কিছু দিন আগে সবাইকে ভড়কে দিয়ে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েছিলাম। সব শুনে আর রিপোর্ট-টিপোর্ট দেখে নিউরো সার্জন ডঃ দীন মোহাম্মদ বললেন নিজের উপর এত বেশী প্রেশার নিয়ো না,জীবনযাত্রাকে একটু নিয়ন্ত্রণে আনো। ছোটআপু বলল তোর হলে যাওয়া বন্ধ,বাসা না পাওয়া পর্যন্ত আমার এখানে থাকবি। একটা রুম কী সুন্দর করে গুছিয়ে দিল,ল্যাপটপের জন্য একটা টেবিল পর্যন্ত আনিয়ে দিল দুলাভাইয়ের শো-রুম থেকে। তিন বছরের ভাগ্নেটা আবার বেশী সুইট,আমাকে দেখলেই দৌড়িয়ে আসে,কুংফুপান্ডা মুভিটা আবার দেখার জন্য আকুল আবেদন জানায়,অথবা আমি কি করি বা বলি দেখার জন্য অধির আগ্রহে তাকিয়ে থাকে। কত সুখ সেখানে,আপুর বাসায় না থাকার কোনও কারণ ছিল না।কিন্তু দু'সপ্তাহ না যেতেই একটা অজুহাত দেখিয়ে আমি হলে ফেরোত!
বাইরের অনেকের মনেই প্রশ্ন পাস করার এতদিন পরেও হলে এত কী? আমিও যুক্তি বানিয়ে বলে দেই-আমাকে কেউ(অফিসিয়ালি/আনঅফিসিয়ালি) হল ছাড়তে বলে নাই,আমার সিটে কারও অ্যালটমেন্ট হয় নাই,আমার ব্যাচমেটরা বেশীর ভাগই এখনও হল ছাড়ে নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি নিজেও জানি আর বেশী দিন নাই,কারও গলার কাঁটা হতে কোনও আগ্রহ বোধ করি না। তবু হলের শেষ ক'টা দিন হলে কাটাবার লোভ কোনোভাবে সংবরণ করতে পারি নাই,তাই হলে ফেরত।
কারণে-অকারণে হলের 'আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা' আমাকে চেনে,দেখা হলে কেউ সালাম দিয়ে 'দায়িত্ব' পালন করে,কেউ হেসে কুশল জানতে চায়,আবার কেউ হাসি-তামাশা করে। নজরুল ইসলাম হলের একটা সেন্ট্রাল নার্ভ পয়েন্ট আছে,হাইয়ের দোকান। দৈনিক যত কাজ থাকুক,বিশ্ব উল্টে গেলেও ওখানে সবার কম করে একবার বসা চাইই-চাই।চায়ের কাপের সাথে তুমুল আড্ডা কাকে বলে এখানে আসলে বোঝা যায়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সিনিয়র-জুনিয়র আলাদা করা খুবই কষ্টকর,অনেক জুনিয়রের সাথেই আমাদের 'আরে দোস্ত' সম্পর্ক। এমনও হয় সন্ধ্যায় বসলাম,রাত গড়িয়ে চলছে,কারও ওঠার নাম নেই। মাঝে-মাঝে গভীর রাতে গানের আসর বসে,আর্কির ব্যান্ড দল এব্যাপারে সদা প্রস্তুত। কখনও আবার বাইকার গ্যাং বাইক রেস শুরু করে-নজরুল ইসলাম হল টু এয়ারপোর্ট। ঘটা করে থার্টিফার্স্ট উদযাপন হয়ে,এবার ব্যাচ'০৪ এর জন্য কেক কাটতে গিয়ে আনন্দে চোখের পানি সামলাতে পারি নাই। আমার সামর্থ্য অতি সামান্য,এই জুনিয়রগুলোকে তা বিলিয়ে দিতে বড্ড সাধ জাগে।
একটা বাসা পেয়েছি,সামনের মাসে উঠব।তার আগে জীবনের শ্রেষ্ঠ গল্পটার শেষ অধ্যায়টা উপভোগ করতে চাই,কারও আদেশ-নিষেধ-উপদেশ আমি মানতে বাধ্য নই।