somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদে তিনি নতুন বই পড়বেন

২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাসপ্তমীর রাত। এখন রাত নয়টা ছাব্বিশ। সিলেট নগরীতে যারা বাস করেন তাদের জন্য এই সময়টাকে সন্ধ্যাও বলা যায়না। তারও আগ বলা যেতে পারে। গেল এক বছরের অভিজ্ঞতায় এরকমই লাগে। রাত একটায় অনেকদিন জিন্দাবাজার ও আম্বরখানায় যানজট দেখে অবাক হয়েছি। আর ঈদ পূজা পারবনের কথা তো আলাদা। এই সময় রাত সাড়ে তিনটায়ও যানজট পাওয়া যায়।
জানালার ফাঁক দিয়ে; চার মাসে উঠা ছয় তলা ভবনের চিপা দিয়ে পুব আকাশের দিকে তাকালাম। উত্তর পুব আকাশে একটি মাত্র তারা চোখে পড়ল। হয়তবা আরও আছে। আমি তারা নিয়ে এই মুহূর্তে চিন্তিত নই। পাশের একটি পূজা মণ্ডপ থেকে মিষ্টি সুর ভেসে আসছে। একটি জনপ্রিয় গান বাজছে। আমি আবার গানের পুরো কলি বলতে পারবোনা। গায়ক-গায়িকা এমন সুর ঢেলে দিয়েছেন অনেক শব্দ যন্ত্রের জাতায় পিষ্ট হয়ে গেছে। গানের কলিটি ছিল এরকম...... ঠাকুর জামাই এল বাড়িতে ও ননদি... আমার মন সেদিকে। মনের মধ্যে সুর লহরি বাজছে; ঠাকুরজামাই এল বাড়ীতে ও ননদি।
এমন সময় তরুনীটি আমার পাশে এসে দাঁড়াল। হাতে এক পিরিচ বরতী ফিরনি। আমি ফিরনির প্রতি মন দিতে পারিনা। এই তরুনী যখনি আমার পাশে এসে দাঁড়ায় তখনি আমি অন্য জগতে চলে যাই। তবে আমি কখনো তার কাছে ধরা দিইনা। এই তরুণী গত চার বছর ধরে আমার কাছে থাকে। সুখে কিংবা দুঃখে সব সময় কাছে পাই। আঠার মত লেগে আছে। কিন্তু ভাবখানা এমন যেন এক হাজার বছর ধরে আমাকে চেনে। আবার এই তরুনী আমার কাছে এসেছে। এইবার চারটি মিষ্টি হাতে। দুটো খেতেই হলো। কবুল শব্দটি বলার পর থেকে আমার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সে নিয়মিত নাক গলাচ্ছে। কখনো বুঝে আর কখনবা বেশি বুঝে। মাঝে মাঝে অবাক হই কবুল শব্দটির দাপট দেখে।
মণ্ডপ থেকে এবার ভেসে আসছে ড্রামের ধিরিম-ধিরিম সাউন্ড। কলি ক্ষীণ। আমার পা দুটি ডানে-বামে মুভ করছে। সম্ভবত গানটি আমার মস্তিস্কের কোথাও স্থান করে নিয়েছে। ডুয়েট গান। কলকাতার সিনেমার গান। বলছে, হৈ হৈ আমি শিলারে... সেক্সি শিলারে...
আমার কলিজার টুকরো ( তিন বছরে পা দেয়া শাদীদ ) তার তুলতুলে কোমর দুলিয়ে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। টিভিতে যখন গরম মাসাল্লা টাইপের গান শুনে তখনি সে নাচানাচি করে। কান্নাকাটিতে থাকলেও এক সেকেন্ডে মুডে ফিরে যায়। তার মধ্যে আমি অদবুত সব কাণ্ড কারখানা লক্ষ্য করি। সে কান্নাকাটি জুড়ে দিলে পৃথিবীর আর কেউ থামাতে পারেনা। আমি শুধু ব্যতিক্রম। তার কান্না থামানোর একটা রহস্য আছে। আচানক কিছু একটা দেখিয়ে অবাক হয়ে যাওয়া। এমন ভাব করা যেন এই জিনিস খুবই বিরল। ওয়ান সেকেন্ড পালসে থেমে যাবে। আমার এ রহস্য তার জন্মধাত্রী মা এখনো আয়ত্তে আনতে পারেননি। তিনি তাকে চটাতে যেন ভালবাসেন। মন্ত্রীর সামনে বসে আছি তো ছেলের ফোন। ওপ্রান্ত থেকে সে বলছে ‘ আব্বু আম্মু আমাকে মেরেছে’ আমি ফিসফিস করে বলছি কেন মেরেছে ‘ আমি ভাত খাইনি’। আচ্ছা তোমার আম্মুকে দাও আমি বকে দিচ্ছি। সে মোবাইল তার মাকে দিল। হ্যালো ...আমি মন্ত্রীর মিটিংয়ে। তার মধ্যে কোন রেসপন্স নেই। এটা তার কাছে ডাল ভাতের মত। শুরু থেকেই শুনে আসছে... অমুক মন্ত্রী, তমুক এমপি, উভ, সিংক, ভক্সপপ, মারামারি, সড়ক দুর্ঘটনা, মিছিল, সমাবেশ, মানব্বন্দন ইত্যাদি।
সে বলে যাচ্ছে... এক ঘণ্টা ধরে চেষ্টার পর গোসল করেছে, দুই ঘণ্টা ধরে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। এক মুঠ মুখে নেয় তো দেয় দৌড়। নিত্যদিনের শিবেরগীত আরকি। মহিলাদের এই একটি বড় সমস্যা। দশ মাস পেটে ধরতে কষ্ট হয়না। একটু দুস্টমিতে পাগল হয়ে যান। আবার শাদীদ যখন পড়ে ‘ মনারে মনা কোথায় যাস/ বিলের ধারে কাটব ঘাস/ ঘাস কি হবে/ পদ্য। তখন তার মা তাকে প্রশ্ন করবে মার জন্য কি কিনবে? সে বলবে রঙ্গিন শাড়ী। সেসময় তার মায়ের আনন্দের আর সীমা থাকে না। মুহূর্তে সব বিরক্তি উড়ে হাওয়া। অনাবিল সুখে আচ্চন্ন হয়ে যান তিনি। পরম মমতায় বুকে আগলে রাখেন। এই সুখ সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়।
উপরের পাঁচশ আটান্নটি শব্দ লিখেছি দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের ঈদুল আযহা ২০১২ সংখ্যার জন্য। হেডিং কি দেব ভাবছি। ভাবনায় এল হেডিং টা যদি ছেড়ে দেই পত্রিকার প্রধান বার্তা সম্পাদকের (কবি ইকবাল কাগজী) উপর তাহলে তিনি কি করবেন। আমার মন বলছে, তিনি প্রথমেই বলবেন, এটা পড়ার মত সময় নেই তার হাতে। তারপর পঙ্কজ দা আর সৌরভ দা’র কথায় রাজি হয়ে যদি পরেই ফেলেন; তবে তো রক্ষা নেই। ইতিমধ্যে তিনি ডিলিট দেয়া শিখে ফেলেছেন। তার সঠিক প্রয়োগ ঘটাবেন। সম্পাদকের কাছে হেরে গেলে কিছুক্ষন আবোলতাবোল বকবেন।
এই সিএনই সাহেবের প্রচণ্ড একটা গুন আছে। তিনি মনে করেন তিনি যা লিখেন বা বুঝেন তা পৃথিবীতে আর কেউ পারেনা। প্রিয় পাঠক আপনারা আমার কথায় হাসবেন না। হাসার কিছুনা। তবে তাঁর পারারই কথা। কারণ এই ঈদে যখন সবাই কাপড় চোপড় কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকবেন তখন তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন মহা মূল্যবান বই কিনতে। ঈদের দিন সবাই নতুন জামা কাপড় পড়বে আর তিনি দুই কন্যা (ঈশা ও তিশা) কে নিয়ে নতুন বই পড়বেন। একজন পণ্ডিত ব্যাক্তির মধ্যে যে সব গুন পাওয়া যায় তাঁর নাইনটি নাইন পারসেন্টই আছে উনার কাছে।
আর এ কারনে আমি নিজেও তার পাণ্ডিত্যের একনিষ্ঠ ভক্ত। শুধু মনে করি তাঁর একটু ডিজিটাইজ হওয়া প্রয়োজন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×