প্রিয় একলাবতী
এ শহর বড় বেশী দ্রুত, একটু আস্তে চললে এই শহরে বেঁচে থাকা দুষ্কর। স্কুল গন্ডি পেরিয়ে কলেজে আসা কিংবা কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা মানুষগুলোকে এই শহর কাছে টেনে নেয় না। নিজেকে সেরা প্রমাণ করার জন্য শহরের মানুষগুলো অপেক্ষাকৃত ধীর মানুষদের অপদস্থ করে বড় আনন্দ পায়। ঈর্ষা, প্রতিহিংসা আর অনর্থক বাক্যবানে মানুষকে বিব্রত করে এই শহরের অধিকাংশ মানুষের অবসর কাটে।
এই শহরটা আমার মোটেও ভালো লাগে না। প্রতিদিন একই গতিতে চলতে থাকা ভালো লাগে না, পিছিয়ে পড়ার ভয় ভালো লাগে না, পাখির কণ্ঠে বেসুরো গান ভালো লাগে না, নর-নারীর একমুখী টান ভালো লাগে না, ফুলের বুকে ধুতুরার ঘ্রান ভালো লাগে না, মৃত্যুভয়ে চমকানো প্রাণ ভালো লাগে না।
তবুও;
আমি জানি এই শহরেরই নাম না জানা কোন এক অন্ধগলির কোন এক বহুতলে থাকো তুমি। আমার বড় ভালো লাগে যখন জানি তুমি এই শহরেই আছো। তুমি যেই আকাশটা দ্যাখো সেই আকাশটা আমিও দেখি।তুমি যেই বাতাসে নিঃশ্বাস নাও; একটা সময় পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে হয়ত তা আমাকেও স্পর্শ করে।
তুমি যেই পথ দিয়ে হেঁটে যাও মাঝে মাঝে হয়ত সবার অজান্তে সেই পথ দিয়েই হয় আমার পথচলা। আমি বড় প্রবলভাবে চাই এই পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তোমাকে একবারের জন্য হলেও স্পর্শ করেছে যেই ধূলি-কণা, তারা যেন আমাকেও স্পর্শ করে; পরশ পাথরের ছোঁয়ায় আমার নশ্বর জীবন ধন্য হয়ে যাবে। কংক্রিটের রাজপথের যেখানটায় তোমার পদক্ষেপ পড়েছে, তার অন্তত একটা নুড়ি পাথর যেন আমি খুঁজে পাই সারা জীবনের সাধনায়। প্রচণ্ড রোদ্দুরে যদি তোমার দেহ থেকে গড়িয়ে পড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম, আমি যেন পরম যত্নে কুড়িয়ে নিতে পারি তার প্রত্যেকটা বিন্দু। তুমি যখন কাঁদো; প্রার্থনা করি তখন যেন আমার চোখ থেকেও গড়িয়ে পড়ে ঠিক ততটুকু জল।
আমরা একই শহরে থাকি; অনুভূতিতেও তাই আমরা বড় কাছাকাছি...
কোনদিন;অনেক দিন পরে...কোন চশমার দোকানে;অথবা সব্জির বাজারে; কিংবা ছোট ছেলেটাকে যখন স্কুল থেকে নিয়ে আসবে,
হয়ত দু'জনের দেখা হয়ে যাবে।প্রাথমিক বিব্রতভাব কাটিয়ে সলজ্জ তোমার চোখের দিকে তাকাবো।
কিচ্ছু বলে দিতে হবে না। নিজেদের ভেতরের সব কথা বলা হয়ে যাবে চোখে চোখে।"ঢাকা খুবই ছোট্ট শহর;
কারো অনুভূতির কথা এখানে চাপা থাকে না..."
পুনশ্চ- যে শহরে তুমি থাকো সে শহরের ডাষ্টবিন ও আমার ভাল লাগে
ইতি
মেঘবালক
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০