কাঁটাতারের বেড়ায় আবদ্ধ রেখে আলোচনায় লাভ কী?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্পর্কিত সচিব পর্যায়ের বৈঠক আজ বুধবার। স্থানীয় একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বৈঠক। আজ বুধবার শুরু হওয়া ১১তম সচিব পর্যায়ের বৈঠক আর যুগ্ম-সচিব পর্যায়ে ১০ম স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০০৯ সালের ৩০ নবেম্বর।
এমন এক সময় এই বৈঠক হচ্ছে যখন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১০ সালে সীমান্তে বিএসএফ ৭৪ জন নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করে। ২০০৯ সালে মারা যায় ৯৮ জন। ২০০৮ সালে মারা যায় ৬১ জন। চলতি জানুয়ারি মাসে এরই মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ফেলানীর মৃত্যু ছিল বর্বরতার এক নির্মম চিত্র। ১৬ বছরের ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এই চিত্র গোটা জাতির বিবেকে আঘাত করে। জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ উঠতে থাকায় শেষ পর্যন্ত ১০ দিন পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এর প্রতিবাদ করা হয়। বিএসএফ বিনা উস্কানিতে বাংলাদেশীদের হত্যা করেও তারা উল্টা বাংলাদেশের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে এক বাংলাদেশী যুবক শাহজাহান আলীকে (৩২) হত্যার পর বিএসএফ উল্টা বাংলাদেশীদেরই দূষেছে। গত শনিবার শিবগঞ্জ উপজেলার সিংনগর- হঠাৎপাড়া গ্রাম থেকে শাহজাহানকে ধরে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে তাকে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরদিন রোববার হাসপাতালে শাহজাহান মারা যায়। এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিজিবি বিএসএফকে চিঠি দেয়। রোববার বিকাল ৩টায় সীমান্তে ১৭নং পিলার সংলগ্ন এলাকায় বিজিবি ও বিএসএপ কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। এই বৈঠকে বিজিবি'র পক্ষে মনাকষা কোম্পানির কমান্ডার আতিয়ার রহমান ১২ সদস্যের নেতৃত্ব দেন। বিএসএফ-এর পক্ষে দৌলতপুর কোম্পানি কমান্ডার বিজেন্দ্র কুমার ১৪ সদস্যের নেতৃত্ব দেয়। এই বৈঠকেই বিএসএফ বাংলাদেশীদের অহেতুক দোষারোপ করে। হত্যাকান্ডের জন্যে বিএসএফ কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি।
স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার বিষয় উত্থাপন করা হবে বলে জানা যায়। এ ছাড়াও চোরাচালানসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগেও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রাণ দিতেই হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়- বাংলাদেশীদের ওপর বুলেট নয়, বিএসএফকে রাবার বুলেট দেবে সে দেশের সরকার। আর বাংলাদেশ সরকারও না-কি সেটাই চায়। কি উদারতা! গত ১০ বছরে বিএসএফ ৯০০ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার স্থল সীমানা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার সীমানায় ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ফেলেছে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। সাবেক সেনাপ্রধান লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুর রহমান সংগ্রামকে বলেন, কোনো দুটি প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে এমনটি হতে পারে না। ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেও এখন যা করছে তা বন্ধুত্বসুলভ আচরণ বলা যায় না। কাঁটাতারের বেড়া অনাস্থা ও অবিশ্বাসের প্রতীক। ভারত আমাদের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করছে না। ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়ন তারা করেনি। সীমান্তে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। যেন গণহত্যা চালাচ্ছে। এ ধরনের হত্যাকান্ড আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক আইন বা চুক্তিতে এলাও করে না। আন্তর্জাতিক আইনে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আগ্রাসী নীতি চালাচ্ছে। এসব কর্মকান্ডে বাংলাদেশকে শক্তভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা করছে না। সাবেক বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অবঃ) আ.ল.ম ফজলুর রহমান বলেন, বর্ডার নিয়ে বৈঠক করার আগে বিএসএফ বর্ডারে হত্যাকান্ড বাড়িয়ে দেয়। এটা ভারতের একটা কৌশল। ভারতের মনোভাব জানতে হবে যে তারা কি চায়। আর সেই পথই বাংলাদেশকে ধরতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ শক্তভাবেই করতে হবে। সরকারকে সোচ্চার হতে হবে। এভাবে বহুবার বৈঠক হয়েছে, লাভ হয়নি।
মেজর জেনারেল (অবঃ) মুনিরুজ্জামান বেসরকারী একটি টিভি চ্যানেলে গত সোমবার রাতে সীমান্তে হত্যাকান্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ফেলানী একজন বেসামরিক ব্যক্তি। বিএসএফ তাকে গুলী করে হত্যা করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে। এ ধরনের দৃশ্য কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফেলানীর মৃত্যু দিয়ে আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব কোথায় আছে। বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ যারা প্রতিনিয়ত লড়াই করে তাদের জমি রক্ষা করে, ভারতের আগ্রাসন থেকে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য কি ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশ সরকার? যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত তাদের উত্তর দিতে হবে। তিনি বলেন, চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত আছে, পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত আছে। ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী কখনো চীনা বা পাকিস্তানের নাগরিকদের হত্যা করে না। অপর দিকে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা করে চলছে। এটার কারণ একটা হতে পারে যে আমরা জোরালোভাবে প্রতিবাদ করি না। এটা যদি ভারত-চায়না বা ভারত-পাকিস্তান বর্ডারে করতো তাহলে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতো। ইসরাইল-প্যালেস্টাইন সীমান্ত ছাড়া আমার জানা নেই যে অন্য কোথাও এমন ঘটনা ঘটে। আমরা কি তাহলে সেই অবস্থায় দাঁড়িয়েছি? যদি তাই হযে থাকে তাহলে সরকারের প্রতিবাদ কোথায়। তারা এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?
বাংলাদেশের যে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী রৌমারীতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, যারা পদুয়া রক্ষা করেছিলেন তারা আজকে কোথায়, তাদেরকে কেন হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে?
সীমান্ত নিয়ে আজ ঢাকায় যে স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক শুরু হচ্ছে তা চলবে আগামীকাল পর্যন্ত। যৌথ ইশতেহার ঘোষণা হবে, ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব জি কে পিল্লাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। কিন্তু বাস্তবে কি হবে?
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি
মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমস্যা মিয়ার সমস্যা
সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।
তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন