--- " আপনার নাকটা খুব সুন্দর ! আয়নার সামনে নিয়ে নাকটা ধরে বলুন কুটুকুটু বাবুটা..."
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অভ্যাসবশত নিজের মোবাইলটার প্যাটার্ন লকটা খুলে সময় দেখে ফেসবুকে লগইন করে রিফাত ! লগইন করতেই এই অদ্ভূত মেসেজটা চোখের সামনে ভেসে উঠে । একটা অজানা অচেনা মেয়ের আইডি এই ধরনের মেসেজ আসাটা স্বাভাবিক নয় । মেসেজটা সিন করার পরে কিছুটা সময় বোকার মতো মেসেজটার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল রিফাত । বিছানার এক পাশে পরে থাকা চশমাটা কোনোমতে চোখে লাগিয়ে রিফাত রিপ্লাই দিল,
- সরি কে আপনি ? ঠিক চিনলাম না !
- চেনা লাগবে না ! কেবল শুনবেন ?
- আশ্চর্য ? কে আপনি ?
- বললাম না আমি কে সেটা চেনা লাগবে না ! কেবল শুনবেন ! ঠিক আছে ? আর আজকে এটা কি গল্প লিখছেন ? আপনি জানেন এটা পড়ে আমি কতক্ষণ কেঁদেছি ? "একদিন স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে দেখি স্মৃতির শূণ্য ম্যাগাজিন পড়ে আছে , স্মৃতিগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে" এই লাইনের মানে কী ?
- কোনো মানে নেই ! সব লাইনের মানে হয় না !
- না । এরপর থেকে আর এইরকম কষ্টের গল্প লিখবেন না । অন্যকে কাঁদানোর কোনো অধিকার আপনার নেই !
বেশ কিছুদিন পরে মেয়েটা পুনরায় রিফাতকে ইনবক্সে নক দেয়,
-আচ্ছা লেখক সাহেব, আপনি ইদানিং গল্প লিখাটা কমিয়ে দিয়েছেন কেন ?
- আসলে সেদিন ক্রিকেট খেলতে গিয়ে হাতে খুব ব্যথা পেয়েছি, কীবোর্ড টাইপ করতে খুব কষ্ট হয়..
- তাই বুঝি !!
- হুম..
- একটা কথা বলবো.. শুনবেন ?
- হুম বলুন..
- আজকে না আমার খরগোশটাকে অনেক মোটা মোটা লাগছে..
- কেন কী হয়েছে ? সকালবেলা বেশী খেয়েছে ?
- না বুদ্ধু.. আমার মনে হয় ওর বাচ্চা হবে..
অনলাইনের এই অদ্ভূত মেসেজগুলোর মাধ্যমে ফ্রেন্ডশীপ হয় রিফাত আর অদ্রির । অদ্রির এই অদ্ভূত মেসেজগুলোতে রিফাত প্রথমদিকে বিরক্ত হলেও এখন আর হয় না.. কেননা প্রতিনিয়ত রিফাতকে মেয়েটার অদ্ভুত পাগলামী সহ্য করতে হয়.. ফ্রেন্ডশীপের প্রথমদিকে রিফাত শুধু মেয়েটাকে অদ্ভূত ভাবেছিল, কিন্তু ইদানিং অদ্রি যে কতটা রাগী এবং জেদী সেটা রিফাত হারে হারে টের পাচ্ছে.. তবে রিফাত অদ্রির এই পাগলামী গুলো বেশ
উপভোগ করে..
"মেয়েটা আসলেই একটা পাগলী" এক ঘণ্টার ভেতর বারোতম বারের মতো অদ্রির ফোনকল রিসিভ করার সময় ভাবে রিফাত। বারবার ফোন করা তো নয়, বারোটা বাজানো একদম। কী যে পেয়েছে মেয়েটা! আজ ওদের প্রথম দেখা হচ্ছে বলে মাথায় উঠে বসে আছে একদম। বিকেল চারটায় দেখা করার আদেশ পেয়েছে রিফাত প্রথমবার। তারপর থেকে টি-শার্টের রং নীল থেকে সাদা, লাল, হলুদসহ আরও কী কী সব আজব আজব রং পেরিয়ে আবার নীলে এসে ঠেকেছে।
বিকেল চারটা !! রবীন্দ্র সরোবরের একটা ফুচকা চটপটির টং এর একপাশে দাঁড়িয়ে আছে রিফাত !! হঠাত্ পেছন থেকে একটা সুনিপন নারী কন্ঠের আওয়াজ,
- আমি অদ্রি !!
রিফাত কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মোটা ফ্রেমের চশমার মধ্য দিয়ে ভয়ংকর সুন্দর এই মেয়েটিকে পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে পরীর মতো লাগছে।
- আসলে এফবিতে প্রোফাইল
পিকচারটাতে ফেয়ার এন্ড লাভলী একটু বেশি মাখা ছিলো তো, তাই আজকে চিনতে পারিনি।
- দেখ তুমি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছো ! জন্ম থেকেই তুমি আসলে একটা প্রতিবন্ধী ...... একটা মেয়ের সাথে ঠিক মত কথাও বলতে পারো না!
রবীন্দ্র সরবোরের পাশের রাস্তা দিয়ে রিফাত আর অদ্রি পাশাপাশি হাঁটছে। অদ্রি কথা বলছে না। রিফাত টানা ১৫ মিনিট সরি বলেছে। মন গলেনি অদ্রির । বলে দিয়েছে, আগামী ১৫ বছর সরি বললেও কাজ হবে না। রিফাত ১৫ বছর সরি বলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রিফাত চুপ করলো। অদ্রিকে দেখতে এখন খুব সুন্দর লাগছে। শুধু সাজগোজে নয়, রাগান্বিত অদ্রিকেও দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। রিফাত মনে হয় অদ্রিকে ভালোবেসে ফেলেছে। রিফাত এখন অদ্রিকে হঠাৎই ভালোবেসে ফেলার এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করছে।
- অদ্রি..
অদ্রি মুখ তুলে না তাকিয়েই উত্তর
করল,
- হুম.. বলো।
- আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই।
- চাইলে করতে পারো।
- আচ্ছা.. তুমি কি...
- আমি কি....?
- তুমি কি...
- আররে ধুর!! কি "তুমি কি তুমি কি" শুরু করলা?? প্রশ্ন করো..
- অদ্রি.. আমি তোমাকে ভালোবাসি! তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে?
- কবে থেকে বাসতে হবে শুনি?
(অদ্রির চোখে মুখে এখন দুষ্টামি খেলা করছে)
- আজকে থেকে পারবে না?
- নাহ! আজকে অনেক রাগ তোমার উপর। রাগ কমলে স্টার্ট করবো। ঠিক আছে?
- ঠিক আছে। (রিফাত ক্ষীণ কন্ঠে উত্তর করলো)
--------------------
--------------------
রিফাত নিজমনে অনেক হাসছে। হাসির কারণ, তার মনে হচ্ছে আজই অদ্রির রাগ কমে গেছে। তারা দুইজন এখন পাশাপাশি হাঁটছে, আর অদ্রি দু'হাতে রিফাতের ডানবাহু জড়িয়ে ধরে রেখেছে। অদ্রির মাঝে এই মুহুর্তে রাগ কিংবা অভিমানের কোন প্রতিচ্ছবি নেই। রিফাতের অবশ্য খুশিও লাগছে। এখন সে জানে, সে একাকি কাউকে ভালোবাসে না। তার প্রিয় এই মানুষটাও শুধু তাকেই ভালোবাসে। রিফাতের নিজেকে এই মুহূর্তের দুনিয়ার সেরা সুখী মানুষটা মনে হচ্ছে।