somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হলুদ হিমু এবং মায়াবতী নীল রূপার গল্প

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘড়ির কাঁটায় ৩টা ২০ । দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলেছে । সিলিং ফ্যানটার দিকে একমনে উর্ধ্বদৃষ্ঠে চেয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে হুয়ামুন স্যারের সৃষ্টি করা অদ্ভূত জীব হিমু । হিমু আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করেছিল কিন্তু এখন ওর পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে । তাই অগত্যা উপবাস ভঙ্গ করতে হিমু তার হলুদ চাদরটা গায়ে জড়িয়ে রওনা দিল মজনু মিয়ার ভাত এবং মাছের হোটেলের উদ্দশ্যে । পাঞ্জাবীর পকেটে হাতড়িয়ে দেখল সেখানে ৩৫টাকা আছে । ৩০ টাকা দিয়েই ভরপেট মাছের ঝোল এবং ভাত খাওয়া হয়ে যাবে হিমুর । বাকি ৫টা দিয়ে রূপাকে একটা ফোন করতে হবে । হিমুর কাছে এখন উপবাস ভঙ্গ করার চেয়ে রূপাকে ফোন করা জরুরী মনে হল ।

তরঙ্গিনী স্টোরে পৌঁছে হিমু ফোন করল রূপাদের বাসায় । রিঙ হচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না । তৃতীয়বার ফোন দিতেই হিমু এক নারী কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেল । হিমু কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল । ভাগ্যিস রূপার বাবা ফোনটা রিসিভ করে নি !

-হ্যালো, কে বলেছেন ?

- রূপা , আমি হিমু ।

- হিমু তুমি ! এতদিন পরে । তোমাকে কতগুলা চিঠি পাঠিয়েছি একটারও জবাব দাও নি । সেদিন বলেছিলে তুমি নাকি অসুস্হ । এখন কেমন আছ ?

- খুব বেশী ভালো না !

-বাইরে বের হয়েছ কেন ?

-আরে বাবা খেতে যাচ্ছি ! খিদে
লেগেছে ।

-হোটেলে খাবা ?

-আর কোথায় খাবো ?

- নিশ্চয়ই ওই পঁচা মজনু মিয়ার
হোটেলে ?

- হুম ।

-তুমি আমাদের বাসায় আস !

-কি ? এখন তোমাদের
বাসায় যাবো কেন ?

-তোমাকে আসতে বলছি আস ! একটা রিক্সা নাও ! ১০ মিনিটের ভিতর চলে আসবা ! এখনই আসবা !

-কিন্তু রূপা !

-কোন কথা শুনতে চাই না ! তুমি এখনই আসবা ! না আসলে কিন্তু খবর আছে !

টুট টুট টুট...

রূপা ফোনটা রেখে দিয়েছে । হিমু কি করবো ঠিক বুঝতে পারছে না । অনেক চিন্তাভাবনার পরে হিমু অতঃপর যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিল । তাছাড়া অনেকদিন রূপার সাথে দেখা হয় না । এই সুযোগে সেটাও হয়ে যাবে । হিমু রূপাদের বাসার উদ্দশ্যে রওনা দিল ।

একবার কলিংবেল বাজানোর পরপরই রূপা দরজা খুলে দিল ! মনে হচ্ছিলো যে হিমুর জন্যই অপেক্ষা করছিল ! হিমুকে দেখেই রূপার মুখটা একরাশ হাসিতে ভরে গেল । রূপা হিমুর হাত ধরে টানতে টানতে ডাইনিং এর দিকে
নিয়ে যেতে যেতে বলল,

-চল তোমার খিদে লেগেছে । আগে খেতে দেই !

-হুম ! কি রান্না হয়েছে আজকে ?

-খুব বেশি কিছু না ! আগে জানলে ভাল কিছু রান্না করতাম !

হিমু দেখল খাবার টেবিলের আয়োজন একেবারে খারাপ না ! বিশেষ করে চিংড়ি মাছের মালাইকারী টা বেশ দেখা যাচ্ছে । হিমু হাসি মুখে ভাত মুখে দেয় !
ভাত মুখে নিয়ে রূপার দিকে তাকিয়ে দেখে ও হিমুর দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে আছে । হিমুকে সামনে বসিয়ে এর আগেও ও যতবার খাইয়েছে ততবারই ওর চোখে এমন একটা চাপা আনন্দ
দেখেছে হিমু ! অদ্ভুদ মায়া নিয়ে
মেয়েটা ওর খাওয়া দেখছে ! হঠাৎই হিমুর চোখে পানি চলে আসতে চাইলো । তাড়াতাড়ি করে পানি মুখে দিল হিমু !

রূপা ব্যস্ত হয়ে বলল,

-কি হল ?

-এতো ঝাল কেন ?

-ঝাল ? কই দেখি ?

রূপা খানিকটা অবাক হয়ে হিমুর প্লেট থেকে মাছের কিছু অংশ মুখ নিল !

-কই ঝাল ?

-ঝাল না ? দেখ ঝালের জ্বালায় আমার চোখে পানি চলে এসেছে !

-তাই না ! ঢং ! পানি খাও !

হিমু আবার খাওয়া শুরু করলে রূপা বলল

- আরেকটা মাছ দেই ?

-না থাক ! তুমি খেয়েছো তো ?

-আমার খাওয়া নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না ! আপনি খান !

হিমু চুপ করে খেতে লাগল । মাঝে মাঝে হিমু রূপার দিকে তাকিয়ে
দেখল ও আবার সেই অদ্ভুদ মায়ার
চোখে ওর খাওয়া দেখছে ! হিমুর মনটা হঠাত্ই কেন জানি ভাল হয়ে যায় ! নীরবতা ভেঙ্গে
রূপা আবার বলল ,

- জানো আজ পূর্ণিমা । রাতের আকাশে আজ অজস্র তারার মেলায় জোত্স্নারা খেলা করবে ।

- তাই নাকি ?

- হুম । তুমি রাতে আবার আসবে ? তাহলে তুমি আমি দুজনে মিলে জোত্স্না দেখতাম ।

- আচ্ছা আসব ।

- সত্যি ?

- হুম ।

রূপার মনটা এক অদ্ভূত ভালো লাগা দিয়ে ভরে গেল । হিমু বলল,

-আচ্ছা তোমার কি কোনো নীল রঙের শাড়ি আছে?

-কেন বল তো?

-যদি থাকে তাহলে, নীল রঙের শাড়ি পরে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকবা । আমি এলেই গেট খুলে দেবে।

-আচ্ছা...

হিমুর খাওয়া শেষ হতে না হতেই রূপা তোয়ালে নিয়ে এসে হাজির ! হিমু চলে যাওয়ার আগে রূপা হিমুকে একটা নীল খামে ভরা চিঠি দিল ।

হিমু নগরীর পিচ ঢালা পথ ধরে হাঁটছে । রূপার দেয়া চিঠিটা এখনও হিমুর পাঞ্জাবীর পকেটেই রয়েছে । চিঠিটা এখন হিমুর পড়তে ইচ্ছা করছে না । প্রিয় মানুষগুলোর চিঠি পড়ার জন্য প্রিয় মূহুর্তের প্রয়োছন । আর হিমুর কাছে সেই সময়টা মাঝরাত । যখন কোলাহলপূর্ণ নগরীটা শান্ত এবং নিরব হয়ে যায় । হিমুর মনে হল বাদলকে একটা কল করা দরকার । অনেক দিন ওর কোনো খোঁজ নেয় নি হিমু । তাই মেসে ফিরার আগে একবার তরঙ্গিনী স্টোরে যাওয়া দরকার ।

রাত ১১টা । আকাশ ভেঙ্গে জোত্স্না নেমেছে । হিমু মেসে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে । রূপাদের বাসায় গেল না । আবারও মাসখানেক এর জন্য ডুব দিল
। কেননা ভালোবাসার মানুষটির খুব কাছে যেতে নেই । তাতে ভালোবাসা বাড়ে না বরং কমে ।

অন্যদিকে বাসার গেটের কাছে নীল শাড়ি পড়ে হিমুর জন্য অপেক্ষা করছে রূপা । রূপা জানে হিমু কথনোই আসবে না । তবু রূপার মত মায়াবতী মেয়েরা হিমুদের জন্য আজীবন অপেক্ষা করে...
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×