১/ ১/২০২৩
আগের দিনের ফায়ার ওয়ার্কস দেখার মজা পরেরদিন সকালে বের হলো। মানলী বীচের ঐ পর্বতে হেঁটে হেঁটে ওঠা আর তারপর সেখান থেকে ফিরে রাত ১২টায় ইলোরা রিজার্ভে পৌছানো এসব আমার আহলাদী শরীরের জন্য বেশি হয়ে গেছিলো। রাহী আর বিভানের জন্যই কিছুই না কিন্তু আমাকে নিয়ে হাঁটতে গিয়ে তাদের রাত ১২টার ফায়ার ওয়ার্কস দর্শন নষ্ট হয় হয় আর কি। আমি হাঁটতে পারি না কিন্তু হাঁটতেই হবে কারণ অনেক দূর থেকেই বাস কার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। আমার পা ভেঙ্গে আসছিলো তবুও মনের জোরে হেঁটে চললাম। আমরা যখন ভিউ পয়েন্টে গিয়ে পৌছালাম ঠিক তারপর পরই কাউন্ট ডাউন শুরু হলো ১০, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫,৪,৩,২,১ হ্যাপী নিউ ইয়ার....... চারিদিকে আলোর রংধনু। যতই ছবি তুলি আর ভিডিও করি কখনই সেই সৌন্দর্য্য কাউকেই বুঝানো সম্ভব না। যাইহোক ফেরবার সময় রাস্তার ধারের পাবগুলো থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নানা বর্ণের, না না ধর্মের মানুষগুলো সবাই সবাইকে উইশ করছিলো। মানুষজন ঝলমলে পোশাক গ্লিটারী শিং এসব পরে হাঁটছিলো। আমিও কিন্তু ঝলমলে পোশাক পরেছিলাম। চারিদিকে আনন্দ তার দ্যুতি ছড়াচ্ছিলো। এত আনন্দঘন নিরাপদ মধ্যরাত এই জীবনে এর আগে দেখা হয়নি আমার। এরপর একটাও বাস পাওয়া যায় না। আমি এ কটাদিন শুধু এই দেশের সরকারের অর্থের অপচয় দেখে বিস্মিত হচ্ছিলাম। বাসে ট্রেইনে মানুষ নেই বললেই চলে। একদম ফাঁকা ফাঁকা। এমনকি একটা মানুষ নেবার জন্যও ভূতের মত মানে রোবোটের মত বাস ট্রেইন স্টপেজে আসছে যাচ্ছে। নির্বিকার নিরুত্তাপ। কেউ উঠলো কি উঠলো না তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের নেই কোনো সমস্যা তারা যেন অন্ধ বোবা কালা। একটা মানুষও যদি কোনো দিন কোনো স্টপেজে না ওঠে তবুও তারা তাদের কর্মে অবিচল থাকবে।
গত দিনের ক্লান্তিতে সারাদিন বিশ্রামেই ছিলাম। কোথায় আর বের হইনি। তবে সন্ধ্যায় একটু ঢু দিতে গেলাম প্রতিবেশি মার্কেট ট্রাফালগার শপিং সেন্টারে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি জরুরী ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা এবং বার ও খানাপিনার দোকান সেখানে। সামনেই ওয়ারলু পার্ক। অনেকক্ষন বসে থাকলাম আমরা সেই অপার্থীব সৌন্দর্য্যের অপার নগরীতে। পার্কে শিশুরা খেলছিলো, অনেকেই ইভনিং ওয়াকে রত ছিলেন। মাঠের চারপাশ ঘেরা ঝাউগাছের মত কোনো এক গাছের সারি। মায়াময় ফিনফিনে পাতার চামর দুলাচ্ছিলো। ঐ সন্ধ্যেটা এক বিশেষ স্মরনীয় হয়ে থাকবে আমার বাকী জীবনে।
২/১/২০২৩
বাসা খুঁজি, ইউনিভার্সিটিতে কাজ কোনোটাই হচ্ছে না নিউ ইয়ার ছুটির কারণে। ৩ তারিখে সব কিছু খুলবে। তো কি আর করা? মার্কেটে গেলাম। নতুন সিম কিনলাম। আগের সিম রোমিং করা ছিলো।
এখন কি করা যায় ভেবে ভেবে নেনে চিকেনে টাকো খাই ভাবলাম। যেই ভাবা সেই কাজ বসে বসে খেলাম টাকো এন্ড চিকেন ইয়াম্মী ইয়াম্মী। এরপর একটু শপিং উলসওয়ার্থে। তবুও টাইম যায় না। ঠিক করলাম ম্যুভি দেখবো। ম্যুভি হলে চলছিলো আভাটার। দেখলাম আভাটার গ্লাস আর পপকর্নের কাগজের স্পেশাল প্যাক বিক্রি হচ্ছে। সে সব অবশ্য বাচ্চারা কিনছিলো। আমার তো লাগবেই লাগবে। আমিও তো বাচ্চাই। আবার একটু স্টাইলিশও বটে। একটু স্টাইলই যদি না থাকে জীবনে তো কিসের আর যে জীবন? পিচ্চিদের মত সেই গ্লাসে স্ট্রবেরী আর স্মিথ চিপস নিয়ে বসলাম আয়েশ করে। মিঃ বীনকে মনে পড়ছিলো। বুড়া ধামড়া হয়ে সে যেমন বাচ্চাদের পুলে নেমেছিলো ঠিক তেমনই আমিও। ম্যুভিটা আমার অনেক ভালো লাগলো। অবশ্য দুনিয়ার সব কিছুই আমার অনেক ভালো লাগে।
সিনেমাহলের সামনে আইসক্রিম...
এত সুন্দর নিট এন্ড ক্লীন ঝকঝকে তকতকে ট্রেইন আর বাসে আমি শুধু তাকিয়ে থাকি। সবাই চুপচাপ। ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কাউকেই দেখছে না কাউকে নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই।
এমনকি বাবা মা ফোনে বসে আছে পিচ্চি বাচ্চা একা একা মন খারাপ করে দূরে বসে আছে। বদমাইশ বাবা মায়েদের কোনোই খেয়াল নেই সেখানে। কি আর করা! আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে আবার পুলিশে ধরায় দেয় যদি।
এই শহরের কয়েকটা বড় বিস্ময়ের মাঝে বাস আর ট্রেইনের সুশীতল আরামদায়ক বিস্ময় ছাড়াও আরও দুটি বিস্ময় ছিলো এই দেশের বৃদ্ধ এবং শিশুরা। ছোট্ট ছোট্ট শিশুদেরকে স্ট্রলারে করে নিয়ে এসেছে বাবা মায়েরা তারা সেখানে শুয়ে শুয়েই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কথা বলতে পারেনা অথচ কি ম্যাচিউরড তারা। কাউকে বিরক্ত করে না একটুও কাঁদেনা। আমাদের দেশের বাচ্চারা হলে তো কোল ছেড়ে নামতোই না। বাবা মায়েরাও ওলে ওলে করে কোলে নিয়ে ঘুরতো। জীবনেও স্ট্রলারে করে আনতো না।
আর অশীতিপর বৃদ্ধ বৃদ্ধারা হুইল চেয়ার ঠেলে চলে যাচ্ছে শপিং মল বা ব্যাংকেই। সবখানেই তাদের জন্য গড়ানো রাস্তা তৈরী করা আছে। মলের লোকজন, ব্যাংকের লোকজন সবাই তাদেরকে সহযোগীতা করছে এমনকি অন্যান্য কাস্টোমারও তাদের জন্য পথ ছেড়ে দিচ্ছে। সবার কাছেই সন্মানিত তারা। কিন্তু আমাদের দেশে? কে কার আগে যাবে? বৃদ্ধ শিশু প্রেগন্যান্ট মহিলা কারোরই জন্য ভ্রুক্ষেপ নেই কারো।
৩/১/২০২৩
সেদিন ছিলো আমার বাসা পাবার ইনসপেকশন ডে। প্রথমেই বাসাটা পছন্দ হয়ে গেলো। যদিও ফ্রি ফার্নিশড বাসা বলে ভাড়াটা একটু বেশি ছিলো। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে এটাই সেরা মনে হলো। এই বাসার লোকেশন আর সারা বাড়ি ভর্তি ফার্নিচার এমনকি জুতোর র্যাক, ময়লার বাস্কেট এবং ঝাড়ু টাড়ু সব থাকা দেখে আমি অবাক!! স্ক্রু ড্রাইভার হাতুড়ীর সেটও আছে। এমন ফ্রি ফার্নিশড বাসা আমি আসলেও আগে কখনও দেখিনি। যাইহোক সেদিনই তক্ষনাৎ বাসা বুক করে ফেললাম। কিন্তু আমার পুরো সিডনী ভ্রমনের কোনো একটা দিনও এমন অসভ্য এবং বেয়াদপ এজেন্ট তথা মানুষ আমি দেখিনি। বাসা ভাড়া দেবার সময় তার সুমধুর ব্যবহারে আর সুমিষ্ট কথায় বুঝা যায়নি এই মাইকেল চাইনিজ বুড়া যে এই পরিমান শয়তান ও অভব্য হতে পারে তা দুদিন পরেই বুঝলাম কন্ট্রাক্টসাইনের পরে। ভাগ্যিস অল্প দিনের কন্ট্রাক্ট ছিলো। বাসার সামনে এক অপরুপা পার্ক। ঐ বদমাইশ বুড়ার জন্য ওয়েট করার সময় অনেক অনেক ছবি তুললাম ঐ পার্কে বসে। এরপর একটা জাপানিজ রেস্টুরেন্ট বামবুতে খেয়ে দেয়ে আরও একটা বাসা দেখতে গেলাম। কিন্তু আমার তো অলরেডী আগের বাসাটাই মোটামুটি কনফার্ম মনে মনে। যাইহোক সেদিনের এই বাসা খুঁজাখুঁজি পর্বেই দিন কেটে গেলো।
বেয়াদপ এজেন্টের সাথে দেখা করবার আগে সামনের পার্কে বসে টাইম পাস ফটো তুলাতুলি।
৪/১/২০২৩
আমি যেই ইউনিভার্সিটির কাজে গেছিলাম সেটা এ দিন খুললো।
স্টুডেন্ট কানেক্টরে দেখা করে সেদিন কিছু ব্যাংকের কাজ ছিলো।
ইউনিভার্সিটি পরিদর্শনেও একটু ফটো তুলাতুলি
এত সুন্দর সবুজের সমারোহে ইউনিভার্সিটিটা
আমার তো ফটো তুলাতুলি থামেই না
লাল নীল ইউনিভার্সিটির একাংশ
তারপর যথারীতি খানা পিনা শপিং।
জাপানীজ শপের বাম্বু কারী
আসলে এই সিডনী ট্যুর আমার কোনো আনন্দ ভ্রমন ছিলো না। বিশেষ কিছু কাজেই গিয়েছিলাম আমি। তার মাঝে নিজের উচ্চতর পড়ালেখার বিষয়ে কিছু কাজ ও সাথে জব যোগাড় করা যায় কিনা এ সব ব্যাপারে যোগাড় যন্ত্র করা। আমি আগেই বলেছি ওয়েল প্রিপারেশন ছাড়া হুট করে আমি কিছু শুরু করতে বা বদলাতে রাজী নই।
৫/১/২০২৩
ঘুম ভেঙ্গে উঠতেই আমি শীতে ঠকঠক। এই গরমের দিনে এমনও ঠান্ডা পড়তে পারে! আমি হতবাক! বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিলো। আর রুমের ভেতরে কত ডিগ্রী ঠান্ডা ছিলো আল্লাহ জানে। অন্যান্য রুমের সবাই দেখি রুমহিটার চালিয়েছে। ওরা বললো, এই সিডনীতে এসি ছাড়া থাকা সম্ভব কিন্তু রুমহিটার ছাড়া নহে। আমি এখন কি করি? আমাকে সেদিন বের হতেই হবে। বুক শপস, পিট স্ট্রিট মার্কেট, মিডসিটি
এসবে আমার স্যুভেনিওর কিনতে যাবার কথা সেদিন। মিররমনি অনেক অনেক খানের অনেক অনেক স্যুভেনিওরের সাজেশন দিলো আর এই দিকে আমি শীতে ঠকঠক। কি করা যায়! চিরকালের অদম্য আমি বুদ্ধি খুঁজে বের করলাম। প্যান্ট শার্ট তার উপরে জ্যাকেট তার উপরে রেইনকোট। হা হা হা হা হা হা আমার সেদিনের চেহারার ছবি তোলা আছে কিন্তু আমি সেটা এখানে দেখাবোই না। আমার কাজিন আমার সেই ছবি দেখে বলে কি রে তুই পি পি ই পরছিস নাকি!! আমার তখন ঠান্ডায় পিপিই জিপিই দশা। কোনো দিকেই কর্ণপাতের সময় নেই। সেদিন সকালে ইজিমার্টে দেখা হলো বাংলাদেশের মেয়ে রাইসার সাথে। এত সুন্দর করে কথা বলে মেয়েটা!!
যাইহোক সেই পিপিই স্টাইল সাজ সজ্জা করেই চলে গেলাম প্রথমে টাউনহল কুইন ভিক্টোরিয়া মার্কেট বিল্ডিং এ আবারও। এই বিল্ডিং এর প্রেমে পড়েছিলাম আমি।
সেখানে পা দিলেই মনে হত আমি যেন শত বছর আগের কোনো রাজার রাজ্যতে এসে পড়েছি। টাউনহল কুইন ভিক্টোরিয়া মার্কেট বিল্ডিং এর উপরে কিছু কালো কালো কষ্টিপাথরের রাজা রাণীদের স্ট্যাচু আছে। বুঝলাম এই টাউনহল কুইন ভিক্টোরিয়া মার্কেট বিল্ডিং এর কোনো ইতিহাস তো আছেই। টাউনহল কুইন ভিক্টোরিয়া মার্কেট বিল্ডিং এর ইতিহাস এই এত বড় কাহিনী বঙ্গানুবাদ করা আমার পক্ষে সম্ভব নহে। যার যার জানতে ইচ্ছা করবে ডিকশন্যারী খুলে পড়ে নাও।
অস্ট্রেলিয়ান অথেনটিক ফুড খেতেই হবে তাই...
মিট পাই, সবাই বলেছিলো পঁচা হবে তবে আমার অনেক মজা লেগেছে।
মজা করে খানা পিনা...
সামনে একটা চার্চ ছিলো। সেই চার্চেও ওমন সব কালো কষ্টি পাথরের মূর্তি গড়া। সেখানে রাস্তায় বসে গিটার নিয়ে গান গাইছিলো কিছু মানুষ। আমি তাদের গান শুনে আর পুতুলের মত বেশ ভুষা দেখে মুগ্ধ!
মিডসিটি পিট স্ট্রিট মল এসব দোকানে ঘুরে ঘুরে আমার চোখ তো কপালে। এত এত দাম কেনো এক একটা পুচ্চি পাচ্চি স্যুভেনিওরের?
আমার পছন্দ হলো বুমেরাং। অনেক রকম ছোটখাটো বুমেরাং ছিলো কিন্তু আমার পছন্দ বড় সড় টাই।
স্যুভেনিওর মার্কেট
তারপর অপেরা হাউজ কিনতে হবে আমার। সেই অপেরা হাউজ গোল্ড প্লেটেডটাই পছন্দ হলো। এছাড়া ভিউ কার্ড, কাপ, মগ, ঘন্টা সো পিস প্লেট হাবি জাবি কিনে ব্যাগ ভরালাম।
এরপর বুক শপ! আমি এত বড় বুক শপ জীবনেও দেখিনি। একদম হারিয়েই গিয়েছিলাম এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত খুঁজতে। এতসব বই এর মেলা সাথে আর্ট এন্ড ক্রাফ্টসের নানা রকম টুলস। মাথা খারাপ হয়ে গেলো আমার। কিনে এনেছি পেন্সিল স্কেচের অনেক কিছুই। এখন শুধু সময় করে আঁকার অপেক্ষা। কার ছবি আঁকবো বলো? মিররমনি নাকি একলব্য পিচ্চুর?
বুক শপে এত এত বই কোনটা ছেড়ে যে কোনটা কিনি!!! শেষ মেষ সুন্দর দেখতে দুইটা বই কিনলাম! হা হা প্রথমে দর্শনধারী তারপর গুনবিচারী! বই কেনার চাইতেও বয়ে আনবো কিভাবে এই চিন্তাটাও ছিলো। নইলে আরও কিছু দর্শনধারী বুকস কেনা যেত।
৬/১/২০২৩
বাসা ভাড়ার কনট্রাক্ট সাইন হলো এ দিন ঐ বদমাইশ এজেন্টের পারমাটার অফিসে। তারপর পারমাটায় ঘোরাঘুরি। এই মার্কেটে যে কত রকমের খানা। সবাই গপাগপ খাচ্ছে আর খাচ্ছেই। আমরা খেলাম মেক্সিকান খানা সাথে তাদের বিখ্যাত লাল নীল হলুদ সবুজ মেকারন। এইখানেই আমি প্রথম হোমলেস বা রাস্তার ধারে বসা ভিক্ষুক দেখি। হাত বাড়িয়ে সাহায্য চাইছিলো। সেদিন বাসার চাবি পেয়েছিলাম আমরা। তাই আসলাম বাসা চেক করতে। বাড়িতে ঢোকার প্রাক্কালেই দেখা হয়ে গেল দুজন প্রতিবেশীর সাথে। হাসিখুশীএন্ড্রু আর ভালোমানুষ এক তামিল ইন্ডিয়ানের সাথে অনেক কথা হলো। রাতেই পরদিন সিফটিং এর কাজ শুরু হলো। সামান্য জিনিস। সবই আছে ঐ বাসায় তবুও কত কিছু কিনতে হলো।
৭/১/২০২৩
সিডনী টাওয়ার -আমি জানিনা কোন অবচেতন মনে ভর করে বা কোন ভুলে আমি উঠে গেলাম সিডনী টাওয়ারে। এই সিডনী টাওয়ার সম্পর্কে আমার আগে থেকে কোনো ধারনাই ছিলো না। আগে জানলে কি এমন ভুল করতাম! সারাজীবন লিফট ফোবিয়ায় ভোগা এই আমি লিফটে ওঠার পর বুঝলাম এমন চিপাচাপা লিফট কেনো আর থামছেই না থামছেই না কেনো!!! মনে মনে প্রমাদ গুনলাম! আল্লাহ তায়ালার সাথে কথপোকথন শুরু করলাম, ও আল্লাহ এই লিফট কোথায় উঠছে? কয় তলা? কখন থামবে? আমি কি আর এই লিফট থেকে নামতে পারবো? আল্লাহ তায়ালা উত্তর দিলেন না। নিরুত্তর রইলেন। কি আর করা আয়াতুল কূরসি পড়া শুরু করলাম। লিফটের মেয়েটা অনেক অনেক কথা বলছিলো, হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করছিলো আমাদেরকে। কিন্তু সদা হাস্যময়ী লাস্যময়ী খেতাব প্রাপ্ত আমার মুখটা হয়েছিলো মনে হয় বাংলার পাঁচ তখন।
যাইহোক সেই টাওয়ারে উঠে ভাবলাম আমি কি আর নামতে পারবো? যাক যতক্ষন উপরে আছি মন দিয়ে খুশি থাকি। তাই চারিদিকে দেখতে শুরু করলাম। পুরা সিডনী যেন পায়ের তলে আমি যেন এক বিরাট রাক্ষস বা খোক্ষস যে কিনা উপর থেকে সব কিছু দেখছি অথবা আমরা যেন আকাশের উপরের কোনো বাড়িতে। এখানে এসেও আমি আবার মিঃ বীন বা গোবোর্ধন মার্কা কাজ করলাম। ওখানে কিছু টেলিস্কোপ টাইপ বা শক্তিশালী বায়নোকুলার ছিলো। আমি সেখানে অনেকক্ষন ধরে দেখার ট্রাই করছিলাম। কিছুই দেখি না। এমন সময় দেখি একটা বাচ্চা পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার কীর্তী দেখছে। সে হেসে বলে এই টা তোমার জন্য না এটা ছোটদের তোমার মত বুড়া ধাড়িদের জন্য এই যে পাশেরটা। কি আর করা হে হে করে সেদিকে চোখ বসালাম। সেই পিচকির আবার দয়া হলো মহিলা মিঃ বীন দেখে সে এসে আমার দিকে সেই টেলিস্কোপ বা দূরবীনের সঠিক দিকটা ঘুরিয়ে দিলো। আমি এতক্ষন ভুলভাল দিকে চোখ দিয়ে সব ঘোলা ঘোলা দেখছিলাম। যাক দুনিয়ার সকল বাচ্চারাই দেখছি আমার বিপদে সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী। মনে হয় এই জীবনে বাচ্চাদেরকে ভালোবাসার ফল।
ও আরেকটা পিচ্চির কথা মনে পড়লো। অতো উপরে উঠে ভাবছিলাম এখন নামবো কেমনে? এই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই দেখি ফায়ার আলার্ম বেঁজে উঠলো। চারিদিক থেকে দৌড়ে এলো লোকজন। এক পিচকি ওয়াশরুমের দরজার হ্যান্ডেল ভেবে স্মোক আলর্মের হ্যান্ডেল টান দিয়েছে। কি যে জ্বালা! এমনিতেই ভয়ে বাঁচি না এর মধ্যে আবার এসব বিপদ!
টাওয়ারের উপর থেকে...
আকাশে উড়ে উড়ে দেখবার অনুভূতি
টাওয়ারের উপরের জানালা দিয়ে
আকাশের ঠিকানা থেকে
ইগলের মত দেখি
পাখির চোখে পৃথিবী দেখা
সিডনী টাওয়ার থেকে নামার সময় চোখ বন করে আবার আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে নামলাম। যাক শেষ পর্যন্ত এ যাত্রা বেঁচে গেলাম আর কি। নীচে নেমে আামাকে এই টাওয়ারের স্যুভেনিওর কিনতে হবে। কিন্তু একটু বড় সড়টার এত দাম কেনো? মনকে সান্তনা দিলাম। হোক দাম শখের তোলা আশি টাকা। তারপর বিসমিল্লাহ বলে কিনেই ফেললাম। সিডনী টাওয়ারে ওঠার পর মানুষের মনে হয় নিজেকে পাখিই মনে হয় তাই এইখানে পাখি সাজবার জন্য এই ব্যাবস্থা।
এই পাখিটা রোজ সন্ধ্যা নামবার প্রাক্কালে এসে বসতো আমার ডরমিটরী বাসাটার জানালার পাশে। গুরু গম্ভীর মুখে চুপচাপ বসে থাকতো বড়সড় পাখিটা। আমি ডাকতাম তাকে। সে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার আমাকে দেখেই আবার সুদূরে তাকিয়ে থাকতো যেন কারো অপেক্ষায়। এই পাখিটাকে মিস করবো আমি আজীবন।
এই ছবি দুইটা আমি তুলিনি। কুইন ভিক্টোরিয়া বিল্ডিং এর সুউচ্চ চূড়ায় এত সুন্দর করে তুলতে পারিনি বলে নেট থেকে নিয়ে দিয়ে দিলাম আর রানীর স্ট্যাচুর ছবিটাও। আহা কত সুন্দর!
এটা আমার তোলা।
অস্ট্রেলিয়ার গল্প এখনও শেষ হয়নি।
নটে গাছটিও মুড়োয়নি......
আবারও আসবো অস্ট্রেলিয়ার বাকী গল্প নিয়ে..... খুব শিঘ্রীই.....
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৫