পৃথিবির সবথেকে ভারি জিনিস কি?
-পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ।
এ নির্মম সত্য কোন পাঠ্যেই পাইনি।যেনেছিলাম নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসে। কত কত রাত বিছানায় শুয়েই তপ্ত রাজপথে হেটেছি খালিপায়ে, এমনকি তাপে পায়ে ফোস্কা পরার অনুভূতিও পেয়েছি। ভীষন হিংসা হত স্বপ্ন দেখা সেই চরিত্রকে যে খালি পায়ে ব্লেড বিছান এক মাঠে দৌড়াত তার স্বপ্নের সঙ্গীকে নিয়ে, সকালে যার পা থাকত রক্তাক্ত। মিসির আলীর উপদেষে পায়ে কেডস পড়ে ঘুমাতে গেলে তার সে দূ:স্বপ্ন বন্ধ হয়েছিল, কিন্তু সেচ্ছায় সে তার দূ:স্বপ্নে ফিরে গিয়েছিল, সঙ্গীনির নি:সংগতার জন্য নিজেকে দায়ী করে।
মিসির আলীর ক্ষুরধার বুদ্ধি আর যূক্তির প্রভাবে যতটা প্রভাবিত হয়েছি তেমনই প্রভাবিত হয়েছি হিমুর অযৌক্তিক সব যুক্তির।
জোছনার সাথে প্রথম পরিচয় তারই লেখনিতে, সোডিয়াম আলোর সাথে প্রেমটাও।
হাওরের পানির দিকে তাকিয়ে একটা বিকেল কাটিয়ে দিতে পারার দু:সাহসটাও প্রথম জাগে তারি বদৌলতে।
আকাশের মেঘের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে ফেলা প্রিয় মানুষটির কথা ভাবা যদি হাসানের (মেঘ বলেছে যাব যাব)কাছ থেকে না শিখতাম, তবে সত্যি অজানাই থেকে যেত ভালবাসা কারে কয়।
এপিটাফের "এখানে একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে"। সত্যি অমন একজন মানুষ হওয়ার ইচ্ছা আজও জীবিত ভেতরে, জন্মটা নিতান্তই কৈশরে যদিও।
এই হাসি তো আবার চোখে জল। সে জল শুধু বেদনার থাকত না এমনকি আনন্দাশ্রুও হত।
আরও অনেক সাহিত্যেই আনন্দ পেয়েছি, করুন কিংবা বেদনাত্মক ঘটনায় কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু বই পড়া আনন্দাশ্রুর সাথে দেখা মেলেনি আর।
চিরযুবা হিমু, মধ্যবয়সী মিসির আলী, আর শুভ্র শুভ্র।
রূপার দিনকাল আজ কেমন যাচ্ছে বলা মুশকিল। ময়ূরাক্ষীর জল আজও কি টল টল?
মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্যগুলো আজও রহস্যই রয়ে গেল। সত্যি জনতার মাঝের নির্জনতার সাথে সেই কৈশরের পরিচয়টা না থাকলে লোকাল বাসের ভীড়টা একটু অসহ্য হয়েই যেত। রবীবাবুর পরিচয়টা অন্তত অরও কায়েক বছর শৈশবের মুখস্থ করা বিশ্বকবিই থেকে যেত।
জীবনটা যে একটা চক্র, শিখেছিলাম সেই কৈশরেই। যেনেছিলাম একি সাথে যুক্তি এবং অযুক্তির সংমিশ্রনের নামই জীবন।
বুঝেছিলাম "অস্বাভাবিকতাই মানুষের সবচেয়ে বড় স্বভাবিকতা"।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৭