর্ডিং পাস তো তোমাকে দেওয়াই হয়েছে। আমি তো তবুও হায় মায় খায় অব্যাহত। শেষে সে আমাকে বললো তোমাকে আমি সাথে করে নিয়ে যাবো। তবুও একটু শান্ত হয়ে বসো। যাক বাবা বাঁচলাম। আমি শান্ত হয়ে বসলাম।
যাইহোক এবারে নজর দিলাম পাশের সিটে। একটা স্যুইট গুল্লুমুল্লু বেবি বসে আছেন। উনি আর তার মা নাকি ব্রিসবেন থাকেন। সেখানেই যাবেন। আমি তার দিকে হাসলাম। এরপর সিটবেল্ট আটকালাম। কিন্তু তারপর কেমনে খুলে ভুলে গেলাম ভয়ে। হা হা হা ঐ বাচ্চা আমাকে আশস্ত করে আমার সিটবেল্ট খুলে দিলো। তখন তো আমি লজ্জায় শেষ। বাচ্চাটা কি ভাবলো! আমি বুঝি জীবনেও প্লেনে চড়িনি। তবে দূর দূর যা ভাবে ভাবুকগে। লক্ষী বাচ্চাটা এরপর ঘুমিয়ে গেলো। সারা ফ্লাইট উঠলোই না। কিচ্ছু খেলোই না মজার মজার খানা।
কিচ্ছু খেলোই না বাচ্চাটা এই যে এসব মজার মজার খানা।
এই ডেজার্ড আমার অনেক মজা লেগেছিলো। আমি অবশ্য এমনিতেই মিষ্টি খাই গপাগপ!
একটা কথা বলে রাখি একা একা ভ্রমনের এই বারেরটাতে নিজেকে কখনও মিঃ বীন, কখনও গোবর্ধন, কখনও কখনও টম এন্ড জেরী মনে হয়েছে আমার।
যাইহোক শান্তিতেই ছিলাম কিন্তু এরপর প্লেন ডিলে আমার ট্রানসিট ১ ঘন্টা। এখন কি হবে? প্লেন সিঙ্গাপোর এয়ারপোর্টে পৌছালো ৬টা ২৬ আর কানেক্টিং ফ্লাইটটা ছাড়বে ৭ টা ৫ এ। চিন্তায় শেষ আমি। আমাকে রেখে যদি প্লেন চলেই যায় আমার কি হবে! কোথায় যাবো আমি!! হায় তখন তো গান গাবো, কোন দেশে যে বাসা আমার কে জানে ঠিকানা... না না এটা হতে দেওয়াই যায় না কাজেই হুলুস্থুল লাগিয়ে দিলাম আবারও। বাঁচাও বাঁচাও। কেমনে যাবো কি করবো! কেবিন ক্রু বলে আমাদের প্লেন কোনোদিনও তোমাকে ছেড়ে যাবে না ভয় পেওনা রিলাক্স।আমি মনে মনে বলি রাখ বেটা তোর রিলাক্স!!! বাঁচাও বাঁচাও বাঁচাও!!!!!!!!!! পুরাই টম এন্ড জেরী স্টাইল। আমার জ্বালায় তারা তাড়াতাড়ি আমাকে গ্রাউন্ড সাপোর্ট এর হাতে তুলে গাড়ি চড়িয়ে দিয়েছে...... সেই গাড়ি স্কাইট্রেনে পৌছে দিলো ব্যাস দৌড়াতে দৌড়াতে আবার গেইট! আহ টম এন্ড জেরির মত শান্তি! বসে আছি আছি আছি প্লেইন ছাড়ে না। দূর শুধু শুধু এতক্ষন মিঃ বিন টম এন্ড জেরী কত কিছুই না হতে হলো।
আমাকে নিতে এসেছিলো রাহী। বাংলাদেশের ছেলে। ওখানে পড়ালেখা করছে পাশাপাশি উবার ইটস চালায়। নিজেই গাড়ি কিনে নিয়েছে। আমাকে সেই গাড়ি চড়িয়ে টাংকি ফুল করে নিলো আর আবার পার্কিং দিলাম ২৯ ডলার। তারপর তাকে খাওয়ালামও আবার অস্ট্রেলিয়ান বাংলা পাড়া লাকেমবাতে। রেস্টুরেন্টের নাম কি জানো? ধানসিড়ি রেস্টুরেন্ট! সে পেট পুরে মাটন আর পোলাও খেলো। কি আর করা আমাকে এত কষ্ট করে নিতে এসেছিলো। রুমে এসে মন খারাপ। হঠাৎ মনে হলো এই নির্জন উপকূল ছেড়ে এখুনি পালিয়ে যাই। এরপর সেই নিশ্চুপ নিচ্ছিদ্র রাতে ঘুমিয়ে গেলাম। মনে হয় ক্লান্তিতেই।
পরদিন ছিলো ২৫শে ডিসেম্বর। সারা দুনিয়ার সব কিছুই বন্ধ। কিন্তু আমার তো কিছু মাস্ট শপিং প্রয়োজন। ছুটলাম কি কি লাগবে মার্কেটে। সব বন্ধ!!! কোথাও কেউ নেই।
হেঁটে হেঁটে ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন শেষে ইজিমার্টে আইসক্রিম খেয়ে চেপে বসলাম মেট্রো, ট্রেইন। আবারও লাকেম্বা। বাংলাদেশ অব সিডনী। কারণ আর কোথাও শপিং মল খোলা ছিলো না।
এখানে এসে কেউ বলবে না এটা বাংলাদেশ ছাড়া আর কিছু। ইচ্ছা করেই বুঝি তারা ময়লা ঝয়লা দোকান বানিয়ে রেখেছে, দেশী ভায়েদের হাসি আর দুনিয়ার সব বঙ্গবাজার ধানসিড়ি, হাট বাজার দোকানে ভরা। সেখান থেকে কিছু শপিং করে ফিরলাম।
এই যে আমার মেট্রোরেল পরিভ্রমনের দৃশ্য!
আহা চারিদিকে তাকায় তাকায় দেখি! কি সৌন্দর্য্য! এমন ভদ্দরনোক ট্রেইন!!!
২৬শে ডিসেম্বর শপিং মলগুলো খুললো। কে মার্ট, উলসওয়ার্থ, ডেভিড জোন্সে দরকারী জিনিসপত্র শপিং শেষে ফিরলাম। এরপর এত বড় শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে ফিরবো কেমনে! অবশেষে সেটারও সমাধান হলো।
এ রাতের বিশেষ কাজ ছিলো বাসা খোঁজা। ও হ্যাঁ আমি উঠেছিলাম একজনের ডরমিটারীতে পারমিশন নিয়ে। এখানে তো আর থাকা যাবে না। আর আমি আত্মীয় স্বজনের বাসাতেও থাকতে চাচ্ছিলাম না। কাজেই আমাকে একটা বাসা ভাড়া করতে হবে। বাসা খুঁজতে গিয়ে সেই রাতেই আমি সিডনীর প্রায় সকলস্থানের নাম জেনে ফেললাম। সিডনীতে বাসা খোঁজার জন্য মনে হয় কোনো টুলেট ঝুলানো হয় না। যা হয় সবই এজেন্টের মাধ্যমে। ওয়েব পেইজে ফর্ম ফিলাপ করে ইনসপেকশন ডেট নিতে হয়। যদিও তখন নিউ ইয়ার হলিডেজ চলছিলো তবুও আমার কাজ থেমে থাকেনি। ২৮শে ডিসেম্বর পরদিনই ইস্টউডে একটা বাসার ইনসপেকশন পেলাম আমরা!
ইস্ট উডের ঠিক এইখানেই ছিলো বাসাটা। বাসার সামনে গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ। একটা বাসার পিছে এক ডজন কাপল দাঁড়িয়ে। বুঝলাম এই বাসা পাওয়া সহজ কার্য্য নহে। কি আর করা ইস্ট উড শপিং মলে এক গাদা হাবি জাবি কিনে আইসক্রিম খেয়ে বাসায় ফিরলাম।
আমার প্রিয় ক্রিস্টমাস ট্রি।
আরও একটা ক্রিস্টমাস ট্রি
এই যে ইস্ট উড মার্কেট। এইদিন ওখানে বসেই দুঃসংবাদ পেলাম। আমাদের এক পরমাত্মীয়ের মৃত্যু সংবাদ। মন ভার হয়েই রইলো।
২৯।১২।২০২২ । এটা ছিলো আমাদের অবার্ন ডে। টার্কিশ শপে কেনাকাটার প্লানিং ছিলো এবং এরাবিয়ান শপে আমরা মান্ডি খেলাম। এক বিশাল থালায় এরাবিয়ান মাটন পোলাউ। আস্ত খাসীর রান আর সবাই মিলে এক থালায় খানাপিনা। অবার্নের শিশুগুলি ঠিক দেবশিশুর মত সুন্দর! তারা রাস্তায় খেলছিলো। বাবার সাথে খেতে এসেছিলো।
৩০।১২।২০২২ আমার অস্ট্রেলিয়া সফরের কিছু উদ্দেশ্য ছিলো কিন্তু সব কিছু বন্ধ থাকায় একটু ঢিলেঢালা গতি চলছিলো। আমরা সেদিন গিয়েছিলাম টাউন হল। টাউনহলের শপিং মল দেখে আমি মুগ্ধ। ঠিক যেন এক রাজবাড়ি শপিংমল। অস্ট্রেলিয়ান অথেনটিক খানা খেতেই হবে আমাকে। তো সেখানেই পেয়ে গেলাম মিট পাই। আর ম্যাকারন।
সৌন্দর্য্য সৌন্দর্য্য দোকান পাট.... )
সৌন্দর্য্য সৌন্দর্য্য খানাপিনা
এরপর আমরা চললাম মিস ম্যাকুয়ারী চেয়ারস আর ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারীর উদ্দেশ্যে। মিস ম্যাকুয়ারী চেয়ারসের ওখানে সেই মনোহরনকারী সাগর আর বিশাল সব জাহাজ দেখে মন জুড়ালো। প্রাণ ভরালো।
মিস ম্যাকুয়ারী চেয়ারের একটা ইতিহাস আছে-
Major-General Lachlan Macquarie এর ওয়াইফ ছিলেন এই Mrs Macquarie, সেই লোক ছিলেন Governor of New South Wales from 1810 to 1821. মিস ম্যাকুয়ারী নাকি এই সুশীতল মনোহরনকারী সাগরের ধারে প্রস্তরস্তম্ভের উপর বসে থাকতেন। দেখতেন জাহাজের ভেসে যাওয়া। আমি তো দিব্য চক্ষুতেই দেখতে পাচ্ছিলাম হ্যাট মাথায় একজন রাজকুমারী টাইপ মেয়ে বসে আছে ঐ সাগরের ধারে। ঐ Major-General Lachlan Macquarie নাকি ঐ রাজকুমারী মার্কা ওয়াইফের জন্য পাথর কেটে কেটে বানিয়েছিলেন ঐ পথ...... যাইহোক... এরপর আমরা হেঁটে গেলাম রয়েল বোটানিক গার্ডেন দিয়ে।
এই যে এসব দৃশ্যই মিসেস ম্যাকুয়ারী প্রস্তরের চেয়ারে বসে দেখতেন-
সুনীল সাগরে বিশাল সব জাহাজের ভেসে চলা...
দূরের ব্রীজ, অপেরা হাউজ।
রয়েল বোটানিক গার্ডেন- এই অপরূপা মনোহর উদ্যানের মাঝে দিয়ে আমরা হেঁটে গেলাম অপেরা হাউজের কাছে। এরপর হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলাম পৃথিবী বিখ্যাত অপেরা হাউজ। বর্তমান অপেরা হাউজটি বেনেলং পয়েন্টে তৈরী করা হয়েছে যা একসময় ম্যাককুইরি বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৮১৭ সালে বন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ও ১৯০১ সালে বিলুপ্ত করা হয়। ১০ আগস্ট, ১৯০২ সালে ম্যাককুইরি বন্দরে ট্রাম রক্ষণাগার তৈরী করে ১৯৫৮ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়। এই একই জায়গায় ১৯৫৯ সালে সিডনি অপেরা হাউজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বিকাল বেলার অপেরা হাউজ
সারাদিনের ক্লান্তির পর অপেরা বিবির সাথে আমি বিবির ছবি....
হু হু বাতাসে চুল উড়ে যায় মন কেমন করে আমার মন কেমন করে, কে জানে কাহার তরে!
জান আডজেন নামীয় ড্যানিশ স্থাপত্যবিদ সিডনি অপেরা হাউজের নকশা প্রণয়ন করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি অপ্রত্যাশিত ও বিতর্কিতভাবে নকশা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। পুরস্কারের মূল্যমান ছিল £৫,০০০।[৪] ১৯৫৭ সালে প্রকল্পের তত্ত্বাবধান ও সহায়তার জন্য সিডনিতে আসেন।[৫] ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ সালে তিনি সিডনিতে তার অফিস স্থানান্তরিত করেন। ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে আডজেন প্রকল্পের কাজ ফেলে রেখে চলে যান।[৬] এর প্রধান কারণ ছিল সরকারের অর্থ প্রদানে অস্বীকৃতি। ২০০১ সালে আডজেন অস্ট্রেলিয়ায় আমন্ত্রিত হয়ে অবকাঠামোটির নকশাকে পরিবর্তন করে প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। ১৯৫৭ সালে অপেরা হাউজের প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় ছিল £৩,৫০০,০০০ ($৭ মিলিয়ন)। অস্ট্রেলিয়ার রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০ অক্টোবর, ১৯৭৩ সালে আধুনিক স্থাপত্যকলার অন্যতম পদচিহ্ন সিডনি অপেরা হাউজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। বিপুলসংখ্যক আগ্রহী জনতা এতে উপস্থিত ছিলেন। ফাইন ডাইন বুক হয়ে গেছিলো সেদিন। কিন্তু ফেরবার পথে আমরা দেখলাম ওপেরার দল হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। না জানি কোনো অজানা দেশের না জানা অপ্সরী তারা।
সারাবিকেল এখানেই বসে ফায়ার ওয়ার্কের জন্য অপেক্ষা....
৩১।১২।২০২২ অস্ট্রেলিয়া এসেছি আর তাদের বিশ্ব বিখ্যাত ফায়ার ওয়ার্কস দেখবো না! তাই কি হয়! সে উদ্দেশ্যে ফেরী করে আমরা পৌছালাম ম্যানলী বিচ। উদ্দেশ্য এই ভিউ পয়েন্ট থেকে ফায়ার ওয়ার্কস দেখা।বিকাল ৪ টা থেকে বসে ছিলো লোকজন। তারা সবাই শীতের কাপড়, কাঁথা কম্বল নিয়ে হাজির। কিন্তু আমরা জানতাম না সূর্য্য ডোবার পরেই ঐ সুউচ্চ পাহাড়ের উপর নামবে এমন হাঁড় কাঁপানো শীত। কোনোমতে উহু উহু করে বসে রইলাম আমরা। রাত ৯ টায় শুরু হলো সেই অপরূপা ফায়ার ওয়ার্কস। শেষ হতেই মানুষের ঢল নামলো। সকলে উঠেই পাড়ি জমালো বাড়ির পথে। কিন্তু ঐ নির্জন পাহাড়ী পথ আর দু দিকে ঘন বন আমার আত্মা উড়িয়ে দিচ্ছিলো। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো ভূত পেত্নী দৈত্য দানো লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসবে বনের মধ্যে থেকে। সে যাই হোক শেষ মেশ উবার করে ফিরে এসে এললোরা রিসার্ভ থেকে সামনা সামনি ফায়ার ওয়ার্রকস ২০২৩ দেখা। সে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো। বাড়ি ফেরার সময় কোনো বাসই খালি ছিলো না। রাত ২:৩০ তে ফিরলাম আমরা। আমাদের এই যাত্রায় গাইড ছিলো বিভান। একজন চটপটে এবং ইনটেলিজেন্ট বয়।
অনেক কষ্ট করে ভিডিও থেকে কাট করলাম! :
সে কি অপরুপ আলোর খেলা!! ছবি বা ভিডিওতে কখনই আসবে না!
সারাদিন আনন্দেই কেঁটেছিলো। কিন্তু রাতে নেমে আসলো মহা বিপদ। আমার রুমের সামনে এক গিরগিটির বাচ্চা। এ্যশ কালারের কার্পেটের রং হয়ে বসে আছে। আমি তো চিল্লায় মিল্লায় বাড়ি মাথায়! এই গিরিগিটি কুমীরের নাতি বাড়ি থেকে না বের হলে আমি ঘুমাবোই না। সবাই বলে কিচ্ছু হবে না। ও রুমেও ঢুকবে না তোমার গায়েও উঠবেনা। আমি তো অবাক! কি করে গ্যারান্টি দিচ্ছে তারা! ওরা কি গিরগিটির মনের ভাব জানে? যাইহোক রাত দুপুরে হই হই করে সেই টিকটিকির দাদা মহা পরদাদা গিরগিটির বাচ্চা গিরগিটি দূর করা হলো ঘর থেকে। তারপর আমার শান্তি হলো।
এই ছিলো প্রথম সাত দিনের অস্ট্রেলিয়ার গল্প। বাকী গল্প পরে বলছি। ধীরে ধীরে ......
ওয়াটার লু পার্কের সামনে বাসের জন্য ওয়েট করছিলাম তখনি ক্লিক ক্লিক! শুধু শুধুই এই ছবি দিলাম। ছবি বড় করে দেওয়া যাচ্ছে না এবং সব ছবিই ঘোলাটে আসছে। কি আর করা তবুও এই আমাদের সামু। যেখানে লিখি মনের কথা!
চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৪৮