somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরমাণু গল্প :-- ""এটা গল্প হলেও পারতো""

২০ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-একুশ.....

-হুম বলো !

- এই অসময়ে ছাদে কি করো শুনি?

- মেঘ দেখি ।

- মানে কি !

- জানিনা তো !

-শীতের আকাশে মেঘ পেলে কোথায় ?

- মেঘ পাইনি তো।

- তবে?

- মেঘ খুঁজছি।

- কেন মেঘ দিয়ে কি হবে ?

-ধুলো জমছে মনে, যদি ধুয়ে যায় !

- মেঘ বুজি সব ধুয়ে দেবে?

- জানিনা তো!

-তবে কি করো?

- কিছুনা।

- ধুলো মুছে গেলে কি হবে?

-মন খুঁজতে বের হব॥

- আচ্ছা তুমি এমন কেন !

-কেমন আমি ?

-এইযে তোমার মত ।

-তবে হয়তবা তাই হবে !

-জানো আজ আমার ভীষণ মন খারাপ!

- মা বকেছে বুঝি?

- না । আসার আগে ফোন দিয়েছিলাম। রিসিভ করো নি।

- গল্প লিখছিলাম। ফোন নিশ্চুপ ছিলো।

- আচ্ছা, আমি তোমার মুখ থেকে শেষ একটা কথা শুনতে এসেছিলাম।

- "শেষ একটা কথা"। বলে দিলাম। শুনেছো তো?

- সিরিয়াসলি নিতে পারো না কোন কিছু?? তুমি আর কখনোই বদলালে না...

- একটু একটু পারি। তবে সবসময় পারি না।

- আমাকে কি খুব হাস্যকর মনে হচ্ছে তোমার?

- হাস্যকর নয়, তবে তোমার মনটা খুব খারাপ এটা মনে হচ্ছে।

- হুম.. আমার মনটা বড্ড খারাপ । কাল সন্ধ্যের সময় আমার বিয়ে।

- দাওয়াত দিতে এসেছো?

- না... তোমার মুখ থেকে শেষ একটা কথা শুনতে এসেছি।

- শেষ একটা কথা। সেটা তো আমার জানা নেই।

- আমি কিন্তু এখন কেঁদে ফেলবো!

- এখন কান্না করা উচিত হবে না।

- তুমি উচিত অনুচিত নিয়ে ভাবতে শিখলে কবে থেকে?? বাহ!

- কালকে তোমার বিয়ে, বাসায় যাও এখন। খুব সুন্দর করে হাতে মেহেদী দিও ।

- আমি ঐ ছেলেকে বিয়ে করবো না।

- আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো?

- হুম...

- শীতটা আজকে একটু বেশিই পড়েছে, ভীষণ ঠান্ডা লাগছে, তোমার শালটা একটু দিবে ?

- আমাকে বিয়ে করবে তুমি??

- জানো? রাতের বেলায় খুব শীত করছিলো কাল, কিন্তু কম্বলটা ছাড়াতে ইচ্ছে করছিল না.. দিন দিন বড্ড অলস হয়ে যাচ্ছি..

- আমাকে কি বিয়ে করবে না তুমি ??

- চাঁদ সমুদ্রের ব্যাপারটা কি তুমি জানো?

- নাহ!! কি জিনিস এটা?

- যে চাঁদ একবার জোয়ার আনে, কয়েক প্রহর পরে সে চাঁদ ই আবার ভাটা টানে!

- কি বলতে চাও, পরিষ্কার করে বলো।

- তোমায় নিয়ে কবিতা লিখেছিলাম, তোমাকে নিয়ে গল্প বুনেছিলাম, তোমাকে ঘিরে ঘোর স্বপ্নের মাঝে ডুব দিয়েছিলাম। কিন্তু সব গল্প কবিতার পাতা নষ্ট হয়ে গেছে ।

- প্লিইইইজ একুশ, আমি সরি!!

- একদিন স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে দেখি স্মৃতির শূণ্য ম্যাগাজিন পড়ে আছে , স্মৃতিগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে।

- আমি অজস্রবার সরি!!

- হৈম, আমার না এখন আমাদের ভার্সিটির ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে...

- কিন্তু এখন তো অনেক রাত !!

- তবু যাবো, আর সারাটা রাত দূর আকাশের নিঃসঙ্গ তারার গল্প শুনবো !!

- এখনি যাবে?

- হুম, এখনি।

- আমি কি করবো তাহলে?

- কি করতে চাও?

- কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে তোমার কাঁধে মাথা রেখে শেষবারের মতো কিছুক্ষণ বসে থাকতে চাই। নিয়ে যাবেনা আমায় ?

- সত্যি !

- হুম..

- চলো তাহলে !!
---
---
---
গভীর রাত নেমেছে। প্রিয় ভার্সিটির চিরচেনা ক্যাম্পাসটার সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছে গিয়ে বাইক থামালো একুশ। এই জায়গার স্মৃতি অনেক। তাই বিস্মৃতির অন্তরালে সবটুকু স্মৃতি আড়াল হবার আগেই এখানে আর একটাবার আসার আসলেই দরকার ছিলো খুব।


কৃষ্ণচূড়া গাছটা তাদের প্রণয়ের প্রথম সাক্ষী। অনেক ঝগড়াঝাটির সাক্ষী। মান অভিমানের সাক্ষী । আনন্দ আর কষ্ট ভাগাভাগি করে নেবার সাক্ষী। তাদের শেষবারের মত দেখতে না পেলে খুব একটা অভিমান মনে পুষে রাখতে পারে এই লাল সবুজের বৃক্ষটি। গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসেছে দুজন। আগের মতই গল্প জমে উঠলো আবার। সময়ের দিকে নজর নেই, গত দুই মাসের ব্রেকআপের সময়টুকুর দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, ভালোবাসা মন্দবাসায় কোন আক্ষেপ নেই, গল্পের খেয়ায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে এল হৈমের। একুশের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো সে। তার উত্তপ্ত নি:শ্বাসটুকু টের
পাচ্ছে একুশ। ভারী অপার্থিব লাগছে সবকিছু, জেগে থাকা মানুষটার কাছে।

ঘুমন্ত মানুষটা জেগে উঠে প্রথম কোন কথাটা বলবে তা তার জানা নেই। দূরে থেকে একটা গানের আওয়াজ অল্প আসছে। কিংবা নিজের মনের মাঝেই হয়তো সুর তাল লয় মিলিয়ে গানটা বেজে চলেছে একুশের মনে ।

" এটা গল্প হলেও পারতো
পাতা একটা আধটা পড়তাম
খুব লুকিয়ে বাঁচিয়ে রাখতাম তাকে ..
তাকে আটকে রাখার চেষ্টা
আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তেষ্টা
আমি দাঁড়িয়ে দেখছি শেষটা .. জানালায়..... "

গানটা শুনতে শুনতে অন্যমনা হয়ে পড়লো একুশ। এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী কিংবা অসহায় মানুষটার নাম সে জানে ... শুধু সে ই জানে!!
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×