-আপনার ঠান্ডা লেগেছে বোধহয়। বাস আসার আগপর্যন্ত ছাতাটা ইউজ করুন।
কথাটি শুনে একটু হকচকিয়ে গেল
রিহান । অচেনা অজানা একটা মেয়ে হঠাত্ ওকে এই বৃষ্টির দিনে ছাতা অফারকরছে ।
-আমি আপনার ছাতা নিলে, আপনিতো ভিজে যাবেন!
-আমি ছাতা ইউজ করিনা। বৃষ্টি বিলাসের এই নির্মল আনন্দ আমি কখনোই মিস করি না ।
-তবে সাথে ছাতা রাখেন কেনো?
মেয়েটি হাসতে হাসতে নিজেই ছাতাটা মেলে রিহানকে দিলো।
-আমার মা বৃষ্টির দিনে কখনো আমাকে ছাতা ছাড়া বের হতে দেননা। কিন্তু, জানেন? মা ঠিকই
জানে তার মেয়ে অঝোরে বৃষ্টি হলেও ছাতা মেলবে না..
বেশ অবাক হল রিহান। তবে ছাতাটা মাথার উপর মেলে ধরার পর একটু শান্তি অনুভব করছে।
বৃষ্টিতে ভিজলে খুব কষ্ট হয় ওর !
-কোথায় যাবেন আপনি?
- মিরপুরে আপুর বাসায়।
- ওহ আচ্ছা।
বাস আসছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে রিহান। মেয়েটির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে এই সময়টুকু। কিন্তু কেমন জানি ইতস্তবোধ হচ্ছে !
শেষ পর্যন্ত মেয়েটি মুখ খুললো..
-আপনি কই যাবেন?
-আমি ক্লাসশেষে বাসায় ফিরছি। মিরপুর ২ এ আমার বাসা।
-বৃষ্টিতে ভিজেছেন কখনো, ইচ্ছে করে?
-না, এখনো তেমনটা হয়ে উঠেনি।
- একদিন ভিজে দেখবেন। বৃষ্টিস্নানে অফুরান এক সুখানুভূতি হয়।
রিহানের খুব কৌতূহল হলো এই মেয়েটিকে নিয়ে। তার কথার ধরণ একটু ভিন্ন ধাঁচের। অন্যসবার মত নয়।
-কি করেন আপনি?
-বাংলায় অনার্স করছি। সেকেন্ড ইয়ারে আছি এখন। আপনি?
- আমি কম্পিউটার সায়েন্স, বুয়েট থেকে।
রিহান বুঝতে পারল মেয়েটি বাংলায় পড়ে, তাই একটু সাহিত্যিক ভাব আছে নিজের মধ্যে !
-শতাব্দী বাসে যাবেন, তাইনা?
(মেয়েটি রিহানকে প্রশ্ন করলো)
- হুম...এই একটা বাসই তো ওদিকে যায়।
- আমিও এই বাসেই যেতে চাচ্ছিলাম। তবে অপেক্ষা করতে আর ইচ্ছে করছে না। হেঁটে যাবো।
রিহানের মনে হচ্ছে, পাগল নাকি মেয়েটা! কি বলে এসব?
- হেঁটে যাবেন?? অনেক সময় লাগবে তো!
-বৃষ্টির সময় রাস্তায় বেশ জ্যাম থাকে। হেঁটে যেতেও একই সময় লাগবে। আপনি যাবেন আমার সাথে?
রিহান বুঝতে পারছে না কি করবে! এর আগে কখনো বৃষ্টিতে ভিজে নি। তাও মেয়েটিকে জানার অনবদ্য এক কৌতূহল থেকেই বলল-
- চলুন । যাওয়া যাক ।
রিহান হাঁটছে । সাথে মেয়েটিও। কথা বলতে বলতে একসময় কিছুটা ক্লান্তি এসে ভীড় করেছে দুজনের মধ্যে। তাই চুপচাপ । বিস্ময়কর তবে সত্য, এখনো মেয়েটার নামটা জানা হয়নি রিহানের। মেয়েটিও অবশ্য নাম জানতে চায়নি।
- আপনি কি প্রায়ই হেঁটে যান এখানে সেখানে?
- আমার বাসা জিগাতলা । ভার্সিটিতে সচরাচর হেঁটেই যাই ।
আর আপুর বাসায়ও মাঝে মধ্যে হেঁটেই আসি।
- সত্যিই অবাক হচ্ছি আপনাকে দেখে!
- কেনো বলুনতো?
- আপনি ঠিক অন্য মেয়েদের মতো নন। বেশ অন্যরকম আপনি।
-বেশি হাঁটাহাঁটি করি বলে এই কথা বলছেন?
মেয়েটি খুব সুন্দর করে হাসলো। কিছু মুহূর্ত ধরে তার মুখাবয়বে অসাধারণ একটা অনুভূতির ছায়া দেখতে পেল রিহান !
- নাহ্... ঠিক সেইজন্য নয়। তবুও আপনি একটু অন্যরকম।
মেয়েটি এবার আর কোনো উত্তর করলো না। শুধু একচিলতে হাসি উপহার দিলো তার ঠোঁট দুটো।
- আপনার নামটা জানা হলো না..
- আমি অতসী। আপনার নাম?
- আমি রিহান।
- জ্বী, মনে থাকবে আপনার নামটা।
- আপনার নামটাও অন্যরকম, ঠিক আপনার মতোই। আমার মনে থাকবে নামটা, সাথে আপনাকেও..
মেয়েটি খুব সুন্দর করে আবারো একটা হাসি উপহার দিলো। মেয়েদের হাসি সুন্দর হয়। টোল পড়লে আরো সুন্দর লাগে দেখতে !
মিরপুর ১০ গোলচত্বর পর্যন্ত এসে দুজনের রাস্তা দু'দিকে আলাদা হয়ে গেলো। মেয়েটিও বিদায় নিয়ে চলে গেলো। প্রায় বাসার কাছাকাছি রিহানের মনে পড়ল তার ছাতাটা ওর কাছে রয়ে গেছে!
বাসায় এসে অতসীকে খুব মনে পড়তে লাগলো রিহান। কিন্তু যোগাযোগের উপায় ছিলোনা ।
ফেসবুকে অতসী লিখে সার্চ দিয়েও বের করা সম্ভবপর হলো না মেয়েটিকে। বর্ষা যতদিন ছিলো ততোদিন ইচ্ছে করেই তার ছাতাটা নিয়ে রিহান বাসা থেকে বের হত। যদি কেউ এসে বলে, "এই ছাতাটা আমার... আপনি নিয়ে চলে গেলেন কেনো??"
কিন্তু কেউই এইকথাটা বলার জন্য এগিয়ে এলো না কোনোদিন। সেই বছরের বর্ষা ফুরিয়ে গেলো। অতসীকেও ভুলে গেল রিহান ।
প্রায় এক বছর পর.. বুয়েট থেকে ফিরছে রিহান । এমন সময় নামলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি! রাস্তার সবাই দৌঁড়ঝাপ করে কেউবা গাছের নীচে, কেউবা ছাউনির
নীচে গিয়ে দাঁড়ালো। ও একটা রেইন-ট্রি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাত্ দেখতে
পেল অঝোর বৃষ্টির মাঝেও একটা মেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে রাস্তা পার
হয়ে শাহবাগের দিকে পথ ধরলো। রিহানের অতসীর কথা মনে পড়ে গেল।
এমন বৃষ্টির মধ্যেও এতো সাবলীলভাবে হাঁটতে রিহান শুধু অতসীকে দেখেছি। খুব জোরালো কন্ঠে ডাক দিল-
"অতসীইইইই..."
হেঁটে যাওয়া মেয়েটি ফিরে তাকালো। রিহান দৌড়ে কাছে খুব কাছে গেল তার।
-আপনার ছাতাটা আমার কাছে রয়ে গেছে, নিবেন না?
মেয়েটা অপলক দৃষ্টিকে রিহানকে দেখতে লাগলো। তার চোখের মাঝে এক অবাক বিস্ময়ের প্রগাঢ় ছাপ দেখতে পেল রিহান।
- আপনি....আপনি রিহান!
- জ্বী, আমি রিহান। চিনতে পেরেছেন তাহলে?
- হুম ।
- আপনি কি জানেন? আমি বৃষ্টিতে ভিজতে শিখে গেছি এই একবছরে।যতোবারই বৃষ্টিতে ভিজেছি, আপনার কথা মনে পড়েছে।
- তাই নাকি?? (অতসী চোখ ছোটছোট করে তাকালো রিহানের দিকে)
- হ্যাঁ, আসলেই তাই। আজকেও ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। আপনি
ভিজবেন আমার সাথে?
অতসী মুখে কিছু বললো না। রিহানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে, হাঁটার জন্য এক পা সামনে এগিয়ে দিলো। রিহান বুঝে নিল, মেয়েটা রাজি।
রিহান আর অতসী পাশাপাশি হাঁটছে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। তারা জানেনা এরপর ঠিক কি হবে, বৃষ্টি থেমে গেলে তাদের দুইজনের গন্তব্যই বা কি হবে! আপাতত তারা বৃষ্টিতে ভিজছে। বৃষ্টিবিলাসের মাঝে লুকিয়ে থাকা অন্যরকম আনন্দটুকু তারা একসাথে লুফে নিচ্ছে।
ইসশ.... এই বৃষ্টিটা যদি কখনোই শেষ না হতো...