- তোমাকে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে কল করছি ! রিসিভ করছিলা না কেন ? এতক্ষণ কি ঘোড়ার ঘাস
কাটতেছিলা ??
- সরি। আর কখনো এমন হবে না
- কান ধরে সেলফি তুলে আমাকে পোস্ট করবে, তারপর আমাকে ফোন দিবে।
এটা বলে ফোন কাটলো দীপ্তি ।
দীপ্তি মেয়েটির সাথে নীলের পরিচয় ফেসবুকে। খুব জেদী ,
অভিমানি আর অবুঝ একটা মেয়ে
দীপ্তি। যেটা বলবে সেটাই
করতে হবে তা না হলে রক্ষা নেই।
বন্ধুত্বের প্রথম দিকে নীল
এটা বুঝতে না পারলেও এখন ছেলেটা হারে হারে টের পাচ্ছে। তবে আজকে দীপ্তির অভিমান করার যথেষ্ট কারণ আছে। এইবার দিয়ে প্রায় উনিশ বার কল করেছে দীপ্তি । কিন্তু নীল বসে বসে পিসি তে গেম খেলছিল তাই ইচ্ছা করেই কলটা রিসিভ করে নি । তাই খুব আগ্রহ নিয়ে ই সেলফি তুলেই পোস্ট করলো দীপ্তির ফেসবুক ইনবক্সে। দীপ্তির
সব কিছু ই ভালো লাগে নীলের। সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে ওর এই শিশুসুলভ আচরণগুলো আর
খামখেয়ালিপনা। নীল বোধই মেয়েটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে !
সকালবেলা দীপ্তির দেয়া ফোনের
রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙল নীলের।
- গুড মর্নিং।
- হুম। গুড মর্নিং।
- এখন ঘুমাচ্ছ?
- হুম।
- তাড়াতাড়ি উঠবে এক্ষুণি।
- পসিবল না।
- আমি বলেছি না।এক্ষুণি উঠবে বায়।
নীলের আরও কিছুক্ষণ ঘুমানোর
ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দীপ্তির
আদেশে সেটা পরিত্যাগ করতে হল। ইদানীং মেয়েটা কেমন যেন
অত্যাচারি হয়ে উঠেছে! তবে নীলের খুব ভাল লাগে দীপ্তির এই ভালবাসার অত্যাচার গুলো ! নীল খুব উপভোগ করে এগুলো।
নীলের মাঝে মাঝে মনে হয়
মেয়েটা ওকে প্রচন্ড ভালবাসে।
মাঝেমাঝে সেটা প্রকাশ ও করে কিন্তু মুখে কিছু বলে না।হয়ত মেয়ে বলে । এসব ভাবতে ভাবতে হাত মুখ ধুয়ে ওয়াস রুম থেকে বের হয় নীল। সেকি সাড়ে দশটা বেজে গেছে! আজ ঠিক সকাল ১১ টায় দীপ্তির সাথে দেখা করার কথা নীলের। নিজের
উপর রাগ হচ্ছে ওর। কোনোমতে তাড়াহুড়া করে দীপ্তির
পছন্দের টি শার্ট পরে বের হয় নীল।
গন্তব্য নদীর তীর। পরিচিত ঐ কদম গাছটার তলায় থাকবে দীপ্তি। ১১ টা বাজার ৫ মিনিট আগেই পৌছে গেল নীল।
-তোমাকে কয়টায় আসতে বলছিলাম?
- ১১ টায়।
- এখন কয়টা বাজে?
- ১০ টা ৫৫.
- ৫ মিনিট আগে আসলা কেন? যাও দূরে গিয়ে বস। ঠিক ১১ টায় আমি তোমার সাথে কথা বলব।
নীলের হাসি পায়, দীপ্তির এই অদ্ভুত আচরণগুলো ওর খুব
ভাল লাগে।
- এই শোনো এইদিকে আস। বোকার মতো আর কতক্ষণ বসে থাকবে।
- জি বলেন মিসেস। আপনার বান্দা হাজির।
- আচ্ছা আমরা বিয়ের পর
হানিমুনে যমুনা নদীর বুকে গড়ে ওঠা চরে যাব । ওইখানে একটা ছোট্ট কুটির থাকবে ! আর ওইখানে থাকব কেবল আমি আর তুমি । তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?
দীপ্তির এমন কথার জন্য একদম ই প্রস্তুত ছিলও না নীল। বোকার মত তাই প্রশ্ন করল,
এই উদ্ভট জায়গায় কেন?
দীপ্তি জবাব দিল
-আমি বলেছি তাই ।
নীল কি বলবে বুঝতে পারছে না।
তাকে অবাক করে দিয়ে আবার দীপ্তিই শুরু করল
- তুমি বিয়েতে কিন্তু
সেরওয়ানি পড়বে না।
তোমাকে পাঞ্জাবিতে ই অনেক ভাল
লাগে। আর অবশ্যই লাল পাঞ্জাবি।
আমি কিন্তু লাল কালারের
শাড়ি পরতে পারবো না। আমি নীল কালারের একটা শাড়ি পরবো। ওকে?
নীল কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। বোধই সপ্ন দেখছে।
আবার বোকার মতো প্রশ্ন করে বসল,
যদি বিয়েটা না হয়?
- স্ট্রেইট গুলি করবো তোমাকে।
- অমি তো তোমাকে ভালবাসি কথাটাই বলতে পারলাম না।
- হুম জানি একমাস যাবৎ ভেড়ার
মতো ভে ভে করে যাচ্ছ। তুমি কখনই বলতে পারবেনা আমি জানি।আর শোনো
আমি তোমায় একটুও ভালবাসি না। তাই আমাকে ভাল না বাসলে ও হবে।
- তাহলে বিয়ে করবে কেন আমাকে?
- তোমাকে জ্বালাতন করতে। তোমার কোনো সমস্যা আছে?
- না নেই।
- তাহলে যাও এখন গিয়ে ঝালমুড়ি
নিয়ে আসো ।
মুচকি হেসে ঝালমুড়ি
আনতে গেল নীল ।কিছুদূর গিয়ে অনর্থক পিছন
ফিরে তাকাল সে। দেখল
দীপ্তি চেয়ে আছে তার দিকে। পিছন ফেরা মাত্রই শিশির বিন্দুর মত কি যেন একটা লুকানোর চেষ্টা করল দীপ্তি। না দেখার ভান
করে সামনে এগিয়ে গেল নীল। নীল জানে আজ সে ভালবাসার
অত্যাচারে সিক্ত। সে আজীবন এই
অত্যাচারে সিক্ত থাকতে চায় ।