আমার এবারের ঈদসংখ্যা ২০২৩ আনতে একটু দেরী হয়ে গেলো। দেরী হলেও এক সপ্তাহ শেষ হবার আগে আগেই নিয়ে এলাম কিন্তু ঈদসংখ্যা ২০২৩। আসলে প্রানান্ত গরমে প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখনই এক পশলা বৃষ্টি সাথে নিয়ে এসেছিলো ঈদ-উল- ফিতর ২০২৩। মিররমনি বলেছিলো সামথিং নিউ অর ডিফারেন্ট কিছু করতে হবে আমাকে এবারের ঈদে। কিন্তু অনেক ভেবে ভেবেও আমি কিছুই নিউ পেলাম না। সেই একই ঈদের রান্না ছাড়া কোনোভাবেই নিউ নিউ রেসিপি দিয়ে ঈদ সাজাতে ইচ্ছা হলো না অথবা খুঁজে পেলাম না শপিং এর ব্যস্ততায়। তাই টেবিল রানার আর খানাপিনা ডিশগুলোকেই একটু নতুন করে উল্টে পাল্টে সাজিয়ে দিলাম।

এই যে দেখো বাঁকা করে সাজানো টেবিল রানারের উপর দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলাম ঈদের খানাগুলো প্রতিবারের সোজার বদলে বাঁকা বাঁকা করে। আর একটা টেবিল রানারের বদলে দিয়ে দিয়েছিলাম ৩টে টেবিল রানার। নতুন রকম হলো না বলো?

কি কি খানা আছে গেস করো তো!
আচ্ছা আমিই বলি। প্রথমেই ঈদের মিষ্টি দিয়ে শুরু করি। এখানে আছে সেমাই, জর্দা, লাচ্চা, জেলো পুডিং ও ডাবের পুডিং। আরেকটা কথা বলি, এবারের রোজায় ডাব আর ডাবের শাস ছিলো আমার সবচাইতে প্রিয় আর সাথে ছিলো নানান রঙ্গে নানান ঢঙ্গে মকটেইল ড্রিংকস।
সেবারের লাল নীল ফিরনীর বদলে এবারের করেছি লাল সবুজ ডাবের পুডিং।


এই যে রাশান সালাদ এবং আলুকিমা চপ।
এটা ছিলো রোস্ট। ছবিটা ঠিক ঠাক বুঝাই যাচ্ছে না।
এই যে গরুর মাংস।
আর এটা সবুজ সব্জী।
এটা চিংড়ি দোপেঁয়াজা।
এই যে সেই আমার বিখ্যাত না ভাজা আলুকিমা চপ।
এই রোস্ট আমার স্পেশাল রোস্ট। মিষ্টি দই দিয়ে মাখিয়ে ভেঁজে তোলা রোস্ট!
আর এসব ছবি এমনি এমনি দেখো। যদিও এতই ছোট ছোট আর কিছুই বুঝা যায় না লুকে আসে সামুতে আজকাল।

অনেক হলো খানাপিনার গপ্পো! এবার একটু ঈদের শপিং টপিং জামাকাপড়ের গল্প বলি।
এই ঈদের আগের সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুল খোলা ছিলো। ছুটি পেতেই টই টই ঘুরেছি শপিং এ। গরম টরম কিছুই মানিনি কিন্তু কি কিনি কি কিনি? লাল নীল হলুদ সবুজ গোলাপী বেগুনী, কমলা, টমলা মমলা উফফ সব কালারই তো পুরোনো। নতুন কিছু পাই কোথায়! ঠিক মিররমনির নতুন কিছু করো শুনতে গিয়ে নতুন কিছুই পেলাম না ঈদ টেবিল সজ্জায়। ঠিক তেমনই নতুন কোনো রংই পেলাম না যাহা ইহ জীবনে আমার পরা হয়নি কয়েকশোবার। নতুন কোনো শাড়িই পেলাম না যাহা ইহজীবনে পাওয়া হয়নি আমার। কাতান, জামদানী, মিরপুরী, টাঙ্গাইল, মনিপুরি জয়পুরী ওপস আমি তো আবার দেশপ্রেমী নিজে হাতে ভীন দেশী কাপড় কিনবোই না। তাহলে কিনবোটা কি? তখনই বুঝলাম মানুষ যত বুড়া হয় জীবনের রুপ রস গন্ধ কেনো তত মলিন হতে থাকে। নতুন করে কিছুই আর পাবার থাকে না। সবই হয়ে যায় পুরোনো এবং এক সময় একঘেয়ে।

কিন্তু তাই বলে আমার কি এত সহজেই হাল ছাড়া চলবে? তাই বলে হাল ছেড়ে দিয়ে কান্নাকাটি করবো না। কিছুতেই না নতুন কিছু করো একটা নতুন কিছু করো। আমি জানি এবারে আমি যেই গল্পটা বলবো তা শুনে কেউ কেউ নাক শিটকাবে । কেউ কেউ বলবে ঢং, কেউ কেউ বলবে ঘোড়া রোগ, হাতী রোগ। যে যা বলে বলুক, তাতে কি যায় আসে। আমি এমন কিছু করবোই যাতে জীবনের রুপ রস গন্ধ অটুট থাকে। জীবনের নতুন মানে খুঁজে খুঁজে পাই প্রতি মুহুর্তেই। আসমা রুপা সুফিয়া এরা আমাদের বাসার মহিলা গৃহকর্মী। এরা সবাই জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে এসেছে আমাদের দ্বারে। আসমার ছোট ছেলেটাকে এতিম খানায় দিয়েছে। সে তার ছোটবোনটাকে তার বেতনের অর্ধেক পাঠিয়ে দেয়। রুপা তার ৯ বছরের মেয়েটাকে মায়ের কাছে রেখে এসেছে। ফোনে বলে, আম্মু তোমার জন্য টাকা পাঠাইসি তুমি মামীর সাথে গিয়ে সুন্দর দেখে জামা কিনে নিও। সুফিয়া চালচুলোহীন। তার নিজের কোনো ঘর নেই। তার স্বামী নিয়ে আজীবন আশ্রিতা থেকেছিলো ভায়ের সংসারে। আমাদের সংসারটাকে বড় আপন করে নিয়েছে। যেতে যায়না কোনোদিন এ বাড়ি ছেড়ে। আমি আসমা আর রুপার মত একই জামা কিনে আনলাম এবারের ঈদে। আসমা আনন্দে হেসে উঠলো। রুপা বললো, আফা আমরা ৩ জন এই জামা পরে এবারের ঈদে ছবি উঠামু আচ্ছা? এই হাসিটা এক্কেবারেই নতুন ছিলো। আমার জীবনে দেখা প্রথম কোনো অন্যরকম হাসি।

যাইহোক, এবারের রমজানে অনেক অনেক মকটেইলস বানিয়েছি শুধু একটাই বাকী ছিলো। বাকী থাকার কারণ ছিলো এই কুরাকাও বা কুরাসাও বা কিওরেসাও সিরাপ। সেটা যোগাড় করতেই বানালাম না আমার সেই প্রত্যাশিত নীল নীল ড্রিংকস।

এই যে আমার সেই ঈদসংখ্যা ব্লু মুন অথবা ব্লু লেগুন মকটেইল ড্রিংকস।

আর ইহা সাড়ে ভাইয়া ও সাড়ে ভাবীজীর জন্য। ভাইয়া একা একা খাবে নাকি?
এবারে বলি রাশান সালাদের রেসিপি-
১কাপ মেয়নেজ, ১/২কাপ ক্রিম, ১চা চামচ গোল মরিচের গুড়া, ২ টেবিলচামচ চিনি, ১ চা চামচ লবন বা ইচ্ছেমত এই সব কিছু এগবিটারে বিট করে ফুলিয়ে ফাপিয়ে রেখে দিতে হবে।
২কাপ সিদ্ধ আলু কিউব করে কেটে নিতে হবে। ১কাপ সিদ্ধ গাজর কিউব করে কেটে নিতে হবে। ১কাপ আপেল কিউব করে কেটে নিতে হবে। ১ কাপ আনারসও কিউব করেই কেটে নিতে হবে। এরপর ঐ উপরের বানানো ক্রিমটা দিয়ে মিশিয়ে নিলেই হয়ে গেলো রাশান সালাদ। তবে এটা নরলাম রাশাদ সালাদ। কিন্তু আমারটা নরমাল না। আমি বানিয়েছি তো। তাই এটা আমার ----
এবারের ঈদের মীরাক্কেলীও মকটেইল রাশান সালাদ। নিমোভাইয়াকে উৎসর্গীত।

আর এইখান থেকে নির্বহণ ঘোষ, জটিল কুটিল, মরুভূমিভাইয়া, শাহ আজিজ ভাইয়া, সোনাবীজ ভাইয়া,ডঃ এম এ আলী ভাইয়া, খায়রুলভাইয়া আহমেদ জি এস ভাইয়া, সেলিমভাইয়া, তরকারী ভাইয়া, স্বপ্নবাজ ভাইয়া, গোফরানভাইয়া,সাজিদভাইয়া, গেঁয়োভূত ভাইয়া, রানার ব্লগ ভাইয়া শূন্য ভাইয়া, মহাজাগতিক ভাইয়া, তূর্য্য ভাইয়া, উদারজীভাইয়া, ইসিয়াক ভাইয়া, ডার্কম্যান ভাইয়া যারা যারা অনলাইনে আছেন তাদের নাম আপাতত লিখলাম আর মনিরা আপুনি, সোহানী আপুনি, দেয়ালিকা আপুনি, ছবি আপুনি, মুক্তানীল, রুখসানা লেইস আপুনি যারা যারা এখনও ব্লগে আসো তারা সবাই এখনও অনলাইনে না থাকলেও মনে করে করে লিখলাম। এখন সবাই মনে করে করে খেয়ে নিও।

ঈদের অনাবিল শুভেচ্ছা।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:০৭