somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারের যাত্রী

০৩ রা মে, ২০১০ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুহিন তুই বোস, তোর ট্রেন তিন ঘন্টা পর আসবে- আমি আসছি।'
আসলাম সেই যে উধাও হল এখন র্পযন্ত কোন খবর নেই।

তুহিনের মেজাজ ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই ভুতূড়ে স্টশেনে ট্ট্রেনের জন্যে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে। কয়েক দিন ধরে এমনিতেই তার দম ফেলার সময় নেই। তারপরও আসলামের বোনের বিয়েতে এক দিনের ছুটি নিয়ে এই মফস্বলে আসতে হয়েছে। আজই ঢাকা ফিরে যেতে হবে।

এমনিতেই স্টেশনে তেমন লোকজন নেই তারপর মাথার উপরে টিমটিম করে যে স্বল্প পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে তাতে করে রাতের এই অন্ধকার তেমন দূর হচ্ছে না।

সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যপার হচ্ছে স্টেশনের বেঞ্চে তার পাশে বাইশ-তেইশ বছরের এক মেয়ে বসে রয়েছে। সম্ভবত এই ট্রেনেরই যাত্রী হবে। প্রথমে তুহনি ভূত ভেবে ভয় পেয়েছিল। নাহ্ ভূতের পা উল্টা হয়। এর পা ঠিকই আছে।

ভয়ে ভয়ে তুহিন জিজ্ঞেস করে, ‌আপনি কি ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করছেন? ট্ট্রেন তিন ঘন্টা লেট। আপনি একা আপনার সাথে কি আর কেউ নেই।

আপনার কোন অসুবিধা আছে। আর একা কই, আপনে আছেন না।
তুহনি কিছুই বুঝতে পারে না। এই মেয়ের সমস্যা কি।

কি ব্যপার আপনে এই ভাবে তাকাই আছেন কেন? কোন সময় মেয়ে মানুষ দেখেন নাই।
আপনি এ রকম বাজে ভাবে কথা বলছনে কেন?-তুহিন অবাক হয়।

আমি বাজে মেয়ে, এই জন্যে বাজে ভাবে কথা বলছি।
তুহিন হতভম্ব। কোন কথা বলতে পারে না।

আপনে কি করেন? - মেয়েটি একটু পর জানতে চায়।
আমি সফটওয়্যার বিক্রি করি। আর আপনি কি করেন?

আমি আত্না বিক্রি করি।
বুঝলাম না।

বেশী বুইঝা লাভ নাই। আপনের ঐ জিনিস কি ওয়্যার বিক্রি কইরা প্রতিদিন কত পান?
বিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকার নীচে কোন সফটওয়্যার আমরা বানাই না।

মেয়েটির চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠে। জানেন আত্না বিক্রি কইরা প্রতিদিন আমি মাত্র ১০০-২০০ টাকা পাই।
আমি বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন?

আপনে ভদ্রলোক তো তাই বুঝতে পারছনে না। আপনার মত ভদ্রলোকরা প্রতিদিন আমার কাছে আসে, তারার নোংরা হাত আমার গায়ে রাখে তারপর ঘন্টা হিসাব কইরা তারা আমার আত্না কিননা নেয়।

হঠাৎ করে তুহিনের মনে হয় চারদিকে এতো খোলা বাতাস তারপরও সে ঠিক মতো নি:শ্বাস নিতে পারছে না। অনেক্ষণ পর জিঞ্জেস করে-তুমি এরকম এক অন্ধকার জীবন কেন বেছে নিলে?

মেয়েটির মুখে বিষন্ন হাসি দেখা দেয়। কেউ কি আর ইচ্ছা কইরা এই জীবন বাইছা নেয়। সৃষ্টিকর্তা আমার ভাগ্যে এইটা রাখছেন। প্রতদিনি সকালে যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখি তখন খুব লজ্জা হয়। নিজেকে ঘৃণা করতে ইচ্ছা করে। তারপর আবার সব কিছু ভুইলা যাইতে হয়।
দুনিয়াতে খাওয়ার কষ্ট সবচাইতে বড় কষ্ট। এর জন্যেই আপনে সফটওয়্যার বেচেন, আর আমি বেচি আত্না। দুইটাই ব্যবসা। পার্থক্য শুধু, একটা আলো আর একটা আঁধারের।

সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করছ কেন? তিনি তো কারো অমঙ্গল চান না।
শুনছি পরকালে দোজখে একটা লোকের বার বার মৃত্যু ঘটব, তারপর তারে বার বার জীবিত কইরা শাস্তি দেয়া হইব। আর এইখানে প্রতদিনি আমার আত্নার মৃত্যু ঘটে। এইটা সৃষ্টিকর্তার কেমন বিচার।

তুহিন কোন কথা বলতে পারে না। নিজের ভেতরে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব কর। এটা কি এই মেয়ের জন্য? সে জানে না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুহনি বলে- আমি যদি তোমাকে ঢাকা নিয়ে যেতে চাই তবে কি তুমি আমার সাথে যাবে? অন্তত চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি, নতুন ভাবে আবার সব কিছু শুরু করা যায় কিনা।

ঢাকা তো আমি এই ট্রেনেই আপনার সাথে যাচ্ছি, কিন্তু তারপর আমি যাব আমার রাস্তায় আর আপনি আপনার পথে।
দেখ তুমি চাইলে আমি ঢাকাতে তোমার জন্যে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

উপরে তাকায় দেখেন ভোর হইয়া আসছে। ভোরের আলোয় রাতের অন্ধকারের কোন কথা আপনার মনে থাকব না। কারো থাকে না। মেয়েটির মুখে চাপা হাসি ফুটে উঠ।

ভোররে আলো আঁধারের মাঝে তুহিনের মনে হয়, এ রকম র্স্বগীয় হাসি সে অনেক দিন দেখেনি।

(** একবার একজনের মন্তব্যে আমি খুব আহত হয়েছিলাম। উনার কথা ছিল সেক্স ইন্ডাস্ট্রি বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। এটাকে কখনই পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। সমাজে এর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। সুতরাং এটা বন্ধ করা নিয়ে অযথা লাফালাফি করার কোন দরকার নাই।

আমি উনাকে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম- ধরুন আপনার পরিবারের কেউ সেখানে রয়েছে তারপরও কি আপনি এই কথাই বলবেন। তিনি আরেকটু হলেই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তেন।

ফ্রান্সে বোরকা পড়লে ১০০০ ডলার জরিমানা। সম্প্রাত বেলজিয়ামেও রাস্তায় বোরকা পড়ে বের হবার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বোরকার পড়ার কারণে নাকি নারীদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। একজন মুসলিম মহিলা যদি তার ধর্মীয় আবেগ থেকে কোন শালীন পোষাক বেছে নেয় তাহলে সমস্যা কোথায়। এমনতো না যে সেখানে মহিলাদের জোর করে বোরকা পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। স্বোচ্ছায় তারা এটাকে বেছে নিয়েছেন। তাহলে স্বাধীনতা খর্বের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে। আর যারা এই আইনটি পাশ করেছেন তারা এটা করার আগে কতজন মুসলিম মহিলার মতামত নিয়েছেন?

হায় সভ্য দেশ! সভ্য দেশের আইন! বোরকা পড়লে নারীদের স্বাধীনতা, অধিকার খর্ব হয়। আর বিলিয়ন ডলারের সেক্স ইন্ডাস্ট্রি থাকলে কোন সমস্য নাই। এটাতে নারীদের অধিকার খর্ব হচ্ছে না।)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×