somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূহওয়ালা নামাজ #:-S 8-| 8-|

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৌভাগ্যের পথের পথিকদের নামায হলো-যখন নামাযের দিকে মনোনিবেশ করবে এবং বাহ্যিক পবিত্রতা হাসিল করতে থাকবে, তখন অন্তরকে তাওবা ও ইস্তেগফারের পানি দ্বারা খুব ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। আর যখন মসজিদ কিংবা জায়নামাযে দাঁড়াবে, তখন অন্তরকে গায়রুল্লাহ্র কল্পনা থেকে পাক-পবিত্র করবে। নিজে যেমন কেবলামুখী হও, তেমনি অন্তরের মুখ ও বাতেনী তাওয়াজ্জুহকেও আল্লাহ্র দিকে নিবে। যখন তাকবীর বললে, তখন দুনিয়া ও আখেরাত থেকে পৃথক হয়ে তাকবীর বলবে, আর যখন নামাযে দাঁড়াবে, তখন আল্লাহ্কে হাজির নাযির জেনে অত্যন্ত আদবের সাথে দাঁড়াবে। অত:পর কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করবে।

যখন রুকু করবে তখন অত্যন্ত দীনতা-হীনতার সাথে মাথানত করবে। নিজেকে অকর্মা ও দুর্বল জ্ঞান করবে, আমিত্বভাব বর্জন করবে। আর যখন সিজদা করবে তখন নিজের অপারগতা ও আল্লাহ্ পাকের বড়ত্ব ও মহত্বের পরিপূর্ণ খেয়াল রাখবে। নামাযের আরকান শেষ করে যখন বসবে, তখন অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়বে। আর যখন সালাম ফেরাবে তখন নিজের আমিত্বভাবকে বর্জন করে আল্লাহ্র একত্ববাদ কল্পনা করতে থাকবে; যাতে নামাযের বরকতে নামাযীর আত্মা আলমে কুদস তথা পবিত্র জগতে উন্নতি লাভ করতে পারে এবং নামাযের হকীকত তার চেহারার সামনে এসে যায়। মাওলানা রূমী (রাহ.) বলেন- এ নামাযই শাহী মুকুট তোমার মাথায় রাখে; তোমাকে তোমার আমিত্বভাব থেকে রক্ষা করে। নামাযে তুমি তোমার অস্তিত্ব বিলীন করে দাও। তবেই তুমি আল্লাহ পাকের সংঙ্গে ভেদের কথা বলতে পারবে।

আরিফীনদের নামায

আরিফীনদের নামায হলো, আরিফের শরীর ইবাদতে থাকবে, অন্তর আল্লাহ্র দরবারে হাজির থাকবে। জান আল্লাহ্র মহববত ও নৈকট্যে ব্যস্ত থাকবে, নফস ফানাফিল্লায় থাকবে। আরিফে কামিল যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহু আকবার বলেই সে নিজ থেকে হারিয়ে যায় এবং আল্লাহ্ পাকের সামনে হাজির হয়। সে অস্তিত্বহীনতায় এমনভাবে ডুবে যায় যে, তখন নিজ সত্ত্বা সম্পর্কে কোন খবর থাকে না। মানবীয় কোনো বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে অবশিষ্ট থাকে না। কারণ আল্লাহ্ পাক থেকে তাঁর অন্তরে এত ফয়েজ ও বরকত নাযিল হয়, যা তাকে অস্তিত্বহীন করে দিয়ে আল্লাহ্র দরবারে হাজির করে। জনৈক বুযুর্গ বলেছেন- নামাযে তুমি এমনভাবে মগ্ন হবে যে, তোমার অস্তিত্বের খবর থাকবে না। এ নামায সেই হাজারো নামাযের চেয়ে উত্তম, যাতে নিজের অস্তিত্বের উপলব্ধি থাকে। নামাযের হাকীকত সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়, যে তার অস্তিত্ব বিলীন করে আল্লাহ্র দরবারে স্থায়িত্ব লাভ করে।

শায়খ মুহিউদ্দিন (রহ.) বলেছেন- সাধারণ মানুষের নামায বাহ্যিক অঙ্গের প্রতি খেয়াল রাখা, আর খাছ লোকদের নামায হলো আল্লাহ্ পাক ব্যতীত সকল বস্ত্ত থেকে বিমুখ হওয়া এবং আল্লাহ্র মুশাহাদার সমুদ্রে ডুবে যাওয়া। তরীকতের পথে চলমান শরীয়তের ময়দানের যারা সাওয়ার, তারা নামাযের মাধ্যমে এত উন্নতি লাভ করে যা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়। বরং সুলুকের লাইনের মুবতাদী তথা আরম্ভকারীদের যেরূপ যিকির ও ফিকিরের দ্বারা উন্নতি লাভ হয়, তদ্রূপ মুনতাহীদের উন্নতি নামাযের সঙ্গেই সম্পর্কিত। কামেল সালিকদের ইবাদতের সর্বশেষ স্তর হলো- অনুনয় বিনয়ের সহিত নামায আদায় করা।

নামাযে অলসতাকারী

আল্লামা ইবনুল কাইয়ূম জাওযী (রাহ.) নামাযীদের পাঁচটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন :

ক. মুতাহাবিঃ অর্থাৎ যে নামাযে অলসতা করে। মন চায় তো নামায পড়ে, না হয় নামায পড়ে না। কখনো জামাতের সাথে পড়ে আবার কখনো জামাত ছাড়া পড়ে। এদিক দিয়ে সূর্যোদয় হচ্ছে, আর ওদিক দিয়ে সে সেজদায় আছড়ে পড়ছে- এমন নামাযীর ঠিকানা হবে জাহান্নাম। এমন নামাযীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেন- ধ্বংস নামাযীদের জন্য। সে নামাযী কারা? এ সম্পর্কে আল্লাহ্পাক পরবর্তী আয়াতে বলেন- ‘‘যারা নামাযে অলসতা করে।’’

এছাড়া হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, জাহান্নামের একটি কুপের নাম ওয়াইল, যার মধ্যে নামাযে অলসতাকারীদের নিক্ষেপ করা হবে। এতো হলো নামাযে অলসতাকারীদের শাস্তি, আর বেনামাযীদের জন্য রয়েছে আরো কঠিন শাস্তি।

খ. মুয়াকিবঃ মুয়াকিব ঐ নামাযীদেরকে বলা হয় যারা নামায গুরুত্বের সঙ্গেই পড়ে, কিন্তু তাকবীরে তাহরীমা থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত ডাক্তার তার ক্লিনিক থেকে বের হয় না, জমিদার তার জমীন থেকে বের হয় না, দোকানদার তার দোকান থেকে বের হয় না। তারা এমন নামাযী যে, তাদের সারা নামাযে একবারও আল্লাহ্র কথা স্মরণ হয় না। এ নামাযীরা নামাযের বরকতও নামাযের প্রতি গুরুত্বারোপের কারণে রক্ষা পেয়ে যাবে ঠিকই, তবে পরবর্তীতে ধমক খেতে হবে এবং সামান্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। কারণ তারা বাদশার দরবারে আসার আদব জানে না। আপনি একটু চিন্তা করুন, আমি আপনার সঙ্গে কথা বলবো আর আপনি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকবেন- আমি মানুষ হয়ে এটা সহ্য করতে পারি না। তাহলে আল্লাহ্পাক কীভাবে সহ্য করবেন?

গ. তৃতীয় স্তরের নামাযী হলো, যারা নামাযের অবস্থায় কখনো দোকানে কখনো আল্লাহ্র সামনে থাকে। এমন নামাযীদের সঙ্গে আল্লাহপাক ক্ষমার আচরণ করবেন। তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। আল্লাহ্ পাক বলবেন, তারা তো নামায ঠিক করে পড়ার জন্য চেষ্টা করেছে।

প্রিয় বন্ধুগণ! কতো আফসোসের বিষয়- আল্লাহ্ বলার সময়ও আল্লাহ্ আমাদের স্মরণে আসে না। কী মারাত্মক অবহেলা! পয়সার নাম মুখে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরসার আকৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অথচ নামাযে আল্লাহ পাকের নাম মুখে নেয়ার সময় আল্লাহ্পাক খেয়ালে আসে না। কত বড় আফসোসের কথা।

ঘ. চতুর্থ স্তর হলো- মুসল্লী আল্লাহু আকবর বলে সৃষ্টিজীব থেকে পৃথক হয়ে যায়। তাদের ব্যাপারেই আল্লাহ্পাক বলেছেন- ‘‘খুশু খুযুর সহিত নামায আদায়কারী মুমিনগণ সফলকাম।’’ এরূপ নামায যাদের অর্জন হবে তাদের যিন্দেগী পরিবর্তন হয়ে যাবে।

হযরত আলী (রা.) এর পায়ের গোড়ালীতে তীরবিদ্ধ হওয়ার পর বললেন, আমি যখন নামাযে পড়তে থাকি তখন এটা টেনে বের করবে। অত:পর তিনি যখন নামাযে দাড়ালেন, তখন পায়ের গোড়ালী থেকে তীর টেনে বের করা হয়। কিন্তু তিনি টেরও পেলেন না।

হযরত যুবায়ের (রা.) এর পায়ে ফোঁড়া হয়। ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। ডাক্তার তাকে লক্ষ্য করে বললেন, শরাব পান করিয়ে পা কাটা হলে ব্যথা অনুভব হবে না। তিনি জবাবে বললেন, ঈমান আর শরাব একত্র হতে পারে না। তোমাদের যদি পা কাটতেই হয়, তাহলে আমি নামায শুরু করলে কেটে ফেলো। অত:পর তিনি পা ছাড়িয়ে নামায আরম্ভ করলেন, এদিকে ডাক্তার তার পা কেটে ফেললো। কিন্তু আশ্চর্য, পায়ে সামান্য ঝাঁকুনিও আসেনি। নামায শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, পা কাটা হয়েছে? বলা হলো, হ্যাঁ কাটা হয়েছে। অত:পর তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থেকো, আমার এ পা কখনো তোমার নাফরমানীর পথে চলেনি।

ঙ. মুকাররাবীনদের নামাযঃ এ নামাযে যখন নামাযী আল্লাহু আকবার বলে, তখন নামায তার চক্ষু শীতল করে। নামায ব্যতীত সে শান্তি পায় না।

খুন্ড খুযু সম্পর্কে সূফীগণের বক্তব্য

খুশু খুযুর অর্থ: খুশু-খুযু সম্পর্কে সূফীগণের বিভিন্ন উক্তি পাওয়া যায়, তন্মধ্যে কিছু উক্তি তুলে ধরা হলো :

* নামায সম্পর্কে দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয় : এক, খুশু দুই. খুযু। খুশু হলো বাহ্যিক নীরবতা, আর খুযু হলো আন্তরিক নিরবতা। (মাজালিসে মুফতী আযম)।

* অসংখ্য সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে বর্ণিত আছে যে, খুশুর অর্থ হলো নীরবতা অর্থাৎ নামায অত্যন্ত স্থিরতার সাথে পড়া। একাধিক হাদীসে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নামায এমন ধ্যান-খেয়ালের সাথে পড়বে যেন এটা তোমার জীবনের শেষ নামায। এবং ঐ ব্যক্তির ন্যায় নামায পড় যে ধারণা করে যে, এই নামাযের পর আমার নামায পড়ার সুযোগ আসবে না (জামেউস সাগীর)।

* হযরত আলী (রা.) এর কাছে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন-খুশু কী জিনিস? জবাবে তিনি বললেন, খুশু দিলের বিষয়, অর্থাৎ গভীরভাবে নামাযে মনোনিবেশ করা এবং অন্যদিকে খেয়াল না করা।

* হযরত ইবনে আববাস (রা.) বলেন, খুশু ওয়ালা সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ্কে ভয় করে এবং স্থিরতার সহিত নামায আদায় করে। (ফাযায়েলে নামায)

* হযরত হুযায়ফা (রা.) বলেন, দুনিয়া থেকে সর্বপ্রথম নামাযের খুশু উঠিয়ে নেয় হবে।

* হযরত কাতাদা (রা.) বলেন, দৃষ্টি ও আওয়াজ নিচু করার নামই হলো খুশু।

* হযরত আতা (রাহ.) বলেন, শরীরের কোনো অঙ্গ দ্বারা খেলাধূলা না করাই হলো খুশু। -মাআরেফুল কুরআন।

* হযরত হাসান বসরী (রাহ.) ‘খাশিউন’এর অর্থ লিখেছেন-ভীত।

* জনৈক বুযুর্গ লিখেছেন, নামায আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পড়ার নামই খুশু।

* খুশু অর্থ হচ্ছে- ধ্যান খেয়াল অন্য জিনিস থেকে সরিয়ে নামাযে লাগানো এবং কেরাত ও তাসবীহের প্রতি খেয়াল করা।

* হযরত আবু দারদা (রা.) বলেন, যখন নামাযীর মধ্যে এ চারটি বিষয় পাওয়া যাবে তখন তাকে খুশু ওয়ালা বলা হবে: ১. আল্লাহ্র দরবারকে বড় জ্ঞান করা। ২. এখলাছের সহিত কেরাত পড়া। ৩. পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা। ৪. পূর্ণ মনোযোগের সহিত নামায আদায় করা।

* হযরত ইমাম গায্যালী (রাহ.) বলেন, খুশু-খুযু হলো নামাযের রূহ বা আত্মা। নামায ততটুকুই লেখা হয় যতটুকুতে ক্বলব হাজির থাকে। পক্ষান্তরে যে নামাযে তাকবীরে তাহরীমার সময় ব্যতীত ক্বলব হাজির থাকে না, তাতে সে অনুপাতেই আত্মা থাকে। এরূপ নামাযের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে এক শ্বাসের মুসলমান।

হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহ.) এর বাণীঃ

হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ্ আশরাফ আলী থানভী (রাহ.) বলেন, খুশুর হাকীকত হলো, কোন নেক কাজে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্তরে গায়রুল্লাহ্র হাযির না থাকা এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে মন কোন দিকে না নেয়া।

(শরীয়ত ও তাসাউফ)

* শাববীর আহমদ উসমানী (রাহ.) বলেন, খুশু বলা হয়, ভীত হয়ে কারো সামনে  নীরব ও স্থির হয়ে থাকা। এ জন্যই ইবনে আববাস (রাহ.) খাশিউন এর তাফসীর করেছেন খা-ইফুন, সা-কিনুন। অর্থ-ভীত ও স্থির।

-তাফসীরে ইসমানী।

তিনি আরো বলেন, আসল খুশু হলো কলবের খুশু, আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের খুশু ক্বলবের অধীনে। সুতরাং নামাযে অন্তর ভীত, স্থির ও নমনীয় হবে, তখন খেয়াল এদিক সেদিক যাবে না। মন বসে যাবে। ভয়-ভীতির প্রভাব অঙ্গ প্রতঙ্গের উপর প্রকাশ পাবে। যেমন বাহু-মাথা ঝুকানো, দৃষ্টি নিম্নগামী হওয়া, হাত বেঁধে আদবের সহিত দাঁড়িয়ে থাকা, এদিক সেদিক না তাকানো, কাপড় এ দাড়ি নিয়ে খেলা-ধুলা না করা, আঙ্গুল না ফুটানো। এ ধরণের কাজ সবই খুশুর অন্তর্ভূক্ত। হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের ও হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, সাহাবায়ে কেরাম নামাযে এমনভাবে স্থির থাকতেন, যেন প্রাণহীন কাঠ। এটাই হলো নামাযের খুশু।

* হযরত আব্দুল গণী ফুলপুরী (রাহ.) বলেন, খুশু বলা হয়- বান্দার মনে আল্লাহ্ পাকের বড়ত্বের খেয়াল এত বেশি মাত্রায় থাকবে যে, সে দুর্বল হয়ে যাবে। নামাযে দাঁড়ানো ও রুকু-সিজদা করা মানে নামাযী ব্যক্তি আল্লাহ্র বড়ত্বের সামনে অত্যন্ত দুর্বল। এ অবস্থা কেবল সে সকল লোকদের ভাগ্যে জোটে, যারা অনর্থক কথা-বার্তা থেকে বেঁচে থাকে এবং সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহ্র নাফরমানী থেকে বাঁচিয়ে রাখে। যে ব্যক্তি নামাযের বাইরে নিজের দাসত্ব ও গোলামীর হক আদায় করে, সে নামাযের ভেতরেও দাসত্বের মুকুট মাথায় রাখে। পাঞ্জেগানা নামাযের আগে পরেও বান্দা গোলাম থাকে। নামায আদায়ের পর বান্দা আযাদ বা মুক্ত নয় যে, মন যা চায় তাই করবে। মিথ্যা বলা, পর নারীর প্রতি কুদৃষ্টি, আল্লাহ্র স্মরণ থেকে গাফেল হওয়া, হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করে উপার্জন করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। বান্দা তো সবসময়ই বান্দা। গোলাম সর্বদাই গোলাম। তার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসই গোলাম।      (মারেফাতে ইলাহিয়্যা)।

* হযরত থানবী (রাহ.) বলেন, খুশুর অর্থ হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ক্বলব ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে স্থির রাখা, নাড়াচাড়া না করা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থিরতা হলো, শরীয়তে যে নাড়াচড়া করার হুকুম নেই তা না করা। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত হাত-পা নাড়াচাড়া না করা, এদিক সেদিক মাথা না ঘুরিয়ে দেখা, মাথা উপরের দিকে না উঠানো, চুল ও কাপড় বার বার না গুছানো, বিনা প্রয়োজনে না চুলকানো এবং কাশি না দেয়া ইত্যাদি।

আর ক্বলবের স্থিরতা হলো নিজ ইচ্ছায় কোনো বিষয়ে চিন্তা না করা। অনিচ্ছায় যদি কোন খেয়াল এমনিতেই এসে যায়, সেটা খুশুর পরিপন্থি নয়। মানুষ মনে করে, খুশুর অর্থ হলো নামাযে অন্য কোন কিছুর খেয়াল না আসা। এটা ভুল ধারণা। উল্লিখিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, খুশু মূলত ইচ্ছাধীন কাজ, আর প্রত্যেক ব্যক্তিই এটা অর্জন করতে সক্ষম। তবে গভীর মনোনিবেশ জরুরী।

কুরআনের আলোকে খুশু

আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন

১. আল্লাহ্র দরবারে বিনয়ের সহিত দাড়াও।

(সূরা বাকারা আয়াত : ১৯৮)

উল্লেখিত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে :

* ‘কানিতীন’ শব্দের অর্থ হলো, নীরবতা অবলম্বনকারী। ইসলামের প্রথম যুগে নামাযের ভিতর কথা বলা, সালামের জবাব দেয়া ইত্যাদি কাজ জায়েয ছিলো। অত:পর যখন উল্লেখিত আয়াত নাযিল হয়, তখন নামাযের ভিতর কথা বলা না জায়েয হয়ে যায়।

* হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, প্রিয়নবী (সা.) নামাযে মশগুল থাকলেও আমি এসে সালাম দিতাম, তিনি আমার সালামের জবাব দিতেন। একদা নবীজির কাছে হাজির হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি নামায পড়ছেন। আমি আমার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী তাঁকে সালাম করলাম, কিন্তু তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। ফলে আমি খুব চিন্তিত হলাম যে, হয়তো আমার অপরাধ সম্পর্কে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নবীজির প্রতি কোন কিছু নাযিল হয়েছে। নতুন পুরাতন অনেক চিন্তা-ভাবনা আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি পুরাতন বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম যে, হয়তো আমার অমুক কাজের উপর নবী অসন্তুষ্ট হয়েছেন। অবশেষে নবীজি (সা.)  নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে বললেন, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন তাঁর বিধানে যে কোন ধরণের পরিবর্তন আনতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা নামাযে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তারপর ‘‘ওয়াকূমূ লিল্লাহি ক্বানিতীন’’ এ আয়াত পড়ে শুনালেন। অত:পর বললেন, নামাযে আল্লাহ্র যিকির ও হামদ-ছানা ব্যতীত সবই নাজায়েয।

* মুজাহিদ (রাহ.) বলেন, ‘‘ওয়াকূমু লিল্লাহি ক্বানিতীন’’ এ আয়াতের মধ্যে রুকু, খুশু, লম্বা কেরাত পড়া, দৃষ্টি নিম্নগামী রাখা, বাহু ঝুকিয়ে রাখা, আল্লাহকে ভয় করা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভূক্ত। হযরত সাহাবায়ে কেরাম নামাযে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকানো, কংকর সরানো ইত্যাদি কাজ করা দূরের কথা, তারা তো ভয়ে কাতর হয়ে যেতেন। তবে হ্যাঁ, ভুলে কোন কিছু করে ফেলা ভিন্ন কথা।

আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেন-

২. কিয়ামতের দিন সকল মুমিনগণ সফলকাম হবে, যারা খুশু তথা বিনয়ের সাথে নামায আদায়কারী। সূরা মুমিনুন ১-২।

আয়াতের পটভূমি

উল্লেখিত আয়াত নাযিল হওয়ার পর হযরত রাসূলে করীম (সা.) মাথা নিচের দিকে ঝুকিয়ে নিলেন। অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা.) আকাশের দিকে তাকিয়ে এদিক সেদিক মাথা ঘুরাতেন; তখন এই আয়াত নাযিল হয়। বগভী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, সাহাবায়ে কেরাম নামাযের ভিতরে আকাশের দিতে তাকিয়ে থাকতেন। তারপর যখন এ আয়াত নাযিল হল, তখন তাঁরা মাথা নিম্নগামী করে নিলেন।

এ সূরা হিজরতের পূর্বে মক্কা মুকাররমায় নাযিল হয়েছে। ইমাম আহমদ, ইমাম নাসায়ী ও ইমাম তিরমিযী (রাহ.) এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসের সর্ব শেষ বাক্য হলো- ওহী নাযিল হওয়ার পর হযরত রাসূলে করীম (সা.) মাথা উঠিয়ে বললেন, আমার উপর এখন দশটি আয়াত নাযিল হয়েছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতগুলোর প্রতি আমল করবে, আল্লাহ্পাক স্বয়ং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×