১.
ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ স্কুলের সামনের রাস্তাটি আজ তুলনামূলক ফাঁকা। সাপ্তহিক ছুটির দিন তার উপর শীতের রাত। দোকানের ডিসপ্লে গ্লাসের ভেতর দিয়ে মানিক বাইরে তাকিয়ে ছিল। আজ তার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন ।
এতদিন ধরে ঢাকায় আছে কিন্তু তার স্বপ্নের নারীটিকে আজকের আগ পর্যন্ত সে কোথাও দেখেনি। তার স্বপ্নের নারী দোকানের কোন কাস্টমার নয় । “বাংলার নারী” দোকানে কত বিখ্যাত নায়িকা মডেল এল গেল কিন্তু কাউকে তার কখনো ভাল লাগেনি। কিন্তু আজ তার স্বপের নারীমুখটি দোকানে এসেছে.. না সে কোন মডেল, নায়িকা কিংবা রক্তমাংসের কাস্টমার নয়..সে হচ্ছে একটি নারীমূর্তি..(ডিসপ্লে ডল) শাড়ী পরিয়ে ডিসপ্লে করার জন্যই এ মূর্তির আগমন।
মূর্তিটি নিয়ে যখন ওদের কর্মচারী আলম যখন দোকানে ঢুকল তখন চোখ পড়তেই মানিক চমকে ওঠে! আরে এ ধরণের চেহারার একটি মেয়েই তো সে এতদিন খুঁজছে.. সে অবাক হয়ে চেয়েছিল... কর্মচারী আলম বলে ‘কী দেখেন স্যার ! এর চাইতে সুন্দর আর পাইলাম না। বড় স্যারে যে কী কয়?”
ঃ না কী বলবে ! মূর্তিটি তো খুবই সুন্দর! এটা আমাদের দোকানের সেরা মূর্তি
ঃ স্যারে যে কী কন! এর চাইতে কত সুন্দর মূর্তি আমগো দোকানে আছে.. ঐ যে পশ্চিমে দিক থেকে দ্বিতীয় মূর্তিটা দেখেন স্যার.. আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় শাড়ী পইরা নায়িকা মৌসুমি দাঁড়ায়া আছে..
ঃ তোমারে বলছে.. নায়িকা মৌসুমি তো আমাদের দোকানে আসছিল.. সে রকম হলে তো তিনি তো মূর্তিটা চেয়ে নিয়ে যেত..
ঃ তাইলে স্যার বলতেছেন মূর্তি ঠিকই আছে.. বড় স্যারে কিছু বলবে না..
ঃ তুমি নিশ্চিন্ত থেকো। কিছু বললে আমি সামলাব..তুমি এখন এক কাজ কর.. তোমার নায়িকা মৌসুমির শাড়ীটা খুলে একে পরিয়ে দাও!
ঃ আচ্ছা ঠিক আছে স্যার!
আলম শাড়ী পরাতে থাকে। মানিক মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে.. আহা এরকম একটি মেয়েই তো সে খুঁজছে! কতদিন কতদিন পর সে তার চাঁদমুখ দেখল.. যদিও মূর্তি তাতে কোন সমস্যা নাই..। এখন দোকানে বাইরে সে এধরণের মেয়েই খুঁজতে থাকবে.. দেখতে দেখতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সে নিয়ে নেয়.. এরকম চেহারার মেয়ে না পেলে সে বিয়েই করবে না..মনে মনে সে চিন্তা করে “পাক্কা”।
হঠাৎ আলম বলে ওঠে “স্যার শাড়ী পরানোর পর ভালই লাগতেছে..তবু স্যার এইটা আমগো দোকানের সবচে” সুন্দর থুক্কু সুন্দরী না!’
ঃ তাই.. না.. আমার কাছে এটাই সবচে’ সুন্দর
ঃ স্যার একেকজনের এক এক রুচি.. এই যে ধরেন আমার বউ .. ওরে আমার আব্বা-অম্মার কাছে এমন সুন্দর লাগছে আমারে ফোন কইরা কয় আলম তোর লাইগা নায়িকা ঠিক করছি.. আমি মনে করলাম নায়িকা যখন কইছে তখন মোটামুটি সুন্দর তো হইবই..মাইয়ার বাড়ীত যাইয়া দেখি কই নায়িকা ? এ যে দেহি এসটা !
ঃ এসটা কী ?
ঃ বুঝলেন না স্যার বাংলা সিনেমার এসটা আছে না এসটা ! ওইযে নায়িকার পিছে নাচানাচি করে..
ঃ ও আচ্ছা এক্সট্রা .. হা হা তারপর কী হল ?
ঃ তারপর আর কী.. মা-বাবার মনে তো আর দু:খ দিতে পারি না.. আর আমার চেহারাও তো সালমান শাহ্ ’র মতো না.. এসটা ছাড়া আমার ভাগ্যে তো আর মৌসুমি থাকবো না!
ঃ তাহলে তুমি বলছ তোমার চেহারা সালমান শাহ্’র মতো হলেই তুমি মৌসুমিকে বিয়ে করতে পারতে ?
ঃ হ তাইতো.. ধরেন আমার চেহারা যদি সালমান শাহ’র মতো হইত তাইলে নায়িকা মৌসুমি যেইদিন আমগো দোকানে আইছিল হেইদিনই আমারে দেইখ্যা মৌসুমি আমার হাত ধইরা কইত “ আলম তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। চল আমরা পালিয়ে যাই!”
ঃ তখন তুমি কী করতা ? সেদিনের বহু আগেই তো তুমি বিয়ে করেছ..
ঃ স্যারে যে কী কন! একটা এসটার লাইগা নায়িকা মৌসুমিরে ছাইড়া দিমু ? মৌসুমি আমারে যেখানে নিতে চাইত আমি সেখানেই যাইতাম.. পরের দিন পত্রিকায় খবর আইত “সামান্য দোকানের কর্মচারী কে নিয়ে নায়িকা মৌসুমি উধাও!”
আলমের কথা শুনে মানিকের হাসতে হাসতে প্রায় পড়ে যাবার অবস্থা !
এভাবে নানা রকম হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়েই সে দিনের মত দোকান বন্ধ করার সময় হয়ে যায়..
২.
আজকের রাতটি অন্যরাতগুলোর মত নয়। আজ রাতে কল্পনা করার মত একটি মেয়ে তার মস্তিষ্কে আছে। আহা ! কী তার রূপ! কী সুন্দর মুখশ্রী ! মানিক ভেবে পায় না আজকাল মানুষ ঐশ্বরিয়া রায় কে নিয়ে এত মাতামাতি করে কেন? ওর কাছে মোটেও ভাল লাগে না।
অমিতাভ বচ্চন তো তারে বিধাতার নিখুঁত সৃষ্টি বলেছে। ওর কাছে মনে হয় ব্যাটা নির্ঘাত বুড়া বয়সে প্রেমে পড়েছে... নিজে তো আর বিয়ে করতে পারবে না তাই ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে..
এখন অবশ্য এসব ভাবার কোন মানে হয় না। এখন তার হৃদয়ের রাণী নারী মূর্তিটি মানে ডিসপ্লে ডলটি কে নিয়ে ভাবাই ভাল। এভাবে নারী মূর্তি বার বার বলতে ভাল লাগছে না... ঐ মূর্তিটার একটা নাম দেয়া দরকার...আলমের মৌসুমি ডলটার মতন.. বাংলাদেশের কারো নামে দেয়া যাবে না... তাহলে কী নাম দেয়া যায়.. কী নাম দেয়া যায়.. হুঁ “ডায়ানা” দিলেই হয়। প্রিন্সেস ডায়ানার নামে দেয়াই ভাল। প্রিন্সেস ডায়ানাকে তার ভালই লাগত..ঠিক আছে তাহলে মূর্তি বা ডলটির নাম দেয়া হল “ডায়ানা” সে মনে মনে ঠিক করে “পাক্কা”
ওরা ছোটবেলায় বন্ধুরা কেউ পাক্কা বলার অর্থ ছিল কথাটি রাখতেই হবে।
এভাবে আর একটি জিনিস গতকাল সে পাক্কা করেছে আর তা হল ঐ মুর্তিটার মতো চেহারার মেয়ে না পেলে সে বিয়েই করবে না। হ্যাঁ এরকম চেহারার মেয়ে না পেলে বিয়ে করা ঠিক হবে না । কারণ অন্যকাউকে বিয়ে করলে তার চেহারায় শুধু ডায়ানা ডলের মুখছবি ভাসতে থাকবে আর এই ধরণের ভাবনা নিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যাবে না। এভাবে সে সাতপাঁচ ভাবতে থাকে...একটা জিনিস নিশ্চিত সে যে পুরোপুরি একটা প্রেমে পড়েছে জীবনে প্রথম বারের মত তাতে কোন সন্দেহ নেই।
নিঃসন্দেহ নিশ্চিন্ত হয়ে সে ঘুমের গভীরে তলিয়ে যায়... ... (চলবে)