বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে । গেস্ট হাউজের ভিতর থেকে ঝম ঝম বৃষ্টির শব্দ অনেকটা নূপুর নিক্কনের মতই শোনাচ্ছে । আমার চোখে ভাসছে মতিঝর্ণা, কুসুমবাগের সেই আহত বিষন্ন মানুষগুলোর ছবি । এই নিপাট নিরীহ বৃষ্টিও নিশ্চয় এখন তাদের বুকে কাঁপন ধরায় ।
আবারও পাহাড় ধ্বসে পড়ার আশংকা, আবারও দুর্ঘটনার ভয় । কিংবা এই নিরীহ বৃষ্টিও হয়ত এখন তাঁদের মনে করিয়ে দেবে একসাথে পরিবারের অনেককে হারানোর বেদনা, নিজেদের ছোট্ট সম্বলটুকুও মাটিতে মিশে যাওয়ার দুঃস্মৃতিকে ।
এমন ঘটনা আগে কখনও এখানে ঘটেনি, অনেকদিন ধরেই তারা এখানে আছে, কখনও বৃষ্টিতে এভাবে পাহাড় ধ্বসে পড়েনি । পাহাড়ের ভাঁজে এমন জায়গা আর নিরাপদ নয় । যে পথে পাহাড়ের মাটি গড়িয়ে নিচে নেমে এসেছে, সেই একই পথে এখন আরও সহজে ধ্বস নামতে পারে ।
পাশের বেশ কয়েকটি ঘর, দেয়াল গুড়িয়ে গেলেও – আশে পাশে এখনও যারা আছে তাদের কারোরি এই জায়গা ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই । হয়তোবা এই মিশে যাওয়া শূণ্য জায়গাতেই নতুন করে আবার গড়ে উঠবে বাড়ি ঘর ।
এখানে বিপদের ভয় কিন্তু বাইরের পৃথিবীতে এর থেকে নিরাপদ জায়গা নিয়ে তাদের জন্য আর কেইবা বসে আছে? তাদেরকে এখানেই থাকতে হবে,থাকতে হয়; আর হয়ত কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না এই আশাতেই বুক বেঁধে ।
নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে তাদের অনেকেই এখানে এসেছিল বরিশাল,ভোলা কিংবা নোয়াখালী থেকে । জীবনের কাছে তাদের থাকা খাওয়া ছাড়া আর বেশী কিছু চাহিদা না থাকলেও – বারে বারে জীবন এভাবেই তাদের কাছ থেকে শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নেয় ।
-----------------------------------------------------
আগ্রাবাদ – চট্টগ্রাম
১৪-০৬-২০০৭
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৪৭