somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ ক্রিকেট: আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনলাইনে যা পড়ি, তাতে ঈদানিং আমার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে মোটাদাগে ২ রকমের মানুষ আছেন - বাংলাদেশী ক্রিকেট ফ্যান আর বাংলাদেশ ক্রিকেটকে 'সম্মান দিতে না জানা' বিদেশীরা।

১.
বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যানবেইজ বিশাল। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীতে এমন বড় আর একটা ফ্যানবেজ পাওয়া যাবে না যারা শুধু ভালোবাসা দিয়েই সামান্য অর্জনের বিনিময়ে এতখানি প্যাশন দেখাতে পেরেছেন।

আমাদের এই ফ্যানবেজটার বড় একটা অংশ খুবই আবেগী। দেশ খারাপ খেলতেই থাকলে মনের ঝাল মিটিয়ে গালি দিবে, তারপরও খেলার সময় ঠিকই গ্লু হয়ে বসে থাকবেন, আবার জিতলে সব ভুলে বিশ্বজয়ের আনন্দ পাবেন। আমরা আমাদের দলের কাছে ঠিক কি প্রত্যাশা করতে হবে তা আজও ঠিক বুঝে উঠি নাই, দলের পারফরমেন্সের সাথে প্রত্যাশার পারদও নাটকীয়ভাবে ওঠে নামে।

আবার দলের সমালোচনা/'সম্মানহানী' সহজভাবে নিতে পারি না। দল যাবতীয় সমালোচনার জবাব মাঠে জবাব দিবে, দিতে না পারলে কেন পারছে না, এই সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার চেয়ে আমরা ফ্যানরাই কড়া জবাব দিতে ইন্টারনেট উজাড় করতে পছন্দ করি বেশী। আমাদের সবকিছুতে ষড়যন্ত্র খুঁজতে ভালো লাগে, আত্মসমালোচনা ভালো লাগে না। আমাদেরকেই আবার প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে খুব বেশী দেখাও যায় না। এই সম্মানহানী-সম্মানহানী খেলায় আমাদের নিজেদের সম্মান খুব বেশী বাড়াচ্ছি না।

এরমানে কিন্তু এই নয় যে কেউ কিছু বললেই মেনে নিতে হবে। বাংলাদেশ নিয়ে যা বলা হয় তার বেশীর ভাগই পূর্বকল্পিত ধারণা/অপছন্দ থেকে বলা, অনেক যুক্তিই আবেগে ভেসে না গিয়ে খন্ডন করা যায়। সত্য হল একটা অপদার্থ বোর্ড আর অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর পরও আমরা আস্তে আস্তে উন্নতি করছি, কিন্তু এখনও সেই লেভেলে পৌছাই নাই। কিন্তু আমাদের আবেগ/উচ্ছাস দেখলে যে কেউ ডিল্যুশনাল মনে করতেই পারে।

২.
বিদেশীরা সাধারণত ২ ভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্লেষণ করেন - ১. বাংলাদেশ কোনো উন্নতি করছে না, সবসময় একই রকম ২. উন্নতি হয়ত হচ্ছে, তবে অনেক স্লো। অন্যান্য অ্যাসোসিয়েটদের সুযোগ দিলেই বরং ভালো হত।

বাংলাদেশের খেলা গত ১৫-২০ বছর সামান্য হলেও ফলো করেছেন এমন যে কেউ জানেন প্রথমটা একটা ভ্রান্ত ধারণা, অজ্ঞতার ফল। ৮৬ সালে প্রথম ওয়ানডে খেলার পর ৯৪ এর মধ্যে আমরা একটা দল পেয়েছিলাম যারা বিশ্বকাপে যেতে পারত, যেটা ঘটেছিল ৩ বছর পর ট্রফি জিতে। তবে সমস্যা হল তখনও আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে যতটা এগোনো দরকার ততটা এগোই নাই, সেটা তখনকার অবকাঠামো বা মানসিকতা যাই বলা হোক। সব মিলিয়ে একটা নব্য টেস্ট দল শুরু করে হয়ত ১০০ তে ৩০ নিয়ে, ফ্যানফেয়ার বাদ দিলে আমাদের শুরু ১০ নিয়ে। ফলাফল হল ৫টা বছর আমরা কোনো আন্তর্জাতিক জয় পাই নাই! এমনকী ঐ সময় কেনিয়া পর্যন্ত আমাদের চেয়ে ঢের বেশী শক্তিশালী ছিল।

২০০৪ এর শেষ থেকে উন্নতির পরবর্তী ধাপ, আমরা অঘটন ঘটানোর মত একটা দল পেলাম। এই দলটা ২০০৬-০৭ এ আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। ২০১০ থেকে আমরা কিছুটা ধারাবাহিকতাও পাই। ২০১২ থেকে টেস্ট ব্যাটিঙে উন্নতি লক্ষনীয়। ২০১৪ সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে খারাপ, কিন্তু দলটা এখন অনেক কম্পিটিটিভ, একথা সমসাময়িক যেকোনো খেলোয়াড় একবাক্যে মেনে নিবেন।

প্রশ্ন হল উন্নতি ধীর কিনা। উন্নতি অবশ্যই ধীর, তবে কোন দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখা হচ্ছে এটাও ব্যাপার। অপ্রস্তুত একটা দেশ ডিফিকাল্টি লেভেলের নাটকীয় পরিবর্তনে প্রথম ৫-৬ বছরে দিশেহারা ছিল, সেটা এখন মাথা তুলে দাড়াচ্ছে। দেশটাকে আরও সময় দেয়াই যায়, হয়ত দেশটার অবকাঠামোর উন্নয়নে পরামর্শও দেয়া যায়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোথায় আমরা? আমরা সার্বিক বিচারে আমরা অবশ্যই ৯ নম্বর। উপরের ৮টা দলের অবস্থা যতই টালমাটাল হোক, ওদের উপরে উঠতে আমাদের ধারাবাহিক হতে হবে আরও বেশী, শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সাফল্য দেখাতে হবে। অ্যাসোসিয়েটরা বেশ ভালো করছে, এই বিশ্বকাপে দলগুলোকে নিশ্চিতভাবেই ২০০০ এর বাংলাদেশ দলটার চেয়ে অনেক বেশী ব্যালান্সড মনে হচ্ছে।

পরিশেষে, বিশ্বকাপে শুধু নয়, ভবিষ্যতের জন্যও বাংলাদেশের জন্য অনেক শুভকামনা






১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×