somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চীন কথনঃ গণ গোসলখানা এবং একটি দুঃস্বপ্ন

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি রুম মোটামুটি গোটা বিশেক বাচ্চা থেকে বুড়ো বয়সের পুরুষ। গতরে বিন্দু মাত্র কাপড় নেই । সেখানে স্যুটেড বুটেড একজন বিদেশী দেখা মানে ভূত দেখার মত অবস্থা । স্যুটেড বুটেড সে মানুষটি এই হতভাগাই ছিলাম । সৌভাগ্য কি দূর্ভাগ্য সেটা পরে বিবেচনা করা যাবে
গণ শৌচাগারের কথা তো আমারা মোটামুটি সবাই শুনেছি । কখনো কি গণ গোসলখানার কথা শুনেছি ? চীন দেশে জায়গায় জায়গায় মুভি থিয়েটার / গণ শৌচাগারের মত রয়েছে গণ গোসলখানা । ইংরেজিতে পাব্লিক বাথ সেন্টার বললে হয়ত কিছুটা শ্রুতি মধুর শোনায়।
প্রথমদিকে যখন ভার্সিটিতে উঠি গ্রীষ্মের সময় প্রতি সন্ধ্যায় ছেলে মেয়ে দল বেধে হাত ঝুড়ি নিয়ে গোসল করতে যেত। ছেলে মেয়ের জন্য আলাদা আলাদা গোসলখানা যদিও । কেউ একজন বলেছিলো এটা পাব্লিক শাওয়ার অর্থাৎ বাথ হাউজ । ভেবেছিলাম কি আর এমন হবে । হয়ত শুধু মাত্র আমাদের দেশের মতই অনেকগুলো গোসলখানা হবে , তাই হয়ত পাব্লিক বাথ নাম দেয়া হয়েছে । এ ধারণা ভাঙতে যদিও বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি ।

চীনা এক বন্ধু একদিন তার সাথে পাব্লিক বাথ সেন্টারে যাওয়ার নিমন্ত্রন জানালো । রাতের খাবারের সাথে দু দন্ড তাসের আসর বসিয়ে ঘুমানোর প্ল্যান। গোসলখানায় আবার কিভাবে এতো কিছু ব্যবস্থা থাকে ? এ কথা শুনে মনে কৌতুহল জাগাটাই স্বাভাবিক না জাগাটাই বরং অস্বাভাবিক । মিনিট খানেক চিন্তা করে রাজি হয়ে গেলাম ।

সুবিশাল ভবন। মার্বেল পাথরে সাজানো মেঝে । অদ্ভুত নেশালো আলোকসজ্জায় সাজানো। রিসিপশনে মনে হবে যেন কোন রাজকীয় বল ঘর। লকারে জুতো রাখতে রাখতে বন্ধু বলল এবার কিন্তু গোসলের সময় তারপরে আমরা গল্প করবো । আমতা আমতা করে বললাম আমি ঘরের বাইরে গোসলে অভ্যস্ত না। শেষমেষ কথা রাখতে ভেতরে ঢুকলাম । সেখানে গোসল এবং ঘুমানোর জন্য আলাদা পরিধেয় বস্ত্র পাওয়া যাবার কথা । আমি আরো ভেতরে ঢুকলাম । বিশাল রুম । বড় বড় আলমারি পাশা পাশি করে রাখা । একটি রুমের আদল তৈরী করা হয়েছে আর কি । মলিন আলোকসজ্জা । সেখানে বেঞ্চি পাতা আছে । কেউ কেউ শুয়ে আছে কেউ আবার বাচ্চার সাথে খেলাধুলা করছে । নিজের জন্য নির্ধারিত আলমারি খুজতে একটু সামনে গেলাম । পর্দার আড়ালে হয়ত উলঙ্গ কাউকে দেখলাম । পরক্ষনেই ভাবলাম হয়ত সে কেউ নেই ভেবে বস্ত্র পরিবর্তন করছে। ভাবতে ভাবতে সামনে যেয়ে আমার চোখ ছানা বড়া হবার যোগাড়। গোটা বিশেক মানুষ মৃদু গানের তালে মনের সুখে উলংগ হয়ে গোসল করছে। পাচঁ তারকা হোটেলের থেকে মনে হয় বেশি সুবিধাই সেখানে রয়েছে । কি নেই সেখানে । একজন মানুষের গোসল করার জন্য সেখানে প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত জিনিস রয়েছে । নেই কি জানেন ? একটি আলদা ঘর কিংবা নিজেকে আড়াল করার জন্য চারকোনা পর্দা ।
মাঝ রাতে শ্মশান ঘাটে ছেড়ে দিলেও হয়ত সেখান থেকে হেলে দুলে ফিরে আসতে পারবো কিন্তু চীনের পাব্লিক বাথ সেন্টার থেকে দৌড়ে পালানো ছাড়া সত্যিই আমার কোন গতি ছিলো না। ভূত দেখলেও হয়ত মানুষের এত ভয় লাগেনা এতোগুলো সুস্থ স্বাভাবিক উলঙ্গ মানুষ দেখে আমার যতটা লেগেছে । দৌড়ে বের হয়ে বন্ধু্কে চট জলদি মেসেজ দিয়ে বললাম " Are you fucking kidding with me! this ্was the most horrible situation i have ever faced ." বন্ধু তড়িঘড়ি করে এসে বুঝালো এটাই নাকি এখানকার ট্রেডিশন। তখন ভার্সিটির পাব্লিক বাথের একি নিয়ম সেটাও শুনিয়ে দিলো । যদিও সেখানে ৫ ইউয়ান । আর এখানে জনপ্রতি এক রাত ৫০ ইউয়ান । টাকা যখন বন্ধু মশাই দিয়েই ফেলছে তার মন রক্ষার্থে স্টাফের ব্যক্তিগত রুমে যেয়ে ঘুমানোর পোষাক পরে ফিরে আসলাম । তো সেই ভৌতিক পরিবেশ দিয়ে সামনে যেয়ে আরেকটি বৃহদাকার সুইমিং পুল সেখানেও একি অবস্থা পাশা পাশি বেশ কয়েকটি সুইমিং পুল । এতোগুলো সুইমিং পুলের কারণ এক একটিতে এক এক রকম পানির তাপমাত্রা । যেহেতু এখানে তাপমাত্রা মাইনাসে চলে যায় তারা সেদিকেও খেয়াল রেখেছে। সামনে যেয়ে দেখলাম সেখানে স্পা সেন্টার এক সারিতে অনেক গুলো রোগী দেখার বিছার মত কিছু একটা। সারি ধরে উলঙ্গ পুরুষেরা শুয়ে আছে আর স্পা করাচ্ছে । এতোক্ষনে আমার বমির উদ্রেক শুরু হয়ে গিয়েছে । ধীরে ধীরে সামনে এগুলাম । এখানে শোবার ব্যবস্থা করা । দু ফিট উচু করে পাশা পাশি অনেক গুলো ঘর করা । এগুলোর আবার দরজা নেই । তার উপরে আড্ডা দেয়ার মত রুম সাজানো । টিভি , টেবিল , বেড সিট, আরো কয়েকটা আসবাবপত্র। এটা মোটামুটি কম্ফোর্টেবল বলা চলে। আরেকটু সামনে যেয়ে দেখলাম মোটামুটি ৩০ জোড়া বিছানা একসাথে কথা । সামনে বিশাল পর্দা! শুয়ে শুয়ে মুভি দেখার জন্য। এই জায়গাটা একটু বেশিই কম্ফোর্টেবল। খাবার খেয়ে এখানেই শুয়ে পড়লার খোদার নাম নিয়ে । বললাম প্রচন্ড মাথা ব্যাথা সহ্য হচ্ছে না দুঃখিত আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। শুয়ে দেখি ঘুম আসে না! আবার কেমন যেন গাট ফিলিংও হয় । দুই পাশে দুইজন মেয়ে তাদের প্রেমিকদের সাথে হাফ প্যান্ট পড়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছি আমি কাবাবের হাড্ডি মাঝের সিটে শুয়ে আছি । চীনে যেহেতু ফেইসবুক , ইউটুব বন্ধ সেহেতু ভিপিএন ইউজ করতে হয় । ওখানে দেখি আমার পেইড ভিপিএনের মেয়াদও শেষ ফ্রি গুলাও কাজ করেনা। আগত্যা কিছু করার না পেয়ে অন্ধকারে চেয়ে আছি । মাঝ রাত্তিরে শুরু হলো নাক ডাকার তান্ডব। এক এক জন এক এক সুরে নাক ডাকে । মিউজিক মিউজিক একটা ফিল চলে আসল। এভাবেই পার করে দিলে সারারাত । আমার জীবনের সব থেকে জঘন্যতম রাত।
সকালে উঠেই আমি অসুস্থ তাই হাসপাতালে যাচ্ছি বলে সেদিন যে বের হয়েছি আজ পর্যন্ত ঐ বন্ধুর সাথে দেখা করি নাই! ঐ ছেলের কথা মনে হলেই এই হরর দৃশ্যের কথা মনে পড়ে । আমার মনে হয় সেই নতুন বন্ধু পৈশাচিক আনন্দ পাবার জন্য এভাবে টর্চার সেলে নিয়ে গিয়েছিলো। যদিও অনেক বার সে দুঃখ প্রকাশ করেছে ।

আশা করছি চীনে এমন সিচুয়েশন কেউ উপভোগ করতে চাইবেন না। আর চাইলে আপনাকে সাদর আমন্ত্রন । ;)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×