somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্প :-- ভালোবাসার অপঘাতে মৃত্যু

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শীতের গৌধুলী মাখা রাঙা বিকেলে আকাশ ভেঙ্গে আচমকা ঝুম বৃষ্টি নেমেছে... সত্যিই অন্যরকম... স্বাভাবিকের তুলনায় খানিকটা ব্যতিক্রম... এইরকম একটা অদ্ভূত দিনে বৃষ্টিস্নাত আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে পৃথা ।

পৃথা লেকের পাড়ের হিজল গাছটার নিচে একলা বসে অপেক্ষা করছে প্রিয় মানুষটির জন্য । অনির কথামতো নীল রঙের শাড়ি পড়ে আসার কথা ছিলো পৃথার । আর অনির পৃথার পছন্দের নীল রঙের শার্ট । কিন্তু অনেক খুঁজেও আম্মুর নীল রঙের শাড়িটা পায়নি সে। বড্ড মন খারাপ করে শেষবধি নিজেরই নীল রঙের সালোয়ার কামিজ টা পড়ে নিয়েছে, সাথে নীল চাদর। পৃথাকে সব কাপড়েই মানিয়ে যায়, কিন্তু আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তাকে। এই বৃষ্টিস্নাত বিকেলে মোটা ফ্রেমের চশমার মধ্যে দিয়ে মেয়েটাকে মিষ্টি বিকেলের নীল পরীদের মতো লাগছে...

শীতের হিম হিম ঠান্ডা পড়া শুরু করে দিয়েছে। বৃষ্টির এক একটা কণা যেন এক একটা বরফ খন্ড.. বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল । তবু অনির আসার নাম গন্ধ নেই । কিন্তু প্রায় দুই ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করেও অনির দেখা মিলল না। পৃথা নিজের সেলফোন থেকে কল দিলো চির পরিচিত নাম্বারটিতে। রিং বেজে যাচ্ছে। কেউ রিসিভ করছে না। পৃথার খুব টেনশন হচ্ছে । টেনশনের মাত্রাটা সময়ের সাথে সমানুপাতিক হারে বাড়ছে...

আরো কিছুটা সময় পৃথা লেকটার উওর প্রান্তে থাকা হিজল গাছটার নিচে বেঞ্চটাতে বসে রইলো। ফোন করে যাচ্ছে অবিরত। পৃথা টেনশন করবে না রাগ করবে, এখন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা। শেষপর্যন্ত টেনশনই করলো। ফোন রিসিভ করেনি অনি ।

সাতটা বাজার পর পার্কটা সম্পূর্ণ নীরব হয়ে এলো। পৃথা চাইলেও আর ওয়েট করতে পারবে না। ইচ্ছে হচ্ছে সারারাত ওয়েট করে অনির জন্য। কিন্তু সম্ভব নয়। বাসায় ফিরে চললো সে। জানেনা অনি কেনো আসেনি। তবে অনেক কান্না পাচ্ছে তার। বাসায় ফেরার পথে বাসে বসে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো পৃথা । আশেপাশের মানুষগুলো পুরোটা সময় শুধু পৃথার দিকেই চেয়ে রইল । বাসের হেলপার কি বুঝলো কে জানে, পৃথার কাছ থেকে বাস ভাড়াটাই নিলো না।

রাত বারোটা প্রায়। দোতালা বাসাটার ব্যালকনি জুড়ে নীরবতা কিংবা শুন্যতা। পৃথা চুপচাপ বসে
আছে। অনি আর যোগাযোগ করেনি। মনটা বড্ড খারাপ লাগছে তার।

অতীতের কিছু স্মৃতি নাড়া দিয়ে যাচ্ছে মনের ভেতর। প্রায় বছর দুয়েক আগের স্মৃতি খুঁজে বেড়ালো স্মৃতির পুরোনো পাতা গুলোতে।

সেদিন অনেক রাতে হঠাৎ কল এসেছিলো পৃথার ফোনে। রিসিভ করার পর অপর পাশ থেকে তাড়াহুড়া করে অনর্গল কিছু কথা বলে গেলো। পৃথা বুঝতে পারলো ভুল করে ছেলেটা রং নাম্বারে কল দিয়েছে, পরের দিনের ক্লাসের ল্যাব সম্পর্কে জানতে চেয়ে কল করেছিল এক বন্ধুকে ।

পৃথা জানালো, "আপনি রং নাম্বারে কল দিয়েছেন। আমি মোটেও তানভীর নই।"

-- সরি সরি। আসলে আমার ফোনসেট হারিয়ে ফেলেছি, ব্যাক আপ থেকে নাম্বার নিয়েছি তো, টাইপিং মিসটেক। আবারো সরি। আমি আবারো সরি।

ছেলেটার এতো সরি শুনে কিছুটা হাসি আসলো পৃথার। বোকার মত একটা প্রশ্ন করে বসলো,"নাম কি আপনার?"
ছেলেটা তেমন কিছু মনে করলো বলে মনে হয় না। সাদাসিধে ভাবে নিজের নাম বলে পৃথার নামটাও জনতে চাইল।

অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা একটা কল, অপরিচিত একটা ছেলে, কিন্তু পৃথা সেদিন কেন সেই অপরিচিত নাম্বারের অপরিচিত ছেলেটার সাথে টানা বিশ মিনিট কথা বলেছিলো, তা সে আজও জানে না!

অনি ভাল গীটার বাজাতে পারতো। এই গীটারিস্ট গুনটাই পাগল করে দিয়েছিলো পৃথাকে। কিন্তু পৃথা তা কখনো বুঝতে দিতো না। অনি একদিন পৃথাকে প্রপোজ করে বসলো। না বলার সামর্থ্য ছিল না পৃথার কিন্তু হ্যাঁ ও সে বলেনি তখন। প্রপোজের পরও এক বছর এমনিতেই কেটে গেলো। অনি আর জানতে চাইল না পৃথা কি নতুন করে তাকে পছন্দ করতে পারলো কিনা। পৃথাও ছটফট করে গেছে এই সময়টা। অবশেষে একদিন ঠিক করলো অনিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে হ্যাঁ বলবে। সময় চাইল একদিন অনেকক্ষণের জন্য। বিচক্ষণ বুদ্ধির অনি বুঝে ফেললো ব্যাপারটা। পৃথাকে বললো নীল শাড়ি পড়ে আসার জন্য। পৃথা আসলো কিন্তু অনি এলো না!!

চিরচেনা রিংটোন এর শব্দে বাস্তবে ফিরে এলো পৃথা । সাকিব ফোন দিয়েছে। পৃথার বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। সাকিব অনির রুমমেট। এতো রাতে কেন ফোন দিতে যাবে সে। পৃথার হাত কাঁপছে। পাওয়ার বাটনে অনেক কষ্টে প্রেস করলো সে।
---------------------------------------------------------------------------


ঝুম বৃষ্টি নেমেছে।।
পুরনো ঢাকার গ্রেভ ইয়ার্ডের সবগুলো কবরেই নাম্বার ফলক আছে, এপিটাফ ও আছে কোনটা কোনটাতে। বামপাশের লেনটা ধরে চলে গেলে শেষ মাথায় ৩২ নাম্বার কবরটা পড়ে। ঠিক তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা। নীল রঙের শাড়ি পরিহিত মহিলার গায়ে নীল রঙের চাদর । যদিও অনেক বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু এই অবেলায় নেমে আসা বৃষ্টিকে সে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা। হাতে নীল রঙের একটা খাম।

খামের ভেতর থেকে নীল গোলাপের ১৫ টা পাপড়ি বের করে আনলো সে। গুনে গুনে কবরের উপর রাখলো পাপড়িগুলো। পাপড়িগুলো কবরের উপর রাখার সময় তার মমতা আর ভালোবাসার বহি:প্রকাশ টুকু প্রকাশ পেয়ে গেলো চোখের জলে। অবশ্য একজন ছাড়া আর কেউ ই তা দেখলো না।
আজ অনির ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী !!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:২৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×