ভাগ্য গণনা সম্পর্কে ইসলামের বিধান
তাওহীদ বিরুদ্ধ শিরকী ও কুফরী বিশ্বাস জড়িত থাকার কারণে ইসলাম ভাগ্য গণনার প্রতি কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। ভাগ্য গণনায় লিপ্তদেরকে এ নিষিদ্ধ চর্চা ত্যাগ করতে উপদেশ দান ছাড়াও ইসলাম তাদের সঙ্গে যে কোন ধরনের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করে।
গণকের নিকট গমন করা
গণকের যে কোন ধরনের দর্শনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) সুস্পষ্টভাবে নীতি নির্ধারণ করেছেন। হাফছা (রা.) থেকে ছাফিয়া বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যদি কেউ কোন গণক, গায়বী বিষয়ের সংবাদদাতা বা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন করে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে তবে ৪০ দিবস পর্যন্ত তার কোন সালাত কবুল হবে না'। {মুসলিম হা/৫৫৪০}
এ হাদীসে বর্ণিত শাস্তি শুধু গণকের নিকটে গমন করে কৌতুহল বশতঃ তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য। এ নিষিদ্ধতা আরও সমর্থিত হয়েছে মু'আবিয়া ইবনে আল-হাকাম আস-সুলামী বর্ণিত হাদীস দ্বারা। এ হাদীসে মু'আবিয়া (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! নিশ্চয়ই আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা গণকের নিকটে যায়। রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, 'তাদের কাছে যাবে না'। {মুসলিম হা/৫৫৩২}
এ ধরনের কঠিন শাস্তির বিধান নির্দিষ্ট করা হয়েছে কেবল গণকের নিকট গমনের জন্য। কারণ ভবিষ্যদ্ববাণী বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে এটাই প্রথম পর্যায়। যদি কেউ ভবিষ্যদ্ববাণীর বাস্তবতায় দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে গণকের নিকট গমন করে, আর গণকের কোন ভবিষ্যদ্বাণী সত্যরূপে পরিগণিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সে গণকের সমর্থক ও ভবিষ্যদ্ববাণীর প্রতি উৎসাহী ও বিশ্বাসী হবে।
গণকের নিকটে গমন করা সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি উক্ত চল্লিশ দিনের বাধ্যতামূলক সালাত আদায় করতে বাধ্য, যদিও ঐ সালাতের জন্য সে কোন প্রকার পুরস্কার পাবে না। আর সে যদি সকল সালাত পরিত্যাগ করে, তাহলে তো সে আরও একটি গুরুতর গুনাহ করল।
গণকের প্রতি বিশ্বাস
অদৃশ্য ও ভবিষ্যতে কী ঘটবে সে সম্বন্ধে গণক ওয়াকিফহাল এ বিশ্বাসে গণকের নিকটে গমন করা কুফরী কাজ।
আবূ হুরায়ারা এবং আল-হাসান উভয়ে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যদি কেউ কোন গণক বা ভবিষ্যদ্ববক্তার নিকট গমন করে তার কথা বিশ্বাস করে, তবে সে মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর অবতীর্ণ দ্বীনের প্রতি কুফরী করল'। {সুনান আবূ দাঊদ হা/৩৮৯৫; আহমাদ, আল-মুসনাদ, ২/৪২৯ পৃঃ; বায়হাক্বী; আলবানী, সহীহুত তারগীব, ৩/৯৭-৯৮}
এ ধরনের বিশ্বাস দ্বারা অদৃশ্য ও ভবিষ্যৎ বিষয়াদি সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞান রাখার মত গুণাবলীকে তাঁর সৃষ্টির প্রতি আরোপ করা হয়। ফলস্বরূপ তাওহীদুল আসমা ওয়াছ-ছিফাত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং এক্ষেত্রে শিরকের সূচনা হয়। অর্থাৎ কেউ কোন জ্যোতিষী, গণক, রাশিবিদ, পীর, ফকীর, সাধু-দরবেশ ইত্যাদি গোপন জ্ঞানের দাবীদারকে গায়বী বা গোপন জ্ঞানের অধিকারী বলে বিশ্বাস করলে শিরক আকবার (বড় শিরক) সংঘটিত হবে।
গণকদের লেখা বই, পত্র-পত্রিকা বা গবেষণা-পত্র পড়া এবং তাদের অনুষ্ঠান রেডিওতে শ্রবণ করা বা টিভিতে দেখা ইত্যাদির মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান থাকায় এসব কর্মকান্ড কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ভবিষ্যদ্বক্তারা তাদের ভবিষ্যদ্বাণী প্রচার ও প্রসারে বিংশ শতাব্দীতে এ মাধ্যমগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। আল্লাহ তায়ালা পরিস্কারভাবে কোরআনে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউই অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, এমনকি রাসূলও না।
"গায়বের চাবিগুলো সব তাঁর হাতেই নিবদ্ধ রয়েছে, সে-ই (অদৃশ্য) খবর তো তিনি ছাড়া আর কারোই জানা নেই" {সূরা আল আনয়াম, আয়াত ৫৯}
তিনি রাসূল (সা.)-কে বলেন,
"তুমি বলো, আমার নিজের ভালো-মন্দের মালিকও তো আমি নই, তবে আল্লাহ তায়ালা যা চান তাই হয়; যদি আমি অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতাম, তাহলে আমি (নিজের জন্যে সে জ্ঞানের জোরে) অনেক ফায়দাই হাসিল করে নিতে পারতাম এবং কোনো অকল্যানই আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না ..." {সূরা আল আ'রাফ, আয়াত ১৮৮}
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
"আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, এদের কেউই অদৃশ্য জগতের কিছু জানে না" {সূরা আন্ নামল, আয়াত ৬৫}
অতএব ভবিষ্যদ্বক্তা, গণক এবং অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত নানা রকম পন্থা বা পদ্ধতিসমূহ মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ। হস্ত রেখা গণনা, ভাগ্য গণনার মাধ্যম আই চিং, সাফল্যের বিস্কুট বা কেক ও চায়ের পাতার পাশাপাশি রাশিচক্র ও 'Bio-rhythm' নামক কম্পিউটার প্রোগ্রাম- এগুলোতে বিশ্বাস স্থাপনকারী লোকজনের দাবী অনুযায়ী, এসব উপায়সমূহ তাদের ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত তথ্যাদি জানাতে পারে। অথচ আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, একমাত্র তিনিই অদৃশ্য ও ভবিষৎ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। তিনি বলেন,
"অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার কাছে কেয়ামতের (সময়) জ্ঞান আছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, (সন্তানের) শুক্রকীটের মাঝে (তার বুদ্ধি, জ্ঞান, মেধা ও জীবনের ভাগ্যলিপি সংক্রান্ত) যা কিছু (মজুদ) রয়েছে তা তিনি জানেন, কোনো মানুষই বলতে পারে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে; না কেউ এ কথা বলতে পারে যে, কোন্ যমীনে সে মৃত্যুবরণ করবে; নিঃসন্দেহে (এ তথ্যগুলো একমাত্র) আল্লাহ তায়ালাই জানেন, (তিনি) সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।" {সূরা লুকমান, আয়াত ৩৪}
ফলে মুসলিমদের অবশ্যই বই-পুস্তক, পত্রিকা, সংবাদপত্র ইত্যাদির পাশাপাশি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সেসব লোকদের ব্যাপারে, যারা বিভিন্ন উপায়ে দাবী করে যে তারা ভবিষ্যৎ ও অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হক্বের উপর অটল থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!