মাত্রই স্কুল থেকে ফিরলাম। ঠিক এই মুহূর্তে এতো বেশি আবেগময় হয়ে আছি যে সব কিছু হয়তো ঠিক ভাবে গুছিয়ে লিখতেও পারব না।
ভিকারুন নিসায় ঘটে যাওয়া অপ্রিতিকর ঘটনার কথা আজ আর কারো জানতে বাকি নেই। আমাদের অসীম সাহসী ছোট বোনেরা যেভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে তা একটি দৃষ্টান্তই বটে। আজকে আমরা বেশ কয়েক জন ভিকি মিলে ঠিক করছিলাম আমাদের পরবর্তী কাজগুলো নিয়ে।প্রায় সন্ধ্যা হয় হয়, এমন সময় একটা ফোন কল পেলাম যে আমদের সব আপারা, সাররা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছেন। কাউকে বলে বঝাতে পারব না, সেই সময় কি অসম্ভব রকম একটা শক্তি ভিতরে অনুভব করছিলাম। গায়ের লোম দারিয়ে গিয়েছিল আমাদের। ছুটে গেলাম স্কুলের দিকে। পথের জ্যাম যথেষ্ট দেরি কড়িয়ে দিয়েছিলো। আমরা যেতে যেতে আপাদের মিছিল শেষ হয় যায়।
দেরি না করে, আমরা স্কুলের ভিতরে ঢুকে যাই। আপারা তখন বাড়ির পথে। একেকজন ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। কিন্তু বারুদের আগুনের মত উদ্ভাসিত। প্রত্যেকটা আপার চোখে পানি। আমাদেরকে জড়িয়ে ধরছেন। আমরাও উদ্ভ্রান্তের মত আচরণ করছি।কার চোখে পানি, কেউ কেউ আপাদেরকে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপারা বার বার বলছিলেন, আমরা সরি, তোমাদেরকে এতো দিন একা লড়তে হয়েছে। বিশ্বাস কর, ভিতরে ভিতরে আমরা সবাই তোমাদের পাশে ছিলাম। এখন তোমরা যাই কর, আমরা তোমাদের সাথে আছি।
ভিকারুন নিসার নাম করলেই যে কয়জন অশাধারন আপাদের নাম চলে আসে, আজকে সবার সাথে কথা হোল। আপারা এত্ত বেশি আবেগ প্রবন হয়ে গেছিলেন যে বলার না। আম্বিয়া আপাকে দেখে সবাই এক সাথে ঝাপিয়ে পড়লাম। সবাইকে সেই পরিচিত মাত্রি স্নেহে আপা বু্কে টেনে নিলেন। বললেন আমরা সব সময় তদের পাশে আছি। বললেন 'কখনও মায়েরা সিদ্ধান্ত নেয়, আর কখনও মেয়েদেরকে সেই কাজটা করতে হয়"।
আরেক জন আপা বললেন আমরা গর্বিত আমাদের যা করার কথা ছিল, আমাদের মেয়েরা আজ তা করছে। মঞ্জু আপা বললেন, 'একটা কেন? আধ খানা মেয়ে হলেও আমাদের মেয়ে। আমরা কেন বিচার চাইবো না।'প্রত্যেক আপা, স্যাররা যা বলছিলেন, আমাদের চোখে পানি চলে আসছিল। এক আপা বললেন আমরা যে কিসের মধ্যে আছি, বলে বঝাতে পারব না। আমাদের মুখ একেবারে বন্ধ। যে মহিলা এক্সটেনশন নিয়ে আজকে প্রিঞ্চিপাল সেই মহিলা আমাদের আপাদের এক্সটেনশন বন্ধ করে দিয়েছে।আপাদের একেক জন যুদ্ধ জয়ী সৈনিকের মত লাগছিল। করিডোরের আলোতে তাদের মুখের দিপ্তি যে কি জ্বলজ্বল করছিল!
আজকে সত্যি মনে হচ্ছিলো আমরা এখনো আপাদের মেয়েই আছি। সেই একি ভাবে আগলে রাখতে চাচ্ছেন। কালকে আমাদের সব আপারা আসছেন, ৪টায় আমরা সবাই এক হব, শহিদ মিনারে। আপ্নারা আসবেন। অবশ্যই আসবেন। আমরা যে ভিকি স্পিরিটের কথা বলি, সেই স্পিরিটটা সবার সাথে ভাগ করে নিবো আমরা কালকে। জানি, আপনি আসছেন।
ভিকারুন নিসার সন্তান হিসেবে আমরা আজ গর্বিত
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ড: ইউনুস দেশের বড় অংশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি!
ড: ইউনুসের ১ম বদনাম হলো, তিনি 'সুদখোর'; ধর্মীয় কোন লোকজন ইহা পছন্দ করে না; যারা উনার সংস্হা থেকে ঋণ নিয়েছে, তারাও উনাকে সুদের কারণে পছন্দ করে না; ধর্মীয়দের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগে তো পানি দিতনা মারার আগে। এখন ভাত পানি খাওয়াইয়া মারে।
আগে তো পানি দিতনা শেষ নিস্বাশের আগে। এখন ভাত পানি খাওয়াইয়া মারে। আর শামীম মোল্লা ভাইয়ের কপালে অবশ্য অত্যাচার ছাড়া কিছু জোটে নাই। “ভাই আমারে আর মাইরেন না বলে অনুনয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখ হাসিনাকে থাকতে দেয়ায়, আপনি ভারতের উপর কতটুকু রেগেছেন?
"শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো-ম্যানসল্যান্ডে ঘোরাফিরা করেছে; আশা করছে, যদি কোন বিএসএফ ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত প্রবেশ করার ব্যবস্হা করে;" ইহা ছিলো ১ জন "নতুন মুক্তিযোদ্ধা"... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ এবং ২০২৪ এর হানাদার ও রাজাকারকে সমর্থন করা যায় না
১৯৭১ সালের হানাদার আমাদের দেশের সম্পদ তাদের দেশে নিয়েগেছে। ২০২৪ এর হানাদার আমাদের দেশের সম্পদ বিভিন্ন দেশে নিয়েগেছে। কারণ আমাদের দেশই এদের দেশ। ১৯৭১ সালের হানাদার ছিলো ভিনদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা আর আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া বিবেক
একটা গল্প প্রচলিত আছে এমন: রমজান মাসে বাংলাদেশে বেড়াতে এলেন উত্তর কোরিয়ার এক নাগরিক। কোনো এক রোজাদারকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা সারাদিন না খেয়ে থাকেন কেন?
উত্তরে রোজাদার বললেন, আমরা স্র্রষ্টার... ...বাকিটুকু পড়ুন