somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা কঠিনসাধ্য রিভিউ : ইনসেপ্শন

০৭ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[মুখবন্ধ: গতবছর থেকে ইনসেপ্শন দেখার আশায় বসে ছিলাম। পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের নামটাই যথেষ্ট, সাথে মুভির কন্সেপ্ট, ডি ক্যাপ্রিও ও অন্যান্য কাস্ট দেখার পর থেকেই মাথায় ঢুকে গেছিল এটা সেরকম কিছু হতে চলেছে। মুভি রিলিজ হল ১৬ জুলাই, ডিভিডি রিলিজ ১ নভেম্বর - এই দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস ধৈর্য্য ধরতে না পেরে একটা নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলছি, মুভি দেখার আগে রিভিউ পড়ে ফেলেছি। এই মুভির আসল জিনিষ কাহিনী নয়, কন্সেপ্ট, সেটাই আগে জেনে ফেলেছি। তাই প্রচন্ড ভয়ে ছিলাম যে আমি তেমন মজা পাব না, কারণ কী ঘটবে আন্দাজ করতে পারছি। এবং আসলেই আমি যা আন্দাজ করেছিলাম তাই ঘটল, কিন্তু এখনও আমি অভিভূত! এ পর্যন্ত তিনবার দেখেছি, তবু এই রিভিউ লিখতে আরেকবার দেখতে হল!!]

নিহিলিজমের মূল কথা হল সবকিছুই অবাস্তব, ঘোরমাত্র; তাই এ অবাস্তব জীবনের কোনো বাস্তব লক্ষ্য নেই। একজন নিহিলিস্টিক মনে করতেই পারেন যে সবকিছুই আসলে একটা স্বপ্ন। 'ইনসেপ্শন' এর তত্ত্বটা কাছাকাছি, যেখানে এমন প্রযুক্তি দেখানো হয়েছে যাতে স্বপ্ন ডিজাইন করা যায়, একজনের স্বপ্নে আরেকজন ইচ্ছা-প্রবেশ করতে পারেন এবং প্রয়োজনে তাঁর অবচেতন তথ্য পর্যন্ত কৌশলে জেনে নিতে পারেন। স্বপ্ন বাস্তব না হলেও সমস্যা নেই, কেননা মানুষ স্বপ্নে সব বাস্তবই ভাবে, স্বপ্নভঙ্গে টের পায় যে কিছু একটা অদ্ভূত ছিল। স্বপ্ন কি না পরীক্ষা করার উপায় দুইটা- অতীত ও বর্তমানের পরম্পরা মিলিয়ে দেখা অথবা এমন ব্যক্তিগত কিছু (টটেম) সাথে রাখা যার সঠিক আচরণ অন্য কারো পক্ষে সঠিক ভাবে স্বপ্নে আনা সম্ভব নয়। স্বপ্নেও স্বপ্ন দেখা সম্ভব, এভাবে গভীর থেকে গভীরে যাওয়া যায়। আগের স্তরে ফিরে আসতে প্রয়োজন মৃত্যু টাইপের ধাক্কা (কিক), তবে বেশী মাত্রায় সিডাকশন দিলে কোনো স্তরে মৃত্যু হলে আরও গভীরতর স্তরে চলে যায় (লিম্ব)। লিম্বতে যে যায় সে আগের স্তরের কথা মনে করতে পারে না, ঐ স্তরটাকেই বাস্তব বলে মনে করে। তবে অন্য কারো সাহায্যে লিম্ব থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব।
কব(ডি ক্যাপ্রিও) এইযুগের একজন চোর। সে তার দলের আরও কয়েকজনের সহযোগীতায় মানুষের স্বপ্নের ভেতর আইডিয়া চুরি করে। সমস্যা হল তার মৃত স্ত্রী(কটিলার্ড) যাকে অবচেতনভাবে প্রতিবার সে মিশনে নিয়ে আসে এবং যথারীতি সবকিছু ভন্ডুল করে। এভাবেই সে এমন একটা মিশন পায় যার সফলতার পুরষ্কার হিসেবে সে দেশে ফিরতে পারবে( কারণ সে তার স্ত্রীর ঘাতক সন্দেহে ফেরারী)। মিশনটা কঠিন, এবার আইডিয়া চুরি নয়, আইডিয়া প্লান্ট করতে হবে - এটাকেই বলা হয়েছে 'ইনসেপ্শন'। কাহিনী জট পাকাতে থাকে, আবার জট খুলতে থাকে। যারা মেমেন্টো, শাটার আইল্যান্ড ইত্যাদি পছন্দ করেন তারা না দেখলে শীঘ্রি দেখে ফেলুন।

আমার সিনোপ্সিস: (স্পয়লার এলার্ট)

নোলান ইচ্ছা করে কনফিউশন ঢুকিয়েছেন, বিশেষ করে একেবারে শেষে। বিভিন্ন ডিসকাশনে মোটামুটি তিনটা থিওরী দেখেছি, একটা আমারটার সাথে মেলে। আমার ধারণা পুরোটাই আসলে কবের স্বপ্ন, কিংবা বলা ভালো লিম্বো। কবকে ১০০% সঠিক ধরে না নিলেই অনেক কিছু ব্যাখ্যা করা যায়। কব ম্যালকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে তারা লিম্বোতে আছে, কিন্তু নিজে বুঝতে অক্ষম যে উপরের স্তরটাও লিম্বো হতে পারে। লিম্বোতে সে তার সন্তানদের কাছে ফিরতে চায়, এজন্য একের পর এক প্রজেকশন তৈরী করে, স্বপ্নের গভীর থেকে গভীরে ঢুকতে থাকে। অবশেষে সাইতোর প্রজেকশন দিয়ে সে সমাধান বের করতে সক্ষম হয়।
মুভিতে প্রচুর অসঙ্গতি আছে - যেমন ট্রেনের তলায় আত্মহত্যায় কব নিজেদেরকে একবার যুবক একবার বৃদ্ধ দেখে, রাত-দিনের ভুল পরম্পরা চোখে পড়ার মত ইত্যাদি। আবার কিছু দেজাভূ আছে - যেমন "take a leap of faith", এটা ম্যাল এবং সাইতো দু'জনেই হুবহু উদ্ধৃত করে। কথিত বাস্তবে কব তার সন্তানদেরকে ঠিক যেভাবে কল্পনা করে শেষে তাদেরকে সেভাবেই দেখতে পায়। এরকম ভুল বা কাকতাল নোলানের মত ডিরেক্টর ইচ্ছাকৃতভাবে ছাড়া করার কথা নয়। এই থিওরীর সমস্যা হল এতে বাস্তবতা বলে কোনো ব্যাপার থাকছে না, তাই সব সমস্যা এতে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে আবার কিছুই এর বিরুদ্ধে যাচ্ছে না। থিওরীগত বিভ্রান্তির কারণে নোলান এখানটাতেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন।
আরেকটা ব্যাপার হল, রোমান্স/হিউমার/থ্রিডি না রেখে কন্সেপ্টের দিকে ফোকাস করা হয়েছে, তবু এগুলার অভাব প্রায় চোখেই পড়ে নাই। এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মত মুভি।
অভিনয় অসাধারণ, ক্যামেরার কাজ ভালো, মেকিং লা জবাব, স্ক্রিপ্ট যথারীতি নোলানীয়(মানে ফাটাফাটি), সে রকম সাসপেন্স-রোমান্স-অ্যাকশন থ্রিলার।

আমার রেটিং :
প্লট/কন্সেপ্ট : ১০
কাহিনী : ৯
মেকিং : ৯
অভিনয় : ৯
স্ক্রিপ্ট : ১০
দৃশ্যায়ন : ৮
উপসংহার : ৮
হিউমার : ৭
সাসপেন্স/রোমান্স : ৯
রেটিং(ওয়েটেড অ্যাভারেজ) : ৯.৪২
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৩০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×