somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলকাতা ভ্রমণ

০৯ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন ধরেই কলকাতা যাওয়ার একটা প্ল্যান করছিলাম। মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পর থেকেই আব্বা বলছিলেন ট্রেনে একবার কলকাতা যাওয়া উচিত। দীর্ঘদিন ব্যর্থ চেষ্টার পরে এইবার ভাবলাম যেভাবেই হোক ঘুরে আসি। অফিস থেকে অনেক জোর জবরদস্তি করে ছুটিও নিলাম। ভিসার ঝামেলা সব সামলানোর পরে দেখি আমার মা যাওয়ার তেমন একটা আগ্রহ পাচ্ছেনা :|। বাবা ও না গেলেও চলে এই টাইপ কথা বার্তা বলা শুরু করছে। আমি পড়লাম ফ্যাসাদে, ছুটিও নিছি। বহূত কষ্টে উনাদের রাজী করানোর পরে দেখি সবাই ট্রেনে যাওয়ার অপকারীতা বুঝানো শুরু করছে। কথাবার্তা শুনে মনে হলো ট্রেনে যাওয়া আর পাহাড় বেয়ে উঠা সমান ঝামেলার।:-* বাবার যাওয়ার শখ এই কারণে যা থাকে কপালে ভেবে কমলাপুরে গিয়ে ট্রেনের টিকেট কেটে ফেললাম।

সকাল ৭:৪৫ এর দিকে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পরে বুঝলাম লোকজনের ধারনা কত ভুল। যথেষ্ট আরামের জার্নি, খাওয়াদাওয়া ও ভালো। বাস জার্নি থেকে যে কোন বিচারে এই ট্রেন জার্নি ভালো।






[ট্রেন থেকে যমুনা ব্রীজের আশেপাশের ছবি]

যাওয়ার পথে যমুনা ব্রীজ, হার্ডিন্জ ব্রীজ পার হয়ে চারপাশ দেখতে দেখতে আব্বুর উচ্ছলিত হওয়া দেখে বুঝলাম, ট্রেনে যাওয়াটা স্বার্থক। বর্ডারেও কোন ধরনের ফালতু ঝামেলা নেই। শুধু অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়, যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতে যাত্রী ফোরকাস্টের ভুলের কারণে। যে পরিমাণ যাত্রীর ইমিগ্রেশনের জন্য সময় রাখা হয়েছিলো যাত্রীসংখ্যা তার ধারেকাছেও হয়নি। ট্রেনের ১/৩ ভাগ ও মনে হয় ভর্তি হয়না। কেন হয়না সেটাও একটা রহস্য :|। ইন্ডিয়ান বর্ডারে গেদে স্টেশনটাও বেশ সুন্দর করে বানানো। ওখান থেকে কলকাতার চিৎপুর স্টেশনে পৌছতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘন্টা। যেতে যেতে ওদের আশেপাশের জেলার সাথে কলকাতার লোকাল ট্রেনের বহর দেখে খারাপ লাগলো। আমাদের দেশে রেল ব্যবস্হা কি আরো উন্নত করা যেতনা? কলকাতা পৌছলাম সন্ধ্যা ৭টার দিকে। স্টেশনের ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৬:৩০ বাজে। আমাদের পাশের কেবিনের এক বান্গালী পরিবারের সাথে আলাপ হয়েছিলো, স্বামী কলকাতার আর স্ত্রী ঢাকার। উনাদের থেকে অনেক টিপস নিয়ে টেক্সী চড়ে রওনা দিলাম মার্কুইস স্ট্রীট। এটা নিউ মার্কেট থেকে কাছে এবং মুসলিম প্রধান এলাকা। আশেপাশে খাওয়া দাওয়ার জন্য সব মুসলিম হোটেল। প্রচুর মানি এক্সচেন্জ ও আছে এইখানে, টাকা ভান্গানোও ব্যাপারনা। একটা ইন্ডিয়ান মোবাইল সিম ও নিলাম। কিন্তু দেখি অ্যাক্টিভেট হয়না! ওদের নাকি ম্যানুয়ালী অ্যাক্টিভেট করতে হয় এবং ঐদিন ছুটি দেখে কাউকে পাওয়া যাচ্ছেনা!!! আমাদের টেলিকমিনিকিউশন ইন্ডাস্ট্রী অনেক ভালো এগিয়ে যা বুঝলাম। হিসাব করে দেখলাম ওদের কলচার্জ এবং অন্যান্য চার্জ ও আমাদের থেকে বেশী। রাত্রে খেয়েদেয়ে আশেপাশে একটু ঘুরঘুর করে ঘুম দিলাম। পরেরদিন থেকে আসল ঘুরাঘুরি করতে হবে।

কলকাতায় প্রচুর টেক্সী পাওয়া যায়। আমাদের দেশের মতো রাস্তায় বের হয়েই বিপদে পড়তে হয়না কিভাবে যাবো ভেবে। ওদের মানুষজন প্রচুর হাটে; সবাই ২ মাইল দুরের কোন জায়গাকেও এইতো সামনেই বলে। এবং কোন জায়গা না চিনলেও ঐদিকে টাইপের একটা উত্তর দিয়ে দেয়। পরে কয়েক মাইল ঘুরাঘুরি করে হয়তো জানতে পারলেন পুরা উল্টা দিকে ঘুরে এসেছেন X(। সো ওদের সাদা পোশাকের পুলিশকে জিগ্যেস করাই ভালো। ওদের মধ্যে সাহায্য করার প্রবণতা ভালো। আপনার ভাগ্য ভালো হলে এমন লোকজনও পেতে পারেন যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন শুনে অনেক উচ্ছ্বসিত ও ইমোশনাল হয়ে যায়। মুলত যাদের পূর্ব পুরুষ বাংলাদেশের তাদের এদেশের প্রতি ভালোবাসা দেখে আসলেই অনেক ভালো লাগে। রাতবিরাতেও মহিলা বাসে, ট্রামে ঘুরে বেড়ান। মনে হলো সিকিউরিটি অনেক ভালো। ওখানে টেক্সীতে মিটারে যত উঠে তার দ্বিগুণের সাথে ২ টাকা যোগ করে ভাড়া দিতে হয়। টেক্সী ছাড়াও ঘুরাঘুরি করার জন্য প্রচুর বাস, ট্রাম, রেল, পাতাল রেল আছে। যোগাযোগের অবস্হা আমাদের থেকে অনেক ভালো। মোড়ে মোড়ে ট্রফিক এবং সবাই মোটামুটি এদেরকে মান্য করে। যতই দেখছি ততই আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্হার কথা চিন্তা করে আফসোস হয়েছে। আমাদের ঢাকা শহর দিনে দিনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে আর ঐদিকে ওরা পুরনো কলকাতা শহরকে আরো বসবাসের উপযোগী, উপভোগ্য করে তুলছে! /:)
(চলবে..)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:০৭
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×