somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

**স্বপ্ন পূরনের মুহুর্ত কিংবা স্বপ্ন ভঙ্গের দিন**

০২ রা নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজ নিশার ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে।সারাদিন একটা অজানা আতঙ্ক যেন তাকে গ্রাস করে রেখেছে।তার মনের মাঝে শুধু একটাই চিন্তা ভার্সিটিতে যদি চান্স না পায় তাহলে সব কিছুই হয়ত ভেস্তে যাবে।কেননা এর উপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু।নিজের রাগ ক্ষোভ বা মান সম্মান এক কথায় সব কিছুই।কেন যেন নিজেকে আজ খুব বেশি অসহায় লাগতে থাকে নিশার।সারাক্ষনই তার মনে হচ্ছে হয়ত টিকবেনা।হয়ত পেছনের দিনগুলোতে কিছু মানুষের সাথে করা সব রকমের যুদ্ধ বিফলে যাবে।হয়ত কপালে কখনই ভালো কিছু জুটবেনা, হয়ত…..আরো অনেক কিছু…হয়ত কিছুই না…!!তাইতো সে দু দিন নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে সৃষ্টি কর্তার কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা করছিলো যেন চান্সটা পেয়ে যায়।

মফস্বলের মেয়েদের নাকি ম্যাট্রিক পর্যন্ত লেখা পড়া করাই যথেষ্ট।এরপর স্বামী সংসারে মন দেয়াটা তাদের জন্য অতি জরুরী হয়ে পড়ে।এটা নিশার মামা চাচা ফুফাদের কথা।আর এ কারনেই ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর পরই তারা উঠে পড়ে লেগে যান মেয়েকে সুযোগ্য পাত্রের হাতে পাত্রস্থ করার জন্য।ক’দিন পর পরই ওমুক জায়গা থেকে প্রস্তাব আসে তমুক জায়গা থেকে প্রস্তাব আসে।মেয়ে বড় হলে যা হয় আর কি…!!আর একটা প্রস্তাব আসা মাত্রই শুরু হয়ে যায় ছেলের গুনগান… ছেলে হেন করে তেন করে,ছেলে খুব ভালো কিংবা বড় ব্যবসা আছে বা ছেলে বিদেশে থাকে আরও কত কি!!

কিন্তু নিশার মা যেদিন প্রথম বিয়ের ব্যাপারে নিশার সাথে কথা বলতে আসে সেদিন সে খুব শক্ত করে মাকে জানিয়ে দিয়েছিলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত যেন আর কখনই বিয়ের ব্যাপারে কোন রকমের কথা বলতে না আসে।আর যদি আসে তাহলে ব্যাপারটা অনেক বেশি খারাপ হবে দুজনের জন্যই।সেদিনই তিনি নিশার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝে গিয়েছিলেন মেয়েটার মনের ভেতর কারও প্রতি যে কতটা ক্ষোভ জমে আছে। বা জীবনে প্রতিষ্ঠা পাবার কি এক আকাংখার অগ্নিশিখা প্রস্ফুটিত হচ্ছে।বুঝতে পেরে তিনি নিজেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন একটা পর্যায়ের আগ পর্যন্ত মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দেবেননা।তাই তো এরপর থেকে যখনই কোন প্রস্তাব আসে তখন তিনি কি করে যেন চাচাদের ম্যানেজ করে ফেলেন।নিশা নিজেও জানেনা তার মা কিভাবে সব থামিয়ে দেন। তবে সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারে এর জন্য যে মাকে চাচাদের সাথে কতটা যুদ্ধ করতে হয়,আর এই কারনে চাচারাও যে মায়ের সাথে কতটা রাগারাগি করে বা কেমন আচরন করে সবই বুঝতে পারে সে। এটাও ভালো করে বুঝতে পারে যে একটা সময় পর সবই থেমে যাবে ঠিক হয়ে যাবে যত মান অভিমান।সমস্ত রাগের অবসান হয়ে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।দিনগুলো আবারও ঠিক তার নিয়মেই চলে যেতে থাকবে।এতে কারও কিছুই করার নেই।কিছু পেতে হলে তো কিছুটা ব্যাপার সহ্য করতেই হবে।তাই তো মুখ বুজে সব নীরবে সয়ে যায় তারা।

এভাবেই দিন বদলের সাথে সাথে নিশার এইচ এস সি পরীক্ষার সময়ও ঘনিয়ে আসতে থাকে।অনেক ধকলের মধ্য দিয়েই একসময় সে পরীক্ষাটা দেয়।এরপর যেন তার চাচারা আরও বেশি অস্থির হয়ে যান।তাদের ধারনা বাপ মরা মেয়েটা আর পড়ালেখা করে কি করবে এরচেয়ে বরং বিয়ে হয়ে গেলেই তাদের ঝামেলা কমে যাবে।কিংবা কোন উটকো বোঝা আর বইতে হবে না !!তাদের প্রতিটা কথায় বা আচার আচরনে সারাটিক্ষন এমনটাই মনে হতে থাকে নিশার কাছে।বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁরা যেন নিশা আর তার মাকে পুষে পুষে করুনা করছেন।আগে যখন চাচীরা বা চাচারা ছোট কোন কারনেই মাকে কটূ কথা শুনিয়ে যেত তখন নিশা শুধু বোবার ভূমিকায় সেই কথা গুলো শুনেই যেত বা মাকে কিভাবে অপমানের পর অপমান করছে সেই দৃশ্যের দিকে অপলক ভাবে শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতো আর আড়ালে চোখের পানি ফেলতো।কারন এটা ছাড়া আর কিইবা করার আছে তার।

কিন্তু আজকাল যেন তাঁদের সেই কথা গুলো বা উদ্ভট আচরনগুলোকে আর সহ্যই করতে পারেনা নিশা।সহ্যের যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন নিশাও দুটা কথা শুনিয়ে দেয়।এরপর যা হবার তাই হয়…চাচা/চাচীদের হাতে তো বকা খেতেই হয় পরে আবার তার মাও এসে দুদন্ড শুনিয়ে দেয়।মায়ের একটাই কথা পরের ঘাড়ে থাকতে হলে দুটো কথা শুনতেই হবে,কি দরকার তাদের মুখের উপর কথা বলা?কিন্তু নিশা যেন দিন দিন আরও বেশি প্রতিবাদী হয়ে উঠে আর তাই আপদ বিদেয় করার জন্য তাঁরা যেন আরও বেশি করে উঠে পড়ে লেগে যান।

একদিন সকালে ঘুমাচ্ছিলো নিশা।বড় চাচা রূমে এসে তার মাথায় হাত দিয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেন।এরপর শুরু করে দেন তার লেকচার দেয়া।সে কি তার জ্ঞানী কথা বার্তা।একটা বয়স পর্যন্ত নাকি মেয়েদের ভালো ভালো প্রস্তাব আসে এরপর বয়স যত বাড়তে থাকে ভালো প্রস্তাবগুলো আসা ততোই কমে যেতে থাকে।কি হবে এত পড়া লেখা করে?মেয়েদের তো শেষমেষ ঐ বাসন কোসনই মাজতে হয়।যত বড় জ্ঞানী হোক না কেন ঐ চুলার কাছে তাকে যেতেই হবে।যেহেতু মেয়েদের শেষ ঠিকানা ঐ সংসারই সেহেতু ভালো কোন প্রস্তাব আসা মাত্রই রাজি হয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ…এরপরও আরও কি কি যেন বলছিলেন।কিন্তু ঘুম থেকে উঠে এসব আজগুবি টইপের লেকচার শুনে প্রচন্ড মাথা ধরে যায় তার।উনার আর কোন কথাই যেন নিশার কানে প্রবেশ করছিলোনা।প্রায় ১ ঘন্টা লেকচার দেয়া শেষ করে উনি শেষ কথায় নিশাকে জানালেন ‘কাল নাকি ছেলে দেখতে আসবে।ছেলের পছন্দ হলেই কাবিন করে ফেলবে।ছেলেরা খুব পয়সাওয়ালা।তাছাড়া ছেলে বিদেশে স্যাটেল।বিয়ের পর মেয়েকেও সেখানে নিয়ে যাবে।নিশাকে কালকের জন্য প্রস্তুত হতে বলে চলে যাচ্ছিলেন এই সময় নিশা খুব গম্ভীর হয়ে চাচাকে বলে

-আমি এখন বিয়ে করবোনা…।

নিশার এই কথা শুনে যেন চাচা অগ্নীমূর্তি ধারন করলেন।চিতকার দিয়ে বলে উঠলেন-তোদেরকে আর কতকাল পুষবো?বড় হয়েছিস ,বিয়ে হবে এটাই তো নিয়ম।নাকি আরও অনেক বছর চাচাদের ঘাড়ে পড়ে থাকার ইচ্ছা আছে?টানাটানির সংসারে আলগা খরচ করতে গিয়ে যে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি চোখে দেখিসনা?নাকি দেখেও না দেখার ভান করে লাট সাহেবের মত পড়ে থাকবি? কাল ছেলে তোকে দেখতে আসবে আর পছন্দ হলেই বিয়ে হবে।ব্যাস এটাই ফাইনাল কথা।আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা’বলেই হন হন করে তিনি রুম থেকে বের হয়ে যান।

এমন কথা যা আগে কখনও কেও বলেনি কিন্তু উনাদের আচার আচরনে প্রকাশ পেলেও আজ মুখ ফুটে কিছু চরম সত্য কথা বলে দিয়েছেন।এত দিনের মনের ভেতর জমানো ক্ষোভগুলো যেন আজ গড় গড় করে মুখের ভাষায় প্রকাশ করেছেন।চাচার কাছ থেকে এমন কথা শুনে নিশা যেন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি।আঝোর ধারা যেন বইতে থাকে দু চোখ দিয়ে।তার কাছে মনে হতে থাকে এর চেয়ে যেন মরনও অনেক বেশি ভালো ছিলো।এই সংসারে নিজেকে খুব ছোট মনে হতে থাকে।কিছুক্ষন পর নিশা টের পায় তার মা দরজার পর্দা সরিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবারের মত আজও চোখের পানি ফেলে যেভাবে চুপিস্বারে এসেছিলেন ঠিক তেমনি কিছু না বলেই চলে গেলেন।

নিশার খুব ইচ্ছা হয় সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিতে।কেন তিনি বাবাকে এত তাড়াতাড়ি এই পৃথিবী থেকে নিয়ে গেলেন!কেন তিনি মাথায় উপর বটবৃক্ষের মত দাঁড়িয়ে ছায়া হয়ে থাকা সেই ছায়াটাকে অকালেই সরিয়ে নিলেন?কেন তিনি চাচাদের মুখাপেক্ষী করলেন?কেন তিনি মা টাকে এতটা সহজ সরল বানালেন?কেন আমরা আমাদের ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারিনা।কেন আমরা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারিনা?কেন আমাদের সবকিছুই নীরবে সহ্য করে যেতে হয়?মনের মাঝে হাজারও কেন এসে ভীর করে।কিন্তু এত প্রশ্নের পরও কোন প্রতিউত্তর আসেনা।নীরবে সব কিছু মেনে নিতে হয়।

অনেক কিছু চিন্তা ভাবনার পর নিশা তার চাচার কাছে গিয়ে খুব ঠান্ডা ভাষায় বলে-চাচা, এই বিয়েতে আমি অমত করবো না,কিন্তু তার আগে আমার একটা কথা রাখতে হবে?আগেও কোন কোন ব্যাপারে অনুনয় করে কিছু বললে কোন লাভ হত না তাই সে এবার একটু কঠিন করেই বলেছে।মনে মনে একটাই আশা হয়ত এবার কথাটা শুনবেন, রাখবেন…কিন্তু এবারেও ব্যর্থ হতে হয়েছে তাকে।কথা শোনার আগেই চাচাও খুব শান্ত কিন্তু কঠিন ভাশষায় বলেন তোর যা ইচ্ছা বল কিন্তু আগামী কাল তোর বিয়ে হচ্ছে এইটাই ফাইনাল।এবার কি বলবি বল!!তাঁর কথা শুনে একদম দমে যায় নিশা।‘না চাচা আমার আর কিছু বলার নাই’ বলে রুম থেকে বের হয়তে যায়।সে জানে তার চাচা কতটা এক রোখা মানুষ।

এই লোকটা বড় ভাইয়ের বউ মানে নিশার মাকেও মাঝে মাঝে সামান্য কোন কারনেই দু দন্ড কথা শুনিয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেনা।আর বাড়ির সবাই যেন এই মানুষটার কথায় উঠবস করে।সবাই যেন এর ভয়ে কুকড়ে থাকে।এই লোকটারে নিশা এক ফোটাও সহ্য করতে পারেনা।তাইতো এই মানুষটা যা কিছুই বলে মুখ বুজে সহ্য করে যায় আর মায়ের কাছে গিয়ে সব ঝারে।মাঝে মাঝে মায়ের জন্য নিশার খুব খারাপ লাগে।এই মানুষটা কখনই কোন রকমের শান্তি পেলোনা জীবনে। খুব ঘটা করে বিয়ে হলেও বাবাটা কেন জানি মা কে একদম সহ্য করতে পারতোনা।একটু উনিশ বিশ হলেই চিল্লাফাল্লা শুরু হয়ে যেত।মাঝে মাঝে মায়ের উপর হাতও তুলতো।কিন্তু তার বাবা তাকে অসম্ভব ভালোবাসত।পৃথিবীতে অদ্ভুত ধরনের মানুষ যদি থেকে থাকে তবে সেটা হচ্ছেন এই লোকটা।নিশা নিজের চোখে সবার অবহেলায় মায়ের কাটীয়ে দেয়া কষ্টের দিনগুলো পার করতে দেখেছে।এরপর নিশার যখন মাত্র ১০ বছর বয়স হুট করেই সামান্য বুকের ব্যথায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন।বাবার শত আঘাতের পরও, হোক সেটা মানসিক বা শারীরিক এরপরও যে বাবার প্রতি মায়ের কি পরিমান ভালোবাসা ছিলো সেটা বাবা চলে যাওয়ার পর নিশা খুব ভালো করেই টের পায়।আজও বাবার কথা মনে করে আড়ালে মা চোখের জলে বুক ভাসান।

নিশার বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ছোট্ট বয়সেই সে বুঝে যায় পৃথিবীর মানুষগুলো যে কতটা নিষ্ঠুর।নিশার মা কে তাঁর একমাত্র ভাই কতবার যে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মার একটাই কথা তিনি এই ঘর এই মাটি ছেড়ে কোথাও যাবেন না।এইখান থেকে চলে গেলে নাকি বাবার আত্মা কষ্ট পাবে আর তাঁকে বদ দোয়া দেবে।কে জানে এই সব আজগুবী কথা কই থেকে শুনেছেন তিনি?ভালোবাসাটা আসলেই অদ্ভুত।কেও কেও ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে সারাজীবন হাজারও আঘাত সহ্য করার পরও সেই মানুষটাকে অন্ধের মত ভালোবেসে যায়।আর কেও কেও পাগলের মত ভালোবাসলেও বিনিময়ে এক ফোটা ভালোবাসাও পায়না।আসলেই মানুষের জীবনটাই অনেক বেশিই অদ্ভুত।!!

মায়ের একটা ব্যাপার নিশার খুব ভালো লাগে সেটা হচ্ছে যত যাই হোক নিশা যখনই যে আবদার করে যে কোন ভাবেই হোক মা সেটা পূরন করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যেতেন।তবে বেশির ভাগই সেই ইচ্ছা আর পূরন হতনা।ঐসময় নিশা তার মায়ের চেহারার দিকে শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো।পরাজয়ের ফলে বা ব্যর্থ হওয়ায় কালো মেঘের যে ছায়া মায়ের চেহারায় ফুটে উঠত সেই সময় মায়ের মধ্যে কেমন যেন বোকা বোকা ভাব ফুটে উঠতো।আর এই চেহারাটাই নিশার অনেক ভালো লাগত কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভালো লাগে যখন তার মেয়ের কোন ইচ্ছা পূরন করার ফলে যে চেহারায় একটা খুশির আভা দেখা দিত সেই ক্ষন বা মুহুর্তটা।মাঝে মাঝে নিশার খুব ইচ্ছা হয় মাকে অনেকটা সময় জড়িয়ে ধরে থাকতে বা মায়ের কোলে মাথা রেখে বলতে ‘মা তোমাকে ভীষন ভালোবাসি’কিন্তু পাথরের মন নিয়ে থাকা কিছু মানুষের সাথে থেকে থেকে মা টাও কেমন জানি হয়ে গেছে।আগের মত আর সেই চঞ্চলতা নেই বা মায়ের সেই ভালোবাসাটাও যেন ফিকে মনে হয় নিশার কাছে।

হয়ত জীবনে কোন রকমের ভালোবাসা পায়নি বলেই ধীরে ধীরে মাও ভালোবাসা শূন্য হয়ে পরছে।কিংবা কম বয়সে ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে বলে সেই কষ্ট ঘোচানোর চেষ্টায় বা বাবার অভাব অনুভব করতে মেয়েকেই অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে।নাহ এই মানুষটাকে কখনই কষ্ট দেয়া যাবেনা,ভাবতে থাকে নিশা।নিজের সাথেই নিজে প্রতিজ্ঞা করে যত যাই হোক অন্তত তার কারনে মায়ের চোখের এক ফোটা পানিও সে ফেলতে দেবে না।

নিশাও খুব কম বয়সেই বুঝে গিয়েছিলো পৃথিবীতে ভালোবাসা পাওয়া অনেক বেশি কঠিন।আর অন্যের ঘাড়ে পড়ে থাকা মানে সব ধরনের চাওয়া পাওয়াকে জলাঞ্জলী দেয়া।কখনই সেগুলো পূরন হবার নয়। তাই সে ছোট বয়স থেকেই নিজের ইচ্ছা বা চাওয়া গুলো কে নিজের মাঝে রাখতো।কখনই মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পেত না।কারন নিশা দেখেছে তাদের কে সেই পরিবারের সবাই এখন অবজ্ঞার চোখে দেখে।এক মাত্র মায়ের জিদের কারনেই এখানে পড়ে রয়েছে তা না হলে এখান থেকে কবেই চলে যেত হয়ত যাওয়ার সময় একবারও পেছন ফিরে তাকাতো না।কিন্তু মায়ের ভালবাসা দেখে আর জোর করতে পারেনি।থাকুক পড়ে।শত কষ্ট হলেও মা টা যেন একটু শান্তি পায় এর জন্য সব কিছুই সহ্য করে হলেও মায়ের মুখের হাসি মুছে যেতে দেবেনা।

কিন্তু সে এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে নিজের পায়ে তাকে দাড়াতেই হবে।এরপর মাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে যাবে ছোট্ট কোন এক জায়গায় একটু সুখের আশায়।ঐ দিনই বিকেলে সে মায়ের কাছে গিয়ে উনাকে জিগেস করেছিল-মা,আমি যদি আরও পড়া লেখা করতে চাই এতে তোমার কোন আপত্তি আছে?মেয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে তিনি থেকে উত্তর দেন-নাহ নেই।-মা আমি যদি তোমার আমার ভালোর জন্য কিছু করে ফেলি তুমি কি রাগ করবে?ঠিক আগের মতই ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেন-নাহ করবোনা।মায়ের কাছ থেকে কথা আদায় করে নিশা নিজের জমানো কিছু টাকা নিয়ে বিকালের বাসেই বাসা থেকে বের হয়ে যায় ঢাকা মামার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।সে নিজেও জানেনা মামা বা মামি তাকে কিভাবে গ্রহন করবে।যাওয়ার সময় বাসায় ছোট্ট একট চিঠি লিখে রেখে আসে চাচার কাছে মাফ চেয়ে।যদিও সে জানে চাচা তাকে কখনই ক্ষমা করবেনা।না করলে না করুক ,আমি তো জানি আমি অন্যায় কিছু করিনি,ভাবতে থাকে নিশা।কিন্তু মায়ের কথা মনে পড়তেই হঠাত করেই যেন এক রাশ চাঁপা কষ্ট তাকে ঘিরে ফেলে।সে চোখের পানি দিয়ে সেই কষ্টগুলো দূর করার বৃথা চেষ্টা করে।

নাহ যেটা নিয়ে আশংকা করছিলো মামাকে সব খুলে বলার পর সেই শংকাটা দূর হয়ে যায়।এখান থেকে সে আবার শুরু করে তার দ্বিতীয় জীবন।ভর্তি যুদ্ধে নেমে পড়ে বীর সৈনিকরুপে।সকল যুদ্ধের অবসান হবে আজ।তাই তো ভার্সিটি যাওয়ার আগে মামা আর মামীর কাছে গিয়ে দোয়া নিয়ে ভার্সিটির দিকে রওয়ানা দেয় সে নিজের অবস্থান জেনে নিতে।

ওখানে গিয়ে দুরুদুরু বুক নিয়ে বোর্ডের কাছে গিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে নিজের রোল নাম্বারটা বারবার মিলিয়ে নেয়।যেন বিশ্বাসই হচ্ছিলোনা।হ্যা এটা তো তারই রোল নাম্বার।খুশিতে যেন চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে।মা কে জড়িয়ে কিছুক্ষন বসে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে তার।বাসায় গিয়ে সে মা কে ফোন করে তার চান্স পাওয়ার কথা জনায়।কিন্তু তাঁর সাথে কথা বলে নিশা বুঝতে পারে মা যেন আগের থেকেও অনেক বেশি নির্বাক হয়ে গেছে।কোন উতফুল্লতা নেই।মা শুধু তাকে বলে-তুই পারলে আজ এসে আমাকে দেখে যাস।মায়ের এই কথা শুনে নিশার মনট কেমন যেন করে উঠে।সে ঐদিন দুপুরের বাসে চলে যায় মাকে এক নজর দেখে আসতে।যাওয়ার সময় কিছু মিষ্টিও কিনে নেয়।

বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র সে বুঝতে পারে এই কদিনে যে এই বাড়ির অনেক কিছুই বদলে গেছে।অনেক বেশি বদলে গেছে এই বাসার মানুষগুলোও।একটা মানুষও তার সাথে কথা বলছেনা।সে জানতো এমনই হবে কিন্তু মা কে দেখা মাত্রই নিশার বুক ধক করে উঠে।যেন কত বছরের একটা বৃদ্ধা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।যেন চিন্তায় চিন্তায় কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে।মা কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে নিশা।

সারাদিন কারও সাথেই তেমন কথা হয়নি।হবেই বা কিভাবে তাকে দেখা মাত্রই সবাই যেন মুখ ঘুরিয়ে ফেলে যেন বিশাল এক অপরাধ করে বাড়িতে এসেছে।রাত টা মায়ের কাছাকাছি থেকেই পার করে।

সকালে চাচী রুমে এসে একটা লাল শাড়ি নিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে জলদি রেডি হওয়ার জন্য।অবাক চোখে চাচীকে জিগেস করেন-কেন?এই প্রশ্ন শুনেই চাচী এক ঝটকায় হাজার কথা শুনিয়ে দেয়।সে নাকি কাউকে না বলে বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ায় বংশের গায়ে চুন কালি লাগিয়ে দিয়েছে।বংশের মান সম্মান সব শেষকরে ফেলেছে।তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এরে বিদায় করাটাই ভালো হবে।আরও অনেক কিছু বলছিলেন কিন্তু আর কোন কথাই নিশার কান দিয়ে ঢুকছিলোনা।হুট করেই যেন নিভে যায় নিশার সমস্ত স্বপ্ন।ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় এত দিনের পালন করা আশা ভরসা সব।

চাচী চলে যাওয়ার পর নিশার মা তার কাছে এসে শুধু কন্ঠস্বর একটু নিচু করে বলে-আমি তোর চাচাদের সাথে যুদ্ধে হেরে গেছি রে।তুই চলে যাওয়ার পর হেন কথা নাই যে শুনতে হয়নি।তাই বাধ্য হয়ে তোকে ডেকে এনেছি।তোর বিয়ে দিলে যদি এত শান্তি হয় তবে আমি তোকে বলবো আমাকে একটু শান্তি দে মা…আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি’।কথাগুলো বলে তিনি কিছুক্ষন মুখে আঁচল গুজে নীরবে চোখের পানি ফেলে রুম থেকে বের হয়ে যান।

অবশেষে ১০ বছরের বড় একটা লোকের হাত ধরে আজ নিশা এই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।মায়ের করুন মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু একটাই কথা তার মনে বার বার প্রতিধবনিত হতে থাকে
-‘চেয়েছিলাম তোমায় মুক্ত করবো কিন্তু পারিনি।এই লোকদের জন্য পারিনি নিজের সারাজীবনের ইচ্ছাটা পূরন করতে।হয়ত আর কখনই পারা হবে না।আমায় ক্ষমা করো মা।তুমি ভালো থেকো’।



***গল্পটা মনে হয়বেশি বড় হয়ে গেছে।এর জন্য অনেক দুঃখিত।আমি আমার কোন লেখা কখনই কাউকে উৎসর্গ করিনাই। কারন কেন যেন মনে হয় আমার অখাদ্যগুলা যাকে ডেডিকেট করবো সে হয়ত কষ্ট পাবে।কিন্তু তারপরো এই লেখাটা কাউকে উৎসর্গ করার খুব ইচ্ছা হল।তাই এ লেখাটা আমার অনেক প্রিয় একজন আপুনি, প্রতি লেখাতেই যার উৎসাহ পেয়েছিলাম অনেক বেশি সেই শায়মা আপুনিকেই উৎসর্গ করলাম।প্লিজ আপুনি রাগ কইরোনা ***
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৫
৭২টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×